Better life with steem// The Diary Game// 18 th November, 2024// হসপিটালে টেনশনে কাটানো একটি দিন

in Incredible Indiayesterday
IMG_20241120_090347.jpg
"পরশুদিনের বিভিন্ন মুহুর্ত"

Hello,

Everyone,

গত পরশু দিনটি শুরু হয়েছিল ভোর ৫টা নাগাদ। অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভাঙতে প্রথমেই জানলাটা অল্প ফাঁকা করে বোঝার চেষ্টা করলাম, বাইরে কতখানি অন্ধকার। কারণ আমাকে বেরোতে হবে হসপিটালের উদ্দেশ্যে। কারণটা আশাকরি পরশু দিনের পোস্ট পড়ে আপনারা বুঝতে পেরেছেন। আজ এই পোস্টের মাধ্যমে শেয়ার করবো পরশুদিন সারাটা দিন কিভাবে অতিবাহিত হয়েছিলো, -

1672344690977_010726.jpg

"সকালবেলা"

IMG_20241118_052023.jpg
"সকাল ৫টায় আমাদের ছাদের দৃশ্য"

আগের দিন সারারাত তেমন ভালোভাবে ঘুম হয়নি। তাই ঘুম থেকে উঠতে ভীষণ কষ্ট হয়েছে এ কথা বলবো না। যেহেতু বাড়ি থেকে একা স্টেশন পর্যন্ত আসতে হবে, তাই পাঁচটা নাগাদ আদেও কতখানি ভোরের আলো ফুটবে, সেটা নিয়ে বেশ সন্দেহ ছিল।

৫.৪২ এ দত্তপুকুর লোকাল আমাকে ধরতে হতো। ৭টার মধ্যে দমদমে না পৌঁছালে, দিদির সাথে হসপিটালে যেতে পারবো না। আর এমন একটা কঠিন পরিস্থিতিতে ওকে একা হসপিটালে যেতে দেওয়াটাও ঠিক হবে না।

IMG_20241118_052019.jpg
"রাস্তার লাইনগুলো তখনও জ্বলছে"

যাইহোক উঠে বাইরে তাকিয়ে দেখি, বেশ ভালোই অন্ধকার। ফোনটা হাতেই ছিলো তাই ছবি তুলে নিয়েছিলাম, যাতে আপনাদেরকেও আমাদের এখানকার ভোর পাঁচটায় আবহাওয়া কেমন থাকে, সেটা ছবির মাধ্যমে দেখাতে পারি।

এরপর ফ্রেশ হয়ে আমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিলাম। শীত মোটামুটি ভালোই পড়তে শুরু করেছে, আর এই সময় ভোরবেলায় জলে হাত দেওয়া বেশ কঠিন কাজ। যাইহোক রেডি হয়ে নিচে এসে তালা খুলে, দুয়ারে জল দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

IMG_20241118_054025.jpg
"ট্রেনে অতো সকালেও কত মানুষের ভীর"

ভেবেছিলাম হেঁটেই আসতে হবে, তবে রাস্তায় একটা ভ্যান পাওয়াতে হাঁটা লাগেনি। টিকিট কেটে ট্রেনে উঠে একটাও সবার সিট পাইনি। বেশ অবাকই হলাম। এত ভোরেও কত মানুষ রোজ জীবন ও জীবিকার তাগিদে, শীতের কষ্টকে উপেক্ষা করে রোজ ছুটে চলে এই ট্রেন ধরে।

IMG_20241118_205920.jpg
"আমাদের স্টেশনের মন্দির"

যাইহোক অগত্যা দরজার পাশে এসে দাঁড়াতে হলো। ভেতরের দিকে দাঁড়ালে নামাটা অনেক কঠিন হবে। কারণ ধীরে ধীরে আরও অনেক বেশি ভিড় হবে ট্রেনে। যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেই দরজা দিয়ে পাশে চোখ পড়তেই দেখলাম, স্টেশনে ঠাকুরের মন্দির। মনে মনে প্রার্থনা করে নিলাম, যাতে আজকের দিনটা খুব ভালোভাবে কাটে।

এরপর দিদির বাড়িতে পৌঁছে, দিদিকে সাথে করে বেরিয়ে পড়লাম হসপিটালে উদ্দেশ্যে। সারা রাস্তায় দুইজন বেশি কথা বলতে পারিনি, কারণ মনের ভেতরে টেনশন ছিলো। ওখানে পৌঁছে প্রথমে দিদি ওদের সিনিয়র ম্যামের সাথে দেখা করলো।

IMG_20241118_082309.jpg
"অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং"
IMG_20241118_082300.jpg
"উডবার্ন বিল্ডিং"

আমি বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেখানে দাঁড়িয়ে দুটো বিল্ডিং এর ছবি তুললাম। ওদের অফিসের মেন বিল্ডিং এ বর্তমানে কাজ চলছে, তাই ওদের ম্যাম উডবার্ন বিল্ডিংয়ে বসেন। ঠিক তার উল্টোদিকে অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং।

