আপু যখন বউ (২য়) – Romantic Valobashar Golpo Bangla
আপু যখন বউ (২য়) – Romantic Valobashar golpo bangla: জান্নাত আমাকে কোলবালিশ ভেবে আমার গায়ের নিচে একটা হাত এবং উপরে আরেকটা হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। আর এক পা আমার উপরে তুলে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে!
শুরু হচ্ছে একটি রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প কাহিনী।
পর্ব ৮
সবাইকে নিয়ে আড্ডা দিতেছিলাম তখনই জান্নাত এসে সামনে দাড়ালো! তাকিয়ে দেখি রাগে চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে!
আমিঃ রেগে আছেন কেনো? কিছু বলবেন নাকি?
জান্নাতের মুখে কোনো কথা নেই! হঠ্যাৎ ঠাসসসস করে গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো! আমি গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম!
জান্নাতঃ তুই নিলাকে কি বলেছিস!
আমিঃ নিলা টা কে?
জান্নাতঃ ওও একটু আগে রোমান্সের কথা বলে এখন ভুলে গেছিস নিলা কে?
আমিঃ সরি কার সাথে রোমান্টিক কথা বললাম!
জান্নাতঃ এই যে এই মেয়েটার সাথে? (জান্নাত রাগি চোখে তাকিয়ে রইলো)
আমিঃ ওহহ ওর নাম নিলা নাইস নেইম!
নাইস নেইম কথাটা বলার সাথে-সাথেই জান্নাত আরেকটা চড় গালে বসিয়ে দিলো!
গালে হাত দিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে দেখি রাগটা বেড়ে আছে! কিন্তু সবার সামনে এভাবে চড় মারাই আমার কেমন যেনো লেগে উঠলো!
জান্নাতঃ বাসায় বউ থাকতে অন্য মেয়ের সাথে রোমান্স করতে লজ্জা করে না তোর?
আমিঃ বাসায় বউ আছে মানে আপনি বউ পেলেন কোথায় বাসায়?
জান্নাতঃ কেনো আমি তোর কি হই!
আমিঃ আপনি বলেন তো আজ পর্যন্ত বউ হওয়ার মতো কোনো কাজ করেছেন! এই পর্যন্ত আমাকে শান্তিতে একটা মিনিট থাকতে দিয়েছেন! আপনার থেকে ইন্ডিয়া-পাকিস্তান এর শত্রুতাও ভালো!
কথাগুলো শুনে জান্নাত স্থির হয়ে দড়িয়ে রইলো! আমি উঠে চলে যাওয়ার ভাব করে জান্নাতের পিছনে গিয়ে মেহেদী ভাইকে চোখ টিপ দিয়ে ইশারায় বুঝালাম আগুনে পেট্রোল দিতে!
তারপর সেখান থেকে চলে গেলাম আর ভাবলাম! জান্নাত তুমি নিজেও জানো না তোমাকে ভবিষ্যৎতে কত টা জ্বালাবো আমি! আপাতত মায়ায় ফেলবো তারপর বাকিটা দেখবে তুমি!
তারপর ক্লাস না করে বাসায় চলে আসলাম! শরীরটা বেশি ভালো না তাই দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে দিলাম এক ঘুম!
সন্ধ্যায় জান্নাতের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো!
আমিঃ কি হলো ডাকতেছেন কেনো?)
জান্নাতঃ বাহিরে আকাশ খারাপ হইতেছে রাতে খাবার জন্য কিছু গিয়ে নিয়ে আয়!
আমিঃ ঘুম না ভাঙ্গিয়ে অনলাইনে অর্ডার করে দিলেওতো পারতেন!
জান্নাতঃ চুপ বেশি কথা বলবি না! যাওয়া লাগবে না তোর!
বলেই মুখ বাকিয়ে রুম থেকে চলে গেলো! ঘুমটা ভেঙ্গে দিয়ে গেছে তাই আর ঘুম ধরলো না!
তাই উঠে ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে গেলাম! এসে দেখি মহারাণী টিভি দেখতেছে! পানি খেয়ে আমি রুমে চলে আসলাম!
আকাশের অবস্থা খারাপ হতে চলেছে মনে হয় রাতে ঝুম বৃষ্টি হবে বা তুফান হবে! আমি এসব চিন্তা বাদ দিয়ে পড়তে বসে গেলাম!
কিছুক্ষণ পর শুরু হয়ে গেলো আকাশের গর্জন করা! এখন পড়তে অনেক ভালো লাগতেছে!
হঠ্যাৎ অনুভব করলাম আমার পিছনে কেউ একজন দাড়িয়ে আছে! তাকিয়ে দেখি জান্নাত দাড়িয়ে আছে!
আমিঃ কি হলো এইখানে দাড়িয়ে আছেন কেনো?
জান্নাতঃ আজকে তোর সাথে পড়তে বসবো?
আমিঃ কেনো?
জান্নাতঃ এমনি! বেশি কথা না বলে নিজের কাজ কর!
তারপর আমি নিজের পড়ার মন দিলাম! জান্নাত আমার উল্টো পাশের চেয়ারটায় বসলো!
কিছুক্ষণ পর হঠ্যাৎ খেয়াল করলাম আকাশ গর্জন দিলে জান্নাত কেপে উঠে বুঝে গেলাম জান্নাত আকাশের গর্জনগুলো খুব ভয় পায়! তাই আমার পাশে পড়তে বসেছে!
জান্নাত বড়ো হয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু মনটা এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলো! এসব ভেবে মনে মনে হালকা হেসে আমি আবার পড়ায় মন দিলাম! হঠ্যাৎ জান্নাত বলে উঠলো!
জান্নাতঃ তোর হাতটা একটু ধরতে পারি!
