শৈশব স্মৃতি-ছোটবেলায় বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করার মজার কিছু স্মৃতি||

in আমার বাংলা ব্লগ13 days ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। শৈশব স্মৃতি নিয়ে একটি পোস্ট আজকে আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো। শৈশবের প্রত্যেকটি স্মৃতি যেন অনেক বেশি আনন্দের। আর শৈশবের সেই দিনগুলো হয়তো ফিরে পাবো না। তবে আনন্দগুলো এখনো মনের মাঝে রয়েই গেছে। তাই তো ছোটবেলায় বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করার কিছু মজার স্মৃতি সবার মাঝে তুলে ধরতে যাচ্ছি। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।


ছোটবেলায় বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করার মজার কিছু স্মৃতি:

kids-4392272_1280.jpg

Source


শৈশব স্মৃতিগুলো মনের মাঝে সব সময় ভালো লাগার সৃষ্টি করে। শৈশবের কথাগুলো এখনো মনে পড়ে। বর্তমানে তাপমাত্রায় এতটাই বেড়ে গেছে যে সবাই বৃষ্টির প্রার্থনা করছে। আজকে যখন গ্রামের বাসা থেকে ফিরছিলাম তখন দেখলাম ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা সবাই দল বেঁধে এবাড়ি ওবাড়ি গিয়ে গান গাইছে আর চাল সংগ্রহ করছে। তারা নাকি পিকনিক করবে। তাদের এই আনন্দ দেখে নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। শরীরে কাদা মেখে প্রার্থনা করতাম আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দেরে তুই। এই কথাগুলো এখনো মনে পড়ে। আমার এখনো সেই দিনটির কথা মনে আছে। তখন আমি খুব সম্ভবত পঞ্চম শ্রেণীতে পড়তাম। যেহেতু মাঝে মাঝে গ্রামের বাসায় যেতাম তাই সেই সুন্দর মুহূর্তের সাক্ষী হতে পেরেছিলাম।


আবহাওয়ার পরিবর্তন আমাদের সবাইকেই এখন যেমন কষ্ট দিচ্ছে তেমনি সেই সময়টাতেও আবহাওয়া সবাইকে কষ্ট দিচ্ছিল। গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছিলো কৃষকরা। কারণ তাদের ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছিল। অনা বৃষ্টির সেই সময়টাতে কৃষকের হৃদয় যেন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। আর সেই কৃষকের কান্না ও হৃদয়ের হাহাকার দেখে খুবই খারাপ লাগতো। আমি তখন অনেক ছোট ছিলাম। তাই সেভাবে কিছুই বুঝতাম না। কিন্তু যারা আমাদের থেকে বড় ছিল তারা গায়ে মাটি মেখে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেছিল। আল্লাহ মেঘ দে পানি দে এসব বলে বলে ছুটে চলে যেত। সেই সময় গুলোর কথা এখনো মনে পরে।


আমার এখনো সেই দিনটির কথা মনে পড়ে। সেই দিনটি ছিল শুক্রবার। শুক্রবারের সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে দেখি আমাদের গ্রামের কিছু ছেলে মেয়ে সবকিছুর আয়োজন করছে। তারা নাকি বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করবে। বৃষ্টির প্রার্থনা করার জন্য বিভিন্ন রকমের সাজ সেজেছে তারা। আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে গান গাইছে এবং কাদামাটিতে শরীর মাখামাখি করেছে। তখন সেরকম কিছুই বুঝতাম না। কিন্তু সেই মুহূর্তগুলোতে কিছু বুঝতে না পারলেও এখন বুঝতে পারি মানুষ কতটা অসহায় হলে এভাবে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে। এরপর সবাই মিলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গান গাওয়ার পর গ্রামের অনেকেই চাল দিয়ে যেত। সেই চালগুলো একত্র করে সবাই মিলে পিকনিক করতাম। ছোটদের যখন সবকিছুই করা শেষ হয়ে যেত তখন শুরু করতো বড়রা। ছোট থেকে বড় সবাই বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করত। মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে দৃষ্টির প্রার্থনা করতো। বাড়িতে বাড়িতে মহিলারা একত্রিত হয়ে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতো।


সেই সময়টাতে হয়তো গরমের কিংবা অনাবৃষ্টির হাহাকার বুঝতে পারতাম না। কিন্তু সেই আনন্দগুলো এখনো মনে পড়ে। যেহেতু ছোট ছিলাম তাই সেভাবে কিছুই বুঝতাম না। তবে সেদিন কিন্তু বৃষ্টি এসেছিল। হঠাৎ করে বৃষ্টির আগমনে সবার মন আনন্দের জোয়ারে ভেসেছিল। জানিনা বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করার এই গ্রামীণ প্রচলন আপনাদের অঞ্চলেও আছে কিনা। তবে ছোটবেলায় এই দৃশ্যগুলো বেশ কয়েকবার দেখেছি। বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই হারিয়ে গেছে। এখন আর সেই আনন্দ নেই। এখন আর সেই আয়োজন নেই। যে যার মত সময় কাটায়। দল বেঁধে ছুটে চলা কিংবা দল বেঁধে সেই বৃষ্টির প্রার্থনা করা এখন আর দেখা যায় না। হয়তো খুবই অল্প পরিসরে দেখা যায়।


