গহন রাত্রিকাল || 10% beneficiary @shy-fox
device: Realme 8 5G
location
কাল আমার রাত্রিকার রুটিনের ১২টা বেজেছিল। ১২টা বেজেছিল বলছি এই কারণে যে, পড়াশুনার জন্য মেডিটেশন করতে করতে ১০ টার সময়ই ঘুমিয়ে পড়েছি। মেডিটেটরদের মোলায়েম কথা আমার মধ্যে স্থিরতা আনতে না পারলেও ঘুম ঠিকই নিয়ে এসেছিল। কিংবা আমিই হয়তো খুব ক্লান্ত ছিলাম।
কখন ঘুমিয়েছে আসলে বুঝতে পারিনি। তাই রাত ১০ঃ০০ টা বলা ঠিক হবে না। কিন্তু যখন ঘুম থেকে উঠেছি তখন মধ্যরাত। বারোটা পেরিয়ে গেছে। ঘুম পুরো হয়েছে বলে যে জেগে উঠেছি এমনটা না। একটা হতচ্ছাড়া মশা হাতের তালুতে কামড় দিয়েছে, আর সেটা সহ্য না করতে পেরে আমার এই ঘুমের ব্যাঘাত।
যাই হোক, ঘুম থেকে ওঠার পরে যে খুব সুন্দর মন নিয়ে সবার সাথে কথা বলতে পেরেছি তাও না। মোটামুটি সবার সাথে এক প্রস্থ ঝগড়া করলাম কেন আমাকে কল দেয়নি, কেন ঘুম ভাংগায়নি। মানে ব্যাপারটা এমন হলো যে, ঘুমিয়েছি আমি কিন্তু দোষটা তাদের। পরে রাতের খাবার খাওয়ারো ইচ্ছা হয়নি।
সে কথা থাক। রুমে আপাতত একাই থাকি তাই সারারাত বাতি জ্বালিয়ে রাখলেও আসলে বাধা দেবার কেউ নেই। সেই সুবিধা ভোগ করে অনায়াসে রাত ৩টা পর্যন্ত লিখাপড়া করলাম। পড়ার সময় আমি সর্বদা দরজা খুলে রাখি। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সেই নিশিথ রাত্রিরে যখন আমি পড়ালেখায় মননিবেশ করছিলাম তখন মাঝে মাঝেই দূর থেকে কোন অজানা তরুণীর গলার স্বর ভেসে আসছিল। কি বলছে বোঝা যায়না। শুধু একটা সুরের মত আমার কানে দোলা দিচ্ছিল।
পড়াশুনার মাঝে এমন সুরের জন্য আমার নিচ্ছিদ্র মনোযোগ বার বারই ছিন্ন হচ্ছিল। কিন্তু উঠে গিয়ে যে দরজাটা লাগিয়ে দিব সেই ইচ্ছেটাও হচ্ছিল না। বাইরে তখন সুন্দর ঠান্ডা আবহাওয়া। দরজা খোলা রাখার প্রধান উদ্দেশ্যই হল বাইরের ঠান্ডা বাতাসের খানিকটা যেন পথভ্রষ্ট হয়ে আমার রুমে প্রবেশ করতে পারে।
এত সময় বাইরে যে দুই তিন জন মেয়েকে দেখা যাচ্ছিল এখন তাদের আর দেখা যাচ্ছেনা। তখনই বুঝলাম আসলে বেশ রাত হয়েছে। যাকে বলে গহন রাত্রিকাল। এরপর আর জেগে থাকা চলে না। তবু ভাবলাম একবার বাইরে থেকে ঘুরে আসি। দরজাটা কেন জানিনা আরো হাট করে খুলে দিলাম। এরপর ইনসোমনিয়া রোগীদের মত চলল আমার বিনিদ্র পায়চারি।
কয়েকবার মাত্র চক্কর দিয়েছি, তখন দেখলাম এক রুম থেকে দুইটা মেয়ে বের হয়ে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছে। দুইজন এভাবে ওয়াশরুমে যাওয়ার একটা গোপন রহস্য আছে। এরা ভুতে ভয় পায়। অথবা অন্যভাবে বললে এরা অন্ধকারে ভয় পায়। তাদের দেখে আমার ফার্স্ট ইয়ারের কথা মনে পরে গেল। গণরুমে থাকতাম। আমি আর আমার রুমমেট তখন বেডমেট ছিলাম। যাই হোক, সে আবার অন্ধকার / ভুতে খুব ভয় পেত। এখনো পায়। সেদিন রাত ২টায় সে আমাকে নিয়ে ওয়াশরুমে গেল। এরপর হঠাৎ লোডশেডিং! এই সময়ে ঝড়-বৃষ্টি ছাড়া কোন দিনও লোডশেডিং হয়না। কিন্তু সেদিন এসবের নাম গন্ধও ছিল না। দুইজন ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি বের হচ্ছি। দেখি বেসিনের কাছে একটা সাদা মূর্তি ব্রাশ করছে। ভুত ব্রাশ করছে ভেবে আমরা একটা চিৎকার দিয়ে গণরুমে চলে এসেছি। পরে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখেছি ওটা একটা সিনিয়র আপু ছিল।
