|| শহরের মেলা ঘুরে গ্রামের মেলার স্বাদ পাই কি? ||
প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজ ঘরের কাছাকাছি একটি মেলায় ঘুরতে গেছিলাম। মেলাটি হঠাৎ করেই বসেছে। কিন্তু আমার চোখে পড়তে দেরি হলো। আয়োজনের ঘটা-য় গ্রামের মেলার মতোই সবই ছিল কিন্তু আয়োজন সমান হলেও গ্রামের মেলার স্বাদ কি এই বিরাট শহরের মেলাতে পাওয়া যায়? তারই কিছু ব্যাখ্যা আজকের পোস্টে দেওয়া রইল।
সাথে থাকছে আমার ঘোরাফেরা ও কেনাকাটার কিছু ব্যক্তিগত কথাবার্তা।
ঘরের কাছে মেলা হলে আনন্দ বোধহয় বেশি হয়। আজ হটাৎ করেই দেখি অনেক আলো। বিরাট উঁচু একটা নাগরদোলা বনবন করে ঘুরছে। কদিন ধরেই হচ্ছে রাস্তার ওপারে কিন্তু আমার চোখে পড়েনি।
গ্রামে-গঞ্জে মেলা হলে দূরদূরান্ত থেকে শোনা যায়। মেলার ধুম খুবই আড়ম্বরে উদযাপিত হয়। কিন্তু কোলকাতার ক্ষেত্রে এর উল্টো। এমনটা নয় যে, মেলার আয়োজন কম, আসলে কোলকাতায় এমনিতেই গাড়ি আর মানুষের শব্দে মেলার মত অবস্থা থাকে। গ্রামে নির্জনতা যেমন স্বাভাবিক। বড় শহরে জোরালো শব্দ কোলাহল নিত্য ব্যাপার। তাই কোলকাতার সাধারণ শব্দ কোলাহলে মেলার নিজস্ব আওয়াজ শব্দ কোলাহল আনন্দ লোপ পায়। তবে কাছে গেলে তার আস্বাদ পাওয়া যাবে। যেমন আজ আমি পেলাম।
আয়োজন সমপরিমাণে হলেও কোলকাতার মেলা আর গ্রামের মেলার অগাধ ফারাক। কোলকাতার মেলায় উত্তেজনা নেই। কখনোই সেভাবে দেখিনি। মানুষ ঘুরছে ফিরছে ঠিকই তবে কেনো জানি মনে হয় খুবই শৃংখলা মেনে। ঘুগনি পাঁপড়- এর তেমন রমরমা নেই। কেউ বাঁশি বাজায় না। বেলুন ফাটার শব্দও আসেনা কানে। কোথাও একটি ছোট্ট প্রিয় খেলনাটি কেনার জন্য কান্না জুড়ে না।
কোলকাতার মেলা দেখলে কষ্ট হয়। মনে হয় এ মেলার দেহ আছে কেবল, প্রাণ আর নেই!
