নিঃসঙ্গতার বৃদ্ধ বয়স কাটানো খুব কষ্টকর।

in আমার বাংলা ব্লগ21 days ago


কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


17637045721088542554226846910861.jpg


সোর্স



এই পৃথিবীতে আমরা যে জীব রূপে জন্মগ্রহণ করেছি অর্থাৎ আমাদের যাদের প্রাণ আছে তাদের একটা সময় মৃত্যু রয়েছে। আমাদের জন্ম হয়েছে মানে আমাদের মৃত্যু নিশ্চিত। তবে মৃত্যুর আগে আমাদের জীবনের বিভিন্ন ধাপের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়। জীবনের কিছু ধাপ আমাদের কাছে ভালো লাগলেও এবং সুখকর হলেও কিছু ধাপ আমাদের কাছে অনেক বেশি কষ্টকর হয়ে থাকে। ছোটবেলা থেকে আমাদের জীবন অনেক সুন্দর হয় কিন্তু ধীরে ধীরে আমরা যখন বড় হই তখন আমাদের জীবনে বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় যার মধ্যে সবথেকে জটিল পরিবর্তন হলো বৃদ্ধ বয়সের পরিবর্তন। আসলে বৃদ্ধ বয়সে আমাদের জীবনের এমন একটা সময় চলতে থাকে যেখানে আমরা আমাদের নিজের পরিবর্তন একদমই বুঝতে পারি না কিন্তু আমাদের আশেপাশে থাকা অনেক মানুষ আমাদের পরিবর্তন এবং আমাদের জটিলতাকে বুঝতে পারে। বৃদ্ধ বয়স মানেই প্রতিনিয়ত আমাদের জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকা। এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার ভয় আমাদের প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায় কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে যে সব ব্যক্তি রয়েছে সেসব ব্যক্তির মনের মধ্যে অনেক গভীর ভয় জমা হয়ে থাকে যে তারা যখন তখন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে পারে। কারণ সারা জীবন অনিশ্চিত হলেও বৃদ্ধ বয়সে আমরা একদম নিশ্চিন্ত হই যে আমাদের জীবনের সময় শেষ হয়ে এসেছে।


এই বৃদ্ধ বয়সে থাকা ব্যক্তিদের আমরা বিভিন্নভাবে দেখতে পাই যে তাদের সমবয়সী অনেক মানুষ ধীরে ধীরে বিয়োগ হয়ে যায় আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব সমবয়সী মানুষ ধীরে ধীরে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে থাকে এবং অন্যান্য বৃদ্ধ মানুষগুলি সেইসব কথা শুনে অনেক বেশি ভয় গ্রস্ত হয়ে পড়ে। বৃদ্ধ বয়সে আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব হারানো যেমন কষ্টকর তেমনি প্রিয় ভালোবাসার মানুষ এবং অর্ধাঙ্গিনীকে হারানোর কষ্ট কিন্তু অনেক বেশি হয়ে থাকে। বৃদ্ধ বয়সে মানুষ অনেক বেশি একা হয়ে পড়ে তারা নিজের মনের কথা বলবে এমন মানুষ পায়না, আসলে বৃদ্ধ বয়সে মানুষ একটু একাকিত্বের সমস্যায় ভোগে, তাই যখন বৃদ্ধ কোন ব্যক্তি কোন মানুষ কথা বলার জন্য পায় তখন তার মনের সব কথা দুঃখ কষ্ট এবং মনের ভাব উজার করে বলতে থাকে যা অনেক সময় ভালো হয় আবার অনেক সময় তার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। অর্ধাঙ্গিনী বা ভালোবাসার প্রিয় মানুষ বিহীন বৃদ্ধ বয়স্ক কাটানো অনেক বেশি কষ্টকর হয়ে থাকে যে কোন বৃদ্ধ বয়সেই মহিলা বা পুরুষের ক্ষেত্রে। শেষ বয়সে মনের দুঃখ কষ্ট অনেক সময় তার সন্তানদের বলা যায় না বা অন্য কোন বয়সে ছোট ব্যক্তিদের কাছে শেয়ার করা যায় না যা একমাত্র সমবয়সী এবং নিজের অর্ধাঙ্গিনীকে বলা যায়।


