মনুষ্যত্ব ছাড়া মানুষ হওয়া যায় না।
আমি @rahimakhatun
from Bangladesh
২ রা নভেম্বর ২০২৫
|
|---|
https://pixabay.com/illustrations/mountain-north-wisdom-mindful-660023/
মনুষ্যত্ব হলো মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ। মানুষ শুধু দেহ ও বুদ্ধির কারণে মানুষ নয়, বরং মনুষ্যত্ব বা মানবিক গুণের কারণেই সে প্রকৃত মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। মনুষ্যত্ব বলতে বোঝায় দয়া, সহানুভূতি, পরোপকার, সততা, ভালোবাসা ও ন্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা। এই গুণগুলো মানুষকে পশু থেকে আলাদা করে।
বর্তমান যুগে মানুষ যতই আধুনিক হচ্ছে, ততই যেন মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলছে। লোভ, হিংসা, স্বার্থপরতা ও ক্ষমতার মোহে অমানবিক আচরণ দিন দিন বেড়ে চলছে। অথচ মানব সভ্যতার মূল ভিত্তি হচ্ছে মনুষ্যত্ব। মানুষ যদি একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল না হয়, তবে সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখা সম্ভব নয়।
মনুষ্যত্বের পরিচয় আমরা পাই সমাজসেবায়, দুর্দশাগ্রস্তদের সাহায্যে, দুর্বলদের পাশে দাঁড়ানোয়। যারা নিঃস্বার্থভাবে অন্যের মঙ্গল কামনা করে, তারাই প্রকৃত মানুষ। ধর্ম, বর্ণ, জাতি বা ভাষা—সব পার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষকে মানুষ হিসেবে ভালোবাসাই মনুষ্যত্বের পরিচায়ক।
আমাদের উচিত ছোটবেলা থেকেই মানবিক গুণাবলি চর্চা করা। পরিবার, বিদ্যালয় ও সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মনুষ্যত্বে গড়ে ওঠে। কারণ, মনুষ্যত্বই হলো একমাত্র শক্তি যা মানুষকে প্রকৃত অর্থে মহান করে তোলে।
মনুষ্যত্ব হলো মানুষের আসল পরিচয় ও গৌরবের প্রতীক। মানুষ কেবল শারীরিক গঠন বা বুদ্ধির কারণে মানুষ নয়; তার হৃদয়ের মমতা, সহানুভূতি, দয়া ও পরোপকারের মানসিকতাই তাকে প্রকৃত মানুষ করে তোলে। মনুষ্যত্ব এমন এক মহৎ গুণ যা মানুষকে পশুর স্তর থেকে উত্তীর্ণ করে মহানতার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে।
আজকের যুগে মানুষ প্রযুক্তিগতভাবে অনেক উন্নত হলেও মানবিক গুণাবলি দিন দিন হারিয়ে ফেলছে। সমাজে অন্যায়, অবিচার, হিংসা, লোভ ও স্বার্থপরতা বেড়ে চলেছে। অথচ মনুষ্যত্বের আলো নিভে গেলে সমাজ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। তাই আমাদের উচিত প্রতিটি কাজে মানবতার পরিচয় দেওয়া। অন্যের কষ্টে সহানুভূতিশীল হওয়া, দুর্বল ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোই মনুষ্যত্বের প্রকৃত রূপ।
ধর্মীয় শিক্ষাগুলিতেও মনুষ্যত্বের গুরুত্ব বারবার তুলে ধরা হয়েছে। সব ধর্মেই বলা হয়েছে, মানুষের সেবা করাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ইবাদত বা পূণ্যকর্ম। তাই ধর্ম, বর্ণ, জাতি বা ভাষা নির্বিশেষে মানুষকে ভালোবাসাই আমাদের কর্তব্য।
একজন মানুষ যদি অন্যের কল্যাণে কাজ করে, তবে তার জীবনের সার্থকতা অর্জিত হয়। সমাজে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রত্যেকের হৃদয়ে মনুষ্যত্ব জাগ্রত করতে হবে। পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের মধ্যে মানবিক গুণের শিক্ষা দেওয়া উচিত, যাতে তারা ভবিষ্যতে নৈতিক ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে বেড়ে ওঠে।
সবশেষে বলা যায়, মনুষ্যত্বই মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ অলঙ্কার। ধন-সম্পদ, পদমর্যাদা বা জ্ঞানের অহংকার দিয়ে নয়, বরং মানবিক গুণাবলি দিয়েই একজন মানুষ তার প্রকৃত মূল্য প্রমাণ করে। তাই আমাদের সবার জীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত — মনুষ্যত্বে উজ্জ্বল হয়ে প্রকৃত মানুষ হওয়া।

