কেন তোমার আবেগপ্রবণ হওয়া কোনো দুর্বলতা নয়

হ্যালো বন্ধুরা, আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আমি সাহারিয়ার কবির জয়। আজকে আমি আপনাদের সাথে জেনারেল রাইটিং পোস্ট শেয়ার করবো।


তোমার কি মনে হয় তুমি একটু বেশি আবেগপ্রবণ। কেউ একটু জোরে কথা বললে চোখে জল চলে আসে। নাকি বন্ধুদের গ্যাদারিং এ বেশিক্ষণ থাকলে মনে হয় ব্রেনটা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। ছোটবেলা থেকে হয়তো হাজার বার শুনেছো তুমি বড্ড সেন্সিটিভ। এত গায়ে মাখো কেন। বা একটু স্ট্রং হতে শেখো। তোমার কান্নার জন্য হয়তো তুমি বহুবার সরি বলেছো। কিন্তু আর না। একটা বিশাল ভুল ধারণা আজকেই ভাঙ্গা দরকার। তোমার এই সেন্সিটিভ হওয়াটা কোন দুর্বলতা না। এটা আসলে তোমার বায়োলজিক্যাল সুপারপাওয়ার।

1000077840.jpg
source

তাহলে চলো আর দেরি না করে সোজা পয়েন্টে আসা যাক এবং দেখে নেওয়া যাক কেন সবাই এই ব্যাপারটা এতদিন ভুল জানতো।

তোমার ব্রেন হাই রেজলিউশনে অপারেট করে। তুমি নিজেকে অন্যদের সাথে মেলাতে গিয়ে সবসময় কনফিউজড হয়ে যাও তাই না। কেন ওরা এত চিল থাকে। আর তুমি কেন সবকিছু নিয়ে এত ভাবো। ব্যাপারটা আসলে সফটওয়্যারের না হার্ডওয়ারের।


তোমার কি করা উচিত?

সহজ করে ভাবো। মনে করো মানুষের ব্রেন একটা ভিডিও ক্যামেরার মতো। পৃথিবীর 80% মানুষের ব্রেন ভিডিও রেকর্ড করে স্ট্যান্ডার্ড ডেফিনেশনে। ধরা যাক 720 পি তে। এটা বেশ ভালো কাজ চলে যায় আর মেমোরি কার্ডও ফুরায় না। কিন্তু তোমার ব্রেন। বস তুমি রেকর্ড করছো পুরো এইট কে রেজলিউশনে। নিউরোসাইন্স বলছে তোমার ব্রেনে এমন তিনটে স্পেসিফিক হার্ডওয়ার আপগ্রেডস আছে যা অন্যদের নেই। আর ঠিক এই কারণেই তোমার লাইফটা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি ইন্টেন্স বা গভীর মনে হয়। চলো দেখে নিই সেই আপগ্রেডস গুলো ঠিক কি।

  1. বেশিরভাগ মানুষের ব্রেনে একটা অটোমেটিক ফিল্টার থাকে। এটা অপ্রয়োজনীয় শব্দ, দৃশ্য বা ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ কে ইগনোর করে যাতে এনার্জি বাঁচে। তারা যখন ক্যাফেতে বসে তারা শুধু কফি আর বন্ধুর কথাই খেয়াল করে। কিন্তু তোমার ব্রেন কিছুই বাদ দেয় না। পাশের টেবিলের ফিসফাস, এসির ভনভন আওয়াজ, চেয়ারের টেক্সচার, ওয়েটারের গলার স্বর সবকিছু একসাথে প্রসেস করে। অনেকে এটাকে বলে মনোযোগের অভাব। কিন্তু সাইন্স এটাকে বলে লো ল্যাটেন ইনহিবিশন। এটা শুনতে সমস্যার মতো মনে হতে পারে। কারণ এতে তুমি দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ো। কিন্তু ঠিক এই কারণেই তুমি এমন সব ডিটেইলস, প্যাটারনস আর সৌন্দর্য দেখতে পাও যা বাকিরা মিস করে যায়। তুমি যখন গান শোনো বা কোন সিনারি দেখো তুমি সেটা অন্যদের চেয়ে 10 গুণ বেশি ফিল করো। তাই এটা কোন বাগ না এটা একটা হাই এন্ড ফিচার।

