"মা- তোমায় হারানোর ১৪ বছর পূর্ন হলো আজ"
![]()
|
|---|
Hello,
Everyone,
কেমন আছো মা?
নিশ্চয়ই ভীষন ব্যস্ত আছো?
একথা আমি বিশ্বাস করি তোমার মতো ভালো মানুষ, পুনর্জন্ম নিয়ে আবার এই ধরায় ঠিক ফিরে এসেছো কারোর না কারোর কোল আলো করে। তুমি জানো আমি আমাদের তিতলির মধ্যেই তোমায় খুঁজে পাই?
আমি একথা শুনেছি যে, মা-বাবা মারা যাওয়ার পর যদি তাদের কোনো সন্তান প্রেগন্যান্ট হয়, তাহলে সেই সন্তানের রূপে মা-বাবা আবার ফিরে আসেন। আর দিদির প্রেগন্যান্সি নিয়ে তুমি কতখানি চিন্তিত ছিলে, তা তো ঈশ্বর জানতেন। আচ্ছা তুমি দিদির সন্তান রূপে ফিরে আসবে বলেই কি, এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলে?
১৪ বছর কাটিয়ে দিলাম তোমায় ছাড়া, ভাবতেই পারি না সময় গুলো কিভাবে অতিক্রম হয়ে গেলো। জানো এদিন বাড়ি থেকে ফেরার সময় তোমার ছবিটা সাথে করে নিয়ে এসেছি আমার বাড়িতে। যদিও এই বাড়িটা আমার নয়, তবে বর্তমানে আমি যেখানে থাকি তুমিও নয় আমার সাথে সেখানেই থাকলে।
ওই ফাঁকা বাড়িটা আগলে আর কত বছর পড়ে থাকবে বলো? তোমার সাথে সাথে ঠাকুমার ছবিটাও নিয়ে এলাম, কারণ আমি জানি ছবিটা না থাকলেও তোমরা দুজন ঐ বাড়িটাকে আগলে রাখবে।
কত যে কথা বলতে ইচ্ছে করে তোমায় মাঝে মাঝে কিন্তু বলে ওঠা হয় না। তাই বছরের এই নির্দিষ্ট দিনটি বেছে নেওয়াই ভালো, তোমার কাছে চিঠি লেখার জন্য। কারণ অন্যান্য দিন না হোক অন্তত এই একটা দিনে তুমি নিশ্চিত আমার এই চিঠি পড়বে।
এবছর আর তোমার ছবিতে মালা দেওয়া হলো না। আর না তোমাকে পছন্দের মিষ্টি এনে দিতে পারলাম। কিন্তু তুমি রাগ করবে না আমি জানি, কারণ এগুলো না করতে পারার কারণটাও তুমি জানো।
লোক দেখানো কাজ তোমার কোনো কালেই পছন্দ ছিল না। যতটুকু মন থেকে কেউ তোমার জন্য করতে পেরেছে, তুমি তাতেই সন্তুষ্ট থেকেছো চিরকাল। তাই আজও তোমার শিক্ষাটাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করলাম।
বললে হয়তো শুভ এই কাজটা করতো, তবে কতখানি মন থেকে করত এ বিষয়ে আমার সন্দেহ ছিলো। তাই আর এই দিনটির কথা আলাদা করে কাউকেই মনে করাই নি। তবে দেখলাম শুভর মনে আছে। সকালে জানতে চাইলো মিষ্টি ও ফুলের মালা আনবে কিনা, আমিই বারন করলাম।
এরপর ও আর আমায় অন্য কিছু বললো না। ও জানতো আমি দিতে পারবো না, তবে ওর যদি দেওয়ার ইচ্ছা থাকতো হয়তো নিজেই বলতো। ওর বাবা মার জন্য আমি যতোটা করি, তোমার জন্য এতোটুকু করতেই পারতো। তবে সেটা করলেও হয়তো জোর করেই করতো, মন থেকে বিষয়টা আসতো না।
তাই আর কিছু বলিনি। তুমি আজীবন কাল শিখিয়েছো নিজের মানবিকতা বাঁচিয়ে রাখতে, কর্তব্য পালন করতে। তোমার শিক্ষা মেনে নিয়ে ওর বাবা-মায়ের কঠিন সময়ে পাশে থাকি, এতে তুমি নিশ্চয়ই খুশি হও। তবে আজ ও তোমার জন্যে এইটুকু করলো না, এটা নিয়ে তুমি কি আদেও কষ্ট পাবে?
এই বছর আমি অনেকখানি বড় হয়েছি বুঝতে পারলাম। তোমার জন্য খারাপ লাগায় উপচে পড়া চোখের জল আজ আর কেউ দেখেনি। কারণ এখন বুঝতে শিখেছি, যারা চোখের জলের মূল্য বোঝেনা, তাদের সামনে সেই জল ফেলা নিজের অনুভূতির অপচয় মাত্র।
যাইহোক গত বছরও এই দিনে তোমার জন্য কিছু করা হয়ে ওঠেনি, কারণ সেই সময় পড়ে গিয়ে কোমরে ব্যথা পেয়েছিলাম। সম্পূর্ণ বেড রেস্ট ছিলো, এ বছরও কিছু করতে পারলাম না। বুঝতে পারছি না তুমি আমার থেকে দূরত্ব তৈরি করছ কিনা।
![]()
|
|---|
বেশ খানিকটা অভিমান নিয়ে চিঠিটা লিখতে বসলাম, কিন্তু লিখতে লিখতে চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে। তোমাকে মিস করেছি সারাদিন ধরে। বছরের বিশেষ দিনে মিস করি এমনটা নয়, তবে এই দিনেই তোমাকে হারানোর কষ্টটা অনেক বেশি তীব্রভাবে অনুভূত হয়। সেই দিনের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে, শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার পরেও তোমাকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেখার স্মৃতিগুলো এখনো সুস্পষ্ট।
যাইহোক আজকে আর কোনো লেখা শেয়ার করবো না ভেবেছিলাম, কিন্তু মনে হলো অন্তত তোমার আমার কিছু কথা তোলা থাক এই দিনটিতে। তুমি যেখানেই থাকো ভালো থাকো। তোমার থেকে আমার চাওয়ার কিছুই নেই।
তুমি আমাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছো, তোমার মতো একজন মানুষের সন্তান হতে পেরেছি এই বা কম কিসের বলো! বাকি, জীবনে কি পেলাম আর কি পেলাম না এ আক্ষেপ করা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। তাই তোমার প্রতিও আর কোনো আক্ষেপ নেই।
ভালো থেকো মা। আমার সন্তান হয়ে এই জীবনে হয়তো আর আমার কাছে ফিরলে না, তবে পরজন্ম বলে যদি কিছু থাকে, তবে তোমার গর্ভে জন্ম দিও আমায়।

