পুরাণের গল্প : "ঋষি ও ইঁদুরের গল্প" - পর্ব ০৩
Copyright Free Image Source: Pixabay
বেড়াল হয়ে যাওয়ার পর মুষিকের মনে বড্ড অহংকার জন্ম নিলো । সে যে কিছুকাল পূর্বেও ক্ষুদ্র এক নেংটি ইঁদুর ছিল, এক কথা সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত হলো । এখন তার প্রতাপ দেখে কে । আশ্রমে আশ্রয় নেওয়া আগের বেড়ালটাও বেশ ভয়ে ভয়ে থাকে আজকাল, কেননা মূষিক থেকে বিড়াল বনে যাওয়া প্রাণীটি আকারে তার চাইতে বৃহৎ । মারামারি বাধলে তার পেরে ওঠা কঠিন ।
মূষিক তাই আজকাল বেড়াল হওয়ার পর বেজায় মজায় দিন কাটাচ্ছে । ভালো খাচ্ছে, আর বুক ফুলিয়ে নিঃশঙ্ক চিত্তে আশ্রমের যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে । কিন্তু, একদা দৈবাৎ একদিন তাল কেটে গেলো ।
বনের উত্তরদিকে ছিল শবরদের বাস । শবররা শিকারী জাতি । দেব দ্বিজে ভক্তিও অসীম তাদের । প্রত্যেক বছর বসন্ত ঋতুতে তারা মুনির আশ্রমে এসে নানান রকম ফলমূল, মধু, দুধ ও শাক-সবজি ভেট দিতো । এ বছরও তার ব্যতিক্রম হলো না । শবররা সব দল বেঁধে মুনির আশ্রমে এসে ভেট দিতে লাগলো ।
বেড়ালরুপী মূষিকও এসে গোঁফ ফুলিয়ে বসে দেখছে কান্ডটা । কত লোকজন, কত দুধ ভেট দিচ্ছে ! মূষিক দেখছে আর মনে মনে হৃষ্ট হচ্ছে । এমন সময় ঘটলো এক অঘটন । শবররা হলো শিকারী জাত । তাদের সাথে সর্বদা শিকারী কুকুর থাকে । মূষিক তো আর অত শত জানে না । বসে বসে দেখছে এমন সময় বিশাল হুমদো চেহারার এক শিকারী কুকুর তাকে করলো তাড়া ।
প্রাণভয়ে ভীত হয়ে কোনোরকমে একটা গাছের মগডালে চড়ে জীবন রক্ষা করলো সে । শবররা বিদায় যখন বিদায় নিলো তখন বনে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে । প্রায় সারাটা দিন আজ আর মূষিকের পেটে কিছুই পড়েনি । প্রাণ ভয়ে অত্যন্ত ভীত হয়ে সে সারাটা দিন গাছের মগডালে কাটিয়েছে ।
মুনির সান্ধ্য আহ্নিক হয়ে যেতেই ছুটতে ছুটতে এসে সে আবার মুনির পায়ের উপর লুটিয়ে পড়লো ।
"আবার কি হলো তোমার ?" সস্নেহে মুনি জিজ্ঞেস করলেন ।
"প্রভু, বেড়াল হয়ে তো আমার জীবন খুব সুখেই কাটছিলো । কিন্তু, আজ এক হতচ্ছাড়া কুকুর এসে দিলো সব মাটি করে । প্রভু, বেড়ালের চাইতে কুকুর অনেক বেশি শক্তিশালী । আমি আজ সারাদিন তার ভয়ে গাছের ওপর কাটিয়েছি । হে প্রভু, আপনি আমাকে কুকুর করে দিন । নতুবা, আমি সর্বক্ষণ প্রাণ ভয়ে ভীত থাকবো ।"
মুনি তখন ভেবে দেখলেন যে কাছেই শবরদের বাস । আবার যে কোনো সময়ে কুকুর এসে কোনো বিপত্তি ঘটাতে পারে । তাই তিনি আবার তাঁর কমণ্ডলু থেকে পবিত্র জল নিয়ে বেড়ালরূপী মূষিকের ওপর ছিটিয়ে দিয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করলেন ।
কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই বেড়ালটির দেহে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলো । চারটি পা অনেক লম্বা ও সরু হয়ে উঠলো, লেজটি অনেক বৃহৎ ও কুন্ডলী পাকানো হয়ে গেলো, শরীর অনেক লম্বা ও ভারী আকার ধারণ করলো, গোলাকার মাথাটি ধীরে ধীরে অগ্রভাগ সূঁচালো হয়ে প্রকান্ড একটা কুকুরের মাথায় পরিণত হলো ।
মূষিক অবশেষে বেড়াল থেকে বিশাল আকারের একটা শিকারী কুকুরে পরিণত হয়ে গেলো ।
[ক্রমশঃ]
এ পর্বটিও বেশ ভালো উপভোগ করলাম ভাই। তবে সন্দেহ লাগছে, পরবর্তীতে আবার এর কোন ক্ষতি হবে না তো। কেননা এর ভিতরে তো অহংকার জন্মেছে।
মূষিক তো দেখছি ইঁদুর থেকে বিড়াল এবং বিড়াল থেকে কুকুরে পরিণত হয়ে গেলো। এতে করে তো মূষিকের অহংকার আরও বেড়ে যাবে মনে হচ্ছে। বেশ উপভোগ করছি প্রতিটি পর্ব। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।