  2. তোমার কি কখনো এমন হয়েছে যে বন্ধু কষ্টে আছে আর তুমি তার চেয়েও বেশি কষ্ট পাচ্ছ। মনে হচ্ছে বুকের ভেতরটা ফিজিক্যালি ব্যথা করছে। এটা তোমার কল্পনার কোন নাটক না। আমাদের ব্রেনে মিরার নিউরনস নামে কিছু সেল থাকে যা আমাদের এম্প্যাথি বা সহানুভূতি যোগায়। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এটা ঠিকঠাক কাজ করে। কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে এই নিউরনগুলো হাইপারঅক্টিভ। তোমার ব্রেন আক্ষরিক অর্থেই অন্যের ইমোশনাল স্টেটকে সিমুলেট বা কপি করে। তুমি একটা ইমোশনাল স্পঞ্জের মতো যে চারপাশে সবার ফিলিংস শুষে নেয়। পৃথিবীটা যখন কষ্টে থাকে তোমার মনে হয় তুমি নিজেই সেই কষ্টের মধ্যে আছো। তাই তোমাকে প্রায়ই একা থাকতে হয় রিচার্জ হওয়ার জন্য। এটা স্বার্থপরতা না এটা সারভাইভাল।

  3. কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তুমি কি অনেক সময় নাও। হয়তো বন্ধুরা তোমাকে খোঁচায় এত কি ভাবিস। তুমি হয়তো ভাবো তুমি স্লো। কিন্তু আসল ঘটনা হলো তুমি স্লো না তুমি থরো। সাইন্স বলছে এটাকে ডেপথ অফ প্রসেসিং। বাকিরা যখন শ্যালো প্রসেসিং বা ভাষাভাষা চিন্তা করে রিএক্ট করে দেয় তোমার ব্রেন তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা জটিল সিমুলেশন চালায়। তুমি বর্তমান ঘটনার সাথে অতীতের মেমোরি কানেক্ট করো। ভবিষ্যতের আউটকাম প্রেডিক্ট করো এবং কথার গভীর মানে খোঁজো। এই যে তুমি একটু চুপ হয়ে যাও বা সময় নাও। এটা তোমার ব্রেনের ল্যাগিং না। এটা আসলে একটা হাই পারফরমেন্স কম্পিউটারের মতো। যেটা ফাইনাল আউটপুট দেওয়ার আগে বিশাল পরিমাণে ডেটা প্রসেস করছে। তাই পরেরবার যখন কেউ বলবে তুমি বেশি ভাবো মনে রেখো তোমার প্রসেসরটা ওদের চেয়ে শক্তিশালী।


সারমর্ম

তাহলে সারমর্ম কি। নিজেকে পাল্টানোর চেষ্টা বন্ধ করো। তোমার বায়োলজি ফিক্স করার চেষ্টা করার দরকার নেই। কারণ ওটা দুর্বলতা না। আমাদের পৃথিবীতে এমনিতেই অনুভূতিহীন মানুষের অভাব নেই। আমাদের আরো থিক স্কিনড রোবটের দরকার নেই। আমাদের দরকার তোমাকেই। যে কিনা এইট কে রেজলিউশনে পৃথিবীকে দেখে। তোমার সেনসিটিভিটিকে একটা প্রটেক্টিভ শিল্ড দিয়ে আগলে রাখো। যখন দরকার তখন নিজের খোলসে ঢুকে যাও। রিচার্জ করো। আর কেউ যদি তোমাকে উইক বলে মনে মনে একটা হাসি দিও। কারণ তুমি জানো তারা 720 পি তে যা দেখছে তুমি সেটা এইট কে তে অনুভব করছো।

তুমি হয়তো লক্ষ্য করেছ অনলাইনে বা সোশ্যাল মিডিয়াতে তুমি খুব একটা না। তুমি স্ক্রল করো, দেখো কিন্তু খুব কম পোস্ট করো। অনেকে হয়তো ভাবে তুমি ভীতু বা তোমার কনফিডেন্স কম। কিন্তু সাইকোলজি বলছে সম্পূর্ণ উল্টো কথা। এই যে তুমি চুপচাপ অবজার্ভ করছো এটা কোন দুর্বলতা না। একে বলে দ অনলাইন ঘোস্ট। আসলে তোমার ব্রেন এত হাই কোয়ালিটি ডেটা প্রসেস করতে ব্যস্ত যে সস্তা লাইক বা কমেন্টের জন্য লোক দেখানো কন্টেন্ট বানানোর প্রয়োজন সে বোধ করে না। তোমার এই নীরবতা আসলে একটা প্রচ্ছন্ন আত্মবিশ্বাস। তুমি জানো তোমার ভ্যালু কতটা। তাই সেটা চিৎকার করে প্রমাণ করার দরকার তোমার নেই।

ধন্যবাদ।