স্মৃতির পাতায়! (On the page of memory!)

in Incredible India8 days ago (edited)
1000040972.png

বলছি! ও.. ভাই শুনছেন? একটি ছেলেকে ডাকতেই পিছু ফিরে তাকিয়ে বললো, হ্যাঁ বলুন!
আমি একটু আমতা আমতা করে বললাম, আচ্ছা বলতে পারবেন এক্ মুঠো শৈশব কোথায় পাবো?

ছেলেটি খানিক তাজ্জব হয়ে চেয়ে থেকে আমার দিকে, বলতে পারব না, আপনি ওই সামনের বাড়ীতে জিজ্ঞাসা করুন, আমার কাজে যেতে দেরি হচ্ছে।

আমি বললাম আচ্ছা আচ্ছা, ধন্যবাদ।
কানে আসলো, ছেলেটি বলছে পাগল নাকি! পাড়ায় তো আগে কখনও দেখিনি, দিনকাল ভালো নয়, সঙ্গে কেউ থাকলে বুঝিয়ে দিতাম, যতসব উল্টোপাল্টা মানুষের ভিড় বেড়েছে এই পাড়ায়!

মহিলা বলে বেঁচে গেলো!

কানে আসলেও নিজের অভিব্যক্তি সংবরণ করে সামনের দেখানো বাড়িটিতে এগোতে এগোতে, মনে করছিলাম, এই তো পাশেই ছিল মাতু দিদের কাচা বাড়ি, যার সুবিশাল উঠোনে আমাদের চড়ুইভাতি হতো!

রোজ বিকেলে পাড়ার চাপ কলে মুখে সাবান মেখে ধুতে যেতো, বাড়িতে কল ছিলনা বলে!
ওর বৌদি তো প্রতিদিন আমাদের বাড়ির চাপ কল থেকে জল ভরে নিয়ে যেতো।

1000039619.jpg
(কালের স্রোতে হারিয়ে যাওয়া সময় আর কিছু প্রিয় সম্পর্ক)

কারণ, পাড়ার গোটা গলিতে তিনটে চাপ কল ছিল, একটি গলির মোড়ের মাথায়, একটি পাশের মাঠের এক্ কোণে, যেটি ছিল সরকারি;
আরেকটি ছিল আমাদের বাড়িতে।

ইটের দাঁত বেরিয়ে থাকা ক্ষয়ে যাওয়া দুলাল দাদের বাড়ি, সেটাই বা কোথায়?

এখন তো সবার পাকা বাড়ি, মুখগুলো সবটাই অচেনা!
অদ্ভুত!

এক্ পা এগোতেই মনে পড়লো, আরে! বন্দনা দি, যে কিনা দিদির সহপাঠী ছিল, তাদের বাড়ি ছিল আমাদের বাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম কোন বরাবর, যাদের বাড়ির পাঁচিলের গায়েই গড়ে উঠেছিল আশ্রম, তাই পাড়ার নামকরণ করা হয়েছিল আশ্রম পাড়া!

প্রতি বছর কৃষ্ণ লীলার আয়োজনে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো, কীর্তনের দু এক্ দল আমাদের বাড়িতে থাকতেন!

আমার ভালো লাগতো কৃষ্ণ কে দেখতে, সত্যি কারের কদম গাছের নিচে রাধার সাথে বাঁশি বাজাচ্ছে, আর দেওয়ালের ঠিক গায়ে ছিল, গন্ধরাজ ফুলের গাছ, সেই ফুলের সুগন্ধ নেশায় আবৃত করে রাখতো!

IMG_20241113_212937.jpg
(এই কম্পানিতেই বাবা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে কর্মরত)

ও হ্যাঁ! পিছনের রাস্তা দিয়ে পুকুর পাড় ধরে আশ্রমে যেতে হতো, সেই পথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, কিন্তু পুকুর কোথায়? সেখানে তো শিশুদের খেলার উদ্যান দেখতে পাচ্ছি!

এমন সময়, কোমর ঝুঁকে যাওয়া এক্ বৃদ্ধা আমাকে দেখে দাড়িয়ে পড়লেন, আমাকে শুধালেন, কোন বাড়িতে যাবে মা?

আমি বললাম, আমি এই পাড়াতেই থাকতাম, আজ একমুঠো শৈশব কুড়াতে বেড়িয়েছি, কিন্তু যেদিকেই যাচ্ছি সবটাই কেমন অপরিচিত লাগছে!

বৃদ্ধা জিজ্ঞাসা করলেন, কোন্ বাড়ি ছিল তোমাদের? আমি বলতেই উত্তর আসলো, ও তুই সেই দুষ্টু সুনীতা?
আমায় চিনতে পারছিস? আমি লোকোর পিসিমা!
আমি বললাম, হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে, কেমন আছেন পিসিমা?
উত্তরে বললেন, আমি ওই ধর্মের বাতির মত ধিক্ ধিক্ করে জ্বলছি!

শৈশব কুড়োতে এসেছিস? পাবিনা! আজকাল আগের মত কেউ নিঃস্বার্থ ভাবে কিছুই করে না কারোর জন্য।

এখন চেনা মানুষকেও সন্দেহের চোখে দেখে সবাই, ভালো কথা বললেও অভিসন্ধির গন্ধ খোঁজে!

আমি বললাম তোমার মনে আছে পিসিমা? আমার বাবা তোমাদের বাড়িতেই অবসর সময় অতিবাহিত করতো?

