মৌ-চাষ। ১০% লাজুক শিয়ালের জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগlast year
আসসালামু-আলাইকুম।
আশা করি সবাই ভাল আছেন। ছবি দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমার আজকের বিষয় সম্পর্কে। কয়েকদিন আগে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলাম একটি আপেল কুল বাগানে। সেটি ছিল এক বন্ধুর বন্ধুর বাগান। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাগান থেকে টাটকা আপেল কুল কেনা সেইসঙ্গে বাগানটা ঘুরে দেখা। বাগানে গিয়ে যখন পৌছালাম তখন আপেল কুলের মৌসুম চলছে। বাগানের সবগুলো গাছ ভর্তি থোকায় থোকায় কুলগুলো ঝুলে আছে। বাগানে ঢুকেই ইচ্ছেমতো পেট ভর্তি করে কুল খেয়েছিলাম। সত্যি বলতে কি কুলগুলো ছিল দারুন সুস্বাদু। খাওয়া শেষে তিন বন্ধু বাড়িতে নেয়ার জন্যেও বেশ কিছু কুল কিনেছিলাম সেখান থেকে। বাগানে ঘুরতে ঘুরতে পাশেই হঠাৎ দেখতে পেলাম সারি সারি বাক্স আকৃতির এই জিনিসগুলো। আসলে এগুলো মৌ চাষের বাক্স। কৃত্রিম উপায়ে মধু সংগ্রহের জন্য এভাবেই মৌমাছির চাষ করা হয়ে থাকে।

20230209_161133.jpg

আমরা জানি মধু এমন একটি খাবার যা খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। অসংখ্য মৌমাছি কঠোর পরিশ্রম করে হাজার হাজার ফুল থেকে সংগ্রহ করে এই মধু তার মৌচাকে এনে জমিয়ে রাখে। আর এই মৌচাক থেকেই একসময় মধু সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে কৃত্রিম উপায়েও মৌমাছি চাষ করা হয়। এর ফলে প্রায় সারা বছরই মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। বর্তমানে বাজারে মধুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় মৌচাষের এই ব্যবসা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ছবিতে যে কাঠের তৈরি বাক্স গুলো দেখতে পাচ্ছেন তার মাঝখানের ফাঁকা জায়গার মধ্যে বেশ কয়েকটি কাঠের ফালি ঝোলানো থাকে। আর এই বাক্সের দুই পাশে থাকে দুইটি ছিদ্র। যার মধ্যে দিয়ে মৌমাছি ভেতরে যাতায়াত করে। মৌমাছি সারাদিন বিভিন্ন ফুলে ফুলে ঘুরে মধু সংগ্রহ করে এই বাক্সের মধ্যে রাখা কাঠের ফালি গুলোতে বাসা বাঁধে এবং সেখানেই মধু সঞ্চয় করে। মানুষের কাজ শুধু এই বাক্স গুলো সময়মতো এমন জায়গায় স্থানান্তর করা যার আশেপাশে প্রচুর ফুলের সমারোহ আছে। বাক্সের ভেতরের চাকগুলোতে মধু ভরে উঠলে নির্দিষ্ট সময় পর পর তা থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়।

20230209_161110.jpg

20230209_161100.jpg

20230209_161037.jpg

সাধারণ মৌমাছি থেকে এই চাষ করা মৌমাছির একটি প্রধান পার্থক্য হচ্ছে এগুলো আকৃতিতে অনেক ছোট আর মোটেই বিষাক্ত না। অর্থাৎ বন্য মৌমাছি কামড়ালে যেখানে ভীষণ ব্যথা হয় আর ফুলে উঠে সেখানে এই চাষের মৌমাছি গুলো কামড়ায় না আর কামড়ালেও খুব একটা ব্যথা হয় না। মধুকে বলা হয় একটি বেহেশতি খাবার অর্থাৎ পরকালে বেহেশতেও নাকি খাবার হিসেবে মধু থাকবে। তবে সব মধু যে ভালো তা কিন্তু নয় বিষাক্ত মধুও আছে। আসলে মৌমাছি কোন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছে তার ওপর নির্ভর করে মধুর স্বাদ ও গুনগত মান। আমাদের দেশে সাধারণত সরিষা, বড়ই এবং আমের মৌসুমেই এসব ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও সুন্দরবন অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণ মধুর যোগান আসে। শোনা যায় ধুতুরা ফুল থেকেও এক ধরনের মধু সংগ্রহ করা হয় যা ভীষণ বিষাক্ত। এই মধু সামান্য পরিমাণ খেলেও হ্যালুসিলেশন বা দৃষ্টি ভ্রমের শিকার হয় মানুষ। আজকের মত এ পর্যন্তই। আবার কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনায় আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
Photographer@ferdous3486
DeviceSamsung M21
LocationGojaria, Faridpur
Sort:  

This post was selected for Curación Manual (Manual Curation)

