বড়গল্প "আমাজনের হৃদয়" [Story "The Heart of Amazon"] - পর্ব ০২

in #amazon2 years ago

গত পর্বের পর

পর্ব ০২
ধীরে ধীরে চোখের পাতা খুললেন ক্যাপ্টেন ব্লাই । মাথার ভিতর এখনো একটা ভোঁতা অনুভূতি রয়েছে । প্রথম প্রথম তিনি বুঝতেই পারলেন না যে কোথায় আছেন তিনি । প্রথমে তাঁর মনে হলো তিনি তাঁর মানাউসের খামার বাড়িতেই রয়েছেন । ধীরে ধীরে কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁর সব কিছু মনে পড়ে গেলো । নিজের অজান্তেই শিউরে উঠলেন তিনি ।

প্রখর সূর্যালোক তার ঠিক চোখের পাতাতেই এসে পড়ছে । খুব সম্ভবত এই তীব্র আলোর জন্যই খুব দ্রুত তাঁর মাথার ভিতরের ধোঁয়াশাভাবটা কেটে গিয়েছে । শুয়ে শুয়েই মাথা ঘোরালেন ক্যাপ্টেন । সারা শরীরে আড়ষ্টভাবটা এখনো পুরো যায়নি । আর অসম্ভব দুর্বল লাগছে ।

ডান দিকে মাথা ঘোরাতেই দেখতে পেলেন বিশাল একটা পর্ণকুটির । লম্বা লম্বা শুকনো ঘাসে ছাওয়া । কুটিরের পিছনে এবং আশেপাশে আরো কয়েকটা কুটীরকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখতে পেলেন । একটা ব্যাপার দেখে শিউরে উঠলেন ক্যাপটেন । প্রায় প্রত্যেক কুটীরের বেড়ায় আর চালায় রয়েছে অদ্ভুতভাবে শুকিয়ে ছোট্ট এতটুকু হয়ে যাওয়া অনেকগুলো নরমুণ্ড । একেকটার সাইজ প্রায় একটা বড় আপেলের মতো । চুল, চোখ, নাক, ঠোঁট, মুখ সবই দৃশ্যমান । কিন্তু, কুঁচকে ছোট্ট এতটুকু হয়ে গিয়েছে । সানসা (tsantsa) ধাঁ করে মনে পড়ে গেলো ক্যাপ্টেনের । এগুলোকে বলে সানসা । মানুষের মুন্ড ধড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে এরপরে এদের নিজস্ব গোপন পদ্ধতিতে একটা আপেলের সমান ছোট্ট আকারে নিয়ে আসে ।

সর্বনাশ ! তিনি তাহলে নরমুন্ডশিকারীদের পাল্লায় পড়েছেন । ভয়ে চোখ বুঁজে ফেললেন তিনি । হার্ট বিট বেড়ে গিয়েছে তাঁর । খুব দ্রুত স্পন্দিত হচ্ছে হৃদয় । ভয়ে এবং উত্তেজনায় ।

খুব ধীরে ধীরে বাঁ দিকে ঘাড় ঘোরালেন আবার । গভীর বনভূমির মধ্যে অনেকটা জায়গা একেবারে পরিষ্কার করে নিকানো । একটা গ্রাম । আমাজানের ভয়ঙ্কর নরমুন্ডশিকারীদের একটি গ্রাম এটি । একটাই স্বস্তির বিষয় এই যে এরা নরভূক নয় । মানুষের মাংস এরা খায় না । নরভুক গোষ্ঠীগুলো আরো ভয়ঙ্কর হয় । দয়া-মায়া হীন নিষ্ঠুর জাতি তারা । বাইরের পৃথিবীর মানুষকে ভালোবাসার চাইতে তাদেরকে খাদ্যবস্তু হিসেবে ভাবতেই পছন্দ করে তারা ।

ভাবতে ভাবতে একটু আনমনা হয়ে পড়েছিলেন তিনি । এমন সময়ে পদশব্দে ডান দিকে মাথা ঘুরিয়ে দেখতে পেলেন সেই বড় কুটীর থেকে একটি অল্পবয়সী তরুণী তাঁর দিকে আসছে । তরুণীটির বয়স বড়জোর কুড়ি হবে । গায়ের রং উজ্জ্বল তামাটে, মাথায় একরাশি কালো চুল তাতে রঙিন রিবন বাঁধা, মুখটি লাল-সাদা রঙে চিত্র-বিচিত্র করা । গলায় গোল একটা তামার নেকলেস, আর কিছু রঙিন পাথরের মালা । নাকের এ মাথা থেকে ও মাথা অব্দি একটা কাঠি গোঁজা । হাতের কব্জিতে পাখির পালক আর লোমের তৈরী ব্রেসলেট জাতীয় বস্তু । কোমর থেকে উপরিভাগ সম্পূর্ণ অনাবৃত । কোমরের নিচে লম্বা ঘাগড়া জাতীয় উজ্জ্বল হলুদ-কমলা পোশাক পরা ।

হাতে একটি বড় মাটির পাত্র । একটু দ্রুত পদক্ষেপে ক্যাপ্টেনের কাছে এসে বসে পড়লো মেয়েটি । একটু হাসলো । তারপরে ইশারায় পাত্রটিতে চুমুক দিতে বললো ।

ধড়মড়িয়ে উঠে বসলেন ক্যাপ্টেন । মাথাটা একটু দুলে উঠলো । অসম্ভব দুর্বল লাগছে তাঁর । তেষ্টায় গলা-বুক শুকিয়ে কাঠ একেবারে । মেয়েটির দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিয়ে প্রতিউত্তর করতে চাইলেন, কিন্তু, হাসিটা ফুটলো না তাঁর । শুধু হালকা ঠোঁটের কোনে একটু টান পড়লো । দ্রুত হাত বাড়িয়ে মেয়েটির হাত থেকে পাত্র নিয়ে চুমুক দিতে যাবেন এমন সময়ে তাঁর নজর পড়লো পাত্রের ভিতরের বস্তুটার দিকে ।

টকটকে লাল রঙের বস্তুটা যে রক্ত সেটা আর বলে দিতে হবে না । তবে, রক্তটা থকথকে কালচে রঙের নয়, বরং অনেকটাই লঘু আর কালচে নয় একটুও । একেবারে টকটকে লাল টাটকা রক্ত । কয়েক সেকেন্ডের দ্বিধা । এরপরে চোখ বুজে চোঁ করে পাত্রের সেই রক্তবর্ণ তরলটা গলায় ঢেলে নিলেন ।

একটা আঁশটে গন্ধ রয়েছে মিশ্রণে, তবে খেতে খুব একটা খারাপ লাগেনি তাঁর । কোনো পশুর দুধে মেশানো রক্ত এটি । সাথে কিছু ভেষজ মেশানো আছে । খেতে অদ্ভুত তবে খুব একটা খারাপ নয় । তেষ্টা অনেকটাই কমে গিয়েছে তাঁর । শরীরটাতে বেশ চনমনে ভাব এসে গিয়েছে এর মধ্যেই ।

হঠাৎ, একটা জিনিস মনে পড়তেই মাথাটা বোঁ করে ঘুরে উঠলো তাঁর । সর্বনাশ, এ কী পান করলেন তিনি ? তাঁর সঙ্গীদের শরীরের রক্ত নয় তো এটা ?

[ক্রমশ ...]

Coin Marketplace

STEEM 0.30
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 63527.41
ETH 3109.34
USDT 1.00
SBD 3.86