কোলাজ আর্ট
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। আজকে প্রায় দুদিন পর আমি পোস্ট লিখছি। এই দুদিন আমি যে কি ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছি তা আপনাদের বলে বোঝাতে পারবো না। আসলে ব্যস্ততা শুধুমাত্র শারীরিক হয় না হয় মানসিকও। তাই সবকিছুর মাঝে অনেক কিছুই হাত ছাড়া হয়ে যায়। চাইলেও সবকিছু একসাথে সম্পূর্ণ করা যায় না। এই ধরুন এই দুদিন আমি পোস্ট করতে চেয়েছিলাম খুবই, কিন্তু সেটা করা হয়ে ওঠেনি।
প্রত্যেকবার ভাবি আগে থেকে পোস্ট রেডি করে রাখবো। কিন্তু প্রত্যেকদিনের ব্যস্ততায় সেই পোস্টগুলো ফুরিয়ে যায়। যাই হোক আজকের প্রথম কভার ছবি দেখেই হয়তো বুঝতে পারছেন আমি যে বিষয়ে পোস্ট করতে চলেছি সেটি একটি আর্ট বিষয়ক। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে একটি কোলাজ আর্ট শেয়ার করছি।
আমি কিছুদিন আগেই আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম যে আমার বিএড ট্রেনিংয়ের পরীক্ষা চলছে। ইন্টারনাল পরীক্ষা চলছে, এরপর আবার এক্সটার্নাল পরীক্ষা হবে। তারপর আবার লিখিত হবে। এই সংক্রান্ত ব্যাপারে আমার বিরক্তিকর অনুভূতি গুলি ও আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি আমার পোষ্টের মাধ্যমে। তবে হ্যাঁ এই ট্রেনিং করতে গিয়ে কিছু কিছু কাজ এমন করতে হচ্ছে যা সত্যিই কাজে লেগে যাচ্ছে।
যেমন আজকের এই কোলাজ আর্ট। আমাদের টোটাল ক্লাসরুম জুড়ে টোটাল ১০০ জন স্টুডেন্ট আছে। সকলের কিছু না কিছু লটারির মাধ্যমে টপিক পড়েছে। তার মধ্যে আমার কোলাজ আর্ট পড়েছিল। কারোর আবার বুক কভার, ক্যালেন্ডার, আরো কত কিছু। কোলাজ আর্ট করতে করতে আপনাদের সাথে শেয়ার করব বলে সমস্ত ছবিগুলো তুলে রেখেছিলাম। তাই আজকে শেয়ার করছি।
প্রথমেই চলে আসি উপকরণে বা উপাদানে। একটি কোলাজ আর্ট তৈরি করতে বেশি কিছু না। শুধু ম্যাগাজিন দরকার। আপনারা চাইলে খবরের কাগজও ব্যবহার করতে পারেন। আমার পরিচিত একজন কাকু এত সুন্দরভাবে কোলাজ আর্ট করেছিলেন খবরের কাগজ দিয়ে, আমি হয়তো তার মত এত দক্ষ নই। তাও যেটুকু পেরেছি চেষ্টা করেছি।
উপাদান হিসেবে ম্যাগাজিন, আঠা, পেন্সিল, রবার, আর কার্টিজ পেপার লেগেছে। এই জায়গায় আপনারা আর্ট পেপারও ব্যবহার করতে পারেন।
প্রথম ধাপ
আপনারা দেখতে পাচ্ছেন একটি পেপার। এই কার্টিজ পেপারের চারভাগের একটি ভাগ আমি নিয়ে নিয়েছি। তাতে চারিদিকে আমি মার্জিন টেনে নিয়েছি।
দ্বিতীয় ধাপ
আমি আমার মন মতো ছবি আঁকা শুরু করলাম। আমি যে ছবিটি ভেবেছি সেটাই পেন্সিলের সাহায্যে আস্তে আস্তে একে নিচ্ছি।
তৃতীয় ধাপ
আপনারা আশাকরি বুঝতে পারছেন আমি রাধা কৃষ্ণের ছবি আঁকছি। একটু অ্যাবস্ট্রাক ফর্মে আমি ছবিটি একে নিচ্ছি। প্রথমেই আমি রাধার মুখের চিত্র আঁকছি। তারপরে কৃষ্ণের চিত্র।
চতুর্থ ধাপ
সমস্ত কিছু শেষ হয়ে যাওয়ার পর একটু উপরের দিকে সামান্য ফুল পাতা একে নিচ্ছি।
পঞ্চম ধাপ
