এলোভেরা বা ঘৃতকুমারীর যত গুনাগুন (As good as aloe vera)
ঘৃতকুমারী এর ওষধি গুনাগুন..............
ব্যবহৃত অংশ: ঘৃতকুমারীর ফুল ও গাছ, ঘৃতকুমারীর পাতা, ঘৃতকুমারীর পাতার জেলী।
ঘৃতকুমারী Aloe vera
A. vera growing in Aruba, flower detail inset.
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae
(unranked): Angiosperms
(unranked): Monocots
বর্গ: Asparagales
পরিবার: Asphodelaceae
গণ: Aloe
প্রজাতি: A. vera
দ্বিপদী নাম: Aloe vera (L.) Burm.f.
রোপনের সময়: আষাঢ় মাসের প্রথম দিকে।
ঘৃতকুমারী একটি ভেষজ উদ্ভিদ। ঘৃতকুমারী পাতার রস যকৃতের জন্য উপকারী।
ঘৃতকুমারী
মিসরীয় লোককাহিনী থেকে জানা যায়, সৌন্দর্যবর্ধন করে যে প্রকৃতিকন্যা তার লাতিন নাম এলোভেরা ওরফে ঘৃতকুমারী। এর বৈজ্ঞানিক নাম Aloe vera এটি Asphodelaceae (Aloe family) পরিবারের একটি উদ্ভিদ। অন্যান্য নামের মধ্যে Aloe vera, Medicinal aloe, Burn plant Hindi: Gheekumari উল্লেখযোগ্য।
ঘৃতকুমারী বহুজীবি ভেষজ উদ্ভিদ এবং দেখতে অনেকটা আনারস গাছের মত। এর পাতাগুলি পুরু, দুধারে করাতের মত কাঁটা এবং ভেতরে লালার মত পিচ্ছিল শাঁস থাকে। সবরকম জমিতেই ঘৃতকুমারী চাষ সম্ভব তবে দোঁয়াস ও অল্প বালি মিশ্রিত মাটিতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় নিয়মিত পানিসেচের দরকার হলেও গাছের গোড়ায় যাতে পানি থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সাধারণতঃ শেকড় থেকে বেরনো ডাল বা ‘সাকার’-এর সাহায্যে এই গাছের বংশবৃদ্ধি হয়। ইউনানী শাস্ত্রে শুকনো চূর্ণকৃত ঘৃতকুমারীর নাম হল মুসাওওয়ার।
এই ঘৃতকুমারীতে রয়ছে ২০ রকমের খনিজ। মানবদেহের জন্য যে ২২টা এমিনো এসিড প্রয়োজন তার ৮ টি এতে বিদ্যমান। এছাড়াও ভিটামিন A, B1, B2, B6, B12, C এবং E রয়েছে।
ব্যবহার্য অংশ: – পাতা, শাঁস
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর রসের কয়েকটি ঔষধি গুণ
হজমি সহায়ক:
নিয়মিত ঘৃতকুমারীর রস পানে পরিপাক প্রক্রিয়া সহজ হয়। ফলে দেহের পরিপাকতন্ত্র সতেজ থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। তাছাড়া ডায়েরিয়া সারাতেও ঘৃতকুমারীর রস দারুণ কাজ করে।
শক্তিবর্ধক:
আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এমন কিছু উপাদান থাকে যা দেহে ক্লান্তি ও শ্রান্তি আনে। কিন্তু নিয়মিত ঘৃতকুমারীর রস সেবন শরীরের শক্তি যোগানসহ ওজনকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
যারা দীর্ঘকাল ফিব্রোমিয়ালজিয়ার মতো সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে ঘৃতকুমারীর রস দারুণ কাজ করে। এটি দেহে সাদা ব্লাড সেল গঠন করে যা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে।
