লাগাম ছাড়া স্বপ্নের শেষ দিন | ( একটি বাস্তবসিদ্ধ ছোটগল্প )steemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ13 days ago

শুভ সন্ধ্যা। [ ২১. ০৪. ২৪ ]

আশা করি সবাই ভালো আছেন আর নিরাপদে আছেন। গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে হলে বেশি করে স্বাস্থ্যবিধির প্রতি যত্ন নিতে হবে। এখন এপ্রিল মাস বিধায় বাংলার বুকে ও আবহাওয়ায় সবচেয়ে উষ্ণ সময় অতিক্রান্ত হচ্ছে। কিছুদিন ধৈর্য্য ধরে থাকলে ক্রমেই বৃষ্টির আভাস দেখা যাবে, গরমের প্রকট ততটা থাকবে না।

নানা সংকট, বিড়ম্বনা আর ব্যস্ততার মাঝে দিনকাল ভালোই যাচ্ছে। যদিও অনেকগুলো ব্যাক্তিগত জীবনের দিকে চড়াই উতরাই আর ব্যার্থতার মুখোমুখি হচ্ছি, তবে আশা আছে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে আর সংকটগুলো বাস্তবিক ও সুন্দর সমাধানে রূপ নিবে। মানুষ সর্বোপরি আশায় বেঁচে থাকে, জন্ম থেকে একদম জীবনের অন্তিম লগ্ন পর্যন্ত তা অটুট থাকে।

এই বিষয়টা খুব স্বাভাবিক যে মানুষ সমানভাবে আশাবাদী হতে পারে না, ব্যার্থতা আর গ্লানির ফাঁকে ফাঁকে আছে নৈরাশ্য, ভেঙে পড়া আর কখনো সময়ের সাথে তাল মেলাতে না পারার আক্ষেপ। কখনো আক্ষেপের বন্হিজ্বালা চওড়া হয়ে দেখা দেয়, যার ধাক্কা একেকটা মানুষকে একেকভাবে প্রভাবিত করে।কেউ সামলে নেয় আর কেউ অনেকটা পথ তার আফসোস সাথে করে বয়ে বেড়ায়।

pexels-photo-442586.jpegSrc

আজ এই সময়ে যে বিষয়টা নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই, তা গণহারে অধিকাংশ মানুষকে নিয়েই গড়ে ওঠে। যখন সময়ের সাথে সাথে তরুনদের জীবনে দুটো দিক বেছে নেয়ার সময় আসে তখন খুব সহজেই দ্বিধার অবকাশ পাওয়া যায় না। একদিকে জীবিকার তাগিদে ভালো সাসটেইনেবল চাকরি বাকরি, ব্যবসা বাণিজ্য বা ব্যাক্তিগত বিভিন্ন উদ্যোগে ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তা ঘিরে ধরে, আবার কখনো এসবের মাঝে নিজের জীবনসঙ্গী খুঁজে সেটেলমেন্টের দিকে অগ্রসর হতে হয়।

অনেক ক্ষেত্রেই যে লক্ষ্য থাকে তার কিনারায় পৌঁছানো যায় না। অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেলে সবকিছু আর আগের মতো রয় না, ভাগ্য অনেক কিছু কেড়ে নিতে থাকে আর বিভিন্ন মানুষের ব্যাক্তিগত জীবনে তা নিজস্ব ক্ষেত্রবিশেষে বেড়ে উঠতে থাকে। হয়তো কোন এক সময় একটি উপায় বা সমাধান এসে পড়ে তবে তার জন্য কোন কোন সময় একদিকে চড়া মূল্য দিতে হয়, কিছু যোগ বিয়োগের খেলায় বড় পরিসরে।

সময় ও জীবন মানুষকে একদিকে অনেক কিছু দেয় আবার কেড়েও নেয়। হয়তো চাওয়া ও পাওয়ার মাঝে ব্যাবধান অনেক দিনের যার থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না।

যার কথা বলতে চলেছি সে ব্যক্তিটি হলো আমার পরিচিত এক প্রতিবেশী, যিনি দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করছেন অথচ প্রথম কয়েক বছর সম্পূর্ণ জানাশোনার বাইরে ছিল। শহুরে জীবনের একটি বড়সড় বাস্তবতা হলো খুব নিকটে যার বাস, কয়েক গজ দূরের লোকদেরই চেনা হয়ে ওঠে না। তেমনি আমারও বেশ নজরের বাইরে তার অবস্থান ছিল যেদিন না একদিন একটি পার্কে তার সম্পর্কে জানতে পারলাম।

একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে পড়াতেন আগে, তবে বেশ কিছু বছর সবকিছুর আড়ালে তার কাটে তার নিজের ভবিষ্যৎ গুছানোর জন্য। একদিকে আমলা হওয়ার ইচ্ছা অন্যদিকে তার অসম্পূর্ণ সংসার যা অপরিণত রেখে তিনি বাড়ি ছেড়েছিলেন। দিন যায়, মাস পেরিয়ে বছর, কখনো পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে শেষ ধাপে ব্যার্থতা, কখনো মনের মতো অপশন না পেয়ে আবার ক্যারিয়ারের হাল ধরার জন্য ব্যস্ততা তাকে ঘিরে ধরেছিল, তা থেকে খুব সহজে তিনি উঠতে পারেন নি কিছুকাল।

pexels-photo-935789.jpeg
Src
এভাবে অনেকগুলো বছর তার জীবন থেকে কেটে যায়, একদিক সামলিয়ে তখন বাড়ি যাওয়া হয়ে ওঠে না, কারণ পেছন থেকে কিছু মুখ চেয়ে আছে হয়তো একদিন স্বপ্নের পূর্ণতা মিলবে। কিন্তু বিধাতা যে লিখে রেখেছে অপ্রাপ্তি আর হতাশার মিশেল, যদিও সে ধৈর্য্য ধরে তার পথে অটুট, জীবনে একদিন লক্ষ্যে স্থির হতেই হবে। কেউই এতগুলো বছরের স্যাক্রিফাইস বৃথা যেতে দিতে পারে না।

যখন চলতি সময়ের খেলায় লোকটি সময়ের বাঁকে জীবন থেকে মুছে যাওয়া সময়ের দিকে তাকালো তখন অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেছে, কিছু চরিত্র যারা ছিল তারা আর নেই এখন, তাদের মধ্যে একজন বিশেষ মানুষও আছে।

লোকটি সেই বিশেষ মানুষকে কথা দিয়েছিল, আর কিছুদিন বড়জোর ২-৩ বছর অপেক্ষা করতে। এর মধ্যে একদিন খুব ভালো একটি অবস্থান সে তৈরি করে নিবে, ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে নিয়তি তাকে নিরাশ করবে না। কিন্তু সবকিছু ভাবনা চিন্তার মতো হয় কি ?

এর উত্তর ভারী হয়ে শ্রাবণের ধারার মতো পড়লো। তার চাপা বুকভরা কষ্ট আর কান্নার রঙে বৃষ্টিভেজা মুহুর্ত এক হয়ে গেল, যখন সে জানতে পারলো সবকিছু আগের মতো নেই। যোগ -বিয়োগের খেলায় এক অঙ্কে বড় একটি শূন্য পড়েছে যার থেকে সহজে নিস্তার নেই। ভুলে যাওয়াও দুঃসহ, দুঃসাধ্য।

পরিবার থেকে বিয়ের চাপ যখন তেড়ে আসছিল তখন একটি অবিবাহিত মেয়ে বাঙালি সমাজে কত বছর অপেক্ষা করতে পারে?

বাবার চোখ রাঙানি আর প্রতিবেশীর নানা কথা শুনতে শুনতে কন্যাগ্রস্থ পিতা বরের বাড়ি পাঠানোর শুভকাজ সেরে ফেলতে চায়, অপেক্ষা করতে চায় না। একটি জুতসই পাত্র পেলেই বাবার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় আর মেয়েটি নিজের ইচ্ছায় কিংবা বিরূদ্ধে হোক পুরোপুরি নিরুপায় হয়ে নিয়তিকে বেছে নেয়।

photo-1617850136763-06bc0a9a089c.jpeg
Src

একদিন বিয়ের দাওয়াত আসে, একটি কার্ড যার ওপরে রঙিন কালিতে শুভ বিবাহ লেখা থাকে। সেই কার্ডের সাথে সংযুক্ত চিঠিটি পুরোটা পড়া হয় না, চোখ ভিজে ঝাপসা হয়ে ওঠে, চশমাটা মেঝেতে পড়ে যায়। সাথে একটা সিগারেটের ধোঁয়া ভারী হয়ে ওঠে, তা উপরে মিলিয়ে যায়, শূন্যতা থেকে শূন্যে।

এমন ঘটনা সবখানেই। কিছু পূর্ণতা পায়, কিছু অন্যভাবে লেখা হয়, তবে শেষটায় শূন্যতা অহরহের বিষয়।

ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই। নিজেদের মতামত জানাতে পারেন কমেন্ট বক্সে আর শুভকামনা রইলো।

Coin Marketplace

STEEM 0.31
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 64009.76
ETH 3148.04
USDT 1.00
SBD 3.91