আমার মাঝে মাঝে এখনো মনে পড়ে ছোটবেলার সেই দিনগুলোর কথা। আবারো যদি শৈশবের সেই দিনগুলোর মাঝে হারিয়ে যেতে পারতাম তাহলে জীবনটা হয়তো আরো বেশি সুন্দর হতো। হারিয়ে ফেলা দিনগুলোর কথা বড্ড বেশি মনে পড়ে। মনে পড়ে সেই সুন্দর মুহূর্তগুলো। এই অনাবৃষ্টির সময়ে চারপাশে যখন বৃষ্টির জন্য হাহাকার তখন বারবার সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন আবারও সবাই মিলে বেরিয়ে পড়ি বৃষ্টির প্রার্থনা করতে। তখন সেভাবে হয়তো আমরা কিছু বুঝতাম না। তবে আনন্দ অনেক করেছি। নাচ, গান, কাদামাটিতে মাখামাখি সব কিছুই আজ অতীত। সময়ের সাথে সাথে সবকিছু হারিয়ে গেছে। স্মৃতিগুলো এখনো মনের কোণে রয়েই গেছে। তাই তো আমার এই শৈশব স্মৃতি সবার মাঝে তুলে ধরলাম। আশা করছি সবার ভালো লাগবে। আর কারা কারা ছোটবেলায় এরকম করতেন অবশ্যই জানাবেন।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  
 13 days ago 

আসলেই গরমে সবাই অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছে, সবার মনে একটাই আকতি আল্লাহ বৃষ্টি যেন হয়।তবে আমিও শুনেছি গ্রামে নাকি এমন করে ঘরে ঘরে চাল তুলে খিচুরি রান্না করে তারপর গায়ে কাঁদা মেখে বৃষ্টি র জন্য প্রার্থনা করে যদি এটা কুসংস্কার তবে সবাই মিলে বেশ মজা হয়।ভালো লাগলো আপনার শৈশব স্মৃতি পড়ে। ধন্যবাদ

 12 days ago 

গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ। ছোটবেলার কমবেশি সবারই স্মৃতিচারণ রয়েছে এবং সেগুলো মনে হলে মনে হয় যদি আবারও ফিরে পেতাম সেই দিনগুলো।আপনার ছোটবেলার বৃষ্টির জন্য প্রার্থনার কথা মনে পড়ে গেছে। মনে পড়ছে যদি আবারও বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতে পারতেন সেই ছোটবেলায় গিয়ে কতোই না মজা হতো।ধন্যবাদ আপু সুন্দর পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।

 12 days ago 

আসলে কিছুদিন যাবত আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এর জন্য আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে চাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তার রহমতের বৃষ্টি দিয়ে আমাদের এই অতিষ্ঠ থেকে বাঁচাতে পারে। আপনার এই মজার স্মৃতিগুলো পড়ে আমার অনেক ভালো লাগলো। আসলে ছোটবেলায় যখন এমন হত তখন দেখতাম গ্রামের অনেক লোক একসাথে হয়ে নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাতেন। আপনার এই পোস্টটি দেখে সত্যি অনেক ভালো লাগলো

 12 days ago 

ছোটকালের স্মৃতি গুলো মনে পড়লে এখনো অন্যরকম লাগে। ছোটকালে আমরাও এরকম বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতাম। যদিও আমরা দেখেছি মসজিদে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতে। আর আপনারা গায়ে কাদা মেখে সবাই বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতেছেন। তবে বর্তমান সময়ে গরম এত বেশি সবাই গরমের কারণ অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। আর আমরা নিজ নিজ জায়গা থেকে সবাই দোয়া করা দরকার বৃষ্টির জন্য। অনেক সুন্দর করে পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।

 12 days ago 

গায়ে এইরকম কাঁদা মেখে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করা কখনো দেখিনি আমি। আপনার পোস্টেই প্রথম পড়লাম। সত্যি একটা বিষয় ছোটবেলা এসব তো আমরা বুঝতাম না খুব একটা টেনশনও কাজ করত না। কিন্তু এখন এই অনাবৃষ্টি অতিরিক্ত তাপমাত্রা এসব দেখলে একটা টেনশন একটা চিন্তা তৈরি হয়েই যায়। ছোটবেলা টাই সবচাইতে বেশি ভালো ছিল।

 9 days ago 

অনাবৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে কৃষকেরা। আবার অতিবৃষ্টির কারণেও কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। আসলে যারা কৃষিকাজ করে তাদের বাধা-বিপত্তির কোনো শেষ নেই। তবুও এতো পরিশ্রম করে ফসল ফলানোর পরেও তারা ন্যায্য মূল্য পায় না। এটা সত্যিই দুঃখের বিষয়। যাইহোক বিভিন্ন কারণে আমরা কিন্তু ছোটবেলার স্মৃতিতে হারিয়ে যাই। আপনার শৈশবের এই মজার স্মৃতি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো আপু। তবে শরীরে কাদা মেখে গান গেয়ে গেয়ে এভাবে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতে আমি কখনো দেখিনি। তবে হ্যাঁ আমাদের এখানে অনাবৃষ্টির সময় মসজিদে হুজুরেরা বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে থাকে। যাইহোক এই তীব্র গরম থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই উপায়, সেটা হচ্ছে বৃষ্টি। আশা করি কয়েকদিনের মধ্যেই ঝুম বৃষ্টি হবে। যাইহোক এতো মজার স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.13
JST 0.033
BTC 62916.93
ETH 3028.97
USDT 1.00
SBD 3.67