আমিঃ কিহহহ!
জান্নাতঃ তোর হাতটা একটু ধরতে দিবি!
আমিঃ হাত ধরবেন কেনো?
জান্নাতঃ এমনি! ধরতে দিবি কি না তাই বল!
আমিঃ খারাপ মতলব না থাকলে ধরতে পারেন!
জান্নাতঃ তোর প্রতি খারাপ মতলব কোনোদিন হবেও না আমার! (জান্নাত বলেই আমার হাতটা ধরলো)
এই প্রথম আমার হাতে তার হাত রেখেছে! এটার ফিলিংসটাই আলাদা যা ভাষায় বুঝানো যাবে না!
পড়তেছিলাম আর খেয়াল করতে লাগলাম! আকাশ যখনই গর্জন দেয় জান্নাত তখনই আমার হাতটাকে জুড়ে আকড়ে ধরে! তারপর আবার নরমাল ভাবে ধরে থাকে! জান্নাত হয়তো মেঘের গর্জনকে অনেক ভয় পায়!
পড়া শেষ করে গিয়ে দুজনে খেয়ে নিলাম! তারপর রুমে এসে শুয়ে গেলাম! কিছুক্ষন পর জান্নাত এসে আমার পাশে শুয়ে পড়লো!
আমিঃ কি হলো আপনি এখানে এভাবে শুয়ে পড়লেন কেনো?
জান্নাতঃ এমনি বেশি কথা না বলে ঘুমা!
আমিঃ আপনি এখানে থাকেন আমি সোফায় গিয়ে ঘুমাই!
জান্নাতঃ তোকে সোফায় যেতে বলেছি আমি! চুপচাপ যেখানে আছিস সেখানে ঘুমা! আর মাঝে এই কোলবালিশটা থাকবে!
আমিঃ ওকে! (বলেই বলেই শুয়ে পড়লাম)
জান্নাত কি করতে চাইতেছে দেখা দরকার! তাই চুপ করে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে রইলাম! এভাবে প্রায় আধাঘন্টা শুয়ে থাকার পর হঠ্যাৎ জান্নাত বলে উঠলো!
জান্নাতঃ হুসাইন তোকে একটা কথা বলার ছিলো!
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলাম!
জান্নাতঃ কিরে তুই কি ঘুমিয়ে গেছিস!
তাও কোনো উত্তর দিলাম না!
তারপর জান্নাত আর কোনোকিছু না বলে আস্তে করে আমাকে জড়িয়ে ধরলো! আমি অবাক হয়ে গেলাম ওনার এমন কান্ড দেখে!
চুপচাপ কিছুক্ষণ শুয়ে রইলাম! জান্নাতও আমাকে জুড়ে চেপে ধরে আছে! প্রায় ১০ মিনিট পরে মনে হলো ওর হাত – পা একটু লুস হয়েছে! মানে জান্নাত ঘুমিয়ে পড়েছে!
আমি সিওর হওয়ার জন্য আস্তে করে জান্নাত বললাম!
আমিঃ ঐ আপনি এভাবে জড়িয়ে ধরেছেন কেনো?
জান্নাতের কোণো সাড়া শব্দ নেই! বুঝলাম পাগলিটা ঘুমিয়েছে!
আস্তে করে চোখ খুলে জান্নাতের দিকে তাকালাম! রুমের ভিতরের হালকায় আলোয় জান্নাত কে যা লাগছে না একটা পরিকেও সে হার মানিয়ে দিবে!
আমি ওনার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম! ওনার এভাবে জড়িয়ে ধরা দেখে আমার নিয়ত উল্টাতে লাগলো!
পড়ে ভাবলাম! কারো সুযোগ নেওয়াটা ঠিক না তাই সব চিন্তা বাদ দিয়ে জান্নাতের নিষ্পাপ মুখটা দেখতে!
নিজের ক্রাশ যখন জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকে তখন অনুভূতিটাই আলাদা কাজ করে! এমন লাগে যেনো পৃথিবীটা হুমড়ি খেয়ে আমার বুকে শুয়ে আছে!
এরকম নানা রকম কথা ভাবছিলাম আর জান্নাত কে দেখতেছিলাম! কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম তা মনে নেই! সকালে একটু তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙ্গে গেলো!
শরীর কেনো জানি মনে হলো নাড়াতে পাড়তেছি না! মনে হচ্ছে কেউ আমার হাতগুলো বেধে রেখেছে!
তাই নিজের অবস্থান দেখার জন্য নিজের শরীরের দিকে তাকালাম! তাকিয়ে বড়-সড় একটা ধাক্কা খেলাম!
কারণ জান্নাতের কোলবালিশটা নিচে পড়ে আছে! জান্নাত আমাকে কোলবালিশ ভেবে আমার গায়ের নিচে একটা হাত এবং উপরে আরেকটা হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। আর এক পা আমার উপরে তুলে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে!
মাথার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে তাই ফু দিলাম সেগুলো ঠিক হওয়ার জন্য,! আর তখনই জান্নাত সজাক হয়ে গেলো!
আমিঃ আপনার কোলবালিশ আমি না আপনার কোলবালিশ নিচে পড়ে আছে!
জান্নাত নিজের দিকে খেয়াল করে আহহহ করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো!
জান্নাতঃ তুই আমার কাছে আসলি কেনো?
আমিঃ সরি! কাছে আমি না আপনি এসেছেন! এই পাশে আমি শুয়েছিলাম আর আপনিই রাতের অন্ধকারে একটা ছেলেকে একা পেয়ে সুযেগ নিয়েছেন!
জান্নাত কিছুই বললো না!
আমিঃ সত্যি করে বলেন কি কি করেছেন আমার সাথে!
