নদী পাড় হয়ে বাবার সাথে হাটে যাওয়া স্মৃতিময় গল্প
আসসালামুআলাইকুম/আদাব
নদী পাড় হয়ে বাবার সাথে হাটে যাওয়া আমার জীবনের অন্যতম সুন্দর একটি স্মৃতি, যা ভাবলেই আজও মনটা ভরে যায় আনন্দে আর নস্টালজিয়ায়। ছোটবেলায় প্রতি শুক্রবার সকাল হলেই বাবার ডাক শুনে ঘুম ভাঙত,চল, আজ হাটে যাবি তো?সেই একটিমাত্র বাক্যই ছিল আমার সপ্তাহজুড়ে সবচেয়ে প্রতীক্ষিত মুহূর্তের শুরু। বাইরে তখন হালকা কুয়াশা, নদীর উপর ভাসমান কুয়াশার চাদর যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব সাজ। বাবার হাত ধরে আমি ছুটে যেতাম ঘাটের দিকে, যেন পৃথিবীর সবচেয়ে রোমাঞ্চকর যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে।নৌকায় চড়ার মুহূর্তটা ছিল ভীষণ প্রিয়। ঠাণ্ডা বাতাসে নদীর ঢেউয়ের দোল, মাঝির ছিপি দিয়ে দাঁড় টানার ছন্দ,সব মিলিয়ে এক অনবদ্য সুরের মতো লাগত। আমি কখনও পানির দিকে তাকিয়ে মাছ খুঁজতাম, কখনও আবার বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসতাম। বাবা মাঝেমধ্যে নদীর গল্প বলতেন,কীভাবে এই নদী একসময় গ্রামের প্রাণ ছিল, কীভাবে বর্ষায় তা ফুলে-ফেঁপে ওঠে। সেইসব গল্প শুনে মনে হতো, নদীটা যেন কোনো জীবন্ত সত্তা, যার সঙ্গে আমারও এক অদ্ভুত বন্ধন গড়ে উঠেছিল।
নদী পাড় হয়ে যখন হাটে পৌঁছাতাম, তখন চারপাশে এক অন্যরকম প্রাণচাঞ্চল্য। কাঁচা মাটির গন্ধ, বিক্রেতাদের হাঁকডাক, গরুর ঘণ্টার শব্দ,সব মিলিয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। বাবা প্রথমেই যেতেন সবজির দোকানে, আমি তার পাশে দাঁড়িয়ে দামাদামি শিখতাম। কখনও বাবা আমাকে এক পয়সা বা দুই পয়সা দিতেন নিজের জন্য কিছু কেনার, আর আমি দৌড়ে যেতাম মিষ্টির দোকানে। রসগোল্লা, চপ, জিলাপি,যা-ই খেতাম, মনে হতো এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার।
হাটের মধ্যে বাবার পরিচিত অনেক লোক ছিল। কেউ সালাম দিত, কেউ গল্পে মেতে উঠত। আমি পাশে দাঁড়িয়ে বাবাকে দেখতামতার হাসি, কথার ভঙ্গি, সবার সঙ্গে মিশে যাওয়ার সহজাত স্বভাব,সবকিছু আমার কাছে এক আদর্শের মতো লাগত। তখনই মনে মনে ভাবতাম, বড় হয়ে আমি বাবার মতোই হতে চাই।হাটের শেষে ফিরে আসার সময় সূর্য ডুবে যাচ্ছিল পশ্চিম আকাশে, নদীর জলে লালচে আভা ছড়িয়ে পড়ত। নৌকায় বসে আমি ক্লান্ত হয়ে বাবার কাঁধে মাথা রাখতাম, আর তিনি মৃদু স্বরে বলতেন, ঘুমিয়ে পড়, পৌঁছে যাব একটু পরেই।সেই মুহূর্তের শান্তি, নিরাপত্তা, আর ভালোবাসা,কোনো ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
আজ সময় অনেক বদলে গেছে। পাকা রাস্তা হয়েছে, হাটেও এখন শহুরে ছোঁয়া লেগেছে। নদীটা আর আগের মতো প্রাণবন্ত নেই, নৌকার বদলে এখন সবাই মোটরবোটে যায়। তবু, যখনই মনে পড়ে সেই শৈশবের দিনগুলো, তখন মনে হয়,জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়গুলো আসলে ছিল সেই সরল মুহূর্তগুলোতেই। বাবার হাত ধরে নদী পাড় হয়ে হাটে যাওয়ার সেই অভিজ্ঞতা শুধু একটা স্মৃতি নয়, বরং আমার জীবনের এক অমূল্য সম্পদ।যখনই নদীর ধারে যাই, বাতাসে বাবার কণ্ঠস্বর যেন আবার ভেসে আসে,চল, আজ হাটে যাবি তো?” সেই ডাক এখনও হৃদয়ের গভীরে অনুরণিত হয়, মনে করিয়ে দেয়,ভালোবাসা, সম্পর্ক আর স্মৃতিই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে সময়ের স্রোতে।
ধন্যবাদ সকলকে✨💖
ফোনের বিবরণ
| ক্যামেরা | স্যামসাং গ্যালাক্সি |
|---|---|
| ধরণ | রাইটিং ✨ |
| মডেল | এম-৩১ |
| ক্যাপচার | @alif111 |
| অবস্থান | সিরাজগঞ্জ -রাজশাহী- বাংলাদেশ। |





AI Polished থেকে নিজে সাজানোটাই বেটার।
ঠিক আছে ভাইয়া, পরবর্তীতে আমি আমার নিজের মতো করে সাজিয়ে দেবো।