IMG_20241118_083816.jpg
"অপারেশন থিয়েটারে দাদাকে নিয়ে যাওয়ার সময়"

যাইহোক সেখান থেকে তড়িঘড়ি দাদার কেবিনে পৌঁছে দেখি, ততক্ষণে দাদাকে অপারেশনের ড্রেস পরিয়ে, স্ট্রেচারে তোলা হয়ে গেছে। আমরা আর একটু পরে এলে হয়তো দাদাকে রুমে দেখতে পেতাম না। এরপর দাদার ফাইলপত্র, ওষুধ সমস্ত কিছু সাথে করে নিয়ে স্ট্রেচারে করে দাদাকে নিয়ে যাওয়া হলো অন্য বিল্ডিংএ।

এরপরে অপরেশন থিয়েটারের বাইরে কিভাবে সময় কাটিয়েছে, সেই সম্পর্কে আমি আগের পোস্টে লিখেছি।

1672344690977_010726.jpg

"দুপুরবেলা"

সকলে নিশ্চয়ই এটা জানেন, খারাপ সময় বড্ড বেশি দীর্ঘ হয়। তাই অপারেশন চলাকালীন সময়টাও আমাদের জন্য এক যুগের সমান ছিলো।

IMG_20241118_131035.jpg
" অপেক্ষা করতে করতে সকাল থেকে দুপুর হয়ে গেলো, জানালা দিয়ে তখন রৌদ্র আসছিল"
IMG_20241118_084714.jpg
"আটতলা থেকে নিচের বিল্ডিংএর তোলা ছবি"

কখনো উঠে সামনে হাঁটাহাঁটি করছিলাম, কখনো ৮ তলা বিল্ডিং থেকে দেখার চেষ্টা করছিলাম নিচের বিল্ডিং গুলো। সকালে যখন গিয়ে এই অপারেশন থিয়েটারের বাইরে বসে ছিলাম, তখন জানালা দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া বইছিল। অপারেশন যতক্ষণে শেষ হলো, ততক্ষণে সেই জালনা দিয়ে রোদ্দুর এসে পড়ছিল গায়ে।

IMG_20241118_132449.jpg
"দাদার বিষয়ে দিদি জানার চেষ্টা করছিল"

আশা করি বুঝতে পারছেন ঠিক কতখানি সময় সেখানে অপেক্ষা করতে হয়েছে আমাদের। প্রায় ৩ ঘন্টা ১৫ মিনিট বাদে আমাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছিল। ডাক্তার এসে জানালো অপারেশন সাকসেসফুল, চিন্তার কোনো বিষয় নেই। এরপর অপেক্ষা করতে হবে শুধু সেই সময়ের, যখন দাদা সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হবে।

IMG_20241118_142423.jpg
"অপরেশনের পরে দাদাকে যখন বের করেছে"

মাঝে বেশ কিছু জিনিস খেয়াল করে চলতে হবে এই আর কি। এই কথাগুলো ডাক্তার দিদিকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বলেছে। দিদির কাছ থেকে এই কথাগুলো শোনার মুহূর্তেই, স্ট্রেচারে করে দাদাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করা হলো।

লুকিয়ে ছবি তুললাম। সেই মুহূর্তে দাদার সামনে গিয়ে আমি কোনো কথা বলতে পারছিলাম না। শুধু দিদি এক দু বার ডাকাতে, চোখের পাতা নড়ছিলো। ওটাই আমাদের জন্য অনেক কিছু ছিলো।

IMG_20241118_142517.jpg
"দাদাকে ডেকে দিদি বোঝার চেষ্টা করছিল যে,দাদা রেসপন্স করছে কিনা"

সেখান থেকে দাদাকে আই সি উইতে নিয়ে যাওয়া হলো। দুদিন আইসিইউতে রাখতেই হবে। যাতে অপারেশনের পরবর্তীতে কোনো সমস্যা হলে, খুব সহজেই তার ট্রিটমেন্ট করা যায়।

যাইহোক আইসিইউর বাইরে অপেক্ষা করার পারমিশন আমাদের ছিল না। সেই কারণে আমরা সকলে সেখান থেকে বেরিয়ে দাদার কেবিনে অপেক্ষা করলাম। একটু বাদে আমার মামা ও আমার বড় জামাইবাবু এলেন। সকলের সাথে বসে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললাম।

1672344690977_010726.jpg

"সন্ধ্যাবেলা"

IMG_20241118_183947.jpg
"তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে"

এক এক করে সকলে ফোন করতে শুরু করলো। সকলে দাদার শারীরিক অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করছিলো। প্রায় ১০ থেকে ১২ জনকে একই কথা বলে বলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম ওই কিছুক্ষণ সময়ের মধ্যে।

IMG_20241118_181602.jpg
"দাদার কেবিন থেকে তোলা ছবি"

ততক্ষণে দিদির দাদার সমস্ত ওষুধ, ইনজেকশন সেগুলো কেনার জন্য বাইরে বেরিয়েছিলো। সেই সমস্ত কিছু নিয়ে ও যখন আইসিইউর সামনে পৌঁছালো, তখন ওকে দাদার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দিলো।