জান্নাতঃ কি কি করেছি মানে? তোর কি মনে হয় তোর মতো খারাপ ছেলের সুযোগ নিবো আমি!
আমিঃ সেটাতো ঘুম থেকে উঠেই দেখতে পেলাম!
জান্নাতঃ চুপ বেশি কথা বলবি না। যা এখন গিয়ে কফি বানিয়ে নিয়ে আয়!
আমিঃ যাচ্ছি! (বলেই উঠে কফি বানাতে চলে গেলাম)
বাহিরে হালকা বৃষ্টি আছে তাই কফি হলে সেই লাগবে! এই ভেবে কফি বানিয়ে নিলাম!
কফি নিয়ে এসে দেখি জান্নাত আবার ঘুমিয়ে গিয়েছে! তাই ডাক দিলাম উঠার জন্য!
জান্নাতঃ কি হলো ডাকতেছিস কেনো?
আমিঃ কফি নিয়ে এসেছি! রেখে গেলাম মনে চাইলে খেয়ে নিয়েন!
ভার্সিটিতে আজকে যেতে ভালো লাগতেছে না তাই কফিটা খেয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম! ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি জান্নাত কফি খাচ্ছে!
তারপর জান্নাত গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে নিজের মতো করে গল্পের বই পড়তে লাগলো! আর আমি অনলাইনে খাবার অর্ডার করে দিলাম!
যেহেতু বৃষ্টির কারণে আর ভার্সিটিতে যাওয়া হয় নি! তাই দিনটা বারান্দায় গিয়ে বসে-বসেই পাড় করতে লাগলাম! তখনই মোবাইলে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো!
তাই রিসিভ করলাম কে সেটা জানার জন্য!
আমিঃ আস্সালামুআলাইকুম!
…… অলাইকুমআস্সালাম,কেমন আছেন? (মেয়েলি কন্ঠে)
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ! আপনি কে?
মেয়েটাঃ কালকে প্রপোজ করলাম আর আজকেই ভুলে গেলেন!
আমিঃ ওহ নিলা!
নিলাঃ হুম! সরি কালকে জান্নাত আপু কার থেকে যেনো আপনাকে প্রপোজ করার কথাটা শুনে আমাকে নিয়ে যায় আপনার কাছে! তারপর আপনার সাথে এসব সিনক্রিয়েট করে!
আমিঃ জান্নাত তো একটা পাগলি ওর কথায় আমার খারাপ লাগে না! জান্নাতের তো বুদ্ধি একটু কম!
নিলাঃ কালকে বিকেলে কফি খেতে আসলেন না কেনো?
আমিঃ আরে কালকে জান্নাত অনেক প্রেশারে রেখেছিলো তাই আসতে পারি নি?
নিলাঃ কি বলেন আপনি ঠিক আছেন তো?
আমিঃ আরে হ্যা ঐ ডাইনিটা আমার কিছুই করতে পারে নি?
নিলাঃ নিজের বউকে কেউ ডাইনি বলে নাকি?
আমিঃ ঐটা বউ নাকি রাক্ষসী……
আমিঃ ঐটা বউ না রাক্ষসী…..(বলেই বারান্দার দরজায় তাকেই চোখ কপালে উঠে যায়!)
কারণ দরজায় জান্নাত দাড়িয়ে আছে? কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না! তখনই নিলাকে ঝাড়ি দিয়ে বললাম!
আমিঃ আমার এটা বউ না রাক্ষসী সেটা কি তোমার থেকে জানতে হবে ফোন রাখ! (ভাব নিলাম)
তারপর ফোনটা কেটে দিয়ে জান্নাতের দিকে ফিরে তাকিয়ে ভালো সাজার জন্য বলে উঠলাম!
আমিঃ একটা মেয়ে আপনাকে রাক্ষসী বলতেছিলো তাই ইচ্ছে মতো ঝেড়ে দিয়েছি!
জান্নাতঃ ওহহ তাই নাকি! তা কি বললো আমার নামে? (জান্নাত রাগে মুখ লাল হয়ে আছে)
আমিঃ ঐ তো মেয়েরা রাগ করলে যা গালি দেয় আরকি!
জান্নাতঃ ওহহ! নিশ্চয় বলেছে ঐ ডাইনিটা আমার কিছুই করতে পারে নি! এরকম কিছু নিশ্চয়!
বুঝে গেলাম সব শুনে ফেলেছে! তাই এবার মার খাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে! তাই কি করবো ভাবতেছি তখন জান্নাত বলে উঠলো!
জান্নাতঃ কিরে মনে পড়তেছে না কি বলেছিলো মেয়েটা মনে করিয়ে দিবো!
আমিঃ পড়ে তো আছেই কিন্তু ঐ মেয়েটা আপনার নামে একটা কথা বলেছে যেটা আমি আপনাকে বলতে পারতেছি না!
জান্নাতঃ কেনো কি বলেছে!
আমিঃ বললে তো আপনি রেগে যাবেন? (মুখটা গম্ভীর করে বললাম)
জান্নাতঃ তোরে না বলতে বলছি?
আমিঃ আপনার নাকি বিয়ে আগে কয়েকটা ছেলের সাথে রিলেশান ছিলো! আপনি আমাকে ঠকালেন! (বিপদ এড়াতে মিথ্যাগুলো বলতে হচ্ছে)
জান্নাতঃ কি সব যা তা বলছিস! মুখ সামলে কথা বলবি বলে দিলাম!
আমিঃ হুম মেয়েটা বলেছে আপনার লেপটপে যেই ই-মেইল আইডিটা আছে সেটা চেক করলেই নাকি সব পেয়ে যাবো!
