বাংলাদেশের মৎস্য পরিচিতি (পঞ্চম পর্ব)। ১০% লাজুক শেয়ালের জন্য।
আসসালামু-আলাইকুম।
আশা করি সবাই ভাল আছেন। বাংলাদেশের মৎস্য পরিচিতির পঞ্চম পর্ব নিয়ে আবারো হাজির হয়ে গেলাম আপনাদের সামনে। পুকুর ভরা মাছ আর গোলা ভরা ধান নিয়ে আমরা যে বাংলাদেশের গর্ব করতাম আজ তা একেবারেই ধুলিসৎ হয়ে গেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আবাসস্থল বৃদ্ধি আর ক্ষেত খামারের প্রয়োজনে প্রাকৃতিক জলাশয় গুলো বেশিরভাগই ভরাট হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে মৎস্য প্রজাতিও হারিয়েছে তার বাসস্থান। কাগজে-কলমে বলা হয়ে থাকে এদেশে মিঠাপানির মাছের সংখ্যা প্রায় আড়াইশো প্রজাতি। তবে খুঁজতে গেলে আড়াইশো সংখ্যাটার তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারবেন। আগেও বলেছি এই আড়াইশো প্রজাতির মধ্যে অনেক প্রজাতি ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আবার কিছু বিলুপ্ত হওয়ার পথে। তাই মাছগুলোর নমুনা সংগ্রহ করতে এখন রীতিমত বেগ পেতে হচ্ছে। যাই হোক আসুন তবে আজকের পর্বের মাছগুলোর সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাক।
২৯। বাচা মাছ/ ঘাইরা মাছ
পাঙ্গাস মাছের মতন দেখতে এই মাছের নাম নিয়ে কিছুটা মতভেদ আছে। কেউ কেউ এটাকে বাচা মাছ আবার কেউ কেউ এটাকে ঘাইরা মাছ বলে থাকে। আবার কারো মতে দুইটি সম্পূর্ণ আলাদা প্রজাতি। তবে এগুলো সম্পূর্ণ নদীর মাছ। মাছটি সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত আছে আর তা হচ্ছে এগুলো মানুষের বিষ্ঠা খেয়ে থাকে। যদিও এর সত্যতা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই।
৩০। টাটকানি মাছ
এই মাছের সঙ্গে বাটা মাছের প্রচুর মিল লক্ষ্য করা যায়। শুধু পার্থক্য হচ্ছে এই মাছের দেহের মাঝখানের অংশে কিছুটা লাল বর্ণের হয়ে থাকে। আর বাটা মাছের চাইতে এই মাছের স্বাদ অনেক বেশি। পুকুর এবং নদী উভয় জায়গাতেই এই মাছ পাওয়া যায়।
৩১। গুচি/গুতুম মাছ
আমাদের এলাকায় এই মাছটি গুতুম মাছ নামে পরিচিত। তবে অনেকেই এগুলোকে গুচি মাছ বলে থাকে। এই মাছগুলো দেখতে বাইম মাছের মত তবে আকৃতিতে অনেক ছোট। এই মাছ পানির তলদেশে কাদার মধ্যে বসবাস করে। পানি ছাড়াও দীর্ঘদিন এই মাছ কাঁদার মধ্যে জীবিত থাকতে সক্ষম।
৩২। গ্রাস কার্প
কার্প জাতীয় মাছ গুলোর মধ্যে গ্রাস কার্প আমাদের দেশে বহুল পরিচিত একটি মাছ। এই মাছটির উৎপত্তি আমাদের দেশে না হলেও দ্রুত বর্ধনশীল এবং লাভজনক হওয়ায় প্রায় সব জায়গাতেই চাষ করা হয়। কলাপাতা, ঘাস এবং বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদই মূলত এই মাছের প্রধান খাদ্য।
৩৩। মৃগেল
মৃগেল জলাশয়ের নিম্ন স্তরের মাছ। এই মাছগুলো খুব একটা সুস্বাদু না হলেও আকৃতিতে 30-40 কেজি পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশের সর্বত্রই এ মাছ দেখতে পাওয়া যায়।