@tipu curate

 last year 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া মধু বেহেশতি খাবার। এবং আমাদের নবীজি সাঃ এর মধু ভীষণ পছন্দের ছিল।কখনো সরাসরি এভাবে মৌ চাষ দেখা হয়নি। দেখে ভীষণ ভালো লাগলো। ইচ্ছে করছে এই বাগান থেকে ঘুরে আসি। এই মৌমাছি গুলো বিষাক্ত না হওয়ার কারণ বুঝতে পারলাম না। মৌ চাশের ব্যাপারটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর এই পোষ্টের জন্য

 last year 

আমিও আগে কখনো এভাবে কাছে থেকে মৌচাষের প্রক্রিয়াটি দেখিনি। আমার জন্যেও এটা নতুন একটা অভিজ্ঞতা ছিল। এই মৌমাছিগুলো যে একেবারে বিষাক্ত না তা না কামড়ালে ব্যাথা হয় তবে তা একেবারেই কম।

 last year 

মধু যেমন বেহেশতি খাবার তেমনি দুনিয়াতেও অনেক উপকারী একটি খাবার হিসেবে সবাই খেয়ে থাকি। মৌ চাষ নিয়ে পাঠ্য পুস্তক এ অনেক পড়েছি। তবে আপনি একদম বাস্তব কিছু নমুনা তুলে ধরেছেন যার মাধ্যমে অনেক নতুন কিছু জানতে পেরেছি। ধুতুরা ফুলের মধু খাওয়া ত তাহলে অনেক ক্ষতিকর। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 last year 

ধুতরা ফুলের মধু খুবই দামি আর বিষাক্ত। সবচেয়ে বড় কথা এই মধু খুবই দুর্লভ। শুনেছি সুন্দরবন এলাকায় এ ধরনের মধু পাওয়া যায়। যা কাওকে খাইয়ে দিলে রাতে সে ভয়ংকর সব স্বপ্ন দেখবে।

 last year 

আপনার পোস্টের মাধ্যমে মধু নিয়ে বেশ কিছু তথ্য পেলাম, যা আমার জানা ছিল না। বিশেষ করে ধুতুরা ফুলের ব্যাপারটা আমাকে একদমই অবাক করলো। সবমিলিয়ে দারুন পোস্ট ছিলো ভাই, বেশ উপভোগ করলাম।

 last year 

ধুতরা ফুলের মধু সম্পর্কে এই তথ্য একটি আর্টিকেল থেকে পাওয়া্ । লাইব্রেরীতে একটা বই পড়তে গিয়ে জেনেছিলাম এই তথ্য। পরবর্তীতে হুমায়ুন আহমেদের একটা বইতেও এই তথ্যের সত্যতা পাই।

 last year 

এক কাজে গিয়ে কিন্তু আরো একটি জিনিস উপভোগ করতে পারলেন তাহলে। আপেল বড়ই গুলো খেতে কিন্তু ভালই লাগে। তবে কখনো সরাসরি গাছ থেকে নিয়ে খাওয়া হয়নি। বাজার থেকে কিনেই খাওয়া হয়েছে। তাছাড়া আপেল বড়ই এর ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করার জন্য মৌমাছি চাষ করা হয়েছে সেটা দেখে কিন্তু বেশ ভালোই লাগছে। আসলে এটা ঠিক বলেছেন বর্তমানে কোনটা আসল মধু আর কোনটা ভেজাল যুক্ত তাই জানা নাই।

 last year 

আসল আর নকল না চেনার জন্য মধু কেনাই বাদ দিয়েছিলাম অনেক দিন যাবত। তবে এ রকম
জায়গা থেকে সরাসরি মধু সংগ্রহ করতে পারলে ভেজালের ভয় থাকেনা। ধন্যবাদ ভাই।

 last year 

আপনি খুব সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন। আসলে মৌমাছি থেকে মধু সংগ্রহ করে। কিন্তু মৌমাছি চাষ করা অনেক কষ্টের। এটি অনেক যত্ন সহকারে করতে হয়। আর মধু পুরো বিশ্বে অনেক চাহিদা। তবে এখন কৃত্রিম উপায়ে অনেক জায়গায় মধু চাষ করে থাকে। মধুর চাহিদা পুরা বিশ্বে আছে। মধুকে নিয়ে অনেকেই অনেক ভালো কথাই বলে থাকে। খুব সুন্দর করে পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।

 last year 

যত যাই হোক চাষ করা মধুর চাইতে বন্য মৌমাছির মৌচাক থেকে সংগ্রহ করা মধুর স্বাদ অনেক বেশি। তবে চাষ করা হয় বলে মধু বর্তমানে অনেক সহজলভ্য এবং ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। তা না হলে আমাদের মত মানুষের মধু চোখে দেখার সৌভাগ্য হত কিনা সন্দেহ।

Coin Marketplace

STEEM 0.31
TRX 0.11
JST 0.030
BTC 67692.01
ETH 3734.85
USDT 1.00
SBD 3.69