জান্নাতঃ ঐ মেয়েটার সাহস কি করে হয় আমার নামে মিথ্যা বলার! (রেগে আগুন হচ্ছে জান্নাত)
আমিঃ মেয়েটা মিথ্যা বলছে না সত্যি সেটাতো আপনার লেপটপ এর ই-মেইল দেখলেই বুঝা যাবে!
জান্নাতঃ মানে! তুই ওও আমাকে বিশ্বাস করতেছিস না!
আমিঃ কিভাবে করবো! আপনি কি মন মোহন সাধু নাকি যে বিশ্বাস করবো! আর যদি লেপটপে এমন কোনো কিছু না থাকে তাহলে আপনি সেটা একবার দেখালেই পারেন! (মুখটা ভার করে বললাম)
জান্নাতঃ ওকে আয় তুই আমার সাথে আমার রুমে! আমি দেখাচ্ছি তোকে!
আমিঃ ওকে চলেন! (বলেই ওনার পিছন-পিছন যেতে লাগলাম)
যখনই ওনি আমার রুম থেকে বেড় হলেন তখনই আমি ঠুস করে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম! লাগিয়ে দিয়ে নাগিন ডান্স দিতে লাগলাম!
ওপাশ থেকে জান্নাত দরজায় ধাক্কাচ্ছে! ডাকতেছে কিন্তু কে আর পায় কাকে? আমি তো জান্নাত কে বোকা বানিয়ে সেই খুশি! ঐপাশ থেকে জান্নাত বলতেছে..
জান্নাতঃ ঐই হুসাইনের বাচ্চা দরজা খোল নাহলে পড়ে তোর অবস্থা খারাপ করে দিবো বলে দিলাম! তোকে আমি কাচা চিবিয়ে খাবো! ভালোই-ভালোই খুল বলছি!
আমি কোনোকিছু না বলে খাটে গিয়ে শুয়ে-শুয়ে মোবাইলে গান শুনতে লাগলাম! কিছুক্ষণ পর সবকিছু ঠান্ডা হয়ে গেলো!
আজকে বেড় হওয়া যাবে না! নাহলে মার্ডার হয়ে যেতে পারি! তাই রুমে বসে থাকাই ভালো!
দুপুরে না খেয়ে রুমেই বসে আছি! বসে থাকতে-থাকতে আর ভালো লাগতেছে না বাহিরো যাওয়া যাবে না! অবশেষে দুপুরের একটু পড়ের দিকে ঘুমিয়ে গেলাম!
ঘুম ভাঙ্গলো গালে কারো শীতল স্পর্শে! চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি জান্নাত সামনে বসে আছে! হালকা একটু হেসে আবার ঘুমাতে যাবো তখনই সবকিছু মনে পড়ে গেলো!
লাফিয়ে উঠতে গিয়ে পাড়লাম না! তাকিয়ে দেখি আমার হাত আর পাগুলো জান্নাতের একটা উড়না দিয়ে বেধে রেখেছে!
পাশে তাকিয়ে দেখি জান্নাত কতগুলো লিপষ্টিক নিয়ে বসে আছে! মানেটা বুঝতে পারলাম না! ওও আমাকে না মেরে এভাবে লিপষ্টিক নিয়ে বসে আছে কেনো!
জান্নাতঃ আরে বাবু তোমার ঘুম ভেঙ্গেছে!
আমিঃ ঐ বাবু কে? আর আমাকে এভাবে বেধে রেখেছেন কেনো?
জান্নাতঃ ওললে -ওললে আমার বাবুটা রাগও করে দেখি! কেনো মনে নেই কি করেছিস!
আমিঃ সরি আসলে আমি তখন শেল্ফ ডিফেন্সের জন্য ঐগুলো বলেছিলাম!
জান্নাতঃ তা এখন তো কোনো ডিফেন্সই করার অবস্থা তোর নাই!
আমিঃ বললাম তো সরি আগের সবকিছু ভুলে যান প্লিজ!
জান্নাতঃ রাক্ষসী আর ডাইনিরা তাদের অপমান সবকিছু এত তাড়াতাড়ি ভুলে যায় না!
তারপর জান্নাত তার ফোনটা বেড় করে আমার কয়েকটা ফটো তুললো!
তারপর নিজের ঠোটে আবার লিপষ্টিক লাগালো! লাগিয়ে আমার গালে চুমু দিতেছে এমন ভাবে ছবি তুলতেছে!
আমিঃ ঐ আপনি কি করতেছেন?
জান্নাতঃ যা করতেছি চুপ-চাপ মেনে তাহলে পাচমিনিট পরে মুক্ত করে দিবো! রাজি থাকলে বল!
আমিঃ ওকে!
তারপর আমি চুপচাপ শুয়ে রইলাম আর জান্নাত কয়েকটা সেল্ফি তুলে সব বাধন খুলে দিলে!
জান্নাতঃ শুন গিয়ে একবার আয়নায় মুখটা দেখে নে নাহলে পড়ে সমস্যা হবে!
উঠে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে! ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নায় নিজের মুখটা দেখে নিজেই ভয় পেয়ে গেলাম!
কারণ মুখের কমপক্ষে বিশ জায়গায় জান্নাত চুমু দিয়েছে আর তার লিপষ্টিক এর দাগগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে! এই জন্যই এতগুলো লিপষ্টিক এনে রেখেছিলো ডাইনিটা!
তখনই ফটো তোলার কথাটা মনে পড়ে গেলো! তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বাহিরে এসে দেখি আপু আমার বিছানায় শুয়ে আছে! আমি বেড়ুতেই বলে উঠলো!
জান্নাতঃ কিরে কেমন লাগলো শর্কডটা!
আমিঃ আগে বলে আপনি এতগুলো ছবি তুললেন কেনো?