তাই বৃদ্ধ বয়সে যে সব ব্যক্তি নিজের ভালোবাসার মানুষ বা অর্ধাঙ্গিনীর সাথেই কাটাতে পারে তারা অনেক সুখী এবং ভাগ্যবান হয়ে থাকে কিন্তু যেসব ব্যক্তি অর্ধাঙ্গিনী ছাড়া বা নিজের সমবয়সী বন্ধু-বান্ধব এবং প্রিয় মানুষ ছাড়া সময় কাটাতে থাকে তাদের জন্য অনেক বেশি কষ্টকর হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বৃদ্ধ বয়সে একাকীত্ব মানুষকে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন করে তোলে যার ফলে তাদের আচরণেও অনেক ভালো খারাপ দিক দেখা যায় এবং কথাবার্তায় অনেক জটিলতা লক্ষ্য করা যায়। বৃদ্ধ বয়সে এসে মানুষ ছোট বাচ্চাদের মতো হয়ে পড়ে তাই তারা নিজের ভুল লুকানোর চেষ্টা করে এবং লুকোচুরিভাবে ও অনেক সময় জীবন যাপন করার চেষ্টা করে। বৃদ্ধ বয়সে একাকীত্ব আসলে সেই বয়স্ক মানুষ অনেক সময় নিজের সমস্যার কথা কিংবা প্রয়োজনের কথা অন্যদের কাছে বলতে দ্বিধাবোধ করে আবার অনেক সময় বলেও না নিজের সমস্যা নিজের কাছেই রেখে দেয়। যার ফলে সমস্যা আরো বেশি বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর পরবর্তীকালে এই সমস্যা অনেক বেশি ভয়াবহ রূপ নিয়ে থাকে।


বৃদ্ধ বয়সে এসে মানুষ এমনিতেই নিজেকে বোঝা বলে মনে করে কিন্তু যখন সে বৃদ্ধ মানুষটি একাকিত্বে দিন কাটাতে থাকে তখন সেই ব্যক্তিটি আরো বেশি নিজেকে বোঝা মনে করে। বৃদ্ধ বয়সে ব্যক্তিরা মনে করে তারা না থাকলে অন্যদের জীবনযাপন আরো বেশি ভালো হয় এবং নিজেদের মতো জীবন যাপন করতে পারে। বৃদ্ধ বয়সে ব্যক্তিরা কোন কাজ করতে গিয়ে বা কোন প্রয়োজনের কথা কাউকে বলতে গিয়ে বারবার ভাবতে থাকে যে তার কারণে অন্যরা হয়তো বিরক্ত হবে বা তার কারণে অন্যরা অসন্তুষ্ট হতে পারে। কিন্তু এই চিন্তা ভাবনা একদমই ভুল। আসলে এই বৃদ্ধ বয়সে আসলেই মানুষের চিন্তা হবে না অনেক পরিবর্তন হয়ে যায় এবং তারা অনেক বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করে আর তার সাথে নিজেকে অপ্রয়োজনী একটি বস্তু হিসেবে সবার কাছে বলতে থাকে বা নিজেও তেমনি ভাবতে থাকে। তাই আমাদের এই বৃদ্ধ বয়সে পা রাখা প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে যথাসম্ভব যত্ন করা উচিত এবং তাদের মনের কথা প্রতিনিয়ত শোনার চেষ্টা করা উচিত। বৃদ্ধ বয়সে মানুষেরা যেন নিরাপত্তা হীনতায় না ভোগ এবং সুন্দর মন মানসিকতা নিয়ে বাঁচতে পারে সেদিকে আমাদের সব সময় খেয়াল থাকতে হবে। আমাদের প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতে থাকতে হবে যে আমাদের আশে পাশে থাকা বৃদ্ধ বয়সী মানুষ এবং আমাদের বাবা-মা কখনো যেন একাকীত্ব অনুভব না করে।


আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।