"কলকাতার সংস্কৃতি ও ইতিহাসের একটি প্রতীক- 'ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের যাদুঘর' দর্শন"
![]() |
|---|
Hello,
Everyone,
আশাকরি আপনারা সকলে ভালো আছেন, আর আজকের দিনটি আপনাদের খুব ভালো কেটেছে।
গত কালকের পর্বে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম ভিক্টোরিয়ার জাদুঘরে ঘুরে দেখার প্রথম পর্ব। আগের পোস্ট যেখানে শেষ করেছি, আজকের লেখা ঠিক তার পর থেকেই শুরু করছি।
প্রথমে জাদুঘরের গ্রাউন্ড ফ্লোর এর সমস্তটা ঘুরে দেখার পর, আমরা সিড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে যাবো, সেই মুহূর্তেই চোখে পড়ল ছোট্ট একটি কামান। যার সামনে দাঁড়িয়ে রিমির ছেলে ও মেয়ে ছবি তুললো।
![]() |
|---|
পলাশীর যুদ্ধের কথা আমরা প্রত্যেকেই জানি এবং সেই যুদ্ধ কোন পথে, কি ভাবে হয়েছিলো, শত্রুরা কোন দিক থেকে আক্রমণ করেছিলো, সেই চিত্রগুলি খুব সুন্দর ভাবে একটা টেবিলের ওপর তৈরি করা ছিলো। যেটা কাঁচ দিয়ে ঢাকা ছিলো, আমি চেষ্টা করেছি ছবিটা তুলতে, জানিনা আপনারা কতটা বুঝতে পারছেন।
![]() |
|---|
যাইহোক দোতালায় উঠে প্রথমে যেটা চোখে পড়লো, সেটা হলো এভারেস্ট গ্রেট থিওডোলাইট নামক যন্ত্র। যেটা দিয়ে মূলত এভারেস্ট পর্বতমালার উচ্চতা পরিমাপ করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিলো।
এরপর চোখ পড়ল ভারতবর্ষের বিখ্যাত কিছু মানুষের জীবন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিয়ে একটা পুরো তৈরি করা সেকশনের দিকে। যার মধ্যে রয়েছে **ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রাসবিহারী ঘোষ, বালগঙ্গাধর তিলক, স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পন্ডিত মদনমোহন মালব্য সকলেই।
সেখানে প্রত্যেকের তৈলচিত্র অঙ্কন করা ছিলো এবং তাদের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণও উপস্থাপন করা ছিলো। ছবিগুলো আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। তবে এই বিখ্যাত মানুষদের তৈলচিত্র কারা কারা তৈরি করেছিলেন, তার একটা বিবরণ আমি নিচে আলাদাভাবে শেয়ার করলাম,-
![]() |
|---|
দোতলা থেকে হঠাৎ নিচে চোখ পড়তেই দেখা গেলো লাইট শোয়ের আয়োজন শুরু হয়েছে। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম যে সেখানে হয়তো কোনো অনুষ্ঠান হবে তার প্রস্তুতি চলছে। তবে পরে নিচে এসে জেনেছিলাম সন্ধ্যাবেলায় এখানে লাইট শো হয় যার জন্য আলাদা টিকিটও পাওয়া যায়।
![]() |
|---|
![]() |
|---|
এরপর দিল্লির বিধানসভায় বোমা বিস্ফোরণের খবর প্রকাশ পেয়েছিল ১০ই এপ্রিল 1929 সালে। যে খবরের কাগজটি এই জাদুঘরের সংরক্ষিত রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের পিস্তল সেখানে সাজানো ছিলো, তারও কয়েকটা ছবি তুললাম। পিস্তল গুলো দেখে সবথেকে বেশি খুশি হয়েছিল রিমির ছেলেটা।
![]() |
|---|
শের সিং বা উধম সিং এর নাম হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন, যিনি একজন দেশপ্রেমী ছিলেন এবং অমৃতসরে তার একটি দোকানেই ছিলো সেই সময়কার বিপ্লবীদের মিলনস্থল। পরবর্তীতে তিনি আমেরিকার গিয়ে গদয পার্টিতেও যোগ দিয়েছিলেন।