জান্নাতঃ আমি আমার বাবুটার ছবিও তুলতে পারবো না!
আমিঃ এসব একটিং বাদ দিয়ে আসল কথা বলেন! ছবিগুলো কেনো তুলেছেন!
জান্নাতঃ যেনো কোনো মেয়ে তোকে প্রপোজ করতে না পারে! আর করলেও এগুলো দেখালে মেয়ে যা বুঝার বুঝে যাবে!
জান্নাতের কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে ফেললাম! কি ডেন্জেরাস মেয়েরে বাবা! ওনার ভিতর তো আগুনে ভরা! “কি বলবো কিছুই বুঝতে পারতেছি না!
জান্নাতঃ শুনো বাবু এরপর থেকে কারো প্রপোজ এসপেক্ট করার আগে আজকের দিনটার কথা মনে রেখো! ওকে বাবু!
আমি কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলাম!
জান্নাতঃ আর নিলাকেও তোর সাথে তুলা সেল্ফিগুলো পাঠিয়ে দিয়েছি! তোকে কাছে পেলে জানে মেরে দিবে বলেছে!
আমিঃ আপনি কেনো আমার পিছনে লেগে থাকেন!
জান্নাতঃ তুই যে আমাকে জ্বালিয়েছিস তাই আমি একটা বছর তোকে জ্বালাবো!
আর কিছুই বললাম না!
পরেরদিন সকালে জান্নাত নিজের মতো করে ভার্সিটিতে চলে গেলো আর আমি নিজের মতো করে ভার্সিটিতে চলে গেলাম!
সারা দিন ভালোই দিন কাটলো! লাষ্ট ক্লাস করতেছিলাম তখনই সাইলেন্টে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো! তাকিয়ে দেখি জান্নাত ফোন দিয়েছে!
একরুম থেকে অন্য রুমে ফোন দিতেছে কেনো? বিরক্তি নিয়ে বাহিরে এসে ফোনটা রিসিভ করলাম!
আমিঃ কি হলো এখন ফোন দিয়েছেন কেনো?
জান্নাতঃ তোরে ফোন দেওয়া ছাড়াতো আমার আর কাজ নেই তাই ফোন দিয়েছি! তুই এখনই বাসায় আয়!
আমিঃ একটু পড়ে ক্লাস শেষ হবে তখন চলে আসবো!
জান্নাতঃ হুম তোর ভাইয়া এসে দেখোক তুই আর আমি দুজন আলাদা রুমে থাকি! তারপর এসে তুই ওনাকে বুঝ দিস!
আমিঃ মানে?
জান্নাতঃ মানে তোর ভাই আজকে আসতেছে ঢাকায় আর ওনি এসে আমাদের এখানে থাকবে! সো তাড়াতাড়ি বাসায় আয়!
বলেই জান্নাত ফোনটা কেটে দিলো! কি করবো কিছুই বুঝতেছি না!
তাড়াতাড়ি ভার্সিটি থেকে বাসায় গেলাম! গিয়ে আমার রুমের সবকিছু জান্নাতের রুমে নিয়ে গুছিয়ে রাখলাম! আর জান্নাত পুরো রুমটাকে গুছাতে ব্যাস্ত!
সবকিছু গুছিয়ে সাওয়ার নিতে চলে গেলাম! সাওয়ার শেষ করে বাহিরে আসতেই খেয়াল করলাম জান্নাত কারো সাথে কথা বলতেছে! বুঝতে বাকি রইলো না ভাইয়া চলে এসেছে!
রেডি হয়ে বাহিরে গিয়ে দেখি ভাইয়া বসে-বসে টিভি দেখতেছে আর জান্নাত কফি বানাচ্ছে!
তারপর ভাইয়ার সাথে কৌশল বিনিময় করে দুজনে বসে টিভি দেখতে লাগলাম! তখনই জান্নাত বললো!
জান্নাতঃ আপনিও কি কফি খাবেন!
আমিঃ ভাইয়ার কফি ফেভারিট! আর এটা কি জিঙ্গেসা করা লাগে নাকি?
জান্নাতঃ আমি ভাইয়ার কথা না আপনাকে জিঙ্গেস করেছি!
আমিঃ আমাকে?
জান্নাতঃ হুম!
জান্নাতের মুখে আপনি শুনে জীবনের সবচেয়ে বড় শর্কড খেলাম! একটু আগেও তুই-তুকারি করতেছিলো আর এখনই আপনি! বাহ ওনি তো একটিংএ মাষ্টার্স ফাস!
ভাইয়াঃ কিরে খাবি কি না বল!
আমিঃ হুম! হ্যা আমার জন্যও হালকা একটু বানিয়ো!
জান্নাতঃ ওকে!
রাতে খাবারের জন্য বাহির থেকে গিয়ে সবকিছু নিয়ে আসলাম! রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমি আর ভাইয়া চলে গেলাম ছাদে!
সবার খোজখবর নিয়ে নিচে চলে আসলাম! এসে দেখি জান্নাতও বসে আছে আমাদের জন্য!
আমিঃ তুমি ঘুমাও নি!
জান্নাতঃ নাহ আপনারা সজাক তাই আর ঘুমাই নি!
ভাইয়াঃ জান্নাত তোমরা গিয়ে ঘুমিয়ে যাও!
জান্নাতঃ আপনি নাহয় ভাইয়ার সাথেই ঘুমিয়ে যান!
ভাইয়াঃ হুসাইন আমার সাথে থাকা লাগবে না! তোমরা যাও গিয়ে ঘুমিয়ে যাও সকালে দেখা হবে! গুড নাইট! (বলেই ভাইয়া রুমে চলে গেলো)
জান্নাত আর আমি চলে গেলাম আমাদের রুমে!
