আব্বার হাঁটতে শেখা!

in #father15 days ago

২০১৮ সাল, আমি পরের বছর উচ্চমাধ্যমিক দেবো। সামনেই টেস্ট পরিক্ষা।
আইসিটির এইসটিএমএল পড়ছিলাম, তখন ভোররাত। হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো, স্ক্রিনে দেখতে পেলাম "আব্বা"!
রিসিভ করে কানে ধরতেই আম্মার ভেঁজা কন্ঠ! "তোর আব্বার পায়ের লিগামেন্টে টান লাগছে, হাঁটতে পারতেছে না।" পাশেই আব্বার ঘুঙ্গানি শুনতে পাচ্ছি। বললাম আব্বার কাছে দেও, আব্বা ফোন নিয়ে ঘুঙ্গানি থামিয়ে ভালো হয়ে যাওয়ার অভিনয় করলেন। আমাকে বললেন "তুমি পড়ো, টেনশন কইরো না, আমার কিছু হইবো না।" আমার পরিক্ষা তাই আমাকে টেনশন করতে মানা করলেন।

আব্বার কিছু হলে আমি ঠিক থাকতে পারিনা। ফোন কেটেই আমার কান্না শুরু হয়ে গেলো। চোখের সামনে আব্বাকে কত কষ্ট করতে দেখেছি। আমাদের কষ্ট হবে, পড়ার ক্ষতি হবে তাই কোনো কাজ করতে দেয়নি কোনোদিন। একাই খেটে গেছেন সারাটা জিবন।

পরেরদিন আব্বাকে ঢাকায় পিজিতে এবং পরে কেয়ার হসপিটালে নেয়া হলো। সবরকম টেস্ট করানোর পর ওষুধ নিয়ে বাসায় চলে আসলো। আব্বার অবস্থা তেমন ভালো না। ডাক্তারের কথামতো আমরা ধরেই নিয়েছিলাম আব্বা আর কোনোদিন হাঁটতে পারবেন না।

যার হাত ধরে আমি হাঁটতে শিখেছি তাঁকে আর কোনদিন হাঁটতে দেখবো না ভেবে কলিজা ছিড়ে যাওয়ার মতো অনুভব হত। আল্লাহ'র কাছে একটাই দোয়া করতাম, যেন আব্বাকে আরেকবার হাঁটতে দেখি।

ভ্যাকেশনে বাড়ি যাওয়ার সময় অটো আমাদের গ্রামের বাজারের আশেপাশে যেতেই হঠাৎ আব্বাকে রাস্তায় দেখে চমকে যেতাম। কখনো হেঁটে বাজারের দিকে, আবার কখনো বাজার থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছেন। আব্বার অসুস্থতার সময় এই দৃশ্যগুলো মনে করে কত চোখের জল ফেলেছি আর ভেবেছি আব্বাকে বোধহয় আর হাঁটতে দেখবো না। আর কোনোদিন রাস্তায় আব্বাকে দেখে চমকে যাবো না। আর কোনো দিন হয়ত আমাকে এগিয়ে নিতে আসবেনা। আর কোনোদিন ভ্যাকেশন শেষে বাড়ি ছাড়ার সময় গাড়িতে তুলে দিতে আসতে পারবে না!

আমার উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষা শেষ, রেজাল্টও বের হলো। প্রায় একবছর অসুস্থ থাকার পর আল্লাহ্ তা'লার অশেষ রহমতে আব্বা সুস্থ হলেন। আলহামদুলিল্লাহ্,আব্বা আবার হাঁটতে পারেন। আমি যেদিন বাড়ি যাই সেদিন রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে থাকেন আমাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য। আবার যেদিন বাড়ি থেকে চলে আসি আব্বা আমাকে গাড়ি পাওয়ার জন্য যতদূর হেঁটে যেতে হয় ততদূর এগিয়ে দিতে আসেন।

আব্বা সুস্থ হয়ে যখন আস্তে আস্তে হাঁটা শুরু করলেন তখন মনে হতো সদ্য হাঁটা শেখা ছোট্ট একটা শিশু। ছোট্ট শিশুকে প্রথমবার হাঁটতে দেখে যেমন আনন্দ লাগে তেমনই অনুভব হতো আমার। আব্বা হাঁটেন আর আমি আপলক দৃষ্টিতে চেয়ে দেখি, আমার চক্ষু-হৃদয় শিতল হয়ে যায়। ঠের পাইনা কখন চোখের কোণে পানি জমে যায়।
পৃথিবীর সকল অসুস্থ বাবা সুস্থ হয়ে যাক। তাঁদের জন্য অন্তর থেকে দোয়া।
IMG_20240924_154724.jpg

Sort:  

Please Follow me back i have followed you

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 62427.05
ETH 2464.11
USDT 1.00
SBD 2.65