অত্যন্ত বাজে এবং কিছুতেই ভয় না পাওয়া ভুতের গল্প [ ১০% shy-fox ভাই এর জন্য বরাদ্দ ]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

dead-ga99a0b866_1920.png

image source

হরিপুর গ্রাম। গ্রামের শেষে বড় মাঠ। মাঠের প্রায় আঁধখানা জায়গা জুড়ে রয়েছে বেশ কতগুলো বড় ছোট গাছের ঘন জঙ্গল। একটা বড় বেল গাছ, দুটো নিম গাছ , একটা তেঁতুল গাছ, এক খানা ঘন বাঁশ ঝোপ, গোটা দশেক শ্যাঁওড়া গাছ৷ আরও বেশ কয়েকটা খেঁজুর আর জঙলি গাছ মিলে মোটামুটি বেশ কিছুটা জায়গা অমন ঘন জঙ্গলে ঘেরা রয়েছে ওখানে। ঐ গাছ গুলোয় বেশ কতকগুলো বিভিন্ন রকমের ভূত প্রেত ইত্যাদি বাস করত।

গেছো ভূত, মেছো ভূত, মামদো ভূত, শাঁকচুন্নি, স্কন্ধ কাটা, নিশি পিশাচ, ব্রহ্মদৈত্য, জোলো ভূত, বুভুক্ষা এরম বেশ কিছু ভূত প্রেত বাস করত ওখানে বেশ অনেক দিন ধরে। তাই দিনে দুপুরেও কেউ ওই জঙ্গলের ছায়া মারানোর সাহস পর্যন্ত করে না। আর রাতের বেলায় তো ওই মাঠ দিয়ে পর্যন্ত কেউ যেতে সাহস করে না সেখানে ওই জঙ্গলে ঢোকা তো যেচে আত্মহত্যার সামীল।

এই তো সেদিন, গাঁয়ের বামুন পাড়ার গোপালকৃষ্ণ চাটুয্যে ওরফের গোপাল ঠাকুরের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল তার ভাগ্নে চেতন ঠাকুর। ঠিক দুপুর বেলা। জঙ্গলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়, হঠাৎ খোঁনা গলায় খ্যাক খ্যাক করে অমানবিক হাসির আওয়াজ শুনে, ভর দুপুরেও চেতন ঠাকুরের সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল। ভয়ে ভয়ে, জঙ্গলের দিকে ঘাঁড় ঘুরিয়ে দেখতেই মাথা ঘুলিয়ে গেল চেতন ঠাকুরের। তিনি দেখলেন, কয়েক খানা আবছা বিদঘুটে ছায়া মুর্তি হাওয়ায় ডিগবাজি খেতে খেতে, আর হিঁঃ হিঁঃ রবে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে তারই দিকে। তার সাথে সাথে গা গোলানো পঁচা আঁশটে গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে উঠছে ক্রমশ।

চেতন ঠাকুরের ইচ্ছে হল, কাছা খানা গুটিয়ে ছুট্টে পালান। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য অপশক্তি বলে তার পা গুলো যেন চুন সুড়কিবাঁধাই এর মত জমে উঠেছে। চেতন ঠাকুর মনে মনে প্রমাদ গুনলেন। মামার বাড়ি যেতে গিয়ে শেষে কিনা ভূতের খপ্পরে পরলেন। এবার ভূত গুলো, তার কাছে এসে খোঁনা গলায় কৌতুক মিশ্রিত হুমকির স্বরে বলল, " পেঁন্নাম হঁই ঠাঁকুর... !! আঁপনি এঁ গাঁয়ে নঁতুন এঁলেন নাঁকি..? "

চেতন ঠাকুর দিনের বেলায় এমন জ্বলজ্যান্ত ভূত দেখে পুরো ভেবলে গেলেন। ভূত গুলো আবার, তীক্ষ্ণ স্বরে বলল, “ বলি কথা গুলো কি ঠাকুর মশায়ের কানেই যাচ্ছে না? বলছি এঁ গাঁয়ে কি নতুন এলেন? ”

