এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সাক্ষী হলাম – পর্ব ২

in আমার বাংলা ব্লগ9 days ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

মানুষের জীবনে কিছু মুহূর্ত এমন থাকে, যা সময়ের সাথে মুছে যায় না বরং আরও স্পষ্ট হয়ে ফিরে আসে। দিনের আলো, বাতাসের গতি, আশপাশের মানুষের মুখ সব যেন জমে যায় সেই এক ঘটনার কাছে। ঠিক তেমনই এক ঘটনা আমার জীবনে গভীর ছাপ ফেলেছিল প্রায় এক বছর আগে। সিরাজগঞ্জ শহরের ব্যস্ত মুজিব সড়কে দাঁড়িয়ে আমি এমন একটি দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলাম, যার স্মৃতি আজও আমাকে আলোড়িত করে। এই চার পর্বের সিরিজে আমি সেই দিনের অভিজ্ঞতাই তুলে ধরব ঠিক যেমনটি দেখেছিলাম, যেমনটি অনুভব করেছিলাম, এবং যেমনটি আমাকে বদলে দিয়েছিল ভিতর থেকে।

এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সাক্ষী হলাম – পর্ব ১

1000120847.png

Generated by AI

দুর্ঘটনার পরের মুহূর্তগুলো ছিল বিভ্রান্তিকর। যেন পুরো মুজিব সড়ক এক অদ্ভুত নীরবতায় ঢেকে গেল কোলাহল থেমে গিয়ে তার জায়গায় জন্ম নিল উৎকণ্ঠা আর আতঙ্ক। আমি তখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী করব। পা দুটো যেন মাটিতে গেঁথে গিয়েছিল। চোখের সামনে পড়ে থাকা বৃদ্ধ মানুষটিকে দেখেই বুকের ভেতর অজানা এক ভয় জমে উঠছিল।কিছু সেকেন্ড পর আশপাশের মানুষজন দৌড়ে আসতে শুরু করল। কেউ বলছিল, চাচা, কিছু শুনতে পাচ্ছেন? কেউ আবার চিৎকার করে বলছিল,
অ্যাম্বুলেন্স ডাকো! তাড়াতাড়ি!বৃদ্ধ মানুষটি তখনো নিথর পড়ে আছেন। তাঁর চোখ আধখোলা, মুখে ব্যথার স্পষ্ট ছাপ। কপাল আর হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। সাইকেলটি পাশেই উল্টে পড়ে আছে চাকার ঘূর্ণন ধীরে ধীরে থেমে যাচ্ছে, ঠিক যেমন থেমে যাচ্ছিল আমার ভেতরের সাহসও।

মোটরসাইকেল চালকটি তখন রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে। বয়স খুব বেশি না হয়তো বিশ-পঁচিশ বছরের যুবক। মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, চোখে আতঙ্ক। সে বারবার বলছিল,ভাই, আমার ভুল হয়ে গেছে… আমি বুঝতে পারিনি…কিন্তু চারপাশের মানুষের রাগ যেন তার কথা ঢেকে দিচ্ছিল। কেউ তাকে ধমক দিচ্ছে, কেউ বলছে,এত জোরে বাইক চালাও কেন?লাইসেন্স আছে তো? আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম। নিজের অজান্তেই মনে হচ্ছিল কিছু একটা করা দরকার। একজন মাঝবয়সী লোক বৃদ্ধের মাথার নিচে নিজের গামছা গুটিয়ে দিলেন, যেন মাথাটা একটু উঁচু থাকে। আরেকজন পানি এনে মুখে ছিটাতে চাইলেন, কিন্তু একজন বুদ্ধিমান মানুষ তাকে থামিয়ে দিলেন,
না না, মাথায় আঘাত লাগলে পানি দেওয়া ঠিক না।এই কথাটা শুনে বুঝলামএই ভিড়ের মধ্যেও মানবিকতা আর সচেতনতা এখনো আছে। কেউ মোবাইল ফোন বের করে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে কল দিচ্ছিল, কেউ ট্রাফিক সামলানোর চেষ্টা করছিল যেন আর কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।

আমি বৃদ্ধের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। মনে হচ্ছিল তিনি হয়তো কারও বাবা, কারও দাদা। হয়তো বাজার করতে বের হয়েছিলেন, কিংবা মসজিদে যাওয়ার পথে ছিলেন। তাঁর চোখের সেই অসহায় চাহনি আমাকে ভেতর থেকে কাঁপিয়ে দিচ্ছিল। জীবনের শেষ বিকেল কি এভাবেই আসে?কিছুক্ষণের মধ্যেই দূর থেকে অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ ভেসে এলো। শব্দটা যেন সবার ভেতর একটু আশা জাগিয়ে তুলল। মানুষজন রাস্তা ছেড়ে দিতে শুরু করল। আমি তখনো দাঁড়িয়ে আছি মাথার ভেতর একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, একটা ছোট অসতর্কতা কীভাবে পুরো একটা জীবনকে বদলে দিতে পারে?

সেদিন বুঝেছিলাম দুর্ঘটনা শুধু একজন মানুষকে আঘাত করে না, সে তার চারপাশের প্রত্যেক সাক্ষীকেও আহত করে যায়।

(চলবে…)


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Posted using SteemX

Sort:  
 9 days ago 
 9 days ago 

Daily Tasks

Comments Link :-

https://x.com/i/status/1999936823972548890

Ss

1000123945.jpg

🎉 Congratulations!

Your post has been upvoted by the SteemX Team! 🚀

SteemX is a modern, user-friendly and powerful platform built for the Steem community.

🔗 Visit us: www.steemx.org

✅ Support our work — Vote for our witness: bountyking5

banner.jpg