তিনি বিপ্লবীদের জন্য অস্ত্র নিয়ে ভারতে ফিরে এসেছিলেন, কিন্তু অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। এমনকি মুক্তির পর পরবর্তীতে তিনি গদর পার্টির একটা নতুন শাখা যার নাম আজাদ পার্টি অফ ইন্ডিয়ান্স প্রতিষ্ঠা করেন।
![]() |
|---|
জালিওনাবাগ গণহত্যার তিনি প্রতিশোধ নিয়েছিলেন, তবে গ্রেপ্তার হওয়ার পর খুনের অভিযোগে ১৯৪০ সালের ৩১ শে জুলাই পেন্টলভিল কারাগারে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো। যেখানে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো, সেই জেলের ছবি সেখানে রাখা ছিলো, যার ছবিটি আমি তুলে নিয়ে এসেছিলাম।
![]() |
|---|
স্বাধীনতার লড়াইয়ে ১৯৪৬ সালে বিদ্রোহের পর বোম্বে শহরে মানুষের উত্তেজনার একটি ছবিও সেখানে সংরক্ষিত আছে। এরপর আমার বান্ধবীরা সকলে মিলে দাঁড়ালে সকলের একটা ছবি তুলে দিয়েছিলাম। এরপর পিছন দিক থেকে লাইন দিয়ে আমরা বেরিয়ে এসেছিলাম বাইরে।
![]() |
|---|
পিছন দিক থেকে যাদুঘরের ছবিটা খানিকটা উপরের ছবিটার মতনই ছিলো। অসাধারণ লেগেছিলো এই জাদুঘরের সম্পূর্ণ বিল্ডিংটা এককথায় অভূতপূর্ব সুন্দর ছিলো এই যাদুঘর ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা।
এরপর আসি ভিক্টোরিয়ার বাগানের দৃশ্যে।বাগানে কত মানুষ বসে যে নিরিবিলি সময় কাটায় তার হিসাব মেলানো কঠিন। সমস্ত বাগান জুড়ে খুব সুন্দর ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে, যদিও এখনও তাতে ফুল ধরেনি। আর কয়েকদিন বাদে সেখানকার সৌন্দর্য্য হবে আরও বেশি সুন্দর।
যাইহোক পুকুর পাড়ে বসে আমরা অনেকটা সময় সেখানে কাটালাম। নিজেদের মধ্যে কিছুক্ষণ গল্প করে বাড়ি ফেরার প্ল্যানটাও করে নিলাম। এরপর সেখান থেকে আমরা বাইরে বেরিয়ে এলাম। বাইরে বেশ কিছু খাবারের দোকান ছিলো। সমস্ত গুলো ঘুরে দেখার পর আমরা ঠিক করলাম পাপরি চাট খাবো।
![]() |
|---|
![]() |
|---|
পাপরি চাটের দাম ছিল ৫০ টাকা প্লেট।খেতে একেবারে মন্দ ছিলো না। যেহেতু আমি টক দই খাই না, তাই আমারটায় টক দই দিতে করতে বারণ করেছিলাম। পাপরি চাটটা খেতে খুবই সুস্বাদু ছিলো। সকলে মিলে সেটা উপভোগ করার পর, আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
![]() |
|---|
ভিক্টোরিয়ার সামনে থেকে বাস ধরে সোজা পৌঁছে গেলাম শিয়ালদহ স্টেশন। তখন সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে, তাই শিয়ালদহ সমস্ত লাইট জ্বলছিলো, যা দেখতে এক কথায় অসাধারণ লাগছিলো। রাতের বেলায় শিয়ালদহ স্টেশনের সৌন্দর্য্য বর্তমানে সত্যিই দেখার মতো।
বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর, আমাদের ট্রেনের অ্যানাউন্সমেন্ট হলো। আমরাও সকলে মিলে পৌঁছে গেলাম নির্ধারিত প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ধরার উদ্দেশ্যে। এরপর ট্রেন থেকে বাড়ির পথে রওনা করেছিলাম। এইভাবেই স্মৃতিতে যুক্ত হয়েছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখার অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
আপনাদের জন্য সব ছবিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। তবে সামনে থেকে দেখার অনুভূতি একেবারেই আলাদা। তাই সম্ভব হলে একবার অবশ্যই সামনে থেকে দেখার চেষ্টা করবেন। সকলের আমন্ত্রণ রইলো। ভালো থাকবেন সকলে। শুভরাত্রি।




