পিসিমা বললেন, তখন বাড়ি আলাদা ছিল কিন্তু পরিবার ছিল এক্;
আর এখন এক বাড়িতে থাকে অনেকগুলো বিভাজিত পরিবার!

লাভ থাকলে পাশে পাওয়া যাবে, নইলে মরতে বসলেও কেউ ফিরে চায় না, এই তো সেদিন পাল বাড়ির ছোটো ছেলেটা চলে গেলো, আসলো কেউ দেখতে?

শৈশবের মূল্য আজ আর কেউ দেয় না রে! কোনদিন দেখবি নিজেরা ধনী হতে নিজেদের পরিবারের শৈশব বিক্রি করে;
ব্যস্ত থাকবে নিজেদের ইচ্ছে পূরণের সাধ মেটাতে।

ওই যে কিসব হাতে নিয়ে খুদেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, দেখেও চেনা মানুষ চিনতে পারে না, মগ্ন নিজেদের জগতেই!

চলে যা! চলে যা! আমারও সময় ঘনিয়ে এসেছে, চাইনা তোদের নির্জীব আধুনিকতার মাঝে আর বাঁচতে!

পিসিমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে, একমুঠো শৈশব নিয়ে প্রত্যাবর্তনের যাত্রা শুরু করলাম।

IMG_20241113_011000.jpg
(শৈশবে খেলেছি সত্যি উড়োজাহাজের ভিতরে)
এক্ মুঠো শৈশব!

আমারও একটা পরিবার ছিল;
ছিল হাসি খুশি ভরা শৈশব!
স্বপ্নের মতো হারালো সময়
চোখ খুলে অবাক! কই সব?

এক্ পলকে বদলে যায় জীবন
মন মানসিকতায় সবাই কৃপণ!

লাভ ক্ষতির অঙ্ক, শুধু রয়েছে বেঁচে;
খবর আজ নেই না কেউ
নিঃস্বার্থ হয়ে যেচে!

পরিবর্তনের হাওয়া বইছে চারিধারে;
আন্তরিকতা, ভালোবাসা
হারিয়েছে আঁধারে!

আজকে মনটা ভারাক্রান্ত, অনেক কাছের হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর সাথে অতিবাহিত স্মৃতি সর্বক্ষণ তাড়া করে বেড়ায়, তাই আজকে এক্ মুঠো শৈশব কুড়িয়ে এনেছি নিজের লেখনীর মাধ্যমে।

1000010907.gif

1000010906.gif

Sort:  
Loading...
Loading...
 7 days ago 

ছেলেটা একটু সহজ সরল ছিল তাই তো কিছুক্ষণ সময় তাজ্জব চখে তাকিয়ে ছিল তাই ছেলেটা হয়তো বুঝে উঠে পারি নাই আপনার চাহনি।

যদি ডিজিটাল কোন ছেলে হতো তাহলে বলতো আপু আমাদের ঘরের পেছনে এখনো শৈশব বিদ্যমান রয়েছে আপনি চাইলেই সেখান থেকে কিছুটা নিতে পারেন আমার ছোট ছোট ভাইপোরা মালাটুলি খেলছে। যাইহোক একটু মজা করলাম যা আমরা একবার ফেলে এসেছি তা কোটি টাকা মূল্য দিও ফিরে পাবো না।

নলকূপের কথা পড়তে মনে পড়ে গেল ছোটবেলার অনেক স্মৃতি ছোটবেলা থেকেই আমিও দেখছি আমাদের আশেপাশের কোন বাসায় নলকূপ ছিল না । আমাদের বাড়ির সামনে মসজিদ সেখানে একটি নলপুর ছিল আর প্রায় এক গ্রামের মানুষ সেখানে প্রত্যেকদিন সকাল এবং সন্ধ্যেবেলা পানি নেওয়ার জন্য ভিড় করতেন।

দিদি আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার ছোটবেলার অনেক স্মৃতি আমাদের কাছে উপস্থাপনা করার জন্য ভালো থাকবেন।

TEAM 1

Congratulations! Your post has been upvoted through @steemcurator03. Good post here should be..

image.png

Curated by : @radjasalman
 7 days ago 

@radjasalman highly appreciated your encouraging support my friend!👍

 6 days ago 

যতদিন যাচ্ছে তত সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে কিন্তু পরিবর্তন হয়নি এখনো আমাদের মনের ভেতরে সেই পুরোনো দিনের কথা গুলো এটা ঠিক একদমই একটি সময় চাপ কল যে কোন গ্রামে অনেক কম দেখা যেতো এখান থেকে ২-৩ বছর আগেও অন্য বাড়ির মানুষ আরেক বাড়ি পানি নিতে আসতো চাপ কলে যেগুলো এখন প্রত্যেকটা মানুষের বাড়ি বসেছে এবং মটর লাগিয়ে রেখেছে।

এবং আপনি অনেক সুন্দর একটি কবিতা আমাদের মাঝে উপহার দিয়েছেন একমুঠো শৈশব যে কবিতার প্রত্যেকটি অধ্যায় নিজেদের মনে গেঁথে গিয়েছে ভালো লাগলো আপনার আজকের এই পোস্টটি পরিদর্শন করতে পেরে।আপনার শৈশবের স্মৃতির কথা গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ শুভকামনা রইল আপনার জন্য ভালো এবং সুস্থ থাকবেন।