আলভির কি হয়েছে সে জানে না।
আলভির কি হয়েছে সে জানে না। আজ কাল তৃষ্যার দেখা না পেলে তার সঙ্গে কোমরে জ্যাকেট বেঁধে ঝগড়া না করলে তার ভালো লাগে না।তেজের মতে তৃষ্যা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
আলভি তা মানতে নারাজ। আনমনা হয়ে হাঁটতে হাঁটতে তৃষ্যার ক্লাস রুম পার করছিল তখন তার পা থেমে গেলো। প্রফেসর এখনো আসেন নি। আলভি দ্রুত পায়ে ক্লাসে ঢুকে তৃষ্যার বেঞ্চের সামনে দাঁড়ালো।তার পাশেই একটা ছেলে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।
আলভির (রাগে+ঘৃণায়) সারা শরীর কেঁপে উঠলো।খুব জোরে টেবিলের উপর শব্দ করে হাত রেখে বলে, "এই ছেলে নাম কি তোমার?"
তৃষ্যার পাশের ছেলেটার ধ্যান ছুটলো। আলভির কন্ঠের তেজে কিছুটা মিইয়ে গেলো। মিনমিন করে বলে, "আনিস মাহমুদ।"
আলভি কোমরে হাত দিয়ে জিভ দিয়ে গেল ঠেললো, "সো আনিস স্ট্যান্ড আপ এন্ড গো টু দি ব্যাক বেঞ্চে।"
আনিস প্রতিবাদ করলো, "কেনো?আমি কেনো যাবো?আর তুমি তো সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট তোমার এখানে কি কাজ?"
আলভি তৃষ্যার হাত টেনে বেঞ্চ থেকে বের করে আনিসের টিশার্টের কলার চেপে ধরে বের করে সোজা ব্যাক বেঞ্চে বসি দিলো, "আমি যেহেতু সিনিয়র তঝ চুপচাপ আমার কথা শুনো।"
আলভি তৃষ্যার বেঞ্চে বসে পরলো।পুরোটা সময় তৃষ্যা হতবাক হয়ে ছিলো।কিছু বলার সুযোগ সে পায় নি। প্রফেসর কে আসতে দেগে ভাবাভাবি রেখে তৃষ্যা বসে পরলো।
প্রফেসর হোয়াইট বোর্ডে মার্কার দিয়ে লিখলেন, "What is your life goal? How stable are you?"
লেখা শেষ হলে প্রফেসর বললেন, "আজ কোনো ক্লাস নিবো না। তোমাদের জীবনের লক্ষ্য জানবো।আমি যার না নিবো সে দাঁড়িয়ে বলবে।ওকে?"
এক জোটে উত্তর এলো। প্রফেসর এক করে জিজ্ঞেস করলেন। তৃতীয় বেঞ্চের তৃষ্যার টার্ন এলে সে উঠে দাড়ায়। নির্দ্বিধায় জানিয়ে দেয় তার জীবনের লক্ষ্য, "()
তৃষ্যার বলা শেষে সে বসে পরলো। আলভি উঠে দাড়ায়।অবাক হওয়ার অভিনয় করে বলে, "ফারাজ স্যার? কেমন আছেন?"
প্রফেসর ফারাজের মাথাটা দপ করে জ্বলে উঠলো। আলভি কে উনার ক্লাসে দেখে রাগটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলো, "এই এই তুই আমার ক্লাসে কি করছিস?যাহ তো যাহ বের হ।"
আলভি হাসলো, "আরে স্যার গত বছর তো এই ক্লাস অ্যাটেন্ড করিনি তাই আজ করতে আসলাম।"
প্রফেসর তাকে দ্রুত তাড়িয়ে দিতে চাইছেন, "বল বল তোর লক্ষ্য বল।"
আলভি হাত দিয়ে কুল ডাউন হতে বলে, "স্যার এতো প্যারা নিয়েন না।গত বছর যা ছিলো এই বছরও তাইই আছে।"
আলভি একটু আগেই বললো সে গতবার ক্লাস করেনি। এখন বলছে অন্য কথা।সব কথা তৃষ্যার মাথায় ঢুকলো না। প্রফেসর ফারাজ তাড়া দিলেন, "কি হলো বলছিস না কেনো?"