দিনে দুপুরে ভূতেদের এমন ধমক ধামক খেয়ে চেতন ঠাকুরের তো চেতনা হারাবার যোগাড়। চোখ ছানাবড়া করে তিনি খানিকক্ষণ হাআআআআআআআআ করে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করেই চমকে উঠে আমতা আমতা করে বললেন - " অ্যাঁ, অ্যাঁ, অ্যাঁ, ইয়ে মানে ওই আজ্ঞে নতুন এসেছি বাবারা। ”

ভূত গুলো তাদের আবছা সাদা চোখ গুলো ছোট ছোট করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে হাতের দিকে তাকিয়ে নাক উঁচু করে কিসের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে বলল, “ হাঁতে ওঁটা কিঁ? ইলিশ মাঁছ বুঝি? ” ?? “ অ্যাঁ - অ্যাঁ - অ্যাঁ,, ইয়ে মানে হ্যাঁ ” চেতন ঠাকুরের এতক্ষণে চেতনা হল - সত্যি হাতে থাকা হাঁড়ির ভেতরে ঈলিশ মাছ রয়েছে। মামা গোপাল ঠাকুর ঈলিশ মাছ খেতে ভালোবাসেন বলে তার মা ইলিশ মছ কুটে, নুন মাখিয়ে দিয়েছে।

“হেঁ হেঁ আমরা গাছের ডাল থেকেই গন্ধ পেয়েছি। আমাদের সঙ্গে চালাকি। ” চেতন ঠাকুর প্রমাদ গুনলেন, মামার জন্য নিয়ে আসা ইলিশ মাছে কিনা শেষে ভাগ বসাবে এই অপদেবতারা? সেটা কি তার প্রাণে সইবে? তাই চেতন ঠাকুর বলল - " আজ্ঞে ইয়ে মানে না না এটা ইলিশ মাছ নয়।

তবু মনে তার বড্ড ভয়। তাই ভূত তাড়াবার মন্ত্র আওড়াতে লাগল -
" ভূত আমার পুত
পেত্নো আমার ঝি....

আর বলতে পারল না কিছু। সব কিছু যেন গুলিয়ে যেতে লাগল। মৎস্যলোভী ভূতেরা নাচতে লাগল ধেই ধেই করে।
“দাও দাও ইলিশ মাছ...
খাবো খাবো ইলিশ মাছ...
দাও দাও...খাবো খাবো...”

চেতন ঠাকুর মাছের হাঁড়িটা আড়াল করতে চাইল। কিন্তু এবার ভূত তিনটে তার চারিদিক ঘিরে শুরু করল প্রলয় নাচ। “ নঁইলে তোর ঘাঁড় মটকে খাবো..তোর পেটটি চিরে খাবো...”

চেতন ঠাকুর দেখলেন, ব্যাপারটা সুবিধের নয়। আগে নিজে বাঁচলে বাপের নাম। তাই মাছের হাঁড়িটা ছুঁড়ে ফেলেই দে ছুট। ছুটতে ছুটতে চেতন ঠাকুর একেবারে মামার বাড়িতে। আর এসেই একেবারে অচৈতন্য। মাথায় একুশ কলস জল ঢালার পর নাকি চেতন ঠাকুর চেতনা ফিরেছিল।

চেতনা ফেরার পর গোপাল ঠাকুর ভাগনের মুখে শুনতে পেলেন সব কাহিনী। শুনেই তো চটে একেবারে আগুন। "কি? হত ভাগা ভূত গুলোর এত স্পর্ধা .. আমার ভাগ্নের ওপর চড়াও হয়? আর আমার জন্য, আমার বোনের পাঠানো ইলিশ মাছ খাবে কিনা ভূতেরা!! আচ্ছা রসো!! "

