কক্সবাজার ভ্রমনের তৃতীয় দিন । সারাদিনের গল্প ।
আজ আমি আপনাদের সাথে কক্সবাজারে কাটানো আমার তৃতীয় দিনের গল্প শেয়ার করব। গত পরশুদিন আমরা বাসা থেকে রওনা দিয়েছিলাম। গতকাল সকাল দশটার সময় আমরা কক্সবাজার এসে পৌঁছেছি। দ্বিতীয় দিনের গল্পটি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারেনি কারণ অনেকে জার্নি করার পর শরীর প্রচন্ড ক্লান্ত ছিল। যাইহোক, আজকের বিষয় নিয়ে কথা বলা যাক।
গতকাল রাতে অনেক দেরিতে ঘুমাতে যাওয়ার কারণে, খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারিনি। সকালে ঘুম থেকে উঠতে সাড়ে সাতটা বেজে গিয়েছিলো। যদিও আমাদের প্ল্যান ছিল খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে সূর্যোদয় দেখতে বিচ'এ যাব। কি আর করার, দ্রুত ফ্রেশ হয়ে সবাই রেডি হলাম বিচ'এ যাওয়ার জন্য। দ্রুত যেতে চেয়েছিলাম, এজন্য সকালের নাস্তাটা ও করা হয়নি। সকাল ৮ টা ১০ মিনিটে আমরা বিচ'এ গিয়ে পৌঁছাই, আর সকালের সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকি। পৃথিবীটা কত সুন্দর করে সাজিয়েছেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা। যেখানে যেটি প্রয়োজন ঠিক সেখানে সেটিই রেখেছেন। পাহাড়ের জায়গায় পাহাড়-সমুদ্রের জায়গায় সমুদ্র। আর আমার জায়গায় আমাকে 🥰।
কিছু সময় ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একটি পরিচিত ক্যামেরাম্যানের সাথে দেখা হলো। আমরা তাকে আমাদের সাথে সারাদিন থাকার জন্য ভাড়া করে নিলাম। যদিও আমাদের কাছে 2 টি ক্যামেরা ছিল, তবুও একজন ফটোগ্রাফারের প্রয়োজন ছিল। এতে আমরা সবাই একসাথে ইচ্ছা করলেই ফটো উঠতে পারবো। অন্যথায় একজন ক্যামেরায় থাকলে সে সুন্দর মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দী হতে পারবে না, কারণ সে নিজেই ক্যামেরায় থাকবে। এজন্য একজন ক্যামেরাম্যান নিয়ে নেয়াই ছিল আমাদের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ। ক্যামেরাম্যান নেয়ার পর শুরু হল আমাদের ফটোগ্রাফি পর্ব। প্রচুর ফটো উঠেছিলাম। এরই মাঝে আমার ফোন দিয়ে কিছু ভিডিও আর আমার ক্যামেরা দিয়ে কিছু ছবি উঠিয়েছি। সে ফটোগুলো আমি পরে আলাদা ফটোগ্রাফি আর ভিডিওগুলো সিনেমাটিক ভিডিও হিসেবে শেয়ার করব।
ঘুরাঘুরি শেষ হওয়ার পর আমরা সকালের নাস্তা করে নিলাম। সকালের নাস্তা শেষ করে আমাদের পরবর্তী প্ল্যান ছিল মেরিন ড্রাইভ এ যাওয়া। এটাই ছিল আজকের দিনে আমার জন্য সবচেয়ে সেরা মুহূর্ত। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমাদের প্ল্যান মত আমরা এগুলাম। একটি জিপ গাড়ির স্ট্যান্ড থেকে আমরা একটি গাড়ি ভাড়া করে নিলাম পনেরশো টাকা দিয়ে। কিছুক্ষণ পরেই গাড়িটি আমাদের বাসার নিচে আসছিলো। আর আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। তিন থেকে চার মিনিট যাওয়ার পর চোখে পরতে শুরু করল সেই অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য। ডান সাইডে সমুদ্র। আর বাম সাইডে রয়েছে সবুজে ঢাকা বিশাল বিশাল পাহাড়। আমাদের যাত্রাপথে দুই থেকে তিনটি ঝর্ণাও দেখেছিলাম। সেই ঝর্ণার কাছে গিয়ে গা 'টা সামান্য ভিজেছিলাম। ঝর্ণা দেখা শেষ হওয়ার পর রাস্তার পাশে রেখে দেওয়া আমাদের জীপ গাড়িটিতে গিয়ে বসলাম।
