ক্যামেরাবন্দী করেছি গ্রামের বাড়ির কিছু সুখ|| ফটোগ্রাফি পোস্ট
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
আপনারা তো জানেনই কালীপূজোর ছুটিতে গিয়েছিলাম দেশের বাড়ি অর্থাৎ আমার গ্রামের বাড়ি। গ্রামেও এখন হেমন্তের ফিসফিস। ওখানে আমার শোবারঘর পূর্বদিকে হওয়ার কারণে সকালের রোদ রোজই এসে শুয়ে থাকত মুখের ওপর। জানালার সামনে ধানজমি, রোজ সকালে শিশির স্নান সেরে কিসের অপেক্ষা করে আমি বুঝে উঠতে পারি না৷ একদিন ভাবলাম সকালেই ওদের কিছু ছবি তুলি। ব্যস চলে গেলাম।
ছবি তোলার সময় আমি যতখানি ঝুঁকেছি প্রকৃতিও ছাপ ফেলেছে মুখের ওপর৷ আলতো করে স্নিগ্ধতার অফুরান আলোয় হাসি মুখে বিলিয়ে দিয়েছে সর্বস্ব আহ্লাদ৷ পা দু'টো কিভাবে যেন ভিজে যায়, অথচ এই পথেই শুকনো খটখটে মোরামে পা ফেলে কত যাতায়াত করেছি, কলকে গাছের তলায় হোঁচট খেতে গিয়ে সামলে উঠেছি, কখনও ভেবে দেখিনি এই মুখের সামনেই ধানের দানা ঝুলে আছে থোকা হয়ে, আর তারই সামনে কত বাহার, ফুল ফল...
এই সবই ক্যামেরা বন্দী করেছি৷ আসুন দেখাই সেসব।
ফটোগ্রাফি -১
ছবির নাম-
শিশির ধানের সকাল
বিবরণ -
এই সব ছবির আলাদা করে বিবরণ হয় কি? কি জানি৷ ধান আমাদের প্রধান খাদ্য৷ তাই আলাদা করে এই ছবির বিবরণ বা পরিচয় দেওয়ার মতো কিছু নেই৷ তবে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো শিশিরে ভেজা ধানগাছ।
আমার দু'কথা-
যে বেলা ফুরিয়ে আসে তার দিকে মুখ রেখে বলি, মৃত্যুর আগে আমার হাত ধরো রোমার ধানী বর্ণের প্রেমিকার কথা লেখার সময় কখনও শেষবার বলে কিছু শব্দ ব্যবহার কর না৷ জানবে শেষ বলে কিছু নেই সবই শুরু, একের পর এক...
ফটোগ্রাফি -২
ছবির নাম-
আরক্তমুখ
বিবরণ-
আমাদের গ্রামে এই ফুলকে কেঁউ বলে৷ অবহেলাতেই ফুটে থাকে। আলাদা কোন যত্ন লাগে না৷ এই সব ফুল বা গাছ দেখলে নিজেকে বড় আগাছা মনে হয়। মনে হয় ভদ্রলোকের সাম্রাজ্যে আমাদের মতো মনুষ্যের জঙ্গল ক্ষমতা দেখিয়ে মালিকদের কোণঠাসা করছি অনায়াসে৷
আমার দু'কথা-
এসো, মুখোমুখি বসে বিনিময় করি লাল রঙের জিনিসপত্র। তোমার যা আছে তা তোমারই থাক শুধু আমারটাও রেখে দিও। এই দাবী যে করব তার জন্য কোন সূর্যোদয় হয়েছিল কি? কি জানি। অমাবস্যার রাতে কিছু ফানুস উড়িয়েছিলাম সকালে সেইগুলোই পাখির মৃতদেহের ন্যায় পড়ে আছে রাস্তায়। তবে বলো সুর্যোদয় আসলে কি শেখায়?
