বাংলা গল্প ৫

পরিবারের সবাইকে নিয়ে মনোয়ার সাহেব খেতে বসেছেন। এখন আর সবাই একসঙ্গে খেতে বসা হয় না বললেই চলে। বড় মেয়ে তো আর এখানে থাকে না। তাছাড়া অফিসের দিনগুলোতে মনোয়ার সাহেব বাসায় ফেরেন অনেক রাতে। হৃদি আর অজি টিউশনি করে কে কখন ফেরে, তা ঠিক নেই। তারানা খাবার তৈরি করে ডাইনিং টেবিলে রেখে দেন। রাতে যে যখন খুশি, খেয়ে নেয়।
সন্ধ্যার পর আরেক দফা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তারানা খিচুড়ি আর ইলিশ ভাজা করেছেন। সঙ্গে আছে তার নিজের হাতে বানানো আমের আচার। তারানা আম পছন্দ করেন বলে বিয়ের পর থেকেই মনোয়ার সাহেব আমের সিজনে প্রায় প্রতিদিনই বাসায় আসার সময় আম নিয়ে আসেন। বছরের এই সময়টায় প্রচুর আম পাওয়া যায়। অনেক বছর আগে এমনই একটি রাতে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেতে বসে মনোয়ার সাহেব আম সম্পর্কিত একটি গ্রাম্য শ্লোক শুনিয়েছিলেন:
‘পৌষে কুশি,
মাঘে বোল (মুকুল),
ফাল্গুনে গুঁটি,
চৈতে কাটিকুটি,
বোশেখে দড়াই আঁটি,
জ্যৈষ্ঠতে চাটিচুটি,
আষাঢ়ে ভ্যাঁ-ভোঁ।’
সেদিন ছেলেমেয়েগুলো গম্ভীর বাবার মুখে এই ধরনের শ্লোক শুনে হেসেই কুটিকুটি হয়েছিল। কিন্তু আজকে সবাই চুপচাপ। একমনে ইলিশ মাছ আর আচার দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে যাচ্ছে। তারানাই প্রথম মুখ খুললেন, ‘আমার মনে হয় সুমনকে একটু বলে দেখতে পারি। ও একটু খোঁজ নিয়ে দেখুক, আসলেই রকি অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করে কিনা।’
তারানার কথায় মনে হয় সবারই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সুমন ওদের ছোট মামা। পেটে জিলিপির প্যাঁচওয়ালা মানুষ। প্যাঁচ নিয়েই তার কারবার। এ কারণে নিজের সংসারটাও টেকাতে পারেনি। প্যাঁচ সৃষ্টিকারী মানুষরা যখন যেখানে থাকে, সেখানেই প্যাঁচ বাঁধায়; এমনকি নিজের সংসারেও। দেখা গেছে, সংসারই হয় তাদের প্রথম টার্গেট। তাদের মূলমন্ত্রই মনে হয়, ‘প্যাঁচিং বিগিনস অ্যাট হোম’! তবে তারা শুধু প্যাঁচ সৃষ্টিই করতে পারে, প্যাঁচ ছাড়াতে আর পারে না।
অজি বলল, ‘ওনার কথা বোলো না তো, মা। যে কয়টা কথা বলে, সব ফালতু কথা! মামার সঙ্গে কথা বলতেও আমার কেন জানি ভালো লাগে না।’
হৃদিও মুখ খুলল, ‘আমি বুঝি না, সামান্য একটা চুল নিয়ে তোমরা যা সিন ক্রিয়েট করছ; এটা কি ঠিক হচ্ছে? সেটা আবার আপা সংরক্ষণও করে রেখেছে! ওটা তো আপার চুলও হতে পারে।’
সিঁথি কিছুটা রেগে বলল, ‘তুই দেখেছিস, চুলের সাইজ? ববকাটিং করা কোনো মেয়ের চুল। তারের মতো শক্ত। আমার চুল সিল্কি; লম্বা।’
মনোয়ার সাহেব ধমকে উঠলেন, ‘অ্যাই, থামবি তোরা? খাওয়ার সময় চুল নিয়ে এসব কী শুরু করলি? দেখি, আমিই রকির সঙ্গে কথা বলব।’
সিঁথি বলল, ‘তুমি কথা বলবে না, বাবা। আমার এক কথা, আমি সংসার করব না।’
মনোয়ার সাহেব বেশ রেগেই গেলেন। ‘তোর এক কথায় তো আর সমাজ চলবে না। সমাজ বারো রকম মানুষের চব্বিশ রকম কথার জায়গা।’
‘সমাজ নিয়ে আমি মোটেও ভাবছি না, বাবা। আমার কাছে আমার মেন্টাল পিস-ই সবচেয়ে বড়। ছেলেরা বারো রকম মেয়ের সঙ্গে মেলামেশা করলে দোষ হয় না; কিন্তু মেয়েরা এর প্রতিবাদও করতে পারবে না, সমাজ ছ্যাছ্যা-ভ্যাভ্যা করবে, এই টাইপের সমাজ কী বলল নাকি মরল তাতে আমার কিছুই যায়-আসে না।’
কথাগুলো বলে সিঁথি খাওয়া শেষ না করেই উঠে পড়ল। সবার মুড অফ হয়ে গেল। অন্যরাও চুপচাপ খেয়ে উঠে গেল।
.
অজির রুমে আছে মান্ধাতা আমলের কনফিগারেশনের একটি কম্পিউটার। এসএসসির স্কলারশীপের টাকার সঙ্গে টিউশনির কিছু টাকা যোগ করে কিনেছিল। ফেসবুকিং করতে অজি পছন্দ করে না; কিন্তু আজকে সে ফেসবুক খুলে বসল। বাংলা ও ইংরেজিতে মেয়েটির নাম লিখে দেখল। কোনো ছবি বা ইনফোর সঙ্গেই মেলে না। তাছাড়া সে শুধু মেয়েটির ডাকনাম জানতে পেরেছে: ‘লুমুন’। প্রথমে ভেবেছিল, রাজকন্যার সঙ্গে কথা না বললে তার নাম জানা সম্ভব না। ইচ্ছা থাকলে যে উপায় হয়, তা আরেকবার প্রমাণিত হলো। তবে আফসোস, ইচ্ছা থাকলেও সবসময় বিজয় হয় না। অজি এটুকু নিশ্চিত, ইচ্ছাশক্তির কারণেই একদিন না একদিন মেয়েটির সঙ্গে সে কথা বলেই ছাড়বে; কিন্তু তাকে জয় করতে পারবে কিনা, তার কোনো গ্যারান্টি নেই!
.
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হলে হৃদির মনোজগৎ ভিন্ন আমেজের অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়। আগের অনেক কথা মনে পড়ে যায়। না, ওর কোনো দুঃখের স্মৃতি নেই। বাবা-মায়ের খুব আদরের মেয়ে সে। তবে একজন মানুষ ওর জীবনের আনন্দকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সে আর কেউ নয়-রাজীব। রাজীবকে হারানোর ভয় হৃদির ওপরও ভর করেছে! ভয়ের কোনো কারণ নেই; তবুও ভয়! কাউকে চূড়ান্তভাবে ভালোবাসলে কোথা থেকে যেন হারানোর ভয়ও এসে জুড়ে বসে! এই মুহূর্তে রাজীবের সঙ্গে কথা বলতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু বড় আপা হৃদির রুমে; কথা বলা সম্ভব না। হৃদি টিউশনির টাকা জমিয়ে রাজীবের জন্য একটি হাতঘড়ি আর একটি শার্ট কিনেছে। আগামীকাল রাজীবের জন্মদিন। এবার হৃদিই রাজীবকে সারপ্রাইজ দেবে!