জান্নাতঃ কিরে তোর সাহস তো কম না তুই আমাকে তুমি করে বলিস!
আমিঃ আপনি কি চান আমি ভাইয়ার সামনে আপনি করে বলি! তারপর ভাইয়া জিঙ্গেস করলে আমি সব সত্যি বলে দেই! তারপর ভাইয়া আমার কথা চিন্তা করে আপনার থেকে ডিভোর্স নিয়ে দিবে!
জান্নাতঃ ঐ তোর কাছ থেকে এত কথা শুনতে চাইছি আমি!
আমিঃ তাহলে এখন যেটা বলবো সেটা মেনে নেওয়াই আপনার জন্য বেটার! (ভিলেন এর মতো হাসি দিয়ে)
জান্নাতঃ হুম! ভাইয়া চলে যাওয়ার পর তোকে বুঝাবো কত ধানে কত চাল!
আমিঃ আগে এটা বলেন
“রোমান্টিক প্রেমের ছোট গল্প” গুলো আপনার কেমন লাগে জানাবেন।
পর্ব ১০
আমিঃ আগে এটা বলেন আপনি আমাকে আপনি-আপনি করে বলতেছেন কেনো?
জান্নাতঃ মন চাইতেছে তাই! তোকে বলতে হবে নাকি? (জান্নাত রাগি মুখ করে)
আমিঃ নাহ! এমনি আরকি?
জান্নাতঃ হুম! যা সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়।সকালে বেচে থাকলে দেখা হবে!
জান্নাত শুয়ে গেলো আমিও বালিশ এনে সোফায় গুমিয়ে গেলাম!
এভাবে কয়েকদিন কেটে গেলো! যতই দিন যাচ্ছে জান্নাতের অত্যাচার ততই বাড়তেছে!
কেনো মেয়ের সাথে কথা বলতে পারি না! কেনো মেয়ের দিকে তাকাতে পারি না! কেউ প্রপোজ করলে জান্নাত তার তোলা ছবিগুলো মেয়েটাকে দেখায় ব্যাস জায়গায় সব শেষ!
এসবের কিছু একটা হাল করতে হবে ভাবতেছি! তখনই মাথায় একটা আইডিয়া আসলো! তাই মেহেদী ভাইকে ফোন দিলাম রাতে! দিয়ে সবকিছু বলে দিলাম!
সকালে ভার্সিটিতে গিয়ে মেহেদী ভাইদের নিয়ে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন জান্নাত আসবে! জান্নাত আসলেই গেট থেকে একজন ইশারা দিবে তারপর আমরা আমাদের কাজ শুরু করবো!
দশ মিনিট পর গেট থেকে ইশারা করলো জান্নাত আসতেছে! সবাই জান্নাতের যাওয়ার রাস্তার উল্টোদিকে মুখ করে বসলাম! জান্নাতে আমাদের কাছে আসতেই মেহেদী ভাই বলে উঠলো!
মেহেদী ভাইঃ আচ্ছা হুসাইন তুই জান্নাতের এত অত্যাচার সহ্য করতেছিস কেনো?
আমিঃ সত্য বলবো নাকি মিথ্যা!
মেহেদী ভাইঃ সত্যা করে বল!
আমিঃ কারণটা হলো আমি জান্নাত আপুকে ভালোবেসে ফেলেছি!
মেহেদী ভাইঃ কিহহহ! তোর মাথা ঠিক আছে তুই জান্নাত কে ভালোবেসে ফেলেছিস!
আমিঃ জান্নাত আপু একটু রাগি তবে মনটা একদম পবিত্র! ওনাকে পেলে আমার জীবনটা ধন্য হয়ে যাবে!
মেহেদী ভাইঃ তাই নাকি! তা বলেছিস কখনো জান্নাত?
আমিঃ তোমার মাথা ঠিক আছে! আপুকে বললে তো ওনি আমাকে জানে মেরে দিবে!
জান্নাত আমাদের পিছনে আছে কি না সেটা কনফার্ম হওয়ার জন্য গেটের কাছে থাকা ছেলেটাকে চোখ দিয়ে ইশারা করলাম! ছেলেটা হ্যা সূচক উত্তর দিলো! ব্যাস আবার একটিং এ চলে গেলাম)
মেহেদী ভাইঃ তাহলে এখন কি করবি!
আমিঃ কি আর করবো! এই কয়েকমাসে যদি ওনি আমাকে ভালোবাসে তাহলে বংশের বাতি জ্বলবে! নাহলে কোনোকিছু করার নেই!
মেহেদী ভাইঃ জান্নাত তো তোর বউ তুই ওর কাছে স্বামীর অধিকার চাইলেই পারিস!
আমিঃ ভাই এসব অধিকার তখনই আদায় করা যায় যখন স্ত্রীর অনুমতি থাকে! তাছাড়া জুড় করলে শরীর পাওয়া যাবে মন পাওয়া যাবে না! আর আমার দরকার তার মনটা!
মেহেদী ভাইঃ তাও তুই একবার বলে দেখ! কে জানে হয়তো জান্নাতও তোকে ভালোবাসে!
আমিঃ এটা হতেই পারে না কারণ ওনি শুধু প্রতিশোধ নিতে বিয়েটা করেছে! আর সেখানে আমি ওনাকে ভালোবেসে ফেসে গেছি মেহেদী ভাই! এখন কি করবো বুঝতেছি না! (মনটা খারাপ করে বললাম)
মেহেদি ভাইঃ কি আর করবি আল্লাহ-আল্লাহ কর! যেনো জান্নাতের মনে তোর জন্য ভালোবাসা জন্মায়!
