( সিরিজ প্রেমের কাহিনী - ১ ) কলেজ দিনের গল্প ( ১০% লাজুক ভাইয়ের জন্য বরাদ্দ)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

image.png

image source

তো কথা হচ্ছে দুদিন হেবি ওয়েট জ্ঞান ঝেড়েছি, আর তিনদিন আসিনি। এবং আজকে কি লিখবো আমি নিজেও জানি না ।

শেষ বেলাতে ডিশিসন নিলাম লিখব আমার প্রেমের কাহিনী। মানে ব্যার্থ প্রেমের কাহিনী, এটাকে সিরিজ হিসেবেই দিতে হবে কারন আজ অবধি আমি ঠিক যতগুলো প্রেম করেছি সবগুলো লিখতে গেলে গ্রুপের মহিলারা জুতো ঝাঁটা লাঠি ইত্যাদি নিয়ে আমাকে দেশ ছাড়া করবে ।

তাই ভেবে চিন্তে অনেক কাট ছাঁট করে খুব নিরামিষ আর মজাদার প্রেম কাহিনী গুলোই লিখবো। দেখা যাক এই সিরিজ টা কদিন টানতে পারি। এখানে আমি পর পর ছোট ছোট কয়েকটি বা কয়েক জনের গল্প লিখবো, গল্পের সাথে সাথেই স্কুল কলেজের বন্ধুরা আসবে। তাদের সাথে বাওয়াল মারপিট ইত্যাদিও আসবে। সেই অর্থে দেখতে গেলে এটা স্কুল কলেজের বন্ধু এবং প্রেম সব মিলিয়েই একটা সিরিজ হবে আশা করি। দেখা যাক কি হয় বা কতদুর পারি।

মৌসম আর নন্দিতার গল্প - শুরুর আগেই বলি প্রথমেই এদের কথা কেন লিখছি। অনেক দিন বাদ আজকে বাড়ি ফিরেছি। মানে পার্মানেন্টলিই ফিরেছি, দিল্লিকে টাটা করে বাড়ি ফিরেছি। তো বাড়ি ফেরার পথে এমন কিছু দেখলাম মনে পড়ে গেল এই দুই কপোত কপোতির কথা, তারপর তাদের ফেসবুকে গিয়ে দেখি দিব্যি গুছিয়ে সংসার করছে। তাই অনেক পুরোনো কথা মনে পড়ে গেল। এবার আসি গল্পে-

মৌসম ভাইয়া ছিল আমার কলেজের সিনিয়র। আমি সেকেন্ড ইয়ার আর মৌসম ভাইয়া তখন ফোর্থ ইয়ার। যায় হোক এই নন্দিতার আসল নাম নন্দিতা আখা আর মৌসম দার টাইটেল হচ্ছে ধিংড়া। একজন পাঞ্জাবি আর একজন মিরাটের হিন্দুস্থানী। মৌসমদার বাড়ি রাজস্থান। নন্দীতার নম্বর কিভাবে আমার কাছে আসে সে এক ইতিহাস, সেই প্রসঙ্গে যাব না, তবে কয়েকটা কথা বলা জরুরি। আমি যে সময়ের কথা বলছি সেটা ২০০৭ সাল। তখন বাজারে ফেসবুক আসেনি বা আসবো আসব করছে, আনলিমিটেড নেট বলে কিছু নেই। ৯৯ টাকার প্যাকেজে একটা ত্রি-জি ডঙ্গল পাওয়া যেত ৭ দিনের জন্য আর মোবাইলে ১৯৯ টাকাই ৩ জিবি রিলায়েন্স স্মার্টকানেক্ট নেট, সেটাই সারা মাসের ভরসা। যায় হোক তখন চুটিয়ে কলেজের ফ্রি নেট ইউজ করে র‍্যাডিফ বোল আর ইয়াহু মেসেঞ্জারে চ্যাট রুমে চ্যাট করতাম, মানে চ্যাট কম আর ওয়েব ক্যাম দেখার ধান্দা বেশি থাকতো, এই ব্যাপারে আমাদের গ্রুপিং ছিল দুনিয়া সেরা, একটা মহিলা যদি কারোর ফ্রেন্ড লিস্টে অ্যাড হতেন তাহলে গোটা কলেজ হামলে পড়তো, তার আইডির জন্য। আর আমার কলজের মেয়ে গুলো সব পড়াশুনো করতো, এইসব বাওয়ালে তারা থাকতো না। এভাবেই একদিন সন্ধ্যে বেলা হোস্টেলে নিজের রুমে শুয়ে শুয়ে দেয়ালে পা তুলে রুম মেটের সাথে হ্যাজাচ্ছি আর এয়ারটেল ফ্রেঞ্জোতে সুন্দরী সার্চ করছি। আমার রুম মেট একটা আইডি দিলো, বলল এটাই পিং কর, গতকাল আমাদের সিভিলের কারোর সাথে কথা বলেছে মেয়েটা। ক্যামও নাকি দেখিয়েছে, আমিও আইডি নিয়ে দিব্যি হ্যালো বলে একটা রিকোয়েস্ট দিই। তারপর ভুলে যায়, পরের দিন কলেজে গিয়ে যখন ফ্রেঞ্জো খুলি দেখি তিনি অ্যাকসেপ্ট করেছেন। আমিও মনের আনন্দে দিগ্বিদিক ভুলে হ্যালো, ক্যাসি হো, কাহাসে হো, বাত কিউ নেহি কর রাহী হো ইত্যাদি ইত্যাদি। যায় হোক একটা সময় কথা শুরু হয়। এবং সেটা চলতে থাকে। মোটামুটি তিন কি চার দিনের মধ্যে ফোন নাম্বার এক্সচেঞ্জ এবং এস এম এস প্রেম শুরু শুরু হয়। তখন ২২ টাকার ৭ দিনের এস এম এস প্যাকেজ আর সেটার টোটাল লিমিট ছিল সম্ভবত ২০০ টা মেসেজ। যায় হোক আমার প্রতিদিনই একটা করে ২২ টাকা রিচার্জ রিফিল করতে হতো। এভাবে প্রায় ১ মাসের মত চলল। এই মেয়েটির ব্যাপারে আমাদের ডিপারট মেন্টের কেউ জানতো না , শুধু আমি আর আমার রুমমেট জানতাম মাত্র। যায় হোক এক মাসের মধ্যে ভাই তো পিগল গেয়া। মানে আমি প্রেমে হাবুডুবু। ইনফ্যাক্ট আমার প্রেমে পড়ার রোগ আছে, এখনো আছে একটু আধটু। এই একমাসে আমরা টুকটাক এম এম এসে ছবি দেখাদেখি সেরে ফেলেছি, মধ্য রাত্রিতে ফ্রেঞ্জোতে তুমি শুয়ে আছো নাকি বসে আছো ইত্যাদি ১৮+ মেসেজ ও হয়ে গেছে। আমার তখন প্রেম তুঙ্গে মাইরি।

