"প্রতিশোধ নয়, ক্ষমাই আসল শান্তির পথ"

আমাদের জীবনটা সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, লাভ-ক্ষতির এক অদ্ভুত মিশ্রণ। চলার পথে প্রায়শই আমরা অন্যায় বা অপমানের শিকার হই, কারো কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত কষ্ট পাই। আর ঠিক তখনই মনের গভীরে জন্ম নেয় এক তীব্র যন্ত্রণা, যা অনেক সময় প্রতিশোধের এক জ্বলন্ত আকাঙ্ক্ষায় রূপ নেয়। কিন্তু একটা কঠিন সত্য হলো প্রতিশোধ কখনোই কোনো সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। এটি কেবল নতুন সমস্যার জন্ম দেয়, আর আমাদের ভেতরের শান্তিটাকে চিরতরে নষ্ট করে দেয়।

প্রতিশোধের আগুনে যখন আমরা নিজেদের জ্বালাই, তখন নিজের অজান্তেই আমরা ভেতরের শান্তিটা হারিয়ে ফেলি। ভাবুন তো, কেউ আপনাকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দিল। আপনি যদি তার বদলা নিতে চান, তবে আপনিও ঠিক সেই ভুল পথেই পা বাড়ালেন। হয়তো সাময়িক এক জয়ের অনুভূতি আসতে পারে, কিন্তু দিনশেষে আপনি হারাবেন আপনার মানবিকতা এবং মনের প্রকৃত শান্তি। কারণ প্রতিশোধে কোনো সত্যিকারের আনন্দ নেই, আছে কেবল তীব্র ঘৃণা আর অন্তহীন অশান্তি।ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, প্রতিশোধ কখনো শান্তি আনতে পারেনি। বড় বড় যুদ্ধের কথাই ধরুন এক পক্ষ অন্য পক্ষের ওপর প্রতিশোধ নিতে আক্রমণ করেছে, আর তাতে হাজার হাজার প্রাণহানি ঘটেছে। শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুটো পক্ষই। তাই প্রকৃত বুদ্ধিমান মানুষ প্রতিশোধের উন্মত্ততা ছেড়ে ক্ষমা ও সহনশীলতার পথ বেছে নেয়।

ক্ষমা করাটা মোটেও দুর্বলতা নয়; বরং এটি একজন শক্তিশালী মানুষের সবচেয়ে বড় লক্ষণ। যার হৃদয় ভালোবাসায় পূর্ণ, একমাত্র সে-ই পারে অন্যের ভুলকে উদারভাবে ক্ষমা করে দিতে। নবী–রাসুল থেকে শুরু করে বিশ্বের সব মহান ব্যক্তিরাই ক্ষমার অসাধারণ উদাহরণ রেখে গেছেন। যেমন, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর জীবনের বহু কঠিন মুহূর্তেও শত্রুদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। কারণ তিনি জানতেন, প্রতিশোধ নয়, ক্ষমা মানুষকে সত্যিকার অর্থে মহান করে তোলে।প্রতিশোধের চিন্তা মনের মধ্যে ঘৃণার বিষাক্ত বীজ বুনে দেয়। আর সেই ঘৃণার বীজ থেকে কখনো ভালো কিছু জন্মায় না। তাই কেউ যদি আপনাকে কষ্ট দেয়, তাকে প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দিন। বিশ্বাস করুন, এতে আপনার মন হালকা হবে, জীবন হবে শান্তিময়। জীবনটা খুব ছোট, এই ক্ষণস্থায়ী সময়ে ঘৃণার ভার বয়ে বেড়ানোর চেয়ে বরং ভালোবাসা আর আলো ছড়ানো অনেক বেশি সুন্দর।