ফটোগ্রাফি -৩
ছবির নাম-
প্রেয়সী
বিবরণ -
জানি না। এই ফুলের নাম জানার চেষ্টাই করিনি একদিনও৷ আচ্ছা বলুন সব জানিতে হবে এমন কথা কে বলেছে? কেউ নামহীন থেকে গেলে কি খুব বড় অপরাধ হয়? তা তো নয়। আলো হয়ে ফুটে থাকে এই যথেষ্ট সুখ।
আমার দু'কথা-
হাতগুলো ফুলের মতো ভেবে তুমি কার্তিকের প্রদীপ তুলে দিয়েছিলে। বলেছিলে পৃথিবীর সমস্ত উন্নয়নের নামই প্রেম আর অবনতির নাম গহ্বর। সেই থেকে আমি রাতের বেলায় আলো খুঁজি না৷ চেয়েছি বিপরীত জীবনের পুঁতিতে সেজে উঠুক রাজবাড়ির তোরণ।
ফটোগ্রাফি -৪
ছবির নাম-
কমলা সুন্দরী
বিবরণ-
লেবু দেখেই তো বুঝতে পারছেন। এটা কমলালেবু। পাকেনি এখনও৷ পেলে গেলে রঙ বদলায়৷ তবে মারাত্মক টক৷ খাওয়াই যায় না৷ তবু কি ভেবে যে লাগানো হয়েছিল জানি না। কমলালেবু এরম টক হয় বলে আমি গতবছর একটা মালটা গাছ লাগিয়েছিলাম। মাল্টা মুসম্বীর মতো দেখতে কিন্তু প্রচন্ড মিষ্টি হয়। একটা মুসম্বী গাছও আছে সেইসব লেবুও ভীষণ টক। এতো লেবুগাছ দেখে ভাবি বাড়ি তো বাড়ি নয় যেন লেবুর বাহার৷
আমার দু' কথা-
দু'কথা বলতে বলতে ফোন আসে৷ কথা হয়। কথায় কোন টক স্বাদ নেই, তেতোর বাহার। আমি ভাবি লেবুর ওপরের অংশও কখনও কখনও তেতো হয়৷ অথচ লেবুফুলের মত নরম সম্পর্কগুলোয় সুর্যোদয় হওয়ার আগে রাত্রি ঘনই থাকে৷ একথা আমিই বলি, সে জানে না। বোঝেও না।
ফটোগ্রাফি -৫
ছবির নাম-
রাণী
বিবরণ-
সন্ধ্যামণি ফুলের আমি আর আলাদা করে কি বিবরণ দিই বলুন? আপনারা আমার থেকে অনেক বেশি জানেন। এই ফুল যত্নহীন হয়েও কী সুন্দর ফুটে থাকে৷ জীবন আসলে এরমই। যেটা আলোকিত হওয়ার তা হবেই৷
আমার দু'কথা-
কথায় কথায় অবহেলার কথা এলে ভাবি কবিদের জীবনে একটাই প্রেম থাকা উচিত তা হল শব্দ। ঠিক ব্রহ্মের মতো যা আমৃত্যু রন্ধ্রে বইবে। এই সব শোনার পর তোমার অভিমান দ্বিগুণ হতে পারে। সাথে মনে হতেই পারে ভালোবাসা কন্টকময়। আসলে ভালোবাসার পথ কঠিন। ছাপোষা মানুষের গতিপথ দাবী করলে ছাপোষা মানুষই পারবে পূরণ করতে৷
ফটোগ্রাফি -৬
ছবির নাম-
একাকীত্ব
বিবরণ-
ওই ধানের ছবি তুলতে গিয়ে দেখলাম এরা প্রত্যেকেই নিজের মত স্বাবলম্বী। নিজেদের রূপে নিজেরাই বিদ্যমান৷ এই সব গাছালি দেখে অনেক কিছুই শেখা যায়। জীবন যদি সত্যিই এমন সাবলম্বী হত তবে পৃথিবী অন্যরকম দেখাত হয়তো।
আমার দু'কথা-
আপাতত বেশিকিছু বলার নেই৷ নদীর ওই পারের জল ফুঁসছে তাই তাপমাত্রা ও উষ্ণ বাতাস ছুটে আসছে। তারা চাইছে গলা টিপে ধরে আরও কিচ্ছু বদহজম উগরে দিতে৷ কিন্তু সে সব হবার নয় কারণ রাত বাড়লে আজকাল বড্ড ঘুম পায়। গভীর ঘুম।
আজকের ফটোগ্রাফির গল্প আসর এখানেই শেষ করছি। আবার আগামীকাল আসব। ততক্ষণ আপনারা ভালো থাকুন।
টা টা
পোস্টের ধরণ | ফটোগ্রাফি পোস্ট |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ ৫৪ |
লোকেশন | পশ্চিম মেদিনীপুর, ভারতবর্ষ |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
খুব সুন্দর হয় আজকে আপনি পোস্ট সাজিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আপনার চমৎকার এই পোস্ট সাজানো দেখে আমি মন্ত্রী হয়েছি। বিশেষ করে ফুলগুলোর চিত্র অনেক সুন্দর হয়েছে। এমন মনোমুগ্ধকর পোস্টগুলো আমি খুব ভালোবাসি।