ক্ষতিকর পদার্থের অপসারণ:
দেহ থেকে ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণে ঘৃতকুমারীর রস একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ঔষধির কাজ করে। আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন চাপে থাকি। এছাড়া চারপাশের দূষিত পরিবেশ এবং বিভিন্ন ফাস্টফুড গ্রহণের কারণে নিয়মিত পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার করা দরকার। ঘৃতকুমারীর রস সেবনের ফলে শরীরে বিভিন্ন ভিটামিনের মিশ্রণ ও খনিজ পদার্থ তৈরি হয় যা আমাদেরকে চাপমুক্ত রাখতে এবং শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।
প্রদাহ কমায়:
ঘৃতকুমারীর রস হাড়ের সন্ধিকে সহজ করে এবং দেহে নতুন কোষ তৈরি করে। এছাড়া হাড় ও মাংশপেশির জোড়াগুলোকে শক্তিশালী করে। সেইসঙ্গে শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ প্রশমনেও কাজ করে।
ঘৃতকুমারী পাতার রস , শসা ও মধু:
ঘৃতকুমারী পাতার রস বিষাক্ত উপাদানের প্রতি বিশেষ ভুমিকা পালন করতে পারে । এ জন্য চেহারা মেচেতার ওপর কিছু ঘৃতকুমারী পাতার রস রেখে দেয়, চেহারার ত্বকের নরম হবে এবং কিছু ক্ষতচিহ্ন দেখা যায় না । যদি আপনার মুখের মেচেতা খুব গুরুতর , তাহলে ঘৃতকুমারী পাতার রস পানির সঙ্গে মিশিয়ে খান, প্রতিদিন দু’বার ,প্রত্যেকবার ১০ মিলিলিটার ,কার্যকরভাবে মেচেতা প্রতিরোধ করা যায় । ঘৃতকুমারীর একটি পাতা, মধু এ একটি ছোট শসা ছোট করে মিশিয়ে করে মাস্ক করে এবং মেচেতার ওপর রেখে দেন, চামরার ফুস্কুড়িও প্রতিরোধ করতে পারে । উল্লেখ যে, নারীদের মুখে যদি মেচেতা থাকে, তাহলে মেক-আপ না করা ভালো । কারণ যেসব মেক-আপ ক্রিম ত্বকের সূক্ষ্মরন্ধ্রের স্বাভাবিক রূপান্তর বাধা দেবে এবং মুখের মেচেতা গুরুতর হবে ।
শুক্রমেহেঃ-
প্রধানতঃ যারা শ্লেষ্মাপ্রধান রোগে ভোগেন তাদেরই এ রোগ বেশী হয়। কোঁত দিলে অথবা প্রস্রাব করলে শুক্রস্খলন হয়, এই সব লোকের ঠান্ডা জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেশী দেখা যায়, শুধু এই ক্ষেত্রেই ঘৃতকুমারীর শাঁস ৫ গ্রাম একটু চিনি মিশিয়ে সকালে বা বিকালে সরবত করে খেতে হবে। অথবা শুধু চিনি মিশিয়েও খাওয়া যায়। ৬/৭ দিন খেতে হবে।
গুল্ম রোগে:-
গর্ভ হলে পেটে ব্যথা হয়না, আর গুল্মে প্রায়ই কনকনে ব্যথা হয়। তবে এটা যে গুল্ম তা নিশ্চিত হতে হবে। তাহলে ঘৃতকুমারীর শাঁস ৫/৬ গ্রাম একটু চিনি দিয়ে সরবত করে ৩/৪ দিন খেতে হবে।
সামান্য উত্তেজনায় ধাতু/শুক্রাণু স্খলন:
যাদের শুক্রাণু পাতলা তাদের জন্য দুই চামচ চটকানো ঘৃতকুমারী পাতার শাষ এবং দুই চামচ চিনি মিশিয়ে শরবত করে ১৫-২০ দিন খেলে পাতলা শুক্রাণু অকারণে স্খলন বন্ধ হবে।
