খুশি! Happy!

খুশি.... এই খুশি... কি হলো? কোথায় তুই? স্কুলে যেতে এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে, তাড়াতাড়ি আয়, নয়তো স্কুলের গেটে তালা পড়ে যাবে!
প্রতিদিনের মতোই সহপাঠী তিন্নি ডাকতে এসেছে খুশিকে স্কুলে যাবার জন্য!
খুশির বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়েই স্কুলে যাবার পথ, সেই ছোট্ট থেকে মায়েদের হাত ধরে একসাথে স্কুলে যাবার অভ্যেস দু'জনের!
আগামী বছর দু'জনেই মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে!
এতগুলো বছরে তারা শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা একসাথেই স্কুলে যাতায়াত করতে করতে, এটি যেনো কবেই নিজেদের অজান্তে তাদের নিত্য দিনের অভ্যেসে পরিণত হয়ে গেছে!
তিন্নি হলো বাড়ির মেজো মেয়ে, আর খুশি? সে কনিষ্ঠা কন্যা মা বাবার!
আর্থিক অবস্থা উভয়েরই মন্দ নয়, তবে খুশি(হ্যাপি)নামটা তার দিদিমা খুব আদর করে রাখলেও খুশির কপালে খুশি দীর্ঘস্থায়ী হয় নি!
খুশির যখন এই পাঁচ বছর বয়স তখন তার বড় দাদা জলে ডুবে মারা যায়! পুত্রশোক নিতে না পেরে, এই দু'বছর হলো খুশির মাও খুশিকে ছেড়ে পরলোকে চলে গিয়েছেন!
এরপর, এই এক্ বছর হলো, খুশির বাবা পুনরায় বিবাহ করেছেন, এখন খুশির বয়স পনেরো, আর এরই মধ্যে তার মনে নিজের নাম নিয়ে বেশ সন্দেহ দানা বেঁধেছে!
মাঝে মধ্যে দিদিমা দেখা করতে এলে খুশি তাকে জিজ্ঞাসা করে, আচ্ছা দিদিমা( ন্যানি)তুমি আমার নাম খুশি কেনো রেখেছিলে?
উত্তরে দিদিমা বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে একদিন ঈশ্বর তোর জীবন থেকে সব দুঃখ দুর করে, সমস্ত খুশি বয়ে নিয়ে আসবেন তোমার জীবনে, তাই!
কথা শেষ সাদা থানের আঁচলে লুকিয়ে চোখ মোছেন!
তিন্নির ডাকে খুশি মাথা নিচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে, আর খুশিকে দেখেই তিন্নি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে, কি রে খুশি তুই এখনো ঘরের জামা পড়ে, স্কুলের জন্য তৈরি না হয়ে কি ব্যাপার?
খুশি:- আজ আর স্কুলে যাওয়া হবে না রে তিন্নি!
সৎ মায়ের শরীর ভালো নেই, তাই ঘরের কাজ, রান্না সব করতে হবে!
চেষ্টা করেছিলাম, স্কুলে যাবার আগেই সব কাজ শেষ করতে কিন্তু এখন সৎ মা বললেন, বাবা অফিস থেকে না ফেরা পর্যন্ত তার মাথায় জল পট্টি দিতে!
আর, তুই তো জানিস বাবা থাকলে, দিদিমা আসতে চান না! সৎ মা বিশেষ পছন্দ করেন না, দিদিমা এখানে আসুক!
তিন্নির সবটাই জানা, কারণ শৈশবে একসাথে হাত ধরে বেড়ে ওঠা! তবুও, তিন্নি বললো আর একমাস বাকি টেস্ট পরীক্ষার, এখন স্কুল কামাই করলে যে তোরই ক্ষতি!
খুশি কতখানি পড়াশোনায় ভালো সেটা গোটা পাড়ার লোক জানে, তাই এক্ সময় এই পরিবার হিংসার কারণ ছিল, একদিকে একমাত্র পুত্র সন্তান যেমন পড়াশোনায় ভালো ছিল, তেমনি ভালো এই খুশি!
তিন্নির মা অবশ্য খুশিকে বেশ পছন্দ করেন, তাই মেয়েকে সবসময় খুশির সাথে থাকার অনুমতি দেন, এছাড়াও বাড়তি টিফিন দিয়ে দেন তিন্নির সাথে খুশির জন্য।
![]() | ![]() |
|---|