ভালো লাগে এভাবে ফটোগ্রাফি পোস্ট সাজাতে৷ কারণ আমার কাছে সব ছবিই কথাবলে যেন।
আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম৷ ভালো থাকবেন৷ ধন্যবাদ ।
https://x.com/neelamsama92551/status/1856065405724381644?t=GliVb0MSZHTB1oXOH2N2QA&s=19
গ্রামের পরিবেশ মানেই সুখের কিন্তু মানুষ তা অপব্যবহার করে সুন্দর পরিবেশ অনেক সময় নষ্ট করে।যাইহোক গ্রামে এখন বেশ শীত পড়ছে ও শিশির জমা শুরু করেছে।দিদি তোমার গ্রামের দারুণ ও মনমুগ্ধকর কিছু ফটোগ্রাফি দেখলাম।খুবই ভালো লেগেছে ফটোগ্রাফির সঙ্গে সুন্দর বর্ননা পড়তে।ধন্যবাদ তোমাকে।
আমার কাছে তো এগুলো শুধু ছবি নয় গ্রাম থেকে দূরে থাকার সময় এইগুলো দেখেই ভালো থাকি। শহরে এমন দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায় না শুধু কংক্রিটের জঙ্গলে ঠাসা। সেখানে আর প্রাণ কোথায় আছে বলো।
হুম, একেবারেই ঠিক।
আহ আপু কী বললেন গ্রামের বাড়ির সুখ। এগুলো শুধু সুখ না আপু প্রশান্তি বলা যায়। এই দৃশ্য এই ফটোগ্রাফি গুলো দেখলে অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে এটা বলে বোঝানো যাবে না। চমৎকার ছিল আপনার ফটোগ্রাফি গুলো আপু। ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।।
একদমই তাই। গ্রামের বাড়ি নিজের বাড়ি প্রশান্তির যেন শেষ নেই। শীতের দিনে তো আরোই মজা হয়। অনেকদিন হলো ডিসেম্বরে বাড়ি যেতে পারি না। সেই সময় আরোই মজার।
গ্রাম বাংলা থেকে ধারণ করা অনেক সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপু। সত্য কথা বলতে গ্রাম বাংলার মুহূর্ত গুলো দেখলে যেন মনটা ভরে যায়। বিশেষ করে ধান ক্ষেতের ফটোগ্রাফি গুলো আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।
হ্যাঁ পুরো ধান ক্ষেতের ছবিটা নিলে আরো ভালো লাগতো। সেই ছবিও রয়েছে যদিও পরে কখনো শেয়ার করব। কারণ এই সময়টা কেউ কেউ ধান কেটে নিয়েছে কারোর ধান পাকা কারোর আবার আধপাকা। সেও দারুণ দৃশ্য।
আপনার পোস্টের লেখাগুলো পড়তে আমার সব সময় খুব ভালো লাগে। চোখের সামনে আপনার পোস্ট পড়লে আমি সব সময় সেগুলো পড়ার চেষ্টা করি। আজকের ফটোগ্রাফি পোস্টে খুব সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি এবং সেই সাথে খুব সুন্দর কিছু কথা লিখেছেন। ফটোগ্রাফি গুলো বেশ দারুন ছিল। শেষের ফটোগ্রাফি টা অনেক বেশি ভালো লেগেছে আমার কাছে।
একজন কবি বা লেখকের লেখা তখনই সার্থকতা পায় যখন তার আপনার মত পাঠক জোটে। আমার কাজ তো লেখা, সব সময় চেষ্টা করি আরো উন্নত গদ্য কিভাবে লিখতে পারি যা যেকোনো সাধারণ মানুষ বা কোন সাহিত্য প্রেমী পুরোটা শেষ করা পর্যন্ত বসে থাকতে পারে। আপনার ভালো লাগাই আমার প্রাপ্তি।
লেখিকার লেখনীতে জীবন্ত হয়ে উঠলো ফটোগ্রাফি পোস্ট। কি সুন্দর করে প্রতিটি ফটোগ্রাফির নাম দিয়ে লিখেছেন। বেশ ভালো লাগলো পড়তে।তাই বলে ফটোগ্রাফিগুলো লেখার কাছে মলিন হয়ে যায়নি। বেশ সুন্দর হয়েছে প্রতিটি ফটোগ্রাফি। তবে একাকীত্ব ও প্রেয়সী ফটোগ্রাফিটি বেশি সুন্দর লেগেছে আমার কাছে।
জানেন আপু এই ফটোগ্রাফি পোস্ট করতে আমার সবথেকে ভালো লাগে। কারণ প্রতিটা ছবি যেন কথা বলে। তাদের একেকটা অন্তর্নিহিত অর্থ থাকে আমি সেগুলোই বার করার চেষ্টা করি। ভালো থাকবেন আপু।