"ক্যান্সার- শব্দটি আজও আমাকে জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ের কথা মনে‌ করায়"

in Incredible India15 days ago
cancer-389921_1280.jpgSource

Hello,

Everyone,

"ক্যান্সার" এই একটা শব্দই যথেষ্ট আমাদের মত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষদের ভিতর থেকে নাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। এই শব্দটির গভীরতা আমি জীবনে প্রথম অনুভব করেছিলাম যখন জেনেছিলাম আমার মায়ের ক্যান্সার হয়েছে। খুব বেশি হলে তিনমাস মা বেঁচে থাকবে।

আজও যখন কারোর মুখে এই শব্দটি শুনি, তখন ফিরে যাই সেই দিনে যেদিন অটোতে বসে দিদির সাথে যেতে যেতে প্রথম শুনেছিলাম মায়ের ক্যান্সার হয়েছে। এক মুহূর্তে চারিদিক যেন নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো। আশেপাশের কোনো আওয়াজ, কারোর কথা, কিছুই যেন কয়েক সেকেন্ডের জন্য শুনতে পারছিলাম না।

যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে বহু মানুষ ক্যান্সার মুক্ত জীবন যাপন করছেন। তবে যারা ক্যান্সারের কারণে কাছের মানুষদেরকে হারিয়েছে, তাদের জন্য এই শব্দটি আজও যেন মনের ভেতরে শূন্যতার অনুভূতি জাগায়।

কয়েক মাস আগে জেনেছিলাম শ্বশুর মশাইয়েরও লিভারে ক্যান্সার ধরা পড়েছে। যদিও ডাক্তারেরা সামনাসামনি আমাদেরকে তেমন কোনো কিছুই জানানি। তবে যে বায়োপসি রিপোর্ট এসেছিলো, তাতে বিষয়টি উল্লেখ ছিলো বলে আমরা সেটা আন্দাজ করেছি মাত্র।

গতকাল আবার জানতে পারলাম শুভর বন্ধুর মায়ের কিডনিতে টিউমার ধরা পড়েছে। ডাক্তারেরা আশঙ্কা করছেন সেটা হয়তো ক্যান্সার হতে পারে। কয়েকদিন থেকেই শুভর বন্ধু রাজা, যার ভালো নাম জয় আমরা ওকে রাজা বলেই ডাকি মায়ের পেটে ব্যথা চলছিলো।

আমাদের ঘরের মায়েদের যেমন হয়, ঘরোয়া চিকিৎসা করার পরও যখন কাজ না হয় তখন ফার্মেসি থেকে পেট ব্যথা হচ্ছে বলে সাধারন ওষুধ নিয়ে এসে খেয়ে থাকেন। কাকিমাও তেমনটি করেছেন। কিন্তু তাতেও ব্যথার পরিবর্তন হয়নি দেখে, শেষ পর্যন্ত ডাক্তারের কাছে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

bethesda-naval-medical-center-80380_1280.jpgSource

ডাক্তার কতগুলো টেস্ট করতে দিয়েছিলেন, আর রিপোর্ট নিয়ে অন্য একজন ডাক্তারের কাছে যেতে বলছিলেন। সেই‌‌ সাথে ব্যাথা কমার জন্য ইনজেকশন ও ওষুধ দিয়েছিলেন। টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে দুদিন আগে হসপিটালে গিয়েছিলো ডাক্তারকে দেখানোর জন্য।

রিপোর্ট দেখে তিনি ওর মায়ের সামনে বলে দিয়েছেন যে আমরা আশঙ্কা করছি‌,‌‌ টিউমারটি থেকে হয়তো ইতিমধ্যেই ক্যান্সার হয়ে গেছে। তবে পরবর্তী আরও দুটি‌ টেস্টর রিপোর্ট ছাড়া ওনাকে ভর্তি নেয়নি, তাই আবার ওরা বাড়িতে ফিরে এসেছে।

কাকিমার ব্যথা এখনও‌ রয়েছে। তবে‌ তার থেকেও তিনি বেশি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। কারণ কোনো রোগীর সামনেই যদি বলা হয় তার ক্যান্সার হয়েছে, তাহলে মানুষটি হয়তো আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে আমাদের মতন পরিবারে।

