ক্যান্সারের মতো রোগ যেন সৃষ্টিকর্তা কাউকে না দেয়।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি-
হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই, আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে খুবই হৃদয় বিধায়ক একটি ঘটনা শেয়ার করবো। ক্যান্সার কতটা ভয়ানক হতে পারে এ ঘটনার মাধ্যমে কিছুটা হলেও, বুঝতে পারবেন।
আমি যে অফিসে জব করি, সেখানে আমার অধীনে কয়েকজন লোক কাজ করে। তাদের মধ্যে একজনের নাম হলো হুমায়ুন কবির। তার বাড়ি উত্তরবঙ্গের দিনাজপুরে। বাংলাদেশের বর্ডার এলাকায় বসবাস করতো হুমায়ুন কবির। সেখান থেকে ২০০১ সালে জীবিকার তাগিদে ঢাকা শহরে আসে। মাত্র এসএসসি পাস করে এইচএসসিতে ফেল করে সংসারের বোঝা মাথায় নিয়ে আজব শহর ঢাকাতে পা রাখে হুমায়ুন কবির। প্রথমে শনির আখরাতে কয়েকদিন থাকার পরে গ্রামের পরিচিত একজনের মাধ্যমে আমাদের অফিসে চাকরিতে জয়েন করে। বর্তমানে তার চাকরির বয়স ২৩ বছর চলতেছে।
চাকরিতে জয়েন করার কয়েক বছর পরে হুমায়ুন কবির ভাই তার গ্রামে বিয়ে-শাদী করে। দীর্ঘদিন ব্যাচেলর জীবন অতিবাহিত করেছে। বিয়ের কয়েক বছর পরে হুমায়ুন কবিরের ঘরে সৃষ্টিকর্তা একটি পুত্র সন্তান দান করে। খুবই আদর যত্ন করে হুমায়ুন কবির তার ছেলেকে লালন-পালন করতে থাকে। হুমায়ুন কবির ভাইয়ের ছেলে যতই বড় হতে থাকে তার বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে থাকে। গ্রামের চিকিৎসায় তেমন ভালো কোন ফলাফল পাচ্ছিল না। যার ফলে হুমায়ুন কবির ভাই তার ফ্যামিলিকে ঢাকায় নিয়ে আসে। কর্মস্থলের পাশেই বাসা ভাড়া নিয়ে ফ্যামিলি সহ বসবাস করতে থাকে।
হুমায়ুন কবির ভাইয়ের ছেলে যখন ক্লাস নাইনে পড়ে তখন তার ছেলের পায়ে একটু সমস্যা দেখা দেয়। ছেলেটার পায়ের রগ ছোট হওয়ার কারণে তার একটি পা কিছুটা বাঁকা হয়ে যায়। যার ফলে ঢাকার নামকরা হসপিটালে অপারেশনের মাধ্যমে ছেলেটার পা স্বাভাবিক হয়। এভাবে ছেলেটা এইচএসসি পরীক্ষা পাস করে। হুমায়ূন ভাইয়ের খুব ইচ্ছা ছিল তার ছেলেটাকে সে ইউরোপে পাঠাবে। সেখানে পাঠাতে যত টাকা লাগে, সে খরচ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু উপরওয়ালার খেলা বড় কঠিন। তিনি কখন কাকে নিয়ে খেলা শুরু করে সেটা কেউ বলতে পারেনা।
গত কয়েক মাস আগে হঠাৎ করে হুমায়ূন ভাইয়ের ছেলের ক্যান্সার ধরা পড়ে। এ খবরটি শোনার পরে আমরা সবাই বিস্মিত হয়ে গেলাম। এত ছোট ছেলের কিভাবে ক্যান্সার হয়। ক্যান্সার ধরা পড়ার সাথে সাথে হুমায়ূন ভাই ছেলেকে নিয়ে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী, ঢাকা মেডিকেল, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ সহ বিভিন্ন হসপিটালে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছেন। প্রচুর পরিমাণে কেমোথেরাপি দিয়েছেন। ২৩/ ২৪ বছর চাকরি করে যে টাকা জমিয়েছিলেন, সেগুলো সব তার ছেলের চিকিৎসার জন্য করলেন, বাবার রেখে যাওয়া কিছু জমি জমা ও বিক্রি করলেন। অর্থাৎ নিজের ভিটেবাড়িটা ছাড়া আর কোন অর্থ সম্পদ বাকি রাখলেন না। সবকিছু বিক্রয় করে এই ছেলের চিকিৎসা করিয়েছেন।
