পূর্ণতা - ঝড়ের পরে ঝলমলে রোদ | ( ধারাগল্প ) || ১০% বেনিফিসিয়ারি - abb-curation ||steemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ12 days ago

আসসালামু আলাইকুম / আদাব। { ২৩.০৪.২৪ }

সবাই কেমন আছেন ? আশা করি ভালো আছেন। সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু বদলে যায় ও যাচ্ছে, একদিকে জীবনের নতুন আহ্বান আর অন্যদিকে সুখে দুঃখে দিন গড়িয়ে যাচ্ছে।

বোধ করি, পৃথিবীতে মানুষ ইচ্ছে করলেই অনেক কিছু করতে পারে, নিজের ভাগ্যের বদল ঘটাতে পারে কিন্তু যে সময়টা হারিয়ে যায় তা খুব সহজে ফিরে আসে না। হাজারবার চাইলেও একটি নির্দিষ্ট সময় যা দাবি রাখে, তা সময়ের অবসানে আর আগের মতো থাকো না। জীবনের চরম বাস্তবতা বোধ হয় তা ই, যা তেতো হলেও সত্য।

প্রত্যেকটা মানুষের তার জীবন ভাবনা নিজের মতো, অন্যদের থেকে অল্প হলেও আলাদা পথে তা গতিলাভ করে। কেউ অর্থবিত্তলাভকে জীবনের অন্যতম ধ্যানজ্ঞান মনে করে, কেউ যশ - ক্ষমতা লাভ আবার কারো অল্পতেই সন্তুষ্ট থেকে জীবন পার করার তাগিদ অনুভব করে। এর মধ্যেই সাধারণ কিংবা অসাধারণ মানুষের দুটি ভাগ হয়ে যায়।

আমরা অনেক সময়ই দেখি, কারো অত্যধিক যোগ্যতা আর মেধা থাকা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে পারে না। যদিও সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। আমি দেখেছি অসচ্ছল পরিবার আর দারিদ্র্যতার মধ্যে বসবাস করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠ সমাপ্ত করে লেখাপড়ার অবসান হতে।

খুব ভালো রেজাল্ট, স্কলারশিপ আর ভেতরে জ্ঞানের প্রভা থাকার পরেও সুযোগের অভাব ছিল, বেড়ে উঠার বাসনা, আলোকিত হবার করুন আকুতিও মিলিয়ে গিয়েছে বাস্তবতার কারনে।

pexels-photo-1136571.jpegSrc

ব্যাক্তি হিসেবে যা চাওয়া পাওয়া থাকে তার অনেকাংশেই পূর্ণতা মেলে না। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই বাধা বিপত্তি রয়েছে, হতাশার উর্ধ্বগামী মাত্রা রয়েছে, চরমভাবে হাল ছেড়ে দেয়ার মুহূর্ত রয়েছে। কমবেশি সবাই তা অনুভব করি কিন্তু তারপরেও সত্য কথা এই যে, জীবনের অবস্থা যাই হোক না কেন, তা যদি নুন্যতম সুযোগ সৃষ্টি করে তাহলে তার পেছনে ছোটা উচিত।

যদি স্বপ্ন থাকে দৃঢ়, অটুট মনোবল আর রাতে ঘুমাতে না দেয়ার আকাঙ্ক্ষা ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে, সে স্বপ্ন একসময় সত্যি হয়ে ওঠে। আমি একটি ছেলেকে প্রায়ই দেখতাম খালি পায়ে, মলিন জামা গায়ে দিয়ে একটি মস্ত বড় পাথরের ওপর বসে পড়ছে। ল্যাম্পপোস্টের আলো জ্বলছে উপরে।

বাড়িতে আলো জ্বালার মতো কেউ নেই, হয়তো কোনো রকমে খেয়েপরে জীবন চলে, মা বাবার সেই অর্থসঙ্গতি নেই যে ছেলেটাকে উঁচুদরের শিক্ষায় শিক্ষিত করে মানুষ করাবে।

যদিও সমবয়সী ধনী, বিত্তশালী অঢেল সম্পদের পাহাড়ের মধ্যে থাকা ছেলেমেয়েগুলো তার থেকে বেশি জ্ঞান সঞ্চয়, লেখাপড়া চালু রাখার, ফাঁকিবাজি করার সুযোগও রাখে। যেখানে তার বয়সী ধনাঢ্য দুলাল মোটরসাইকেল সর্বশেষ মডেলের কিনতে চায়, সে শুধু আশা রাখে কোনমতে যেন তার লেখাপড়া করার সুযোগটা সে পায়, কারন জীবিকার সন্ধান করতে গেলে একসময় তাকে লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হতে পারে।

বাঙালি সমাজে এরকম ঝরে পড়া শিশু কিশোর শিক্ষার্থী অনেক আছে যারা নিজেদের ভাগ্যের কারনে লেখাপড়া চালু রাখতে পারে নি। যেখানেই নজর দেয়া যায়, চোখে পড়ে এমন কিছু দৃশ্য যার জন্য মায়ার উদ্রেক হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিক্ষাবঞ্চিত এসব শিশুরা বড় কোন অর্জনে নিজেদের জীবন রাঙাতে পারে না। তবে কেউ কেউ এ দৃশ্যপট পাল্টে দেয় অবাক করা গল্পে।

যে ছেলেটিকে প্রায়ই দেখতাম বসে বসে অঙ্ক করছে, বিভিন্ন সূত্র প্রয়োগ আর বৈজ্ঞানিক এক্সপেরিমেন্ট করছে, টাকার অভাবে ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারছে না, অথচ আগ্রহ আর একাগ্রতার কোন কমতি নেই। যাদের হাতে সুযোগ অনেক কম, স্বপ্নের মধ্যে যে অন্তস্থিত জ্বালা আছে তা তাড়িয়ে বেড়ায় তারা অনেকাংশেই সফল হয়। কারণ পিছুটান, উদাসীনতা আর হাল ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয় সংগ্রাম আর টানাপোড়েনে বড় হওয়া ছেলেগুলো।

pexels-photo-4218700.jpegSrc

সেই দারিদ্র্যে মানুষ হওয়া ছেলেটাকে একদিন দেখলাম খুব বড় করে একটি পত্রিকায় আসতে শিরোনাম হয়ে সফলতার গল্পে। কিভাবে অল্প অল্প করে নানা চড়াই উতরাইয়ের পথ পাড়ি দিয়ে একদিন সফলতার দেখা পায় সে। হয়তো যখন জীবনে কোন শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করে নি, সে ভাগ্যকে দোষারোপ করতো না।

জীবনে একদিন চমক আসবেই, চারপাশের পরিবেশ ও সুযোগ যাই থাকুক না কেন, দৃঢ় মনোবলে পা বাড়ালে ভালো কিছু পরিণামে লেখা থাকে। ছেলেটির ক্ষেত্রেও তাই হলো। ভালো রেজাল্ট করে ইন্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় কৃতকার্য করে এবার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার পথে।

স্বপ্নের পরিধি ক্রমেই বাড়তে থাকলো আর এবার আরো পথ পাড়ি দেয়ার বাকি, সে জানেনা জীবন কোথায় তাকে নিয়ে যাবে স্রোতস্বিনী পথে...

Coin Marketplace

STEEM 0.30
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 63155.22
ETH 3108.25
USDT 1.00
SBD 3.85