প্রথম প্রথম খুশি টিফিন নিয়ে আসলেও পরের দিকে না খেয়ে থাকতো টিফিনের সময়, সেটা বেশ কিছুদিন লক্ষ্য করে তিন্নি একদিন জিজ্ঞাসা করেছিল খুশিকে, কি ব্যাপার খুশি আজকাল তুই তো দেখি টিফিন ছাড়াই স্কুলে আসিস!
উত্তরে খুশি জানিয়েছিল, তার খিদে পায় না, তাই আর টিফিন নিয়ে আসে না!
তবে, তিন্নি কিন্তু খুশির উত্তরে সন্তুষ্ট হয়নি, বাড়িতে গিয়ে তিন্নি তার মাকে কথাটা জানালে, সেদিন থেকে তিন্নির মা বাড়তি টিফিন দিয়ে শিখিয়ে দিয়েছিল, খুশি যাতে বুঝতে না পারে সেভাবেই বুদ্ধি করে দুজনে ভাগ করেই যেনো টিফিন পিরিয়ডে একসাথে মিলেমিশে খাবার খায়।
খুশি যদিও পরের দিকে বিষয়টি বুঝে গিয়েছিলো!
সেদিন বড্ডো মায়ের কথা মনে পড়ছিল তার।
![]() | ![]() |
|---|
কেনো যে সাঁতার শেখার বায়না ধরেছিল একমাত্র বড় দাদা(ওল্ডার ব্রাদার)! মা কত করে মানা করেছিল, বাবার সাথে ছাড়া জলে না নামতে, একদিন দিদিমার অসুস্থতার কারণে মা বাড়িতে ছিল না, সেদিন খুশি গিয়েছিল মায়ের সাথে আর বাড়িতে ছিল দাদা আর বাবা!
দুপুরে খাবার পর বাবা ঘুমিয়ে পড়েছিল, সেই ফাঁকে কিছু বন্ধুর সাথে জলে নেমেছিল, এরপর তলিয়ে গিয়েছিল চিরতরে! যখন খুঁজে পাওয়া গেলো তখন শরীরে আর প্রাণ ছিল না!
মা একেবারে শান্ত হয়ে গিয়েছিল, এরপর আর খুশিকে নিয়ে স্কুলে যেতেন না, তিন্নির মা দুজনকে স্কুলে নিয়ে যেতো, সময়ের হাত ধরে জীবনের সম্পর্ক হারিয়ে গেছে, এসেছে নতুন মা!
যার এখন একমাত্র লক্ষ্য খুশিকে বিয়ে দিতে নিজে রাজত্ব করা! পাড়ার সকলেই বোঝে বিষয়টি কিন্তু কারোর সংসারে কেই বা যায় নিজেদের মতামত পোষণ করতে!
তাই, বুঝেও চুপ করে দর্শক হয়ে থাকে সবাই, আর পিছনে আফসোস করেন সকলেই।
অন্যদিকে খুশির নিজের মায়ের সকল আত্মীয় মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে, পাছে খুশি তাদের উপর বোঝা হয়ে ওঠে!
সময় তার নিজ ধারায় বইতে থাকে, আর সময়ের সাথে খুশিও যেনো কেমন বদলে গেছে, একমাত্র তিন্নি ছাড়া আর বিশেষ কারোর সাথেই সে আর মেশে না, তবুও তিন্নির বাড়িতে যাওয়া তার বারণ, পাছে ঘরের অভ্যন্তরীণ কথা পাঁচকান হয়ে যায়, সেই কারণে বাবা এবং সৎ মা ওই স্কুল টুকুই তিন্নির সাথে যাবার জন্য বরাদ্দ করে রেখেছে!
এখনও যেহেতু খুশির আঠেরো বছর বয়স হয়নি, তাই চাইলেও বিয়ে দেবার উপায় নেই, নইলে পাত্র অনেক আগেই সৎ মায়ের দেখা রয়েছে!
এসব কথা ঘরের বাইরে না যায়, সেইজন্য বিশেষ কারোর বাড়িতে যাবার অনুমতি নেই খুশির!
দেখতে ভালো, লেখা পড়ায় ভালো, ঘরের কাজ জানে, বিনা বাঁধায় গলার কাঁটা বিদায় করতে পারলেই সবটা নিজের!
এই সত্যি খুশি একদিন তিন্নিকে জানিয়েছিল, কারণ, আর তিনটি বছর বাকি খুশির আঠারো বছর হতে!

খুশি কি সত্যি লেখাপড়া নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে? খুশি কি সত্যি নিজের নামের সার্থকতা বজায় রাখতে সক্ষম হবে?
জানতে হলে এই কাল্পনিক গল্পের আগামী লেখায় নজর রাখুন, আর আপনাদের মতামত অবশ্যই মন্তব্যের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না, এমন খুশিদের সাথে আপনাদের কখনও পরিচয় হয়েছিল কখনও?







Thank you 👍