আমিঃ হুম! (দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম)
তারপর সবাই মিনিট খানেক চুপ থাকার পর ছেলেটা ইশারায় বললো জান্নাত চলে গেছে! ব্যাস প্লেন সাকসেসফুল!
মেহেদী ভাইঃ তুই এগুলো করতেছিস কেনো?
আমিঃ ওনার জ্বালানোটা আর সহ্য হচ্ছে না! তাই ওনাকে এবার আমি জ্বালাবো! বলেছিলাম না ওনাকে আমার মায়ায় ফেলবো এখন সেই সময়টা এসে গেছে! তারপর দেখাবো আমাকে জ্বালানোর মজাটা!
তারপর ওনার হালকা হাসলেন! তারপর ঐদিনের মতো ক্লাস করে আমি আগে বাসায় চলে আসলাম!
এসে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় বসে ছিলাম! হঠ্যাৎ পিছন থেকে কারোর গলার আওয়াজ পেলাম তাকিয়ে দেখি জান্নাত! হাতে দুটো কফির কাপ নিয়ে দাড়িয়ে আছে!
আমিঃ আরে আপনি কখন?
জান্নাতঃ এ এ একটু আগে? (স্বর আটকে- আটকে কথাটা আসতেছে!)
ওনি আমার দিকে তাকাচ্ছেন না! আড় চোখে তাকাচ্ছে! বুঝলাম নজর মিলাতে পারতেছে না! তার মানে প্লেন কাজ করেছে!
আমিঃ ওহ! তা হঠ্যাৎ কফি নিয়ে আসলেন আমার জন্য কি মনে করে!
জান্নাতঃ এমনি মন চাইলো তাই নিয়ে আসলাম! (বলেই কফির মগটা আমার হাতে দিয়ে ওনি চলে গেলো)
হালকা হেসে কফি হেতে শুরু করলাম! তারপর এভাবেই কাটতে লাগলো দিনগুলো!
কিছুদিন যাওয়ার পর থেকেই জান্নাত আপু ভার্সিটিতে যাওয়া বন্ধ করে দেয় পরিক্ষা সামনে তাই!
আমিও এটার সুযোগ নেই! আপুকে রুটিন অনুযায়ী ডেকে দেওয়া ওনার জন্য কফি বানিয়ে দেওয়া! ওনার খাওয়া-দাওয়া নিয়ে একটু মাথা ঘামানো! এসবে পুরো মনযোগ দিয়ে করতে লাগলাম!
আর তাই কিছুদিন ধরে ওনি আমার সাথে কোনো খারাপ আচার-আচরণ করেন না! কেমন যেনো বদলাতে লাগলেন ওনি! আমার চোখের দিকে চোখ মিলান না ওনি! কোনো জানি মনে হয় ওনি আমার জালে ফাসতে শুরু করেছে!
সকালে ভার্সিটিতে গিয়ে মেহেদী ভাইয়ের সাথে দেখা করলাম!
আমিঃ মেহেদী ভাই আমার একটা ফ্রেন্ডকে এই ভার্সিটিতে চান্স করে দিতে হবে?
মেহেদী ভাইঃ তুই তোর শশুড়কে বললেই তো পারিস?
আমিঃ তুমি পারবে কি না সেটা বলো?
মেহেদী ভাইঃ হুম! তা কে তোর সেই ফ্রেন্ডটা!
আমিঃ মারিয়া!
মেহেদী ভাইঃ কিহহহ! তোর মাথা ঠিক আছে! তুই কি করতে চাইতেছিস সেটা বল!
আমিঃ আগুনের জন্য ডিজেল আনতেছি!
মেহেদী ভাইঃ মানে তুই জান্নাত কে দেখিয়ে মারিয়ার সাথে প্রেম করবি!
আমিঃ হুম! এবার বুঝেছো কেনো শশুড়কে বলি নি!
মেহেদী ভাইঃ হুম! কিন্তু হুসাইন আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে তুই বড় একটা ভুল করতে যাচ্ছিস!
আমিঃ এখানে ভুলের কোনোকিছুই নেই! আর এমনিতেও আর ৮ মাস পরে তো আমাকে জান্নাত ছেড়েই দিবে তখন আমি কি করবো! আমার লাইফা ঘুছাতেও তো কাউকে লাগবে! তাই মারিয়াকে আমার দরকার!
মেহেদী ভাইঃ ওকে! তুই চিন্তা করিস না আমি দেখতেছি!
আমিঃ এডমিশান কবে থেকে!
মেহেদী ভাইঃ দুদিন পর থেকে?
আমিঃতুমি সব ব্যবস্থা করো এখন নিজে জ্বলবে আর বুঝবে ওনি অন্যকে জ্বালালে কেমন লাগে! সবকিছুর হিসেব নিবো আমি গুণে-গুণে!
মেহেদী ভাইঃ ওকে! তুই মাথা ঠান্ডা কর আর যা করবি ভেবে চিন্তে করিস!
আমিঃ হুম! আগে এটা বল তুমি কি এবারও ভার্সিটিতে থাকবে নাকি?
মেহেদী ভাইঃ হুম! আমিতো এখানে থেকে রাজনিতি করি! তাই আরো কয়েকবছর আছি এখানে!
আমিঃ তাহলে তো ভালোই!
এরপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে বাসায় চলে আসলাম!
রাতে পড়াশোনা শেষ করে খাওয়া-দাওয়া করে ছাদে গেলাম! হালকা কিছুক্ষণ ঘুড়াফেরা করে রুমে এসে ঘুমিয়ে গেলাম!
পরেরদিন ভার্সিটি থেকে মারিয়ার কাছে অফার পাঠালাম! মারিয়া নিজেও জানে না আমি এটা করতেছি! যার কারণে মারিয়া ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে রাজি হয়ে যায়!