এবার চলে আসলাম আসল কাজে। আমার কাছে পুরনো অনেকগুলো ম্যাগাজিন ছিল। সেখান থেকে যে রং গুলো লাগবে, সেইমতো রংয়ের কাগজ হাত দিয়ে ছিড়ে ছিড়ে কেটে কেটে আঠা দিয়ে বসাবো।
ষষ্ঠ ধাপ
ম্যাগাজিনের মধ্যে একটু ডিপ সবুজ অথবা শ্যাওলা রঙের যে রঙিন কাগজগুলো ছিল সেগুলো হাত দিয়ে ছিড়ে নিয়েছি। এ জায়গায় কখনো কাঁচি দিয়ে কাজ করলে হবেনা। তারপর কার্টিজ পেপারের ছবির যে অংশে কাগজের টুকরোটা লাগাবো সেই অংশে আঠা লাগিয়ে নিয়ে কাগজের টুকরোটা আটকে দিয়েছি। আর এভাবেই কৃষ্ণের পাগড়ী তৈরি হয়েছে।
সপ্তম ধাপ
এই জায়গায় আমি রাধার মুখের কাজ করছি। এ কারণে ম্যাগাজিনের ভেতরের স্কিন কালারের যে কটা আমি কাগজ পেয়েছি সে কটা হাত দিয়ে ছিঁড়ে ছিড়ে নিয়ে আমি আঠার সাহায্যে পেপারের ওপর আটকে দিচ্ছি।
অষ্টম ধাপ
আপনারা দেখতে পাচ্ছেন গলার মালা তৈরি হয়ে গেছে এই ভাবেই। আবার খেয়াল করে দেখুন কৃষ্ণ ঠাকুরের পাগড়ীর নিচে একটি সুন্দর কাজ যেটি ম্যাগাজিনের মধ্যেই ছিল সেটাও আমি হাত দিয়েছিরে ওখানে আঠার সাহায্যে বসিয়েছি।
নবম ধাপ
এবারে আমি গায়ের কালার করার জন্য, ম্যাগাজিন থেকে হালকা আকাশে এবং নীল রঙের যে কটি রঙিন কাগজ পেয়েছি সেগুলোকেই টুকরো টুকরো করে হাত দিয়ে ছিড়ে ছিড়ে ঠিক আঠার সাহায্যে আগেকার মতন বসিয়েছি। কৃষ্ণের গায়ের রং পুরোপুরি ভাবে সম্পূর্ণ হওয়ার পর ছবিটা এত সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছিল! কোলাজ টি আপনারা যদি প্র্যাকটিক্যালি দেখতে পারতেন আপনারা বুঝতেন।
দশম ধাপ
ম্যাগাজিনের ছবি তোলা হয়নি সেরকমভাবে, তাই যেটি তুলেছি, সেটাই আপনাদের সাথে বুঝিয়ে বলি। যেমন ধরুন এ কি সুন্দর একটি হলুদ রঙের পোলাও এর ছবি দেওয়া। এই ছবিটি কে ছিড়ে ছোট ছোট গোল করে আমি গাছের ফাঁকে ফাঁকে আটকেছি।
ফাইনাল
আপনারা বুঝতে পারছেন গাছের ফাঁকে ওই হলুদ জায়গাগুলো, এই পোলাও থেকে নেওয়া। ঠিক এইভাবে পুরো ছবিটি তৈরি হয়ে গেছে।
পুরো কোলাজ টি করতে বেশ সময় লেগেছে। সব থেকে বড় কথা এ ধরনের কাজ ধৈর্যের। আমি কিছুক্ষণ রাতে বসেছি তারপর আবার সকাল বেলায় উঠে কাজ করছিলাম। মোটামুটি যেটুকু বুঝতে পেরেছি, কোলাজ আর্ট সত্যিই একটা অপূর্ব সৃজনশীলতার পরিচয় দেয়। একটা ছবি এঁকে পুরো ছবির রংটা ম্যাগাজিনের কাগজ ছিঁড়ে ছিঁড়ে করতে হয়, একি আর সহজ কথা!! তার ওপর কত রং চাইলেও পাওয়া যায় না ম্যাগাজিনের মধ্যে। আমার বাড়িতে মাত্র চারটি ম্যাগাজিন ছিল। এখান থেকেই কোনরকমে খুজে খুজে যেটুকুনি রং এর কাগজ পেয়েছি, তাই দিয়েই করে ফেলেছি।
আমার পুরো কাজটা আপনাদের কেমন লাগলো, আপনারা অবশ্যই জানাবেন। আজকে এখানেই শেষ করছি, সকলে ভালো থাকবেন।
ছবি আঁকতে আমি ভালোবাসি ।কিন্তু সেই রকম ভাবে কোন ছবি আঁকতে পারিনা বলে তাই কখনো চেষ্টাও করি না। কিন্তু বরাবরই তোমার ছবি আঁকা দেখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। শুধু তোমার বললে ভুল হবে সাথে ঈশানের। তোমার ছবি আঁকাটা খুব সুন্দর হয়েছে।
wow.. you are so creative... really looks amazing 😍...