শীত নামলেই গ্রাম অঞ্চলের ঘরবাড়ি ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে মানুষ আগুন জ্বালিয়ে রাখে। অনেকে চুলার পাশে শীত কাটান, আবার কেউ কেউ খড়, কাঠ, পাট, শুকনো খড়কুটো দিয়ে আগুন তৈরি করেন। এইসব উপকরণ অত্যন্ত দাহ্য হওয়ায় সামান্য অসাবধানতাতেই বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। বিশেষ করে কাঁচা ঘর, টিনের ঘর, খড়ের ঘর বা যেসব ঘরে শুকনো কৃষিজ উপকরণ রাখা থাকে, সেসব জায়গায় আগুন ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই শীতকালে সতর্কতার মাত্রা দ্বিগুণ হওয়া জরুরি।

প্রথমত, ঘরের ভেতরে বা বারান্দায় আগুন জ্বালানোর সময় অবশ্যই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। আগুন যেখানেই জ্বালানো হোক, তার চারপাশ খালি ও পরিষ্কার থাকা প্রয়োজন। শুকনো খড়, পাট, কাঠ, পোশাক বা অন্য কোনো দাহ্য সামগ্রী যেন আগুনের কাছাকাছি না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, হাঁস-মুরগি বা গবাদিপশুকে উষ্ণ রাখতে আগুন জ্বালানো হয়,সেক্ষেত্রেও দায়িত্বশীলভাবে আগুন ব্যবহার করা জরুরি।

দ্বিতীয়ত, রাতের বেলায় আগুন জ্বালিয়ে রেখে ঘুমানো সম্পূর্ণ অনিরাপদ। অনেক দুর্ঘটনা ঘটে শুধু এই কারণে যে মানুষ আগুন রেখে ঘুমিয়ে যায় এবং বাতাসে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাই শীতের রাত যতই ঠান্ডা হোক না কেন, ঘুমানোর আগে আগুন সম্পূর্ণ নিভিয়ে ফেলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।তৃতীয়ত, দেশলাই, লাইটার বা অন্য আগুনের উৎস বাচ্চাদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে। গ্রামাঞ্চলে অনেক সময় শিশুরা খেলতে খেলতে দেশলাই জ্বালায়, আর সেখান থেকেই দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। তাই পরিবারে বাচ্চাদের আগুনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করা এবং দাহ্য উপকরণ তাদের থেকে দূরে রাখা প্রয়োজন।

এছাড়াও, কৃষি জমিতে বা উঠোনে শুকনো ধান, পাট বা খড় রোদে শুকানোর সময় পাশেই আগুন জ্বালানো যাবে না। সামান্য বাতাসেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কোনো উৎসবে, সামাজিক অনুষ্ঠানে বা রান্নার সময় অতিরিক্ত আগুন ব্যবহার করলে তার তদারকি করা জরুরি। গ্রামের অনেক ঘরে মাটির চুলা থাকে,চুলা ব্যবহারের পর তার ভস্ম বা কয়লা ভালোভাবে নিভে গেছে কি না, তা পরীক্ষা করা উচিত।শীতকালে বৈদ্যুতিক ত্রুটি থেকেও আগুন লাগতে পারে। তাই বৈদ্যুতিক তার, লাইট, প্লাগ বা হিটার ব্যবহার করলে সাবধান থাকতে হবে। পুরোনো, ছেঁড়া বা ঝুলে থাকা তার অবশ্যই বদলে ফেলা প্রয়োজন।

সর্বোপরি, আগুন লাগার পর তা যেন দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার জন্য ঘরে বা আশেপাশে পানি, বালু বা আগুন নেভানোর প্রাথমিক ব্যবস্থা রাখা উচিত। গ্রামে সম্মিলিতভাবে একটি স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করা যেতে পারে, যারা অগ্নিকাণ্ডের সময় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবে।শীতের আগুন কোনো খেলা নয়,এটি মুহূর্তেই সুখী পরিবারকে বিষাদের ছায়ায় ডুবিয়ে দিতে পারে। তাই সবার উচিত সচেতন থাকা, পরিবারকে সচেতন করা এবং সামান্য অসাবধানতা থেকেও যে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে তা মনে রাখা।