অনিয়মিত এবং অস্বাভাবিক মাজুরতা (মাসিক) হলে:
ঘৃতকুমারী পাতার শাষকে ভালভাবে চটকে চালুনীতে/ঝাকীতে পাতলা আবরণ করে একবার শুকানোর পর আরেকবার তার উপরেই পাতলা আবরণ লাগাতে হবে। এভাবে কয়েকবার লাগানোর পরেই আমসত্বের মতো তৈরি হবে। মাসিকের সময় ২/৩ গ্রাম পরিমাণ পানিতে ভিজিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
পেটের ইস্তিজ্ঞা (মল) পরিষ্কার করতে:
যখন সমস্যা হবে তখন সকালে খালি পেটে টাটকা ঘৃতকুমারী পাতার শাষ ১০/১৫ গ্রামের মতো ঠান্ডা পানিরসাথে হালকা চিনি মিশিয়ে শরবত করে খেলে পুরানো ইস্তিজ্ঞা পরিষ্কার হবে।
অর্শরোগে:
এ রোগের স্বভাবধর্ম কোষ্ঠ কাঠিন্য হওয়া। সেটা থাকুক আর নাই থাকুক, এ ক্ষেত্রে ঘৃতকুমারীর শাঁস ৫/৭ গ্রাম মাত্রায় একটু ঘি দিয়ে মিশিয়ে সকালে ও বিকালে দুই বার খেতে হবে। এর দ্বারা দাস্ত পরিষ্কার হবে এবং অর্শেরও উপকার হবে।
চুলের যত্নে :
ঘৃতকুমারী চুলের উজ্জলতা বাড়াতে কন্ডিশনারের কাজ করে। এছাড়া চুল পড়া রোধ এবং খুশকি প্রতিরোধে অসাধারণ এ অ্যালোভেরা। খুশকি দূর করতে মেহেদিপাতার সঙ্গে অ্যালোভেরা মিশিয়ে লাগাতে পারেন চুলে। মাথা যদি সব সময় গরম থাকে তাহলে পাতার শাঁস প্রতিদিন একবার তালুতে নিয়ম করে লাগালে মাথা ঠাণ্ডা হয়৷ অ্যালোভেরার রস মাথার তালুতে ঘষে এক ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। চুল পড়া বন্ধ হবে এবং নতুন চুল গজাবে। শ্যাম্পু করার আগে আধা ঘণ্টা অ্যালোভেরার রস পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন। এতে চুল ঝরঝরা ও উজ্জ্বল হবে।
কন্ডিশনার হিসাবে ব্যবহার করার নিয়ম:
প্রথম একটি ধারালো ছুরি দিয়ে প্রতিটি গাছের পাতা থেকে পুরু সবুজ চামড়া সরিয়ে পাতার ভেতরের পরিষ্কার জেলি যতটা সম্ভব বের করে নিতে হবে। আস্তরণটি কাটার সময় সতর্ক থাকুন যেন জেলি কাটা অংশের সাথে পরে না যায়।ব্লেন্ডারে এই জেলি নিয়ে ভাল করে ব্লেন্ড করুন, পানি দেবার দরকার নেই। বের করার আগে দেখুন যেন সবটুকু জেলি খুব ভাল ভাবে ব্লেন্ড হয়।এবার এই মিশ্রণটি ভাল করে ছেঁকে নিন। জেলি ছেঁকে নেবার পর যেন তা এর মধ্যের সাদা অংশ থেকে আলাদা হয়ে আসে।এবার চুলে শ্যাম্পুর পরে চুলের আগা থেকে গোঁড়া পর্যন্ত এই জেলি ভাল করে ম্যাসাজ করে মেখে নিন। চাইলে অন্য কোন কন্ডিশনারের সঙ্গে মিশিয়েও এটি ব্যবহার করতে পারেন।
ঘৃতকুমারী শরীরের ভীতরে যেমন কাজ করে তেমনী শরীরের উপরে ও ত্বক লাবন্যের রুপ চর্জায় বিশেষ কাজ করে।এক কথায় আমাদের অনেক কাজেই ঘৃতকুমারী ব্যবহার করা হয়।
এলোভেরা বা ঘৃতকুমারীর গুনাগুন অনেক রয়েছে।