আলভি মাথার পিছনে হাত চালায় সুরের সঙ্গে জানিয়ে দেয় নিজের জীবন লক্ষ্য, "খাও দাও জিও পিও ট্যাক ইট ইজি ইয়ার। আর আমি স্টেবল আছি নিজের জীবন লক্ষ্যে।"
প্রফেসর ফারাজ তার কথা শুনে মাথায় হাত দিলেন। এই ছেলের সঙ্গে স্বয়ং প্রিন্সিপাল যখন পেরে উঠেন না সেখানে প্রফেসররা কীভাবে পারবে?
আলভি তৃষ্যার সামনে ঝুঁকে এসে ফিসফিসিয়ে বললো, "ছেলেদের থেকে দূরে থাকবে নয়ত খবর আছে রিনা খান।"
তৃষ্যা ভ্যাবাচ্যাকা খেলো। আলভির কন্ঠে একটা অধিকার বোধ ছিলো। কোনো এক অদৃশ্য অধিকার খাটিয়েই এই আলভি কথাগুলো বলেছে। কিন্তু কিসের (অধিকার) তা জানা নেই তৃষ্যার।
আলভি ক্লাস রুম থেকে বেরুনোর সময় শিষ বাজিয়ে বলে, "স্যার আপনার বউয়ের হাতে আমি আজ বিরিয়ানির খেতে আসবো।সব আয়োজন করে রাইখেন।"
প্রফেসর নিজের মুখে আর সংযোগ রাখতে পারলেন না, "বিদায় হ হতচ্ছাড়া। আরেকবার দেখলে ঠ্যাং ভেঙ্গে ফেলবো।"
আলভি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত গুজলো, "ক্লাসে ঢুকলে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেবো বলেছে ক্লাসের স্যারেরা।তাই যাচ্ছি অন্য ক্লাসে,আচ্ছা চালতা হু বদ দোয়া ও মে ইয়াদ রাখনা।"
আলভির গানের ভর্তা শুনে পুরো ক্লাস হেসে উঠলো।অপর দিকে আলভি হেলেদুলে নিজের ক্লাসের দিকে অগ্রসর হলো। তৃষ্যা এখনো ভাবছে আলভি কিসের জোর খাটিয়ে অন্য ছেলের সঙ্গে কথা বলতে বা দেখা করতে মানা করলো?জানা দরকার।
★★★★★★★★
সৌহার্দ্য বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।পরনে একটা টিশার্ট, চুলগুলো এলোমেলো।কানে ব্লুটুথ লাগানো।হাতে মোবাইল ঠোঁটের কোণে অমলিন এক হাসি, "তো জান কেমন আছো?"
ইনায়া বিছানায় শুয়ে ফোন চেহারার সামনে ধরে বলল, "ভালো আছি।"
সৌহার্দ্য তার মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে গোপনে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, "চেহারা আর ভয়েস তো তা বলছে না সোনা।"
ইনায়া আর লুকালো না। ফ্যামিলি সব ঝড়ের কথা বলে দিলো।কতটা যন্ত্রণা, সমস্যায় আছে ইনায়ার ছোট্ট মনটা, "হুম। আম্মুর মনটা খারাপ। কিন্তু উনি এখন বিয়েটা করাতে চাইছে।পাপা বিজনেস সামলাতে পারছে না।তাই আপু বিজনেস সামলায়। এজন্য প্রায়শই আপু বাসায় থাকে না।"
সৌহার্দ্য তার মন ভালো করতে বাইরে যাওয়ার কথা বলে, "আচ্ছা ঘুরতে যাবে?"
সৌহার্দ্যের সঙ্গে কথা বললে ইনায়ার সব চিন্তা পালিয়ে যায়। দুষ্টুমি করে বললো, "নাহ। ডাইরেক্ট বিয়ে করবো। তারপর।"
সৌহার্দ্য উৎফুল্লিত হয়ে পরলো।তবে সাথে সাথে তা লুকিয়ে ফেলে জিজ্ঞেস করলো, "কবে করবে?"