এরপর আবার শুরু হল আমাদের মেরিন ড্রাইভ। রাস্তার দুই পাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমাদের সময় অতিবাহিত হচ্ছিল, আর আমি ভাবছিলাম আজ যেন আমার দুটি চোখ পরিপূর্ণ তৃপ্তি পেল। চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতোই দৃশ্য ছিল । ডানপাশে নীল জলরাশির সমুদ্র সৈকত আর বাম পাশে সবুজ লতা পাতায় ঘেরা বিশাল বিশাল পাহাড়।
মেরিন ড্রাইভের মুহূর্তে আমি আমার মোবাইলে অনেকগুলো ভিডিও ধারণ করেছিলাম। সেই টুকরো-টুকরো ভিডিও গুলো একসঙ্গে যুক্ত করে আমি নতুন একটি ভিডিও তৈরি করে খুব শীঘ্রই আপনাদের সাথে শেয়ার করব। যাইহোক, মেরিন ড্রাইভ শেষ করার পূর্বে ইনানি বিচ থেকে একটু ঘুরে আসলাম। এরপর আমরা সবাই বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে গোসল করলাম আর দুপুরের খাবার শেষ করলাম। আজ দুপুরের খাবার মেন্যুতে ছিল সামুদ্রিক সুন্দরী পোয়া মাছ। এই মাছটি আমি আগে কখনো খাইনি। আজকেই প্রথম খেয়েছি। সামুদ্রিক সুন্দরী পোয়া মাছ খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু ছিল।
এরপর লম্বা একটি বিশ্রাম নিলাম। প্রায় সন্ধা পর্যন্ত বিশ্রাম নেয়ার পর আমরা সবাই একসাথে বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিচ্ছিলাম। এমন সময় দেখতে পেলাম ঘড়িতে নয়টা বেজে ৩০ মিনিট। তখন আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সাপ্তাহিক হ্যাংআউটে জয়েন করলাম। আমার সাথে যে সকল স্টিমিয়ান ছিল তারা সবাই হ্যাংআউটে জয়েন করেছিল ।এরপর এগারোটা বেজে ত্রিশ মিনিটে হ্যাংআউট শেষ হয় ।এরপর আমার ট্রাভেল সাথীরা সবাই হোটেলে খাবার খেতে যায় । কিন্তু আমি একটু অসুস্থ থাকার কারণে বাইরে খেতে যাই নি । তারা সবাই আমার জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসছিল। সেগুলো খেয়েই মোটামুটি রাতের খাবার শেষ করলাম । কিছু সময় পর আমি অনেকটা সুস্থতা অনুভব করছিলাম। তাই প্লান করলাম রাতের সমুদ্রের রুপ দেখতে যাব।
যেমনি ভাবা অমনি কাজ। কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা সবাই একসাথে রওনা দিলাম । কিছুদূর গিয়ে দেখতে পেলাম একটি স্থানে সামুদ্রিক খাদ্যযোগ্য প্রাণী বিক্রি হচ্ছে। প্রথমে আমরা পুরো বাজারটি ঘুরে ফিরে দেখলাম ।সেখানে দেখতে পেলাম অনেক রকমের প্রাণী বিক্রি করছে । অনেক ধরনের মাছ ও আছে সেখানে। এখানে অনেক প্রজাতির মাছ আছে, যেগুলোর নাম ও আমি পূর্ব কখনো শুনিনি। এছাড়াও বিভিন্ন রকম কাঁকড়া অক্টোপাস বিক্রি করছিল এই জায়গাটাতে । আমরা সবাই মিলে একটি অক্টোপাস অর্ডার করলাম । কিছু সময়ের মধ্যে অক্টোপাস টি ফ্রাই করে নিয়ে এসে আমাদের হাতে তুলে দিল দোকানদার ।
এরপর সেটি নিয়ে আমরা বিচ’এ চলে গেলাম। বিচ’এ গিয়ে আমরা সবাই একটা স্থানে বসলাম। রাতের দৃশ্য দেখে মনটা জুড়িয়ে গেল। সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ গুলো সারা দিনের ক্লান্তি দূর করে মনে একটা অনাবিল প্রশান্তি বয়ে নিয়ে আসছিল। এমন সুন্দর পরিবেশে যেকারোর যেকোনো ব্যস্ততা, জীবনের সমস্ত ব্যর্থতা, সবকিছুই এক নিমিষে ভুলিয়ে দিতে পারে। সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমরা অক্টোপাসটির প্রায় পুরোটাই খেয়ে ফেললাম ।স্বাদ ছিল অনেকটা রাবারের মতো।
এটাই ছিল আজকে আমার দিন । আশাকরি আগামীকাল আবার আপনাদের সাথে আমার সারাদিনের অ্যাক্টিভিটি শেয়ার করতে পারব।
Support @amarbanglablog by delegating STEEM POWER.