যাই হোক, একটু পর সেই মেয়ে দুটোও অদৃশ্য হয়ে গেল। সাথে নিয়ে গেল আমার কিছু মূল্যবান অতীত। নিশীথ রজনীতে আমি আবার একা হয়ে গেলাম। আমার পাশের রুমের দুইজন খুব গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকে। কিন্তু আজ তাদের রুম থেকে ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ পাওয়া গেল না। তারা আজ গভীর ঘুমে মগ্ন, আর আমি গভীর ভাবনায়।
আমার ভাবনায় ছেদ পরল চার তলার একটি রুম দেখে। আমার মতই এই শেষ রজনীতে তারাও হঠাৎ দরজা খুলেছে । হয়ত তাদের কারণ আমার থেকে ভিন্ন। তবু ইচ্ছা হল একবার গিয়ে উঁকি দেই। অপরিচিত মানুষদের সাথে একটুখানি গল্প করতে মন্দ লাগেনা আমার। তবে সেই চেষ্টায় ক্ষান্ত দিলাম। কারণ জানি আজ কথা বললে দুই দিন পর এরা আর অপরিচিত থাকবে না।
এইসব সাত-পাচ ভাবতে ভাবতে আকাশের দিকে তাকালাম। আজ একটা তারাও নেই। ঠিক যেন তখনই উপলব্ধি করলাম আমার মন ভালো নেই। সেই গহন রাত্রিকালে দূর থেকে ভেসে আসা ঝিঝির ডাক শুনেও হৃদয়ের ভিতরে খাখা অনুভব করলাম। নিচ্ছিদ্র রজনীর মতো হঠাৎ নিচ্ছিদ্র শূন্যতা আমাকে চারদিক থেকে চেপে ধরল।
আপনার লেখার প্যাটার্নটা চমৎকার। পোষ্টটা পড়ে মুগ্ধ হলাম। কমিউনিটিতে এমন অল্প কিছু মেম্বার আছে যাদের লেখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়তে ইচ্ছা করে। চমৎকার লিখেছেন।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। এমন প্রশংসা পেয়ে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।
সম্ভবত আপনি ইউনিভার্সিটির হলের বাসিন্দা। জলের লাইফের আসলে এক অন্যরকম মজা আছে। যা পরবর্তী জীবনে এক আনন্দময় স্মৃতি হয়ে সারাজীবন সঙ্গ দেয়। আপনার লেখার হাত আসলেই চমৎকার। যদিও ইদানীং আপনার তেমন কোন পোস্ট চোখে পড়ে না। তবে আফসোস এই কমিউনিটিতে ভালো লেখার পাঠকের সংখ্যা খুব কম আছে। চালিয়ে যান, আর শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
ধন্যবাদ ভাইয়া। কমিউনিটিতে এমন লিখার পাঠকের সংখ্যা কম থাকলেও আপনাকে এই দলে সব সময় পেয়েছি। আর ঠিকই ধরেছেন ভাইয়া। ইদানিং একাডেমিক প্রেসার বেশি হয়ে গিয়েছে। তাই লিখার সময় পাইনা।
খুব সুন্দর লিখেছেন আপু। আপনার লেখার কোয়ালিটি অসাধারণ। মাঝরাতে তরুনীয় গলার স্বরের কথা শুনে ভয় পেয়ে গেছিলাম। যা আমি যা ভাবছিলাম তা না। আপনার এই লেখাগুলো চালিয়ে যান আপু। শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। আহামরি কিছু লিখিনা জানি। কিন্তু আপনাদের মত কিছু মানুষের ভালবাসা আবার লিখতে অনুপ্রেরণা জাগায়।
আপু আপনি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লেখাগুলো লেগেছেন। আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। মনে হচ্ছে যেন একটা লাইট পড়ছি তো আরেকটা লাইন পড়ার আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে। সাদা মূর্তি ভূতের কাহিনীটি বেশ ছিল।আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু। আমার ক্ষুদ্র লিখা আপনার এত ভাল লেগেছে জেনে খুব খুশি লাগছে। এইতো সার্থকতা!