বই রিভিউ ( পুতুলনাচের ইতিকথা- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়)।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
| ----- | ----- |
|---|---|
| নাম | পুতুলনাচের ইতিকথা |
| লেখক | মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় |
| প্রথম প্রকাশ | ১৯৩৬ |
| মূল্য | ৩০০ টাকা। |
এক বিকেলে জনমানব শূণ্য জঙ্গলময় একটা জায়গাই বটগাছের নিচে হারু ঘোষের লাশ আবিষ্কার করে গ্রামের একমাত্র ডাক্তার শশী। সেখান থেকেই শুরু। গাওদিয়া গ্রামের একমাত্র ডাক্তার শশী। এই গ্রামের কয়েকটা পরিবারের সাথে শশীর সম্পর্ক বেশ ভালো। তার মধ্যে একটা হচ্ছে হারু ঘোষের পরিবার। হারু ঘোষের ছেলে পরান, এবং পরানের বৌ কুসুম। হারু ঘোষের মেয়ে মতি। মতির বিয়ের জন্য ছেলে দেখতে গিয়েই মারা যায় হারু ঘোষ। এরপর দায়িত্ব টা যেন শশীর কাঁধে এসেই পড়ে। কুমুদ শশীর বন্ধু। একসঙ্গে দুজন শহরে লেখাপড়া করত। কুমুদ চিরকালই ঘরবাড়ি ছাড়া ছেলে। সে কোথাও নিজেকে একটানা বেশিদিন রাখতে পারত না। ঘটনাচক্রে মতির সাথে কুমুদের একটা অন্তরের সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়।
কুমুদ মতির সাথে তার বিয়ের প্রস্তাব দিলে শশী রাজি হয় না। কিন্তু একপর্যায়ে গিয়ে শশী তাতে সম্পতি দেয়। শশীর বাবা গোপাল দাশের সাথে ছেলের মনমালিন্য চলতেই থাকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। শশীর সাথে একটা অন্যরকম অন্তরের সম্পর্ক ছিল পরানোর বৌ কুসুমের। কিন্তু শশী সেটা কখনোই বুঝতে পারেনি। গাওদিয়া গ্রামের একজন আধ্যাত্মিক মানুষ ছিল যাদব। একপর্যায়ে সে কথায় কথায় বলে দেয় আমি মরব রথের দিন। এটা নিয়ে একটা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়ে যায় গ্রামে। শেষে নিজের কথা রাখতে আশ্চর্যজনকভাবে এক রথের দিনই হাজার মানুষের সামনে মারা যায় যাদব এবং তার স্ত্রী পাগলদিদি। সেই মৃত্যুর রহস্য শুধু শশী জানে।
যাদব তার সম্পত্তি সব উইল করে দিয়ে যায় যেটা দিয়ে হাসপাতাল করা হয় গ্রামে। এবং সেইটা পুরোপুরি দায়িত্বে থাকে শশী। তবে শশীর গ্রামে আর ভালো লাগে না। ডাক্তারি পাশ করে সে গ্রামে এসে চিকিৎসা করে চলেছে। তার ধারণা সে আর কখনোই এই গ্রাম থেকে বের হতে পারবে না। এই গ্রামেই মানুষের চিকিৎসা করে তাকে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে হবে। এইজন্য সে সিদ্ধান্ত নেয় এই গ্রাম ছেড়ে সে চলে যাবে। সূদূর বিলেতে চলে যাবে আর ফিরে আসবে না। একপর্যায়ে গিয়ে পরান তার বৌ কুসুম তার শ্বশুরবাড়িতে একেবারে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন শশী পরানের বৌ কুসুমকে তার সাথে চলে যেতে বললে কুসুম রাজি হয় না। সেই ছেলেমানুষী করা কুসুম যেন অনেক পাল্টে গিয়েছে। কুসুম নিজেও বলে তার মধ্যে আর কোন শখ অবশিষ্ট নেই। সে বাকি জীবন এভাবেই বাঁচবে।
শেষ পযর্ন্ত কুসুম এবং পরান গ্রাম ছেড়ে চলে গেলে শশীও যেন ব্যতিব্যস্ত হয়ে যায় গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার জন্য। দিনে দিনে শশীর শরীর টা খারাপ হয়ে আসে তার সাথে তার মন টাও আর সায় দেয় না। তবে শশীর বাবা গোপাল এটা কখনোই মেনে নিতে পারে না তার একমাত্র ছেলে আজীবনের জন্য গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে। আপনাদের কী মনে হয় শশী কী শেষ পযর্ন্ত গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে। পরানের বৌ কুসুমের সঙ্গে শশীর এমন অপ্রকাশিত ভালোবাসার কী কোন নাম দেওয়া সম্ভব। বাকিটা জানতে হলে আপনাদের বইটা পড়তে হবে।
ব্যক্তিগত মতামত
মানুষের জীবন প্রতি মূহূর্তে পরিবর্তিত হয়। মানুষ হয়তো নিজেই জানে না আসলে সে কী চাই কেন তার এই বেঁচে থাকা। পুতুলনাচের ইতিকথা উপন্যাসে ডাক্তার শশী এমনই এক রহস্যময় চরিত্র। বিশেষ করে উপন্যাসের শেষের এই অংশটা পড়ে আমি নিজেও থমকে যায়। শেষে লেখক যেন নীরবতার সাথে অনেক কিছু বলে গেল। "পরানের বাড়িতে এখনও লোক আসে নাই। তার ওপাশে তালবন। তালবনে শশী কখনো যায় না। মাটির টিলাটির উপর উঠিয়া সূর্যাস্ত দেখিবার শখ এ জীবনে আর একবারও শশীর আসিবে না"। বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ একটা উপন্যাস পুতুলনাচের ইতিকথা। আমার কাছেও বেশ ভালো লেগেছে উপন্যাস টা।
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।












.png)



Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এই উপন্যাসের নাম শুনেছি, পড়া হয় নাই কোন দিন। আপনার এই রিভিউ এর মাধ্যমে এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া গেল।
ডাক্তার শশীকে একটা ট্রাজিক হিরো বলে মনে হচ্ছে। সত্য নাকি?
ভাল থাকুন।
পুতুল নাচের ইতিকথা বাংলা সাহিত্যের অনন্য সৃষ্টি। এই উপন্যাসটি মানুষকে বড় হতে শেখায়। অনেক ছোট বেলায় পড়েছিলাম। আপনার লেখা পড়ে আবারও মনে পড়ে গেল পুরোটা৷ মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের একটি নক্ষত্র। শ্রদ্ধা তাঁর প্রতি৷
চমৎকার একটি বুক রিভিউ পোস্ট আপনার ব্লগের মাধ্যমে দেখতে পেলাম।আপনি পুতুলনাচের ইতিকথাবইটির খুব সুন্দর রিভিউ করলেন।আমার কাছে ভালো লেগেছে আপনার বুক রিভিউটি পড়ে। ধন্যবাদ জানাচ্ছি খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য।