Sort:  

Hello,

We have found that all or part of the above post may have been copied from: https://www.facebook.com/asifmehdi.writer/posts/1437020923003563

Not indicating that the content you post including translations, spun, or re-written articles are not your original work could be seen as plagiarism.

These are some tips on how to share content and add value:

  • Using a few sentences from your source in “quotes.” Use HTML tags or markdown ">" before the quote.
  • Linking to your sources.
  • Include your own original thoughts and ideas on what you have shared.
  • It is recommended that the quotes should not cover more than 50% of the whole post. At least 50% of the content should be original.

Repeated plagiarized posts are considered spam. Spam is discouraged by the community, and may result in action from the cheetah bot.

If you are actually the original author, please do reply to let us know!

More Info: Abuse Guide - 2017.


If you reply to this comment directly, we may not notice your response.
It is recommended to contact us in our Discord Channel, instead.

Thank you.

BOOST you post ! Free >> steem.link/link

WARNING - The message you received from @shourov411 is a CONFIRMED SCAM!
DO NOT FOLLOW any instruction and DO NOT CLICK on any link in the comment!

For more information, read this post:
https://steemit.com/steemit/@arcange/phishing-site-reported-autosteem-dot-info

If you find my work to protect you and the community valuable, please consider to upvote this warning or to vote for my witness.