( ছোট গল্প ) সময় এবং ... [ ১০ % বরাদ্দ লাজুক খ্যাক্স ভাই এর জন্য ]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

image.png

image source

বাবা রবার্ট বলেছিল, “খোকা!! তুই কখনো গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাস না..!!!”

আমি নিক, শুনিনি বাবার নিষেধ। একটু বড় হতে না হতেই, নৌকো ভাসিয়ে দিয়েছি সাগরের বুকে। আসলে ছোটবেলা থেকেই সমুদ্র আমাকে আশ্চর্য আকর্ষনে হাতছানি দিয়ে ডাকে। যেখানে আমরা থাকি জেলে পাড়া তে, সেখানে বাতাসের বুকে কান পাতলে শোনা যায় উত্তাল সমুদ্রের গুরু গম্ভীর গর্জন। সেখানকার আকাশের বুকে চোখ রাখলে দেখা যায় দলে দলে সারি বেঁধে উড়ে যাওয়া সামুদ্রিক পাখিদের।

সেখানে সমুদ্রই আমার ভাব আর ভালোবাসা। সমুদ্রের বুকেই লেখা থাকে মৃত্যুর সংকেত, আবার সাগরেরই প্রতিটা ঢেউ এ উছলে পরে জীবনের উন্মাদনা। অতএব বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি হয়ে উঠেছি সমুদ্রের সহচর। কেউ আমাকে রুখতে পারে না।

বাবা বলেছিল, " খোকা!! সমুদ্রে যাস না তুই । "

আমি জানতে চেয়েছিলাম, “ কেন বাবা? সমুদ্রে মাছ ধরাই তো আমাদের পেশা। মাছ না ধরলে খাবো কি? আমার তো আর ভদ্রলোকেদের মত ডিগ্রি নেই। যে চাকরি বাকরি করব। আর কলকারাখানার ওই বদ্ধ গুমোট পরিবেশে কাজ করতে হলে আমি সেখানেই মারা যাবো। আমি গুমোট বাঁধনে বাঁধা থাকতে আসিনি, আমি মুক্ত হয়ে বেঁচে থাকার জন্য এসেছি এই পৃথিবীর বুকে।
আমি নিক অ্যান্ড্রিউ। এই এই বয়সেই পরিস্কার জানি কোথায় কোথায় মিলতে পারে, স্যালমন মাছের ঝাঁক। কোথায় ঘাপটি মেরে বসে থাকে ভেটকি মাছের দল।
তাহলে তুমি এমন ভাবে আমায়, নিষেধ করছ কেন? আমার বাবা তুমি রবার্ট অ্যান্ড্রিউ। অসম্ভব সাহস ও দক্ষতার জন্য তোমার সাথীরা তোমায় ক্যাপ্টেন অ্যান্ড্রিউ বলে ডাকে!! তবে তুমি কেন, তোমার ছেলে ছেলেকে ঘরে আটকে রাখতে চাও? কেনো? " বালিতে হিজিবিজি কাটতে কাটতে বলেছিল বাবা, " খোকা !!! তোর মা, যখন মারা যায় তখন তুই বছর পাঁচেকের শিশু। তোকে কোলে পিঠে করে আমি মানুষ করেছি রে, তুইতো আমার একমাত্র সন্তান।

যখন তোর মাস দুয়েক বছর বয়স, তখন আমি তোদের নিয়ে ইন্ডিয়াতে ছিলাম। এক ওল্ড হিন্দু মংক এসেছিল ভীক্ষা করতে। তার সাড়া মুখ জুড়ে লম্বা সাদা দাড়ি, পরনে অনেকটা কমলা রঙের জোব্বা ও ইন্ডিয়ান ধোতি। মাথায় ছিল পাগড়ি।

সেই আমাকে দেখে, আলাদা করে ডেকে বলেছিল,তোমার পুত্রের ১৮ বছর বয়স পূর্ণ কালে মৃত্যু যোগ রয়েছে। বড় হলে ওকে সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে দিও না। ওর নিয়তির লিখনে স্পষ্ট বলছে, যখন তোমার ছেলের আঠারো বছর পুর্ণ হবে.. কোন এক বীভৎস জল দূর্ঘটনায় মৃত্যু হবে তার। কেউ রুখতে পারবে না।"