ইনায়া বিছানায় বসে কোলে বালিশ নিয়ে বসে পরলো, "পাপা এই সপ্তাহের শুক্রবারে চাইছে।"
সৌহার্দ্য চমকিত নয়নে তাকালো। মোবাইলে তারিখটা দেখলো, "মাই গড।আজ তো সোমবার। আচ্ছা তুমি রাজি?"
ইনায়া উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে বললো, "অফকোর্স।বাট ফ্যামিলির এতো অগোছালো সময়টায় বিয়ে।"
সৌহার্দ্য কিছুটা মন খারাপ করলো, কিন্তু ইনায়ার কথায়ও যুক্তি আছে। ঠোঁট কামড়ে বেলকনির চেয়ারে বসলো, "না করলে সমস্যা নেই।আমি ওয়েট করবো।"
ইনায়া সঙ্গে সঙ্গে হাত নাড়িয়ে জানান দিলো, "না না এবার বিয়েটা হওয়া উচিত।তুমি তোমার ফ্যামিলির সাথে কথা বলো। রাজি হলে শুক্রবার বিয়ে।"
সৌহার্দ্য আবার খোশ হলো।বিয়েটার জন্য যে তার আর তর সইছে না। ইনায়াকে যে সে আপন করে চাইছে তীব্রভাবে।তা তো এই পাগলী মেয়ে বুঝে না, "গ্রেট।তুমিও বলো।ওকে এখন বাই।"
ইনায়া ফোনটা রেখে উঠে দাঁড়ালো। সঙ্গে সঙ্গে মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো।আবার বিছানায় বসে পরলো। কয়েকদিন ধরেই হচ্ছে। ইনায়া ডক্টরের কাছে যাবে যাবে করেও যাওয়া হচ্ছে না।
আজ যাবে বলে ঠিক করলো।যেই ভাবা সেই কাজ।বাসায় মিথ্যে কথা বলে হসপিটালের জন্য বেড়িয়ে পরলো ইনায়া। ডক্টরের কেবিনে বসে ইনায়া ডক্টরের প্রথম প্রশ্নের উত্তর বলতে শুরু করলো।
ডক্টর সবটা শুনে কিছু লিখলেন, কাগজটা দিয়ে বললেন, "এই টেস্ট গুলো করিয়ে কাল আবার আসবেন।"
ইনায়া মাথা নাড়িয়ে বেড়িয়ে গেলো।টেস্ট করিয়ে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু হসপিটালে ক্যাথরিনকে দেখে মুখ লুকিয়ে বেরিয়ে গেলো। ক্যাথরিন দেখলে বেশ অনেক প্রশ্ন করবেন।কাল করাবে ভেবে চলে গেলো ইনায়া।
★★★★★★★★
নূরায়েশা রুমের এককোণ থেকে অন্যকোণ লাটিমের মতো চক্কর মারছে।কাল রাতে যা ঘটেছে এখনো কথা বলা হয়নি।নিজেই লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিছানায় বসে পরলো নূরায়েশা।ভাবুক নয়নে বিছানার ঠিক সামনের ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় তাকিয়ে আছে।নিজেকে নিজেই বললো নূরায়েশা, "এভাবে লজ্জা পেলে চলবে না রুদ।তোকে ক্লিয়ার করতে হবে এই বিষয়।"
কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে দাড়ায় সে।নূরায়েশা রুম থেকে বেরিয়ে সেহরাদের রুমে নক করে ঢুকে পরলো। সেহরাদ ডিভানে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিল। নূরায়েশাকে রুমে ঢুকতে দেখে সে চমকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ল্যাপটপটা রেখে উঠে দাঁড়ালো।
নূরায়েশা রুম লক করে তার সামনে দাঁড়িয়ে নির্দ্বিধায় জিজ্ঞেস করলো, "তোমার কাল রাতের কথা মনে আছে?"
