শীতের সকালে মামা বাড়ির পিঠার উৎসব
আসসালামুআলাইকুম/আদাব
শীত এলেই যেন গ্রামের আকাশ-বাতাসে এক অন্যরকম আনন্দের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ত। কুয়াশায় ঢাকা ভোর, ঘাসের ডগায় শিশির, আর শীতল হাওয়ার মাঝে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত বিষয় ছিল মামা বাড়ি যাওয়ার ডাক। শীতের ছুটির কোনো এক সকালে আমরা সবাই—খালু, ফুফু, মামা-মামী, ভাই-বোন—একসাথে রওনা দিতাম মামা বাড়ির পথে। সেই যাত্রা নিজেই ছিল উৎসবের প্রথম পর্ব। গাড়ির ভেতরে হাসি-ঠাট্টা, গল্প, আর পিঠার কথা উঠলেই সবার চোখে একরাশ উচ্ছ্বাস।
মামা বাড়িতে পৌঁছাতেই দেখা যেত উঠোনে বিশাল প্রস্তুতি। মাটির চুলা বসানো হয়েছে, পাশে সাজানো চালের গুঁড়া, নারকেল, খেজুরের গুড়, দুধ আর কলাপাতা। মামীরা ব্যস্ত হাতে পিঠার উপকরণ গোছাচ্ছেন, আর নানী-দাদি অভিজ্ঞ চোখে সবকিছু তদারকি করছেন। শীতের সকালের রোদ উঠোনে পড়তেই যেন উৎসবের আলো আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠত।আমরা ছোটরা তখন চারপাশে ঘোরাঘুরি করতাম। কেউ লুকিয়ে গুড়ের হাঁড়িতে আঙুল ঢুকিয়ে মিষ্টি চেখে দেখত, কেউ আবার মাটির চুলার পাশে বসে আগুনে হাত সেঁকত। পিঠা বানানোর দৃশ্য ছিল চোখ জুড়ানো,চুলার ওপর কড়াইয়ে তেল গরম হচ্ছে, চালের গুঁড়ার ব্যাটার ধীরে ধীরে ঢেলে তৈরি হচ্ছে ভাপা পিঠা, আর নারকেল-গুড় মিশিয়ে বানানো হচ্ছে পাটিসাপটা। গুড় গলানোর সময় যে মিষ্টি ঘ্রাণ উঠোন জুড়ে ছড়িয়ে পড়ত, তা আজও মনে পড়লে নাকে লেগে থাকে।
বেলা বাড়ার সাথে সাথে আত্মীয়দের ভিড় আরও জমে উঠত। সবাই মিলে গোল হয়ে বসে গল্প করতাম,পুরোনো দিনের কথা, শৈশবের দুষ্টুমি, আর হাসির গল্পে মুখর হয়ে উঠত পুরো বাড়ি। চাচা-মামারা শীতের রোদে বসে চা খেতে খেতে রাজনীতি থেকে শুরু করে গ্রামের খবর সবই আলোচনা করতেন। আর আমরা ছোটরা অপেক্ষায় থাকতাম কখন পিঠা নামবে,অবশেষে বড় থালায় সাজিয়ে পিঠা পরিবেশন করা হতো। ভাপা পিঠার নরম গরম স্বাদ, পাটিসাপটার মিষ্টি পুর, আর দুধ-চিতইয়ের সাথে খেজুরের গুড়,সব মিলিয়ে সে এক স্বর্গীয় অনুভূতি। সবাই একসাথে বসে পিঠা খাওয়ার আনন্দটাই ছিল সবচেয়ে বড়। কার থালায় কত পিঠা পড়ল তা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা, আবার কেউ বেশি খেয়ে ফেললে মজা করে বকুনি,সব মিলিয়ে এক অপূর্ব পারিবারিক বন্ধন।
দিনের শেষে যখন শীতের আলো নরম হয়ে আসত, তখন মনে হতো সময় যেন থেমে থাকুক। সেই পিঠার উৎসব শুধু খাবারের নয়, ছিল ভালোবাসার, সম্পর্কের আর একসাথে থাকার আনন্দের। আজ শহরের ব্যস্ত জীবনে দাঁড়িয়ে শীত এলেই সেই মামা বাড়ির পিঠার উৎসবের স্মৃতি মনে পড়ে। কুয়াশাভেজা সকাল, গুড়ের মিষ্টি গন্ধ আর আত্মীয়দের হাসিমুখ,এই স্মৃতিগুলোই শীতকে আজও আমার কাছে সবচেয়ে উষ্ণ করে তোলে।
ধন্যবাদ সকলকে✨💖
ফোনের বিবরণ
| ক্যামেরা | স্যামসাং গ্যালাক্সি |
|---|---|
| ধরণ | রাইটিং |
| মডেল | এম-৩১ |
| ক্যাপচার | @alif111 |
| অবস্থান | সিরাজগঞ্জ -রাজশাহী- বাংলাদেশ। |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোঃআলিফ আহমেদ।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমিকে খুবই ভালোবাসি। আমি সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের একজন ছাত্র। আমি ছোট বেলা থেকেই আর্ট করতে পছন্দ করি।তাই অংকন করতে আমার খুব ভালো লাগে।তাই আমি সময় পেলেই বিভিন্ন চিত্র অংকন করি।বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমন করতে ও ফটোগ্রাফি করতে আমার খুবি ভালো লাগে।🌼💖🌼
সবার প্রতি শুভেচ্ছা রইল এবং আমার পোস্টটি সমর্থনকারী সকল বন্ধুদের বিশেষ ধন্যবাদ।🌹🌻





