কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ
আস্সালামু আলাইকুম,
আমার বাংলা ব্লগের প্রাণ প্রিয় বন্ধুরা, সম্মানিত এ্যাডমিন ও মডারেটরবৃন্দ, কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আমি গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারনে সাতক্ষীরার বিভিন্ন অঞ্চলের ঘের মালিকদের ক্ষয়ক্ষতি এবং অনেকের মাছ শিকার নিয়ে আলোচনা করিব। আশা করি আপনারা সবাই এটি উপভোগ করবেন এবং কিছু নতুন তথ্য জানতে পারবেন। ভুলত্রুটি হলে দয়া করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় শহর সাতক্ষীরা প্রায় অনেকে ঘের ব্যাবসা করিয়া থাকেন। বিগত কয়েকদিনের বর্ষার কারনে প্রায় ঘের তলিয়ে যাই। দেখে মনে হয় যেন বিশাল একটি নদী। কারন প্রতিটি ঘেরের উপরে প্রায় ১ ফুটের মত পানি হয়ে গেছে। গতকাল আমি আমাদের বিনেরপোতা নামক স্থানে গিয়েছিলাম পানি দেখতে সেখানে গিয়ে দেখলাম প্রতিটি ঘেরের উপরে ১ ফুটের বেশি পানি হয়ে গেছে দেখে মনে হবে যেন বিশাল একটি নদীর সামনে দাড়িয়ে আছি। এখানে প্রতিটি ঘেরে অনেক অনেক মাছ ছিল। ঘের তলিয়ে যাওয়ার কারনে কোন ঘেরে আর মাছ নেই। সব মাছ এ দিক সেদিক ছুটে বেড়াচ্ছে।
প্রতিটি খাল ও বিলে মাছ আর মাছ আশ পাশের গ্রাম থেকে শত শত মানুষ চলে এসেছে মাছ শিকার করার জন্য শত শত জাল আর ছিপ বরশি দিয়ে চলছে মাছ শিকার। এক এক জন প্রতি দিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ কেজির বেশি মাছ শিকার করছে। মাছও খুবই কমদামে বিক্রয় হচ্ছে। আমি প্রায় ৮ কেজি মাছ ৮০০ টাকার ক্রয় করে নিয়ে এসেছি। আরও অনেকে মাছ ক্রয় করেছে অনেক কমদামে। প্রথম দিকে ২৫ কেজি মাছ ১০০০ টাকাও বিক্রি হয়েছে। একজন ৫০ কেজি মাছ ক্রয় করেছে ৩০০০ টাকায়। যত বেশি পরিমানে মাছ ক্রয় করবেন তত কমদামে মাছ ক্রয় করা যাবে। প্রতিটি বাজারেও মাছের দাম প্রায় অর্ধেকে চলে এসেছে। প্রতি কেজি রুই মাছ ৩০০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় চলে এসেছে। প্রতি কেজি পাবদা মাছ গতকাল ২০০ টাকায় বিক্রয় করতে দেখা গিয়েছে। প্রতি কেজি টেংরা ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আরও নিম্ন অঞ্চলের দিকে যেতে পারলে যারা এখনও মাঠের মধ্যে খালে মধ্যে মাছ ধরছে তাদের কাছে সরাসরি গিয়ে কিনতে পারলে আরও অনেক কমে মাছ ক্রয় করা যাচ্ছে। পক্ষান্তরে জাল ও ছিপ বরশি এখন দ্বিগুন দাবে বিক্রি হচ্ছে।
এ অঞ্চলেল ঘের মালিকগনের অবস্থা বিশাল খারাপ বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকে ঋন নিয়ে ঘেরে মাছ ছেড়েছে খাদ্য খাবার কিনেছে কিন্তু ঘের ডুবে যাওয়ার কারনে তাদের সব মাছ অনত্র চলে গিয়েছে বিধায় ঘের মালিকগন এখন বেশ মানবেতর জীবন যাপন করছে। কিভাবে ঋনের টাকা পরিশোধ করিবে এই চিন্তাই অনেকের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে। অনেকে জাল ক্রয় করিয়া ঘেরের চারপাশে দিয়ে মাছ আটকানোর চেষ্টা করিতেছে কিন্তু অতিরিক্ত পানির সরোতের কারনে মাছ এক জায়গায় থাকছে না। অনেকে সারা রাত্র জেগে ঘের পাহাড়া দিচ্ছে না হলে যে মাছ টুকু অবশিষ্ট আছে তাওয় চুরি হয়ে যাবে কারন সকলেই ঘেরের আশে পাশে জাল দিয়ে মাছ শিকার করিতেছে। অনেক ঘের মালিকগন জাল টানা দিয়ে যে টুকু মাছ ঘেরে অবশিষ্ট আছে তা ধরে বিক্রি করে দিচ্ছে কিন্তু বাজারে প্রচুর মাছ আমদানি থাকার কারনে কম দামে মাছ বিক্রি করিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে ঘের মালিকগন মহ-বিপদের মধ্যে আছে।
সাধারন মানুষেরা অতি অল্প দামের মধ্যে অনেক মাছ পাওয়ার কারনে বেশি বেশি মাছ ক্রয় করে রাখছে। কেউ ২০ কেজি কেউ ৩০ কেউ ৫০ কেজি মাছ ক্রয় করে ফ্রিজে রেখে দিচ্ছে কারন ইতিপূর্বে মাছের দাম অনেক বেশি ছিল কেউ মাছ ক্রয় করে জামাই বাড়ি কেউ বোনের বাড়ি উপহার হিসাবে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে ঘেরের মালিকগন ক্ষতির মধ্যে থাকলেও সাধারন মানুষ অনেক ভালই আছে। অনেক আনন্দের মধ্যে আছে বড় বড় মাছ অনেক কমদামে ক্রয় করিতে পারছে। অনেক গরীব মানুষ আছে যারা কখন ও মাছ দিয়ে ভাত খেতে পারে না তারাও বড় বড় মাত্র অল্প দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তাই ঘের মালিকগনের সর্বনাশ হলেও সাধারন মানুষগন অনেক আনন্দের মধ্যে আছে।
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনাদের সবার ভালো লেগেছে। আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। সামনে আরো নতুন ও আকর্ষণীয় পোস্ট নিয়ে হাজির হবো। ততদিন পর্যন্ত সাথেই থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.