সেহরাদ দুষ্টু হাসলো।উঠে দাড়িয়ে মন্থর গতিতে এগিয়ে আসতে আসতে জবাব দিলো, "আমার সবই মনে আছে।এন্ড আমি এর জন্য মোটেও রিগ্রেট না।"
নূরায়েশা সটান হয়ে দাঁড়ালো বুকে হাত বেঁধে বলে, "তোমার থেকে আশাও করি না। ইনফ্যাক্ট তুমি আবার ট্রাই করবে এটাও জানি।"
সেহরাদ চুলে হাত চালিয়ে নিঃশব্দে হাসে, "তো চেষ্টা করবো না?তোর হাসব্যান্ড হই। অধিকার আছে আমার।"
খ্যাক করে উঠলো নূরায়েশা।সাপের মতো ফস ফস করছে, "কিসের হাসব্যান্ড?আই হেইট ইউ।আর ডিভোর্সও খুব দ্রুত দিবো।"
সেহরাদ রেগে গেলো।সব মেনে দিবে কিন্তু তার আর হৃদয়হরণীর বিচ্ছেদ অসম্ভব।নূরায়েশার হাত ধরে ঘুরিয়ে পিঠটা নিজের সাথে চেপে ধরলো।সাথে জড়ালো করলো নিজের হাতের বাঁধন।
কর্তৃত্বপূর্ণ স্বরে ফিসফিসিয়ে বললো, "একবার বলেছিস এটাই এনাফ। আরেকবার শুনলে নিজ হাতে কবর দেবো তোকে।"
নূরায়েশা ধিক্কার সম্পূর্ণ হেসে বলল, "তো যাও না গিয়ে কাফনের কাপড় কিনে আনো।কারণ আমি ডিভোর্স দিবোই।"
সেহরাদের রাগ সপ্তম আসমান ছুঁই ছুঁই।নিজের উপর কান্ট্রোল হারাচ্ছে। আরেকটু চেপে ধরে, "এমন কিছু করতে বাধ্য করিস না যে পরে নিজেরই পস্তাতে হয়।"
নূরায়েশা ব্যথায় ককিয়ে উঠলো।তারপরেও তেজ কমালো না, "কি করবেন ডক্টর কৌশিক সেহরাদ খান?"
বক্র হাসলো সেহরাদ, কানের লতিতে কামড় দিলো, "যা বিনা অনুমতিতে করতে চাইছি না।"
সেহরাদ ছেড়ে দিয়ে এক সেকেন্ড দাঁড়ালো না।রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো নূরায়েশা, "কি বললো কৌশিক?যা ভাবছি তারই ইঙ্গিত দিয়ে গেলো?"
নূরায়েশা মাথা ঝাঁকায়, বিছানার ব্ল্যাংকেটটা খামচে ধরে টান মেরে ফেলে দিলো। বালিশটা প্রচন্ড ক্রোধে ছুঁড়ে ফেললো। বিছানায় বসে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে,নিজেকে শান্ত করার প্রয়াসে। মোবাইলটা বেজে উঠল বিনা দেখে তুললো, "হ্যাঁ?"
ক্যাসিয়ানের কন্ঠস্বর ভেসে এলো, "ম্যাম রাশিয়ান ডিলার এসেছেন।"
নূরায়েশা চুলটা পিছনের দিকে হেলিয়ে হাতটা শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। হাতে রক্ত দেখা যাচ্ছে,সেথায় নূরায়েশার ধ্যান নেই।আসছি বলে রেখে দিলো।ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে পরলো নূরায়েশা।নিজের সমস্যায় তো আর বিজনেস নষ্ট করা যাবে না।
শেষ থেকে,,,,আবার,,,, শুরু হবে 🫰
{গঠনমূলক মন্তব্য করুন 🫶}
(লেখিকা কথা: আগামী পর্বে আমার সৌহার্দ্য আরভি খানের বিবাহ সিপিসিয়াল। গিফটসহ পড়তে আসবেন। না আসলে ক্যাচাল লাগিয়ে দেবো।)