পুকুরের ইলিশ।

in Incredible India16 days ago
Black and Yellow Geometric Graphic Design Facebook Post_20241208_173941_0000.png Edited by Canva

নমস্কার বন্ধুরা,
আমরা মাছে ভাতে বাঙালি, মাছে যেন অরুচিই নেই। পাশাপাশি, আমার তো মাছ না খেলেও মাছের তরকারি লাগবেই। যদিও আমার অনেক মাছ পছন্দের না তবে মাছের তরকারি ছাড়া ভাত খাওয়াটা একদমই সম্ভব না।

এই অভ্যাসেই আমি ছোট থেকে অভ্যস্ত। যেহেতু, নিজেদের জলকর আছে তাই সামুদ্রিক মাছ বা বাজারের মাছের ওপরে নির্ভর করতে হয় না। আমাদের ঘরে তো কদাচিৎ কেনা মাছ খাওয়া হয়। বাবা ব্যস্ত থাকলে আমিই মাছ ধরে নিয়ে আসি। বরং এখন আমি আগের মতো মাছ ধরি না, আগে তো খাওয়ার জন্য বাবার মাছের চিন্তাই করা লাগতো না।

মাছ নিয়ে এতো কথা এ কারণেই বলছি কারণ আজ আমি পুকুর থেকে ধরা ইলিশ মাছের গল্প নিয়ে চলে এসেছি। এই অভিজ্ঞতা হয়তো ৯৯% মানুষের জন্যই প্রযোজ্য না। যেহেতু, ইলিশ গভীর জলের মাছ এবং এরা সূর্যের আলো দেখা মাত্রই মারা যায়। আমি জেলে ছাড়া অন্য কারো মুখে জ্যান্ত ইলিশ মাছ দেখার কথা কখনোই শুনিনি।

IMG_20241207_223517.jpg

সত্যি বলতে এটা সম্ভবই না কারণ জেলেরা জীবন জীবিকা নির্বাহ করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। যেখানে একজন সাধারণ মানুষ যাওয়ার কথা স্বপ্নেও চিন্তা করে না। আপনারা অনেক বারই শুনেছেন যে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় প্রথমে সতর্ক করা হয় জেলেদেরকে। কারণ সর্ব প্রথম প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধাক্কাটা ঐ মানুষ গুলোর ওপরেই লাগবে।

এমনকি অনেক মানুষ মাছ ধরতে গিয়ে আর বাড়িতে ফিরে আসেনা। আপনজনেরা অপেক্ষায় থাকে তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য কিন্তু দুর্যোগের কবলে হারিয়ে যায় অনেক প্রাণ যেটা কেউ মানতেই চায় না।

ইলিশ মাছ এখন পুকুরে,

IMG20241021170303.jpg

বিগত তিন দিন আগের কথা আমাদের একটা জলকরে জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়েছিল। যেখানে ইতিমধ্যে একবার মাছ ধরা হয়েছে যখন বন্যা হয়েছিল ঠিক সেই সময়ের পূর্বে। কারণ বন্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা বার বার অবগত। এমন কোনো বছর নেই যে বছর বন্যা দেখা যায়নি।

যাইহোক, তবে আশানুরূপ কোনো মাছ সেই জালে ওঠেনি। বন্যার পরে ও মাছ নিয়ে হতাশাগ্রস্থ সকল মাছ চাষী। যাইহোক, কয়েকদিন পূর্বে বরশিতে পা ওয়ালা গলদা চিংড়ি ধরলো এবং পরক্ষনেই বাবা আমাকে জাল নিয়ে পুকুরে নামতে বললো। আমরা প্রায় ২/৩ ঘন্টা গলা অবধি জলে থেকে চেষ্টা করলাম মাছের অবস্থা বোঝার জন্য।

অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম জেলেদের খবর দিতে হবে। ঠিক পরের দিন আমাদের পুকুরে জেলেরা মাছ ধরতে এসেছিল। শেষ মুহূর্তে গলদা চিংড়ির অবস্থা দেখে বেশ ভালোই লাগতেছিল। আমাদের জালের দ্বিতীয় অংশে দেখা মিললো ইলিশ মাছের যেটা আমি বলাতে কেউ বিশ্বাসই করছিল না। কারণ আবার মাছটি জালের অন্যান্য মাছের নিচে লুকিয়ে পড়েছিল।

অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো, আমি মাছ দেখেই দৌড়াদৌড়ি আর চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছিলাম। আমি সব ফেলে ঐটা নিয়েই ঘরে চলে এসেছিলাম। আমি সর্বশেষ জ্যান্ত ইলিশ ধরেছিলাম পশুর নদীতে জেলেদের জাল থেকে। কিন্তু এভাবে কখনো নিজেদের পুকুরে ইলিশে দেখা মিলতে পারে সেটা মাথাতেই ছিল না।

সৌভাগ্যক্রমে, হয়তো বন্যার জলে ভেসে এসেছিল এই মাছটি এবং আমাদের পুকুরে জলের গভীরতার জন্যই টিকে ছিল। এই মুহূর্তে ও আমাদের পুকুরে জলের গভীরতা কিছু স্থানে ২৫/২৭ মিটার। আমি কোনো একটি বইয়ে পড়েছিলাম আট মিটার জলের গভীরতায় ইলিশ মাছ টিকে থাকতে পারে‌।

ঐ মাছটি খাওয়া শেষ কিন্তু এখনো স্বপ্নই মনে হচ্ছে। যদিও বাবার মুখে শুনেছি, বাবার শৈশবের সময় নাকি আমাদের বাড়ির সামনের খালেই কচ্ছপ পাওয়া যেত এবং জাল ফেললেই পাওয়া যেতো ইলিশ মাছ। যেটা শুনলে এখনকার শৈশবে থাকা শিশুদের কাছে রূপকথার গল্পের মতোই মনে হবে।

যাইহোক, আমার আজকের লেখাটি এখানেই সমাপ্ত করছি। সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

লেখাতে উপস্থাপিত তৃতীয় ছবিটি আমি পূর্বে ও লেখাতে ব্যবহার করেছি।

Sort:  
Loading...