১৪ বছর পেরিয়ে গেল
ডিসেম্বর মাস আমার খুবই পছন্দের।পছন্দের মাসটা আরো ভরপুর করে তুলতেই হয়তো ,আমার জীবনে এই মাসেই সবথেকে বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। এই মাসের ১৮ তারিখ এ ২০১০ সালে আমি আমার দাদুকে হারাই। আমার জীবনের সবথেকে বাজে ঘটনা বাজে মুহূর্ত এবং সব থেকে বড় লস যদি কিছু হয়ে থাকে, এই দিনটিতেই হয়েছে।
প্রত্যেক বারের মতো দাদুর সাথে ১৮ তারিখ সকাল বেলা থেকে আমার জন্মদিন আসতে বলে নানা রকম প্ল্যানিং করছিলাম। বাড়ির লোকজন আমার জন্মদিন নিয়ে লাফালাফি না করলেও, বাড়ির মধ্যে একটি মানুষ ছিল যে সারাক্ষণ আমার সমস্ত রকম বায়না, সমস্ত রকম আবদার, সমস্ত দুষ্টুমি সহ্য করতো। আর সব থেকে বড় কথা আজ অব্দি দাদুর কাছে আমি কোনদিন বকুনি খাইনি। দাদু আমাকে পুরো মাথায় করে রাখত।
১৮ তারিখ রাতের বেলা হঠাৎ করেই দাদুর শরীরটা খারাপ করতে থাকে। সেদিন রাতে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়াও করেছিল। দাদুর শরীর খারাপ হচ্ছে দেখে, আমি আমার সমস্ত বালিশ কম্বল নিয়ে দাদুর কাছে চলে এসেছিলাম দাদুর সাথে থাকবো বলে। আমি ছোটবেলা থেকেই ঠাকুরমার সাথে ঘুমাতাম। কোন রকম ভাবে বেড গুছিয়ে নিয়ে আমি আর দাদু শুয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু একটু পরেই আবার দাদুর শরীর খারাপ শুরু হয়। বুকে ব্যথা হতে থাকে। আমি নিজেও ভেবে পাচ্ছিলাম না এরকম কেন হচ্ছিল। এর আগেও যদিও এরকম হয়েছে কিন্তু সেরে গেছে।
সেদিন বাবা বাড়িতে ছিল না। আমাদেরই শহরে একটি অনুষ্ঠানে এটেন্ড করতে গিয়েছিল। বাবাকে অনেকবার ফোন করাতেও ফোন ধরেনি। ফোন সাইলেন্ট ছিল। এ কারণে এখনো কারোর ফোন সাইলেন্ট থাকলে আমি ভীষণ রেগে যাই। কারণ আশেপাশে কার আপদ বিপদ হয়, ফোন তো দরকারের জন্যই থাকে। উপযুক্ত সময় সেই ফোন ওঠাতে না পারলে সত্যিই দুর্ঘটনা ঘটে যায়।
দাদুর বুকে ব্যথা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে পাশের বাড়ির কাকু কাকিমাদের ডাকতে হয়েছিল। তখনো বাবা আসেনি। আমি রীতিমতো কান্নাকাটি করছিলাম। সবাই মিলে দাদুকে ধরাধরি করে গাড়িতে তুললো , আর তখনই বাবা গাড়ি নিয়ে বাড়িতে ঢুকেছে। বাড়িতে এত লোকজন দেখে বাবাও বুঝতে পারছিল না কি হয়েছে। তারপর বাবা ও দাদুকে নিয়ে বেরিয়ে গেল।
দাদু যাওয়ার সময় নিজের লাঠিটাও নিয়ে যায়নি সাথে করে। শুধু যাওয়ার আগে আমার দিকে তাকিয়ে একবার বলেছিল, " সোনা,আমি হয়তো আর ফিরব না।তোরা সবাই ভালো থাকিস। হরে কৃষ্ণ।"
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে যেভাবে এই কথাগুলো বলে গিয়েছিল আমি বেঁচে থাকতে হয়তো ওই দৃশ্যটি আর কখনো ভুলবো না। সেই যে গেল আর ফিরে আসেনি। আমি ভাবতে পারিনি, দাদু চলে যাবে। কিছুক্ষণ পরেই যখন ফোন আসলো, মা ফোনটা ধরল। আর সাথে সাথেই দেখলাম মাকে পড়ে যেতে। বাড়িতে তারপর সমস্ত কিছু ওলট-পালট হয়ে গেল।
দাদু চলে গেছে আর ১৪ টা বছর হয়ে গেছে।আমার জীবনে এত বড় দুর্ঘটনা কখনো ঘটেনি। আমি মনে করি দাদু এখনো আছে। আমাদের সাথেই থাকে। ওনার আশীর্বাদ সব সময় আমার মাথায় থাকে। আমি জীবনে যদি সত্যিই কোন মানুষকে আমিব খুব ভালোবেসে থাকি, প্রথমেই সে মানুষটা হলো আমার দাদু। আমার মা-বাবার থেকেও আমার সব থেকে কাছের ছিল। আমি ভাবতে পারিনি ভগবান তাড়াতাড়ি আমার কাছ থেকে আমার দাদুকে নিয়ে নেবে। আমি সব সময় ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি। দাদু যেখানেই থাকুক ,ভালো থাকুক।
প্রিয় কেউ চলে গেলে তাঁর অভাব কখনোই পূরণ হবার না। আপনার দাদু চলে গেছেন এই মাসে। আপনার এই অভাববোধটা কিছুটা হলেও আমি অনুভব করতে পারি। কারণ এই মাসে আমার বাবা ও শাশুড়ি মা মারা গেছেন। তাদের অভাব খুবই তীব্র ভাবে অনুভব করি। কিন্তু কিছু করারও নেই। নিজেকে সান্তনা দেই যে তারা আমার সাথেই আছেন।
আপনার লেখা সত্যিই মন ছুঁয়ে গেল। আপনার দাদুর প্রতি আপনার ভালোবাসা এবং ওনাকে হারানোর বেদনাটা খুব গভীরভাবে অনুভব করা যায়।
যারা জীবনে আমাদের নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে, তাদের স্মৃতি চিরকাল আমাদের সাথে থাকে। দাদু যেখানেই থাকুন, নিশ্চয়ই আপনাকে দেখছেন এবং আশীর্বাদ করছেন। ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি।
🤗 @isha.ish - wonderful work as always! 🌈 🌈
Hey friend! 🎉 Come check out your awesome post on my shiny new front-end! It's still a work in progress but I'd love to hear what you think! View your post here ✨