যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি।
আমি @rahimakhatun
from Bangladesh
২৫ এ অক্টোবর ২০২৫
|
|---|
প্রতিবারের মত নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।আমি আজকে একটি জেনারেল পোস্ট করবো।
যৌতুক হলো একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা, যা আমাদের সমাজে আজও গভীরভাবে শিকড় গেড়ে আছে। বিয়ের সময় মেয়ের পরিবার থেকে ছেলের পরিবারকে টাকা-পয়সা, আসবাবপত্র, গহনা, গাড়ি, বাড়ি বা অন্য সামগ্রী দেওয়া হয়—এটাই যৌতুক। একসময় এটি সদিচ্ছা থেকে দেওয়া উপহার ছিল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি এখন এক ভয়ঙ্কর অভ্যাস ও অত্যাচারের রূপ নিয়েছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে যৌতুক প্রথা সমাজে নানাভাবে অশান্তি সৃষ্টি করছে। অনেক মেয়ে শুধুমাত্র যৌতুক দিতে না পারায় অপমান, নির্যাতন বা এমনকি মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। সংবাদপত্র খুললেই যৌতুকের জন্য নির্যাতন বা হত্যার খবর চোখে পড়ে। এই নিষ্ঠুরতা শুধু একটি মেয়ের নয়, পুরো পরিবারের জীবনকে তছনছ করে দেয়।
যৌতুক প্রথার সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হলো—এটি সমাজে নারীর মর্যাদা ও সম্মান নষ্ট করছে। যেখানে মেয়েকে ভালোবাসা, চরিত্র ও যোগ্যতার ভিত্তিতে বিয়ে করা উচিত, সেখানে টাকার পরিমাণই যেন সবকিছু নির্ধারণ করে। ফলে বিয়ের পবিত্র বন্ধনটি একপ্রকার লেনদেনে পরিণত হচ্ছে। অনেক গরিব বাবা-মা মেয়ের বিয়ের কথা ভাবতেই ভয় পান, কারণ তারা জানেন যৌতুক না দিতে পারলে মেয়ের জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
যৌতুক শুধু মানবিক মূল্যবোধ নষ্ট করছে না, বরং সমাজে অসমতা বাড়াচ্ছে। ধনী পরিবার আরও ধনী হচ্ছে, গরিব পরিবার ঋণে জর্জরিত হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায়, মেয়ের পরিবার যৌতুকের টাকার জন্য জমি বিক্রি করছে বা ধার করছে, যা সমাজে এক ভয়াবহ আর্থিক সমস্যা সৃষ্টি করছে।
ধর্মীয় ও নৈতিক দিক থেকেও যৌতুক একটি বড় পাপ। ইসলাম ধর্মে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বিয়েতে যৌতুক নেওয়া হারাম। ইসলাম বরং মেয়েকে “মহর” দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, যা মেয়ের অধিকার। কিন্তু সমাজে আমরা তার বিপরীত কাজ করে চলেছি। একইভাবে অন্যান্য ধর্মেও যৌতুককে অন্যায় ও নিন্দনীয় বলা হয়েছে।
যৌতুক প্রথা রোধে সরকার “যৌতুক নিরোধ আইন” প্রণয়ন করেছে। এই আইনে যৌতুক দাবি, গ্রহণ বা প্রদান—সবই দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে কেবল আইন করলেই হবে না, দরকার সচেতনতা ও মানসিক পরিবর্তন। স্কুল-কলেজে যৌতুক বিরোধী শিক্ষা দেওয়া, গণমাধ্যমে প্রচার চালানো এবং পরিবারে ছেলে-মেয়েকে সমানভাবে মূল্যায়ন করার মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
যৌতুক একটি ঘৃণিত সামাজিক ব্যাধি। এটি সমাজে ভালোবাসা, বিশ্বাস ও মানবতার জায়গায় লোভ ও অন্যায়কে স্থান দিয়েছে। তাই আমাদের সকলের দায়িত্ব—যৌতুক প্রথাকে না বলা এবং এর বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র একসাথে কাজ করলে, একদিন নিশ্চয়ই এই অভিশাপমুক্ত সমাজ গড়া সম্ভব হবে, যেখানে মেয়েদের বিয়ে হবে ভালোবাসা ও মর্যাদার ভিত্তিতে, টাকার নয়।