100 SP | 250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP |
Cc:- @steemcurator01
আমার পছন্দের জায়গার মধ্য একটি কক্সবাজার। আপনি গতকাল হ্যাংআউটে বলেছেন বাড়ি ফিরলে অনেক সুন্দর একটি পোষ্ট উপহার দেবেন সেটি দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম ভাইয়া। আপনার মাধ্যমে আমার কক্সবাজার ঘুরা হবে। এত সুন্দর সুন্দর ছবি শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া। দোয়া করি সুস্থ শরীরে আপনি বাড়ি ফিরে আসুন। শুভকামনা
বৌদি, দাদা টিনটিন আর ব্ল্যাকস দাদা। সবাইকে নিয়ে চলে আসেন। আমরা কমিউনিটির সবাই মিলে একসঙ্গে কক্সবাজার যাই। খুব মজা হবে। কক্সবাজার সি বিচ আসলেই অসাধারণ সুন্দর।
শুভকামনা জানানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ বৌদি আপনাকে।
আর দুদিন পরে আমরা সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিব। বাড়িতে ফিরে একটু শান্তি মত বিশ্রাম নিয়ে আমার সব ফটোগ্রাফি আর ভিডিও গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
দারুণ জায়গা।খাবারগুলো এত জমজমাট যে দেখেই খেতে মন চাইছে।ফোটোগ্রাফিগুলি জাস্ট অসাধারণ ও দুর্দান্ত।👌আপনার গল্প শুনে আমার ও কক্সবাজার ভ্রমণের ইচ্ছা জাগছে মনে।আপনার স্টাইলের ফটোটি অসম দাদা।খুবই ভালোভাবে সময় কাটান এবং মজা করুন।সাবধানে থাকবেন।অপেক্ষায় থাকলাম পরের গল্প শোনার।
সারাদিন ঘোরাঘুরি করে গল্প বলার মত আর এনার্জি থাকেনা। তবে বাড়িতে গিয়ে আমি ফটোগ্রাফি আর ভিডিও গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
শুনেছি অনেক বার কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের কথা। কিন্তু যাওয়ার সৌভাগ্য এখনো হয়ে ওঠে নি। খুবই সুন্দর চমৎকার নয়নাভিরাম প্রকৃতির মাঝে সময় কাটালে মনে একটা অনাবিল প্রশান্তি মেলে। মন যেনো আনন্দের সাথে অনেক সতেজতা অনুভব করে। আপনি সেই রকম শান্তিময় প্রকৃতির মাঝে বন্ধুদের সাথে সুন্দর মুহুর্ত কাটাচ্ছেন। প্রকৃতির ছবি গুলি ক্যামেরা বন্দি করে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ।আমরা খুব খুশি ভাইয়া। অনেক অনেক শুভেচ্ছা ভাইয়া
করণা প্যানডেমিক শেষ হলে আশাকরি কক্সবাজার এসে ঘুরে যাবেন।
ইস ভাই আপনাদের সাথে যদি যেতে পারতাম। আপনার এই পোস্ট পড়ে আমার পুরনো দিনের কথা মনে পরে যাচ্ছে। একবার বিচ এ আমি আর আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে প্রায় সারারাত কাটিয়ে দিয়েছিলাম। যাক ভাই আপনার পরবর্তী পোস্টের অপেক্ষায় থাকলাম। আশাকরি অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি দেখতে পাবো।
কাল সকালে চলে আসেন।
সত্যি ভাই যেতে ইচ্ছে করছে।
