পুরাণের গল্প : "রাজা মনু ও মৎস্যাবতার" - পর্ব ০৩

maxresdefault.jpg
Creative Commons License Under Fair Usage Policy : Source


[বিঃ দ্রঃ নিম্নোক্ত কাহিনীটি পৃথিবীর সব প্রধান ধর্মগ্রন্থে বিভিন্নরূপে বর্ণিত আছে । তবে, ধর্মগ্রন্থ ভেদে কাহিনীর কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও এর মূল ঘটনা বিন্যাস এবং কাহিনীর আড়ালে মূল ধর্মীয় বার্তা কিন্তু একই ।]


পরের দিন যথারীতি অনেক প্রত্যুষে উঠে মহারাজ মনু নদীর জলে অবগাহন করতে গেলেন । স্নান সমাপন করে ফেরার সময় আজ তিনি অনেকটাই নিশ্চিন্ত বোধ করতে লাগলেন এই ভেবে যে মৎস্যটির উপযুক্ত বাসস্থান অবশেষে তিনি নির্বাচন করতে সক্ষম হয়েছেন । রাজবাড়ীর উদ্যানস্থিত সরোবর অনেক বড়, সেখানে মাছটির আকার যতই বৃদ্ধি পাক না কেন তাতে মাছটির কোনো অসুবিধা হবে না ।

রাজসভাস্থলে মহারাজ মনু যখন রাজকার্য পরিচালনা করছিলেন সেই মুহূর্তে হঠাৎ, রাজউদ্যানের পরিচারক ও প্রহরীরা ছুটতে ছুটতে রাজার কাছে এসে হাজির হলো । রাজা তাদেরকে সবিস্ময়ে লক্ষ্য করে হঠাৎ এই ভাবে রাজসভা মধ্যে আসার কারণ জিজ্ঞেস করলেন ।

তখন তারা একযোগে জানালো যে উদ্যানের সরোবরে এক অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী তারা, তাই ভীত হয়ে সর্বাগ্রে মহারাজকে এই সংবাদ দেওয়ার জন্যই হঠাৎ তাদের এভাবে রাজসভায় আগমন, মহারাজ যেন তাদের মার্জনা করেন । রাজা বিস্মিত হলেন এবং মনে মনে আশংকা করলেন হয়তো বা সেই মৎস্য এই ঘটনার সাথে জড়িত । তাই, তিনি আর কালবিলম্ব না করে তৎক্ষণাৎ উদ্যানের সেই সরোবর অভিমুখে গমন করলেন ।

সরোবরের সোপানে দাঁড়িয়ে জলের দিকে তাকিয়ে তিনি মহা বিস্ময়ে একদম বিমূঢ় হয়ে গেলেন । সরোবরের জলে যেদিকে চোখ যায় বিশাল এক মাছের লেজ, পাখনা আর পৃষ্ঠদেশ দেখা যায় । সমগ্র সরোবর জুড়ে একটা মাত্র দৈত্যাকৃতির মৎস । মনু তাঁর সারা জীবনে এত বড় মৎস্য কখনোই প্রত্যক্ষ করেননি । মহারাজের সাড়া পেয়ে অতিকষ্টে সেই মহাকায় মৎস্য ঘাটের কাছে এসে জল থেকে মাথা তুললো । তারপরে রাজাকে উদ্দেশ্য করে কাতরভাবে বললো, "হে রাজন, দেখুন আমার অবস্থা । এই সরোবর আমার জন্য নিতান্তই এক ক্ষুদ্র জলাশয় । আমার চলাফেরা একপ্রকার বন্ধ হয়ে গিয়েছে । খুবই স্বল্প গভীর জলে আমি সাঁতার কাটতে পারছি না, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে । আমাকে এই বিপদ থেকে আপনি রক্ষা করুন ।"

মাত্র একটি রাতের মধ্যে মৎস্যের কয়েক সহস্র গুণ বৃহৎ আকৃতি লাভ করতে দেখে রাজার মুখে আর বাক্য সরে না । তিনি বিস্ময়ে একদম হতবাক হয়ে গেলেন । এ নিশ্চিত কোনো সাধারণ মৎস্য হতে পারে না । এইরূপ অলৌকিক শক্তির অধিকারী কখনোই কোনো সাধারণ মৎস্যের হতেই পারে না । কে ইনি ? মৎস্যের রূপে আবিভূর্ত হয়েছেন, ইনি নিশ্চয়ই স্বয়ং কোনো দেবতা হবেন ।"

এইরূপ কিছুক্ষণ চিন্তা করে মহারাজ মনু সেই বিশালকায় মৎস্যের উদ্দেশ্যে বললেন, "হে মৎস্য, আপনি মৎস্যরূপে নিশ্চিত কোনো দেবতাই হবেন । আমার উপর কৃপা করুন । আমাকে বলুন আমি এখন কি করবো ?"

মৎস্য তখন বললো, "মহারাজ, আপনি আগে আমাকে কোনো এক বৃহৎ জলাশয়ে নিয়ে চলুন । আগে আমার প্রাণরক্ষা করুন, অতঃপর আমি আপনাকে সব বলবো । কিন্তু, সর্বাগ্রে আমাকে বিশাল কোনো জলাশয়ে মুক্তি দিন ।"

মৎস্যের এইরূপ কাতর বাণী শ্রবণ করে রাজা তৎক্ষণাৎ রাজকর্মচারীদের নির্দেশ দিলেন মৎসটিকে সমুদ্রে অবমুক্ত করতে । এই মৎস্যের আয়তন রাতারাতি যে হারে বেড়েই যাচ্ছে তাতে সমুদ্রই তার একমাত্র সঠিক বাসস্থান হওয়ার যোগ্য ।

[ক্রমশঃ]

Sort:  
 last month 

আসলেই তো অবাক হওয়ার মতো ঘটনা। এটা মাছ রূপী অন্য কিছু। মাছটিকে সমুদ্রে অবমুক্ত করার পর মনে হয় মাছটি সবকিছু খুলে বলবে রাজা মনুকে। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 last month 

এরকম সুন্দর গল্প পড়তে আমার খুবই ভালো লাগে। গল্পটি বেশ মজার। এ ধরনের গল্পগুলো পড়লে আরো পড়তে ইচ্ছে করে। মাছটিকে সমুদ্রে অবমুক্ত করে দেওয়ার পরে কি ঘটনা ঘটলো সেটা জানার জন্য এই গল্পের পরবর্তী পর্বটি পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

Posted using SteemPro Mobile

 last month 

শেষমেষ পুকুরেও মাছের জায়গা হলো না, এ কেমন কথা। অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বের জন্য, বড্ড কৌতূহল কাজ করছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.27
TRX 0.12
JST 0.032
BTC 66768.66
ETH 3100.41
USDT 1.00
SBD 3.68