দুদিন পর সকালে নাস্তার সময় মেহেদী ভাইয়ের কল আসলো! তাই রিসিভ করলাম!
মেহেদী ভাইঃ কিরে তুই কই?
আমিঃ নাস্তা করতেছি ভাই!
মেহেদী ভাইঃ মারিয়া ভার্সিটিতে ভর্তি হতে এসেছে! তুই এখনি আয়!
আমিঃ কিহহহ! ওকে আমি এখনই আসতেছি!
বলেই ফোনটা রেখে দিয়ে উঠে চলে যেতে লাগলাম তখনই জান্নাত ডাক দিলো!
জান্নাতঃ কোথায় যাচ্ছিস!
আমিঃভার্সিটিতে যাবো একটু কাজ আছে!
জান্নাত- নাস্তা শেষ করে তারপর যাবি! বসে নাস্তাটা শেষ কর! (জান্নাত চোখ রাঙ্গিয়ে বললো)
আমিঃ ওকে! (বলেই আবার ব্রেকফাস্ট করতে বসে গেলাম)
শেষ করে তাড়াতাড়ি চলে গেলাম ভার্সিটিতে! গিয়ে মেহেদী ভাইয়ের সাথে দেখা করি!
আমিঃ ভাই মারিয়া কই?
মেহেদী ভাইঃ ঐখানে আছে! ওও একলা একলা অনেক নার্ভাস ফিল করতেছিলো! তাই আমার বান্ধবীদের বললাম মারিয়াকে কোম্পানি দিতে! আর ওরা ঐখানে মারিয়াকে নিয়ে গল্প করতেছে! তুই যা!
আমিঃ হুম! (বলেই মেহেদী ভাইকে জড়িয়ে ধরলাম তারপর বাগানে চলে গেলাম)
আমাকে দেখে বাকিগুলো উঠে চলে গেলো! মারিয়া পিছনে তাকিয়ে আমাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো! জয়া দাড়িয়ে গেলো!
সাথে-সাথে গিয়ে মারিয়াকে জড়িয়ে ধরলাম! খেয়াল করলাম মারিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরতেছে না! বুঝে গেলাম মারিয়ার মাঝে কোনো একটা কাহিনী আছে! তাই সাথে-সাথে ছেড়ে দিলাম!
আমিঃ ছেলেটাকে কে? যার কারণে আমাকে ভুলে গেলে!
মারিয়া মাথা নিচু করে আছে!
আমিঃ আচ্ছা বসো এখানে! আর এত অবাক হওয়ার কিছুই নেই! তা এবার বলো ছেলেটা কে?
মারিয়াঃ তুমি চলে যাওয়ার ওর সিয়াম আমাকে মেন্টালি অনেক সাপোর্ট করে! তারপর বাসা থেকে ওর সাথে বিয়ে ঠিক করে আমার! পাচ মাসের জন্য সিয়াম দেশের বাহিরে গিয়ে! আসলেই আমাদের বিয়ে হয়ে যাবে!
আমিঃ গুড! তা কেমন আছো তুমি মারিয়া!
মায়িয়াঃ হুম ভালো! (মারিয়ার চোখের কোনে হালকা পানি!)
আমিঃমারিয়া তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো!
মাথা নেড়ে না করলো!
আমিঃ শুনো আমাকে নিয়ে টেনশান করো না! আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না! তুমি ভালোভাবে পড়ালেখা করো! বন্ধু হওয়া যাবে তোমার!
কাদো-কাদো অবস্থায় মাথা নেড়ে হ্যা বললো!
আমিঃ ওকে তা বিয়ের সময় আমি কি যেতে পারবো মানে বিয়ে তো ঠিক হয়ে আছে বিয়ের সময় দাওয়াত পাবো তো নাকি! না খারাপ বলে দাওয়াত ও দিবে না!
এবার মারিয়া হেসে উঠলো!
আমিঃ দোয়া করি এই হাসিটা যেনো সারাজীবন থাকে!
মারিয়াঃ আচ্ছা আমার কথা বাদ দাও! তোমার সংসার লাইফ কেমন চলতেছে!
আমিঃ কার সংসার লাইফ?
মারিয়াঃ কেনো তোমার আর জান্নাত আপুর!
হালকা হাসলাম ওর কথায়! মারিয়া সব বুঝে গেলো!
মারিয়াঃ কি হয়েছে একটু ক্লিয়ার করে বলবে প্লিজ!
আমিঃ হয়নি এখনো তবে হবে আর ৮ মাস পড়ে!
মারিয়াঃ কি হবে!
আমিঃ ডিভোর্স!
মারিয়াঃ কিহহহ! (অবাক হয়ে গেলো)
আমিঃ হুম! যা শুনেছো তাই!
মারিয়াঃ ডিভোর্স কিসের জন্য দিবে! আর তাহলে তোমাকে বিয়ে করেছিলো কেনো! (অবাক হয়ে গেলো)
আমিঃ তোমার কি মনে হয় জান্নাত আমাকে সংসার করার জন্য বিয়ে করেছে! নাহহহ! জান্নাত আমার উপর প্রতিশোধ নিতে বিয়েটা করেছিলো! তারপর আমাদের মাঝে ১ বছরের একটা কনট্রাক হয়! আর সেটার সময় আছে আর মাত্র ৮ মাস!
মারিয়াঃ তোমার কথা আমি কিছুই বুঝতেছি না!
আমিঃ তাহলে শুনো (তারপর প্রথম থেকে সব বললাম মারিয়াকে)! এই ছয়মাসে এগুলো হয়েছে আমার সাথে! জানি না বাকি ৮ মাস কিভাবে যায়!
খেয়াল করে দেখি………….!