প্রৌঢ় গোপাল চাটুয্যে কিন্তু আর পাঁচটা সাধারণ গ্রেহস্থ বামুনে মত নন, তিনি পৌরহিত্যের পাশাপাশি টুকটাক তন্ত্রচর্চাও করতেন। তিনি সেদিনই এক মুঠো শ্বেত সরষে মন্ত্র পড়ে ছুঁড়ে মারলেন জঙ্গলের দিকে। আর যায় কোথায়!! হুড়মুড় করে গাছ থেকে নেমে এল ভূতের দল। আর কি তাদের নাচন-কুঁদন!! “মঁরে গেঁলুম রেঁ, জ্বঁলে গেঁলুম রেঁ মাঁফ কঁরেদিন বাবা ঠাকুর ” বলতে বলয়ে গোপাল ঠাকুরের পায়ের সামনে লুটিয়ে পরল ভূতের দল।

গোপাল চাটুয্যে রাগত স্বরে বললেন, “ হতচ্ছাড়ার দল !! আমার ভাগ্নের ওপরে চড়াও হয়ে, আমারই মাছ ছিন্তাই করলি!! ” ভূতেরা অবাক হয়ে হাতজোড় করে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল, “ আজ্ঞে সে কি বাঁবাঁঠাকুর!!! আপনার ভাগ্নের মাছ কেনো নিতে যাবো? সেতো এক উটকো লোকের মাছ। ” গোপাল ঠাকুর বললেন, “ ওটা আমারই ভাগনে রে হতভাগা রা !! ওই মাছ আমার জন্যই এনেছিল..”

ভূতেরা আবারও কাঁদো কাঁদো স্বরে হাত জোর করে বলল -
“দোহাই বাবা ঠাকুর !! তোমার মাছ জানলে নিতাম না। এখনো সে মাছ খাইনি। এই যে নিয়ে যাও তোমার মাছ” বলে গাছের এক ডাল থেকে মাছের হাঁড়িটা নামিয়ে এনে দিল।

গোপাল ঠাকুর বললেন,
“ আচ্ছা!! তোরাও যখন আশা করেছিস, নে এর থেকে দু-চার খানা” গোপাল ঠাকুর নিজেই ল্যাজা আর মাথার কাছ থেকে দু চার টুকরো বেছে দিলেন। “ তবে আমাদের ছেড়ে দাও ঠাকুর!!!” ভূতেরা কাকুতি-মিনতি করতে লাগল। গোপাল ঠাকুর আবার কিছু সরষেতে মন্ত্র পড়ে ভূতেদের রেহাই দিলেন। তারপর হনহন করে ইলিশ মাছের হাঁড়িটা নিয়ে বাড়ির পথে এগিয়ে চললেন। ভূতেরা মুক্তি পেল বটে কিন্তি গোপাল চাটুয্যের ওপর চটে রইল। ভাবলো! ঠাকুরমশায় কে বাগে পেলেই, হাড়ে হাড়ে মজা বোঝাবে।

কি লিখবো খুজে পাচ্ছিলাম না :D তাই এটা। বাচ্ছাদের জন্য। স্টিমিটিয়ান যাদের বাড়িতে ছোট বাচ্চা আছে তাদের শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবেন। আমি নিজেও ঘুমোতে চললাম :D । টাটা

( ক্রমশ )

Sort:  
 2 years ago 

আপনার টাইটেল টা পড়ে কিছুটা চিন্তিত ছিলাম গল্পটা কি পড়বো নাকি পড়বো না। পরে ভাবলাম আপনি তো ভালোই গল্প লিখতে পারেন, অনেকদিন পর আপনার কোন একটি গল্প আমার সামনে এসেছে, তাই পড়ার লোভ সামলাতে পারলাম না, ভালোই লিখেছেন গল্পটি, এতগুলো ভূতের নাম জানা হয়ে গেল, আমি শুধু শাকচুন্নি ছাড়া আর কোন নাম জানতাম না 😅

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.11
JST 0.031
BTC 67719.65
ETH 3791.75
USDT 1.00
SBD 3.53