কারণ ক্যান্সারের ট্রিটমেন্ট করাতে গিয়ে শুধু সেই ব্যক্তিটি নয়, বরং তার এফেক্ট পুরো পরিবারের উপরে পড়ে। রাজা এখনো বিয়ে করেনি, বাড়িতে ও আর ওর মা-ই থাকে। ওর বাবা কাজের সূত্রের বাইরে থাকেন। তাই বাবাকে এখনও পর্যন্ত জানায়নি, তবে কিডনিতে টিউমার হয়েছে শুধু এটুকুই বলেছে।

দুই‌ সপ্তাহ আগে রাজা একটা নতুন দোকান ভাড়া নিয়ে, সেখানে চশমার দোকান করেছে। খুব বেশি হলে সাত থেকে আট দিন দোকান করতে পেরেছে, তারপরে এই ঘটনা।‌ আর মা কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে দৌড়াদৌড়ি করার মতো আর কেউ নেই, তাই ওকেই যেতে হচ্ছে। ব্যবসাটা শুরু করার পরেও ঠিকমতো সময় দিতে পারছে না। তার উপরে মানসিক টেনশন তো আছেই।

কারণ চিকিৎসার পাশাপাশি সংসার খরচ, দোকান ভাড়া, তাছাড়াও ব্যাংকে‌ লোনও চলছে,‌ সেখানেও মাসিক ‌সুদ দিতে হয়। এই সব কিছু মিলিয়ে আসলে ওর দিশাহারা অবস্থা। গতকাল অফিস থেকে ফেরার সময় শুভ ওর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো। সেখান‌ থেকে বাড়িতে এসে এই সব‌ কথাই বলছিলো।

আগামী সোমবার আবার‌ কাকিমাকে হসপিটাল নিয়ে যাওয়ার কথা আছে এবং রিপোর্ট দেখার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আদেও টিউমারটি অপারেশন করার মত অবস্থানে আছে কিনা। সত্যি কথা বলতে খবরটা শোনার পর থেকেই মনটা খারাপ।

কারণ মা না থাকলে একটা বাড়ির কি‌ অবস্থা হয়ে যায় সেটা আমি নিজের জীবনে উপলব্ধি করেছি। আর এখানে তো রাজা বাড়িতে একা। কিভাবে সবটা সামলাবে জানিনা। তবে ‌ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি কাকিমা যেন সুস্থ হয়ে যান। কারণ আমাদের প্রত্যেকের জীবনে মা এমন একজন যার উপস্থিতি যেন জীবনের অর্ধেক কষ্ট কম করে দেয়, আর অনুপস্থিতি জীবনটাকে কঠিন বাস্তবতার দিকে নিয়ে যায়।

রাজা মায়ের উপরে বড্ড বেশি নির্ভরশীল। এত বড় হয়ে গেছে ছেলে, তবুও কাকিমা ছেলে বাড়িতে না ফিরলে খেতে বসে না। আর ছেলেও ছোটখাটো সমস্ত কাজেই মাকে ডাকতে থাকে।

IMG_20251213_180703.jpg

কি জানি ঈশ্বর কি লিখেছে ওদের কপালে। তবে এতটা নিষ্ঠুর যেন তিনি না‌ হন। রাজাকে যেন ওর মায়ের ছত্রছায়া থেকে আলাদা না করে দেন, এইটুকু প্রার্থনা করতে পারি। কারণ আমরা যতো বড় হয়েই যায় না কেন, মা কে ছাড়া আমাদের জীবন বড্ড অসহায়।

খবরটা শোনার পর থেকে শুনে মনের অবস্থা ভালো নয়। শুভর মনটাও বেশ খারাপ হয়ে আছে। একদিকে নিজের বাবাকে নিয়ে টেনশনে আছে, তার উপরে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড এর মায়েরও একই অবস্থা। এই নিয়ে গতকাল রাতেও অনেকক্ষণ কথা হচ্ছিলো আমাদের।

কারণ আগের বছর এই সময় আমরা শ্বশুরমশাইকে নিয়ে হসপিটালে কাটিয়েছি। তাই এই সময়টা যে কতখানি কঠিন তা দুজনেই খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারছি। যাইহোক প্রার্থনা করি সকলে সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, আর ঈশ্বর সকলকে সুস্থ রাখুক। ভালো থাকবেন।