৩৪। খরল্লা/খল্লা
অদ্ভুত চেহারার এই মাছগুলোর চোখ দুটি থাকে মাথার বাইরে। নদী এবং পুকুর উভয় জায়গাতেই এই মাছ বংশবৃদ্ধি করতে পারে। সাধারণত নদীতে এই মাছগুলোকে দলবদ্ধ ভাবে পানির উপর ভেসে থাকতে দেখা যায়। আকৃতিতে এই মাছ আধা ফুট থেকে এক ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
৩৫। মলা মাছ
এই মাছ চেনে না এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এলাকা বিশেষে এই মাছ মলা বা মওয়া নামে পরিচিত। ছোট মাছ গুলির মধ্যে এই মাছটি খুবই সুস্বাদু। এক থেকে তিন ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের রুপালি বর্ণের এই মাছগুলো ঝাক বেধে চলাফেরা করে।
আজকের মত এ পর্যন্তই। আবার কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনায় আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
Photographer | @ferdous3486 |
---|---|
Device | Samsung M21 |
Location | Tepakhola, Faridpur |
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এখন সবকিছুই আজ বিলুপ্তির পথে। এখন আর পুকুর ভরা মাছ নেই। গোলাভরা ধান দেখতে পাওয়া যায় না। বাচা মাছের নাম আজকে প্রথম শুনলাম। আমাদের অঞ্চলে ঘাইরা মাছ নামেই পরিচিত। যাই হোক বিভিন্ন জাতের মাছগুলো দেখতে পেলাম। অনেক ভালো লাগলো। ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে এবং ফটোগ্রাফি গুলো দেখে অনেক ভালো লেগেছে।
আবারো মৎস্য পরিচিতির পোস্ট দেখতে পেয়ে ভালো লাগলো ভাই। সত্যিই এখন অধিকাংশ মাছ বিপন্ন প্রজাতির হয়ে গেছে। সামনে হয়তো চাষের মাছ ছাড়া আর কোন মাছ পাওয়া যাবে না, কারনটা আমরা সবাই জানি। নদী আর খাল বিল ভরাট আর দূষনের ফলে আমরা মাছের প্রজাতিগুলো হারাতে বসেছি। ধন্যবাদ ভাই আজ আবারো কয়েকটি নতুন মাছ দেখলাম।
আমরা তো সব সময় অনেক ধরনের মাছ দেখতে পাই। কিছু কিছু মাছের নাম কখনো জানাও হয়নি। বিশেষ করে এরকম সামুদ্রিক মাছগুলো এখন খুবই কম দেখা যায়। কারণ মানুষের চারপাশে অনেক কিছুই রয়েছে। এখন তো মানুষ পুষ্টিকর খাবার খুবই কমই খায়। যেসব খাবারের মধ্যে ভেজাল থাকে মানুষরাই সেসব খাবারের পিছনে দৌড়ায়। আপনি আজকে অনেক সুন্দর সুন্দর মাছ আর মাছের বিশেষ কিছু কথা নিয়ে হাজির হলেন। এটা দেখে একটু বেশি ভালো লাগলো।
প্রতিনিয়ত যেই হারে দূষণ সৃষ্টি হচ্ছে সেই হিসেবে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, পশুপাখি সবগুলোই বিলুপ্তির পথে। আজকের যে মাছগুলো দেখালেন এর মধ্যে অনেকগুলো মাছ বিলুপ্তির পথে। মলা মাছগুলো যদিও এখন দেখা যায় তবে হয়তো বা কয়েক বছর পর এগুলোর দেখাও পাওয়া যাবে না। নদী খাল বিল কিংবা পুকুরে যেসব মাছ রয়েছে এর মধ্যে অনেক মাছই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। হয়তোবা সেসব বিষয়ে আমরা জানিও না। যাই হোক আজকের পোস্ট পড়ে খুব ভালো লাগলো।