কিন্তু আমি, নিক অ্যান্ড্রিউস.. আমি কাপুরুষ নই, মরার ভয়ে বাড়িতে লুকিয়ে থাকতে কোনমতেই রাজি নই আমি। তাই তো বাবার বলা সেই সাবধান বাণী শুনিনি সেদিন। তীব্র জেদ মনে নিয়ে পালিয়ে এসেছিলাম বাড়ি থেকে। তার পর থেক্ব কেটে গেছে পাঁচ পাঁচটা দিন।আজ বাদে কাল আগামীকাল আমার আঠারো বছর বয়স পূর্ণ হবে। আর তার পাশাপাশি, আমাকে নিয়ে করা ওই স্টুপিড মংকের ভবিষ্যৎ বাণী সম্পুর্ন ভ্রান্ত ও বুজরুকি।

এখন আমার ডিঙি নৌকা তিরতির করে এগিয়ে চলেছে জল কেটে। আশে পাশে কোথাও বিপদের কোন চিহ্ন নেই। এই কদিনে অনেক মাছ তুলেছিলাম। সেগুলো বাজারে বিক্রি করার পর, বেশ কিছু টাকা এসেছে হাতে। ভাবছি এই এলাকায় আরো দিন সাতেক থাকবো আমি। তারপর বাবার কাছে ফিরে গিয়ে তাকে অবাক করে দেবো। আর বলব যে, " প্রাচ্যদেশীয় ঐসব মংকরা মিথ্যে কথা বলে, তারা এভাবেই মানুষের মনে গভীরে ভয় ঢুকিয়ে, পয়সা লোটার ফিকির এদের। তুমি ওদের কথায় আর একদম কান দিও না বাবা।

আমি এখন সমুদ্রের অংশের মধ্য দিয়ে চলেছি, সেখানে আবহাওয়া অত্যন্ত ভালো। রোদ উঠেছে, ফুরুফুরে হাওয়ায় তরতর করে এগিয়ে চলেছে আমার নৌক। আশেপাশে মাছের ঝাঁক। রুপোলি মাছের ঝাঁক খুব পাক খাচ্ছে জলে। তাদের পিঠের পাখনাতে রোদ পরে মাঝে মাঝে চকচক করে উঠছে। ভারী সুন্দর একটি দিন ভেসে চলেছে তার চোখের সামনে দিয়ে। এখানে কোন দুঃখ নেই, অভাব নেই এখানে সবকিছুই মোড়া আনন্দের মোড়কে।

আমার শরীরের রয়েছে অনন্ত শক্তি। মনে রয়েছে দুর্জয় সাহস, যা আমার রক্তের ধারায় বইছে। আমার শরীরে বইছে আঠারোর যৌবন। পৃথিবীর কোন শক্তির কাছেই মাথা নত করব না। কারুর ক্ষমতা নেই, আমাকে রোখার। আমার ভাবনায় সর্বদা ঘোরাফেরা করে আনন্দে ভরা জীবনের চিন্তাধারা, স্বপ্ন দেখি এক উন্নত বিলাশ বহুল সুখী জীবনের। মাছ বিক্রির টাকায়, প্রথমে একটি সুন্দর বাড়ি তুলব। বাবাকে আর খাটুনি করতে দেবোনা। উনি নিশ্চিন্তে অবসর জীবন কাটবে। তারপর এলিনাকে বিয়ে করে ঘরে তুলব,

নিজের স্ত্রী, পরিবার, সন্তান হবে...

তখনই সহসা দুলে উঠেছিল নৌকা টি। মুহুর্তের অসাবধানতায়, ভারসাম্য হারিয়ে এক ঝটকায় মাঝ সমুদ্রের হীমশীতল জলে পরে গিয়েছিল নিক অ্যান্ড্রিউস। মুহুর্তের মধ্যে মাঝ সমুদ্রের গভীরে ওৎ পেতে থাকা এক দল হিংস্র হাঙর ধেয়ে আসে নিক-এর ডুবতে থাকা শরীর লক্ষ্য করে।