ওয়াও ভাইয়া আপনার ছবিটা খুবই চমৎকার হয়েছে। কি সুন্দর আনন্দে আপনার সময় গুলো পার করছেন দেখে খুবই ভালো লাগছে। আর প্রত্যেকটা ছবি খুবই সুন্দর হয়েছে।খাবারগুলো দেখতে খুব লোভনীয়।যত খুশি আনন্দ করুন আমরা আছি আপনার সাথে।
সামুদ্রিক খাবার গুলো আমার কাছে অনেক ভালো লাগে।
আসলে কক্সবাজার এমন একটি জায়গা পছন্দ না হয়ে কোন উপায় নেই, তাছাড়া সঙ্গে যদি থাকে আপন লোক বা কোন বন্ধু বান্ধব, তাহলে তো কোন কথাই নেই।দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুবই উপভোগ করছেন আর ফটোগ্রাফি গুলো হয়েছে বেশ।
বন্ধুদের সাথে এধরনের টুর আসলেই অনেক আনন্দদায়ক।
8:10 আমাদের জন্য যদিও অনেক সকাল কিন্তু কক্সবাজারে এটা লেট টাইম কারণ কক্সবাজারে ভোর সকালের সৌন্দর্যটা একটু ভিন্ন থাকে। আপনার ছবিটা আমি আজকে প্রথম দেখলাম সত্যিই আপনি অনেক সুন্দর যেটা আমি কখনো কল্পনা করি নাই ভাইয়া আপনাদের কমেন্টের মধ্যে একটা অপশন দেখলাম যে ভোট দেন এই জিনিসটা আমার কাছে একটু ব্যতিক্রম মনে হয়েছে কারণ আমি সত্য সবসময় গঠনমূলক কমেন্ট করতে পছন্দ করি কিন্তু এখানে করতে গেলে আমার একটু কেমন জানি ফিল হয় যে অনেকেই এটা আবার ভাবে কিনা ভোট পাওয়ার জন্য পাম দিচ্ছে ।কিন্তু আসলে ব্যাপারটা এমন না । আমি বাংলাদেশের আরেকটা প্লাটফর্মে কাজ করি যার নাম উইমেন ই-কমার্স সেখানেও আমি অনেক গঠনমূলক কমেন্ট করি ইভেন এমনও দিন যায় যেখানে 400 থেকে 500 কমেন্ট করে থাকি।
কমেন্ট করলে গঠনমূলক কমেন্টই করা উচিত। আপনাকে ধন্যবাদ।
ওয়াও,কক্সবাজার আসলেই অনেক সুন্দর একটি জায়গা। যেখানে আসলে মন ভালো হয়ে যায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে খুব কাছ থেকে দেখা যায়।
গল্প শুনে বোঝাই যাচ্ছে আপনার দিন গুলো খুবই ভালো কাঁটছে। অনেক এনজয় করতেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মনে ঘুরাঘুরি করবেন। সুস্থ থাকুন সুন্দর সুন্দর দিন উপভোগ করুন
অনেক অনেক ধন্যবাদ
ভাইয়া কক্সবাজারে অসাধারণ দিনগুলো পার করছেন। সুন্দর প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গেছেন মনে হচ্ছে। তৃতীয় ছবিটাতে সমুদ্রের দৃশ্য অসাধারণ হয়েছে এবং শেষের মাছের ছবিগুলো খুবই ভালো লাগল। বিভিন্ন ধরনের মাছ রয়েছে সেখানে। দোয়া করি ভাইয়া আনন্দটা উপভোগ করে সুস্থ শরীরে বাসায় ফিরে আসেন। শুভ কামনা।
শুভকামনা জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
🥰❤️
কক্সবাজার এক অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি।সমুদ্রের মন মাতানো ঢেউ এর শব্দ আর বাতাসের শব্দ একটু বসলে যেন মনের মধ্যে কবি কবি একটা ভাব চলে আসে। মন ও মস্তিষ্ক ভালো রাখার জন্য এ রকম ভ্রমন টুর প্রয়োজন।ইনজয়!!!!!!!
ধন্যবাদ 🥰