পরে ওর কাছ থেকে শুনলাম দাদার সমস্ত কিছুই ঠিক আছে। স্যালাইন চলছে এবং সে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। ব্রেনকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য, তখন ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছিল দাদাকে।

1672344690977_010726.jpg

"রাত্রিবেলা"

প্রায় ৭ টা নাগাদ আমরা হসপিটাল থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। দিদি যদিও সেদিন বাড়ি ফেরেনি। ও সারারাত ওখানেই ছিলো। রাতে একবার এবং ভোরের দিকে একবার দাদার সাথে দেখা করার সুযোগ পাবে, সেই কারণেই রাতে থেকে যাওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।

IMG_20241118_184358.jpg
"এই বিল্ডিং এর দায়িত্ব আমার দিদি সামলায়"

তাই আমরা রওনা করলাম। দিদি যেই বিল্ডিংএ ডিউটি করে তার পাশ থেকেই আমাদের আসতে হচ্ছিলো। সেই সময় বিল্ডিংটা দেখতে খুবই সুন্দর লাগছিলো,তাই আমি দুটো ছবিও তুললাম।

IMG_20241118_184241.jpg
"ফেরার পথে তোলা ছবি"

গলির রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে আমরা হসপিটালের মেনগেট এ পৌঁছালাম। তবে যেহেতু মেট্রো ধরে বাড়ি ফিরবো, তাই বাসের অপেক্ষা না করেই মেট্রো স্টেশনের দিকে হাঁটলাম। হসপিটাল থেকে ৮-১০ মিনিটের দূরত্বই মেট্রো স্টেশন। তাই একটু জোর পায়ে হেঁটেই ট্রেন ধরার চেষ্টা করলাম। কারণ জামাইবাবুকে যেতে হবে আরো অনেকখানি দূরে।

IMG_20241118_212805.jpg
"তিতলির জ্বরের ওষুধ"

এরপর মেট্রো, তারপর লোকাল ট্রেন ধরে প্রায় ৮.৩০ নাগাদ বাড়ি ফিরলাম। তবে বাড়িতে ফিরে দেখি তিতলির জ্বর হয়েছে। দিদির সাথে ফোনে কথা বলে ওষুধ কোথায় জানলাম। তারপর আমি ফ্রেশ হয়ে ওকে ওষুধ দিয়ে দিলাম। কমিউনিটির বুমিং এর কাজ সেরে, আমিও ভাত খেয়ে নিলাম, কারন সারাদিন খাওয়া হয়নি।

রাতেই ভেবেছিলাম এনগেজমেন্ট রিপোর্ট লিখবো। তবে দিদি বাড়িতে না থাকায় বাচ্চাদেরকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে ওদের পাশে শুয়ে ছিলাম। যেহেতু সারাদিনে অনেক ধকল গেছে, ক্লান্ত ছিলাম, কখন নিজের চোখে লেগে গেছে বুঝতে পারিনি। এইভাবেই কেটেছিল, গত পরশু দিনটি।

5c08ed51-26dc-462f-94f6-6f9e6e0fa2b4.gif

9vWp6aU4y8kwSZ9Gw15LFL3aMdhmgmBBFMpDJregpdP328TqCvhjhspw5NBPbWMShaDD4yjYoZFwyWS9XH9YcrMyqTMGHiWpaGrwDGkXYMbDHgxptYZq3ueRpXapEAPkAuu3vPaZSXJ2USdTC.png

Sort:  

Congratulations, your post has been upvoted by @scilwa, which is a curating account for @R2cornell's Discord Community. We can also be found on our hive community & peakd as well as on my Discord Server

Manually curated by @ abiga554
r2cornell_curation_banner.png

Felicitaciones, su publication ha sido votado por @scilwa. También puedo ser encontrado en nuestra comunidad de colmena y Peakd así como en mi servidor de discordia

Loading...
 yesterday 

আসলে কাছের মানুষ যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন ঘুম আর চোখে আসে না। আপনার জামাই বাবুর অপারেশন ছিলো তাই আপনি অনেক সকালে ঘুম থেকে উঠেছেন। অপারেশন চলাকালীন নিজেদের মনে অনেক ভয় আসে হয়তোবা এটা আমরা বুঝতে না পারলেও যারা এই মুহূর্তে পার করেছে তারা ভালোভাবে জানে ঠিক আপনি যেমন। যাই হোক আপনার একটি দিন কেটে যায় হসপিটালে ছোটাছুটি করতে করতে। আশা করি আপনার জামাইবাবু খুবই দ্রুত সুস্থ হয়ে আপনাদের মাঝে আবারও চলাফেরা করবে সৃষ্টিকর্তা তাকে খুবই দ্রুত সুস্থ করে দেবেন।

ripon0630.jpg Congratulations!!! because your post has been upvoted by Team 7 using steemcurator09. Keep up the good work and keep making quality posts. Curated By <@ripon0630>

 3 hours ago 

Thank you for your support @ripon0630. 🙏