মুহুর্তের তুমুল দাপাদাপি..। শরীর থেকে খুবলে খুবলে মাংস ছিঁড়ে নেওয়ার যন্ত্রণায় গলা ফাটানো আর্তনাদ..। মাংস খুবলে খাওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতে থাকে হাঙরের দলের ঝাপাঝাপির শব্দ, সব মিলিয়ে নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সেখানে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই সব টা শান্ত, নিস্তব্ধ হয়ে গেল। সমুদ্রের জলে ভাসতে থাকে নিকের পরনের পোশাকের ছেড়া টুকরো।

সেসময় সেখান থেকে প্রায় কয়েকশো কিলোমিটার দুরে , সমুদ্রের পাশে বালির চরায় পা ছড়িয়ে বসে থাকতে থাকতে, রবার্ট বুঝেছিল, তার ছেলের এই অনিবার্য পরিণতিটির কথা। এ কদিন আর সে মাছ ধরতে সমুদ্রে যায় নি। গতকাল নিক এর আঠারোতম জন্মদিন পার হয়ে গেল। সেই প্রাচ্যদেশীয় সাধু কত বছর আগে বলেছিল, “যখন ও আঠারো বছরে পা দেবে, রবার্ট সাবধানে রেখো তাকে.. খবরদার!!! সমুদ্রে যেতে দিওনা। ওর মৃত্যুযোগ আছে। ”

রবার্ট জানে, এমনি ভাবেই একটির পর একটি দিন কেটে যাবে। আরো বেশী শীতার্ত হবে রস্তের বাতাস এবং দুপুরের রোদ ক্রমশঃ মলিন হয়ে আসবে। সে থাকবে অপেক্ষাতে। কোন খবর আসবে না। প্রথম প্রথম সে ভাববে তার ছেলে নিক বোধহয় দূর দেশে চলে গেছে। বাবাকে এতখানি অশ্রদ্ধা করে সে?

সেখানে এক মাছধরার রহস্য জগতের জাল তার সামনে উন্মোচিত হয়েছে এখন। টন টন মাছ ধরছে সে। শহরের বাজারে বিক্রি করছে। বেশ কিছু কাঁচা টাকা তার হাতে। তারপর.....

তারপর ধীরে ধীরে রবার্ট বুঝতে পারবে, এ দুটি তার কষ্ট কল্পনা। একদিন, হয়তো বা কেউ এসে খবর দেবে, নিক আর নেই, সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। কিন্তু সেই খবর দেবে কে? ছেলেটি যা বেপরোয়া। একাই বেরিয়ে যায় সমুদ্রে।

এমন করেই বছরের পর বছর কেটে যাবে। আরো বেশী বয়স বাড়বে রবার্ট অ্যান্ড্রিউসের। শরীর থেকে হারিয়ে যাবে যৌবন। একদিন, হয়তো বুঝতে পারবে সে, ফলে গেছে ঐ প্রাচ্যদেশীয় লম্বা দাড়িওয়ালা লোকটির ভবিষ্যদ্বানী। আঠারো বছরের সুর্য দেখার তৎক্ষনাৎ পরেই পৃথিবীকে চিরতরে বিদায় জানিয়ে পরপারের যাত্রী হয়ে গেছে, তার একমাত্র পুত্র নিক।

Sort:  
 2 years ago 

আমি প্রথম আপনার লেখা কোন গল্প পড়লাম। স্বীকার করতেই হবে আপনার লেখার হাত অনেক ভালো। তবে গল্পে বেশ কিছু অসামঞ্জস্যতা লক্ষ করলাম যেমন পানিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই লুকিয়ে থাকা হাঙ্গরের দল তাকে খুবলে খেয়ে নিল। আমি যতদূর জানি হাঙ্গর এমনিতেই সচরাচর মানুষকে আক্রমণ করে না। যাইহোক গল্পের জন্য এমনটা ঠিক আছে। ছোটবেলায় অসংখ্য বইতে পড়েছি সাধু সন্ন্যাসীদের এমন ভবিষ্যৎ বলে দেয়ার ক্ষমতা। বাস্তবেও এমন আছে নাকি খুব জানতে ইচ্ছে করে ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.27
TRX 0.11
JST 0.031
BTC 67476.14
ETH 3776.09
USDT 1.00
SBD 3.52