কিন্তু গ্রামের মেলার দেহ রয়েছে, প্রাণও রয়েছে।
আজ মেলা গিয়ে বরাবরই মতোই শান্ত মানুষের চলা ফেরা, কেনাকাটা দেখি। আমিও সেভাবেই চলি ফিরি। একাই গেছিলাম। ভাবলাম নতুন কি এসেছে দেখে আসি।
মেলার প্রধান আকর্ষণ নাগরদোলা ছিলই। নাগরদোলাকে দূর থেকে দেখা যায়। এই নাগরদোলা যেনো মেলার অর্ধেক বিনোদন একাই ধরে রাখে। দূর থেকে নাগরদোলা দেখেই আমি আরো ঠাহর পেলাম হুট করে মেলা বসেছে। চরকির মত আলো ঝলমল করে ঘুরছে।
কাছে গিয়ে দেখলাম, এবারের নাগরদোলা টি আরো উঁচু। জানিনা কোথা থেকে এসেছে, তবে অনেকটাই উচুঁ।
এই ছোট্ট জিনিসটি আমার খুব ভালো লেগেছে মেলার মধ্যে। এর ভেতরে আছে একটি ছোট্ট ফুল। দেখতে অনেকটা শিউলি ফুলের মত। ঠিক তার ডগায় একটু সলতে আছে, তাতেই জ্বলছে প্রদীপ হয়ে। আর এই শিউলি ফুলটি ভাসছে ভেতরে জলের মধ্যে , তা দেখতেই খুব সুন্দর লাগল।
কাঠের তৈরি পেঁচা, বাড়ি-ঘর কাঠের গুড়ি দিয়ে বানানো বাসন এগুলো বেশ ভালো লাগলো দেখে। এই শিল্পকে কিছু মানুষ এখনো ধরে রেখেছে, এটা খুবই ভালো লাগলো। দোকানির মুখে এটাও শোনা গেল যে, এই শিল্পকে তারা বাঁচিয়ে রাখছে কিন্তু সেভাবে বিক্রি নেই। তবুও তারা চেষ্টা করছে যাতে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। মেলা-মেলা ও নানান দোকানে সেল করার চেষ্টা করে তারা এই শিল্পকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে। আমার এখানে সব থেকে বেশি ভালো লাগে কাঠের একটি বাটি, যে বাটিটির চারিপাশের গাছের বাকল এখনো তোলা হয়নি, যা আরো বেশি ভালো লাগছে। কিন্তু ভেতরে খুব সুন্দর ভাবে পালিশ করা হয়েছে। আমি একটা বাটি বোনের জন্য কিনলাম।
মেলা গিয়ে প্রথমে এই কাপটা চোখে পড়ে। অনেকগুলোই বিভিন্ন আর্টের কাপ ছিল, তবে এই অঙ্কনটি আমার খুবই ভালো লাগে। কাপের কালারও ছিল আরো বিভিন্ন রকমের, তবে এই কালারটা সত্যিই খুব সুন্দর। টেবিলের উপর রাখার জন্য এই কাপটিও আমি কিনি, এটা আমার নিজের জন্য ছিল। যাই হোক আমার মেলা ঘুরে মন্দ লাগেনি। কিছু কিছু জিনিস বিশেষত যে সকল জিনিসের উপর শিল্পীর পরিচয় আছে। সেগুলো মূলত আমার খুব ভালো লাগে। এবং আজকের মেলায় সেগুলো দেখতেও পেয়েছি বিস্তর।
ক্যামেরা - iQOO 9se
মডেল - 12019
ফোকাস লেংথ - 35mm
আজ এই অব্দি রইল। আগামীকাল আবার নতুন কিছু কথা নিয়ে, নতুন একটি লেখা নিয়ে হাজির হব। ততক্ষণ আপনারা ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
একদম ঠিক বলেছেন,গ্রামের মেলা মানেই জীবন্ত কিছু,অনেক বাহারি জিনিসের সমাহার।শহরে মেলায় নিজস্বতা নেই,আন্তরিকতা নেই,কিন্তু গ্রামের মেলায় চেনা মুখগুলো আরো চেনা হয়ে ওঠে।আপনার বাড়ির পাশে মেলাতে বেশ সুন্দর সময় কাটিয়েছেন, কাপটি সত্যিই সুন্দর ছিল।আর ফটোগ্রাফিগুলিও বেশ হয়েছে,ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার মন্তব্য পড়ে বেশ ভালো লাগলো। আর হ্যাঁ কাপটি সত্যি খুব সুন্দর ছিল। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
