বডি শেমিংয়ের বিরুদ্ধে এক সাহসী বার্তা 36-24-36 ||বাংলা মুভি রিভিউ
একটা সময় ছিল শুক্রবার মানেই বিটিভির সামনে বসে থাকা। কেননা সপ্তাহে এই একটা দিনই টেলিভিশনে বাংলা সিনেমা দেখা যেত। সেই সব দিন এখন শুধুই স্মৃতি। স্মাটফোন আর ইউটিউবের যুগে মানুষ আর বিটিভেতে সিনেমা দেখে না, কালে ভদ্রে কেউ কেউ হলে গিয়ে সিনেমা দেখে। অনেক দিন বাদে একটা বানলা সিনেমা দেখলাম। নাম ৩৬-২৪-৩৬। সিনেমার নাম শুনে প্রথমে ভেবেছিলাম কি না কি, সাধারণত নারীদের পারফেক্ট শারীরিক গঠন বোঝাতে এমন সংখ্যা বিশ্বব্যপি সমাদৃত। আজকে আই এই সিনেমার রিভিউ দিতে চলে এলাম। চলুন সিনেমা সম্পর্কিত কিছু তথ্য জেনে আসা যাক।
362436 রেজাউর রহমানের এমন এক নির্মাণ যা সমাজে প্রচলিত নারীদের শারীরিক সৌন্দর্যের ধারণাকে ভেংগে দেয়। সিনেমার কেন্দ্রীয় সায়রা চরিত্রে অভিনয় করেন কারিনা কায়সার। এটি তার প্রথম সিনেমা। প্রথম সিনেমায় লিড রোলে একদম শতভাগ নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। সায়রা একজন প্রতিভাবান ইভেন্ট প্ল্যানার। কিন্তু অতিরিক্ত শারীরিক ওজনের কারণে সিনেমার শুরুতে সারাক্ষণেই তাকে হীনমন্যতায় ভূগতে দেখা যায়। তার ছোট একটি অনলাইন বিজনেস থাকে, সেই সুবাদেই সায়রার সাথে পরিচয় হয় তাহসির নামের এক ছেলের এবং এর পর তারা ৩ মাস ভারচুয়ালি চুটিয়ে প্রেম করে। এদিকে ছেলেটা বার বার সায়রা কে দেখতে চায়, মিট করতে চায়, কিন্তু মোটা হওয়ায় সায়রা তার সামনে আস্তে চায় না, হীনমন্যতায় ভোগে। অনেক অনুরোধের পর অবশেষে তাদের দুজনের দেখা হয়, সারাটাদিন তারা খুব রোমান্টিক ভাবে পার করে, কিন্তু এর পরেই সিনেমার ক্লাইমেক্স চেঞ্জ হয়ে যায়। দেখা করার পরদিন থেকে সায়রা তাহসির এর কোন খোজ পায় না। তাহসিরের সব ধরনের কন্টাক্ট নাম্বার বন্ধ, স্যোসাল মিডিয়া আইডি ডিএক্টিভেট দেখে সায়রা তাহসিরের বন্ধুকে কল দেয়। তার বন্ধু জানায় তাহসির ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এটা শোনার পর সায়রা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যায়, সব কিছু নিয়তি মেনে আবারো কাজে মন দেয়। এভাবে কেটে যায় ৪ বছর। একটি বিয়ের বড় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ পায় সায়রা। সেই বিয়েকে ঘিরেই সিনেমার মূল গল্প জমে ঊঠে। হটাৎ দিঘীর আগমন, অভিনয় এবং আইটেম গান সিনেমাকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। এর থেকে বেশি স্পয়লার দিতে চাই না, তাহলে সিনেমা দেখে মজা পাবেন না। সায়রা চরিত্রে কারিনার অভিনয় এতটাই সুনিপুন যে দর্শক তার সব সাফল্য যেমন একদিকে উপভোগ করবে, ঠিক তার যন্ত্রণাইয় একই ভাবে কাতড়াবে। বডি শেমিং একজন নারীর কাছে কতটা ভয়ানক হতে পারে তা সবাই সমহজেই অনুধাবন করতে পারবে, কারিনার অভিনয় দেখলে। এই চলচিত্রে সবথেকে বড় বার্তা, বডি শেমিং কে না বলুন। পারফেক্ট (৩৬২৪৩৬) সাইজের পেছনে না ছুটে নিজেকে ভালোবাসুন, পরিশ্রম করুন। এই সিনেমা নারীর প্রচলিত সৌন্দর্য্য ও আত্মবিশ্বাসের সামাজিক যে ধারা তার চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে, মানুষকে বোঝাবে যে, বাহ্যিক দিক থেকে আপনি যেমন ই হোন না কেন, নিজেকে সুন্দর বলতে শিখুন, নিজেকে ভালোবাসুন। নিজের প্রতি ভালোবাসা, কঠোর পরিশ্রম জীবনে সাফল্য লাভের মূল শর্ত। সায়রার নিজের প্রতি ভালোবাসা, এবং কঠোর পরিশ্রম সমাজের প্রচলিত ধারাকে ভেংগে দিয়ে তাকে নতুন করে বাচতে শেখায়, দেয় সাফল্য, এবং একটি বার্তা দেয়, যে আপনাকে ইগ্নোর করবে, বা আপনার সাথে প্রতারণা করবে, তাকে এক বিন্দু ছাড় নয়, নিতে হবে প্রতিশোধ, তবে সেটা ন্যায়ভাবে। সব মিলিয়ে, ৩৬-২৪-৩৬ একটি দারুণ চলচ্চিত্র। নির্মাতার সুনিপুন নির্মান সাথে কারিনা কায়সার,দিঘী এবং শাওনের দারুণ অভিনয়ে কখন যে সময় কেটে যাবে আপনি বুঝতেও পারবেন না। একবসায় দেখার মত সিনেমা, আপনি চাইলেও এই সিনেমার কোন অংশ কেটে দেখতে পারবেন না, বা একটু পরে এসে দেখবো এমন চিন্তা করতে পারবেন না। যারা নিয়মিত ঘরনার বাইরের গল্পের সিনেমা দেখতে চান তারা অবশ্যই এই সিনেমা দেখতে পারেন, বিশেষ করে মেয়েরা। সিনেমাটি দেখতে পাবেন এখানে 👉 36-24-36
|
---|