মহালয়ার বৃষ্টি ভেজা সুন্দর সকাল ( দ্বিতীয় পর্ব)

in Incredible India2 days ago

নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন, ভালো আছেন। মহালয়ার বৃষ্টি ভেজা সকালের দ্বিতীয় গন্তব্যস্থল সম্পর্কে আজ আপনাদের জানাবো ।আশা করি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে । আপনারা জানাবেন আপনাদের কেমন লাগলো।।

1000089743.jpg

1000089736.jpg

মহালয়ার দিন আমাদের পরবর্তী গন্তব্যস্থল ছিল ধুবুলিয়ার প্রসিদ্ধ দুর্গা আশ্রম। এই দুর্গা আশ্রম টি নদীয়ার ধুবুলিয়ার চৌগাছা হাসাডাঙ্গা এলাকায় গড়ে উঠেছে। ৩৪ নং জাতীয় সড়কেরপাশেই গড়ে উঠেছে এই মনোরম পরিবেশে শোভিত মন্দিরটি।জলঙ্গি নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই আশ্রমটি একেবারেই কোলাহলমুক্ত। সবুজে ঘেরা মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই একবার হলেও এই মন্দিরটির পরিদর্শন করতে হবে।

1000089773.jpg

1000089774.jpg

সারা বছর ধরেই দূর-দূরান্ত থেকে বহু দর্শনার্থী এই মন্দির প্রাঙ্গণে জড়ো হয়। আর দুর্গাপূজার সময় এই মন্দির প্রাঙ্গণ যেন অন্য একটি রূপ ধারণ করে। চারিদিকে আলোক সজ্জায় সজ্জিত হয়। আর পুজোর চারটে দিনই এখানে দুপুরে এবং রাতে সকল দর্শনার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ভোগের আয়োজন করা হয়। আর সেই সাথে এখানকার বিশেষ আকর্ষণ হল সন্ধি পূজা। চারিদিক থেকে প্রচুর মানুষের সমাবেশ ঘটে পুজোর এই কটা দিন।

1000089741.jpg

এখানকার আরো একটি বিশেষ আকর্ষণ হল এখানকার দেবী দুর্গার আসল মন্দিরটি। এই মন্দিরে যে দেবীর আরাধনা সারা বছর করা হয় সেটি কিন্তু কোন মাটির মূর্তি নয় বরং ফ্রেমে বাঁধানো একটি ছবি। আমরা যেমন বাড়িতে সিংহাসনে বিভিন্ন দেবদেবীর ফ্রেমে বাঁধানো ছবি আরাধনা করে থাকি এখানেও ঠিক একই রকম রীতি দেখতে পাওয়া যায়। তবে পুজোর এই বিশেষ দিনের জন্য এখানে আলাদাভাবে প্যান্ডেল করা হয় এবং দেবী দুর্গার মাটির মূর্তি পূজিত হয়।আর এই দুর্গাপুজোর শুভারম্ভ হয় মহালয়ার দিন থেকেই। তাই মহালয়ার দিন আমাদের পরবর্তী গন্তব্যস্থল হিসেবে আমরা এই স্থানটিকেই বেছে নিয়েছিলাম।

1000089728.jpg

টিপ টিপ বৃষ্টি মাথায় করেই আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম এই প্রসিদ্ধ দুর্গা আশ্রমে। বৃষ্টি ভেজা এই মনোরম আবহাওয়া দুর্গাশ্রমটিকে যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অলংকারে সাজিয়ে তুলেছিল। কিছুদিন আগেই প্রবল বর্ষণের ফলে জলঙ্গি নদী ভরে ওঠায় মন্দির প্রাঙ্গণের বেশ খানিকটা অংশই জলমগ্ন হয়েছিল। সকলেই খুব আতঙ্কিত ছিল এই জলমগ্ন অবস্থার সম্মুখীন হয়ে। তবে ঠাকুরের আশীর্বাদে মন্দির প্রাঙ্গণে জল অনেকটাই শুকিয়ে আসে ।জলঙ্গি নদীর টইটম্বুর জলরাশি, দূরের কাশবন, আকাশের কালো মেঘ আর তার সাথে টিপটিপ বৃষ্টি----এই সবকিছু দিনটিকে আরো স্পেশাল করে তুলেছিল।

মহালয়ার দিন। তাই খুব ভোর থেকেই মায়ের আরাধনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। প্রচুর ভক্ত ইতিমধ্যেই বৃষ্টি মাথায় করে হলেও মন্দির প্রাঙ্গনে এসে জড়ো হয়েছিল। মাইকে মহালয়ার গান, ঘন্টাধ্বনির শব্দ আর তার সাথে মাঝে মাঝে মেঘের গুরু গম্ভীর শব্দ সবই যেন এই সকালটিকে আরো বেশি মধুর করে তুলেছিল। আমরা বসে বসে মায়ের পুজো দেখছিলাম এবং এত সুন্দর একটা দিন আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য মাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিলাম। এখানে এলে সত্যিই মনটা খুব হালকা লাগে। তাই এইখানে আসার কোন সুযোগই আমরা হাতছাড়া করি না। তারপর দুই বন্ধু মিলে খানিক গল্প গুজব করি, পুজোর নানারকম প্ল্যানিং করতে থাকি এবং এই ভাবেই বেশ কিছুটা সময় আমরা সেখানে কাটাই।

1000089742.jpg

খানিক বাদে পুজো শেষ হয়। তারপরেই মাইকে বলতে শোনা যায়,"কেউ চলে যাবেন না, সকলে মায়ের প্রসাদ গ্রহণ করবেন।" আমরা চলে যাই মায়ের প্রসাদ গ্রহণ করার জন্য। সকালের প্রসাদে ছিল খিচুড়ি ও আলুর দম। ভীষণ তৃপ্তি সহকারে আমরা সকলে প্রসাদ ভক্ষণ করি। এভাবেই দিনের শুভারম্ভটা মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে করে থাকি।

এই মন্দিরের পাশেই রয়েছে একটি সম্পূর্ণ নিরামিষ রেস্টুরেন্ট। এখানে সকালের ব্রেকফাস্ট থেকে শুরু করে দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজ এবং রাত্রের ডিনার সমস্ত কিছুই পাওয়া যায়। রেস্টুরেন্ট টি ভীষণই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং মনোরম। আমরা রেস্টুরেন্ট থেকে সকালের ব্রেকফাস্ট সেরে নিয়েছিলাম । খাবারের টেস্ট সত্যিই অসাধারণ। এই টেস্ট উপলব্ধি করতে হলে আপনাদেরও অবশ্যই একবার হলেও এই মন্দিরটি পরিদর্শন করা উচিত। তাই ধুবুলিয়ার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কখনো বেড়াতে এলে এ প্রসিদ্ধ দুর্গা মন্দিরটি অবশ্যই পরিদর্শন করবেন। আশা করছি আপনাদের সকলের খুব ভালো লাগবে।

1000089745.jpg

এখানকার আরো একটি বিশেষ আকর্ষণ হল জলঙ্গি নদীর উপর প্রতিষ্ঠিত মহাদেবের মূর্তি টি।

1000089725.jpg

1000089735.jpg

এইভাবেই আমি এই বছরের মহালয়ার দিনটি উপভোগ করেছি। আমার আজকের লেখা এখানেই শেষ করছি, আশা করি আপনাদের সকলের খুব ভালো লাগবে।

Sort:  
Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 62164.65
ETH 2439.44
USDT 1.00
SBD 2.67