প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করলো হাইকোর্ট
চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছে হাইকোর্ট। এছাড়া প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও দিয়েছে আদালত।
একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ কমিটি গঠন করেন।
বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদের নেতৃত্বে প্রশাসনিক কমিটি এবং ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে বিচারিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রতিটি কমিটির সদস্য সংখ্যা হবে পাঁচজন করে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে কমিটিকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সরকোরের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
কমিটি দুইটির কাজের বিষয়ে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, বিচারিক তদন্ত কমিটির কাজ হচ্ছে, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে কারা জড়িত এবং তাদের শাস্তি কী হওয়া উচিত, তা খুঁজে বের করা এবং নির্ধারণ করা। আর প্রশাসনিক কমিটির কাজ হচ্ছে, প্রশ্নফাঁস প্রতিরোধে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, কী কী সমাধান আছে, সেগুলো নির্ধারণ করা।
তিনি বলেন, আদালতের আদেশের কপি পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে আদেশে। তদন্ত করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় পরীক্ষা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুর নাহার সিদ্দিকা, শিকদার মাহমুদুল রাজি, মোহাম্মদ রাজু মিয়া ও আইনজীবী নূর মুহাম্মদ আজমী।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মনিরুজ্জামান।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, শুনানির সময় আদালত বলেছেন, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রশ্ন ফাঁস মহামারি আকার ধারণ করেছে এবং এটা মাদকের চেয়ে ভয়াবহ। মাদক যেভাবে তরুণ সমাজকে ধ্বংস করছে প্রশ্নপত্র ফাঁসও তেমনি দেশের তরুণদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে। এ সময় আদালত নিরব দর্শকের মতো বসে থাকতে পারে না।
আদালত আরও বলেন, ১৯৭০ সালে যারা এমবিবিএস পরীক্ষা দিয়েছিল তারা উচ্চতর ডিগ্রি নিতে উন্নত দেশে যাওয়ার পরে তাদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল। কিন্তু ১৯৭১, ৭২ এবং ১৯৭৩ সালে পরীক্ষার হলে চাকু ছোরা নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিল তাদেরকে বিদেশে কোথাও পড়ার অনুমতি দিতো না। এমনকি ভারতেও পড়ার সুযোগ দেয়া হতো না।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানান, আদালত দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেছেন। শিক্ষা সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, আইন সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের ড্রাফটিং উইংয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, তথ্য প্রযুক্তি সচিব, বিটিআরসি’র সচিব-চেয়ারম্যান, বিটিসিএল’র চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক-চেয়ারম্যান, ঢাকা-রাজশাহী, কুমিল্লা-যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল সিলেট, দিনাজপুর উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডর চেয়ারম্যান এবং পুলিশের মহাপরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগেই প্রশ্ন ফাঁস হলে পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এমনকি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরেও প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পেলে পরীক্ষা বাতিল হবে বলে জানিয়েছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসেন।
টাঙ্গাইলটাইমস