মেলায় ভ্রমণ করে খুব সুন্দর সময় অতিবাহিত করেছেন সেই সাথে সুন্দর ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন।। ঠিকই বলেছেন আপনি গ্রাম এবং শহরের মেলার আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে।। গ্রামের মেলায় সবসময়ই অনেক লোকের আনাগোনা এবং বিভিন্ন ধরনের মন মজানো খেলার আয়োজন করা হয় যেটি আসলে শহরের মেলায় দেখা মেলে না।। আর নাগরদোলায় চড়তে আমারও খুব ভালো লাগে তবে শহরের এই বড় বড় চোরকির মত নাগরদোলা থেকে গ্রামের নাগরদোলায় আমার কাছে মনে হয় অনেক ভালো।।
হ্যাঁ আমরা তো সকলেই জানি গ্রামের মেলার একটা অন্যরকম আমেজ থাকে, যেটা কোনোভাবে শহরের মেলাতে পাওয়া যায় না । শহর যত চেষ্টা করুক সে আনন্দ আসে না। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
আসলে দাদা ঠিকই বলেছেন গ্রামের মেলা শহরের মেলা আকাশ পাতাল ব্যবধান। আপনি খুব সুন্দরভাবে বিষয়টিকে তুলে ধরেছেন যেমন গ্রামের মেলায় দেহ আছে প্রাণ আছে, কিন্তু শহরের মেলায় দেওয়া আছে কিন্তু প্রাণ নেই। আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে কথাটা একবারে যুক্তিসঙ্গত একটি কথা বলেছেন। সে সাথে আপনার মেলার বেশ কিছু জিনিস কিনার অনুভূতিগুলো পড়লাম ভালো লাগলো। আপনার ছোট বোনের জন্য যে বাটিটি কিনেছেন গাছের বাকল সহ আমার কাছে এটিও খুব ভালো লেগেছে।
আমার এটাই মনে হয়েছে যে শহরের মেলায় দেহ ঠিকই আছে কিন্তু প্রাণ যেন নেই! যাই হোক, আপনি খুব সুন্দর ভাবে মতামত করে বিষয়টি পরিলক্ষিত করেছেন। এটা বেশ ভালো লাগলো।
আসলে গ্রামের মানুষেরা শান্ত প্রকৃতির হয়ে থাকে যার ফলে শহর এবং গ্রামের মেলার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ দেখতে পাওয়া যায়। গ্রামের মেলার নাগরদোলাটি ভালো লাগলো এর থেকেও ভালো লাগলো শিউলি ফুলের বিষয়টি। বেচাকেনা হোক কিংবা না হোক কাঠের এবং মাটির তৈরি শিল্পটা বাঁচিয়ে রেখেছে এটাই সব থেকে বড় বিষয়।
শিউলি ফুলের মতো ওই প্রদীপটা সত্যি মানে অসাধারণ ছিল । আমিতো অবাক হয়ে অনেকক্ষণ দেখলাম যে এটা কি করে সম্ভব , জলের উপর ভাসছে। যাই হোক, আপনি বিষয়টা লক্ষ্য করেছেন এবং আপনারও যে ভালো লেগেছে এটা জেনে আমার আনন্দ হল।
এটা কি মেলা ছিলো? মানে উপলক্ষ্যটা কী ছিলো? কোলকাতায় তো শীল্প মেলা, বই মেলা, বানিজ্য মেলা, কেরিয়ার মেলা এসব সফেস্টিকেটেড বড়লোকের মেলা হয়। একটু গ্রাম বা শহরতলি তে আসলে মেলার ঠেলাঠেলি, গরম জিলিপির গন্ধ, চপের গন্ধ এগুলোর আনন্দ পাওয়া যায়।যদিও দুটো দুরকম।তুলনা আসে না।
এটা শিল্প মেলায় বলা যেতে পারে, কারণ যাবতীয় শিল্প প্রকাশ এই মেলায় বিভিন্ন জিনিসের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরেছি । তবে নাগরদোলা থেকে শুরু করে যাবতীয় বিনোদনের বিষয়গুলো ছিল, যা গ্রামের মেলাতে থাকে।
আমার কাছেও শহরের মেলা এবং গ্রামের মেলার মধ্যে বিশাল পার্থক্য মনে হয়। আর গ্রামের মেলায় যেরকম একটা মেলার আনন্দ পাওয়া যায় এটা আসলেই শৃঙ্খলা মেনে শহরের মেলায় পাওয়া যায় না। গ্রামের বেলুনের শব্দ বাসির আওয়াজ এই সবকিছু মেলাটাকে মাতিয়ে তোলে। তারপরেও আপনি খুব সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি অনেক ভালো লাগলো।