প্রায় চার মাস ছেলেকে নিয়ে দিনরাত হাসপাতালের বারান্দায়, হাসপাতালের বেডে ঘুমিয়েছেন। দিনকে দিন, রাতকে রাত মনে করেননি। যখন যেটা দরকার পড়েছে, যখন যেটা করতে ডাক্তার বলেছে, সেটাই তিনি করেছেন। কিন্তু উপরওয়ালা যদি কারো হায়াত না রাখে, পৃথিবীর কারো শক্তি নেই তাকে বাঁচিয়ে রাখা। গত শনিবারে দিনগত রাতের বেলা হুমায়ূন ভাইয়ের ছেলে সোহরাওয়ার্দী হসপিটালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এত অল্প বয়সে ছেলের মৃত্যু কোন বাবা মা মেনে নিতে পারে না। তারপরেও মেনে নিতে হয়। হুমায়ূন ভাই তিনির সাধ্য অনুযায়ী ছেলেকে বাঁচানোর জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করেছেন। অর্থ খরচ করতে কোন দিক দিয়ে কোন হিসাব করে নাই। তিন চার মাসে প্রায় ৮ লাখ টাকার মত খরচ করেছেন। হুমায়ূন ভাই বলতেছে তার কোন আফসোস নেই, তিনি তার ছেলেকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখে নাই। উপরওয়ালা ছেলে দান করেছিল, আবার ওপরওলাই ছেলে নিয়ে গেছে। ক্যান্সার হলে মানুষকে বাঁচানো খুব কঠিন। ক্যান্সার হওয়ার পরে মানুষ বেঁচে ফিরেছে, এরকম আমি কাউকে এখনো দেখি নাই। আমি দোয়া করি আল্লাহ যেন কাউকে ক্যান্সারের মতো রোগ না দেয়।
💖💖💖সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖
আল্লাহ হাফেজ
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
নিয়তি মেনে নিতেই হয় ভাই! তবুও একমাত্র সন্তান, কত স্বপ্ন সেই সন্তানকে ঘিরে... আর এমন করুণ ভোগান্তির পর আরোও করুণ পরিণতি মেনে নেয়াটা কষ্টের। কিন্তু উপরওয়ালার বিচার তো মেনে নিতেই হবে! হুমায়ুন সাহেব এবং তার স্ত্রী এই শোক কাটিয়ে উঠার শক্তি পাক। তাদের ছেলের আত্নার শান্তি কামনা করি।
এই বয়সে ছেলেটার মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু বাস্তবতা মেনে নিতে হয়। ধন্যবাদ।
Task Dane
পৃথিবীতে সবচাইতে কঠিন বোঝা হচ্ছে পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ। সৃষ্টিকর্তা এমন মূহূর্ত কারো জীবনে না নিয়ে আসুক। এই ক্যান্সার জিনিস টা মানুষের সঙ্গে পরিবার টাকেও শেষ করে যায়।
আসলে পৃথিবীতে যদি কোন খারাপ রোগ অথবা খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য কোন কিছুর কথা বলা হয় তাহলে ক্যান্সারের নামই আগে ভেসে আসবে৷ কারণ ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তি কখনোই বেঁচে থাকতে পারেনা৷ তবে এখন আধুনিক যুগে এসেও অনেক সময়ই অনেকেই এই ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে ব্যর্থ হয়৷ আর এর থেকেও বেশি কষ্টের বিষয় হচ্ছে ছেলের লাশ বাবার কাঁধে নিয়ে হাঁটা৷ সৃষ্টিকর্তা যেন এমন কষ্ট আর কোনো বাবার কাছেই না দেয়৷