এভাবেই চলছিল। কিন্তু তখন পুরো দমে কলেজ চলছে আর ছুটি নেই, এদিকে দেখা সাক্ষাৎ করার তীব্র ইচ্ছে, এভাবেই একদিন হঠাত সুযোগ এলো। নন্দিতা জানালো ও ফরিদাবাদ আসবে। দিল্লি থেকে ফরিদাবাদ প্রায় ২ ঘন্টার রাস্তা। ওখানে নাকি ওর কোন রিলেটিভের বাড়ি। আমাকে আর পাই কে, ঠিক হলো ফরিদাবাদেই দেখা হোক আমাদের।
আমার অবস্থাটা তখন ভাবুন একটু, বাংলা গানের জগতে রুপম ইস্লামের এই একলা ঘর, হাসনুহানা এইসব চলছে , ওদিকে সিধুর সেই যে হলুদ পাখি। ওদিকে দিল্লিতে রঘু রামের ইন্ডিয়ানা ওশেন, পলাশ সেনের ইয়োফোর‍্যা , আর ইংরেজিতে আই ক্যান বি ইয়োর হিরো বেবি গাইছে ইঙ্গেয়ার্স। মানে ভারতীয় সমাজে গান তখন তুঙ্গে। টিভিতে বীরজারার সেই অসামান্য গান শাহরুখ খানের কন্ঠে। মানে আকাশে বাতাসে প্রেম- বিপ্লব-সমাজ চেতনা ভেসে বেড়াচ্ছে। আমরাও কলেজের স্টুডেন্ট, ভেসে যেতে দেরী হয়নি।
যায় হোক বেরোনোর দিন কোন এক কারনে কলেজে ফেঁসে গেলাম । এদিকে ট্রেনও মিস। মেট্রো তখনও দিল্লিতে ফরিদাবাদ ওবধি যায়নি। ফলত বাসে গেলে রাত ১০ টাই পৌঁছাব। এমন সময় মুসকিল আসান করলো মেট্রোলজির অনন্ত সিং। " মারা গাড্ডি লাজ্জাবেহ " বলে ঠেট পাঞ্জাবিতে চাবিটা ধরিয়ে দিল। আর ছেলেপুলে ফ্রিতে পেট্রোল সাথে গাড়ি পেয়ে আমার আগেই গাড়িতে উঠে বসেছে।
যায় হোক কাউকেই নামাতে পারলাম না, অনেক কষ্টে বিকেল ৬টা নাগাদ বেরোলাম হোস্টেল থেকে। সাথে আরো ৫ জন। যেতে যেতে সবাইকে বললাম স্টোরিটা।
এখানে একটা কথা বলা জরুরি খুব । আমরা ( আমি না ) আগে ব্লাইন্ড ডেট মারতে গিয়ে বিরাট ফ্লপ খেয়েছি। সে এক অন্য ইতিহাস। কাজেই আমাদের মধ্যে একটা মিউচুয়াল আন্ডার স্টান্ডিং ছিল কেউ সমস্যায় পড়লে তাকে উদ্ধার করা কলেজের ইমেজের জন্য জরুরি।
এভাবেই গল্প আড্ডা দিতে দিতে আমরা পৌঁছালাম ফরিদাবাদ সেক্টর ১৭। ফ্রেঞ্জোতে কথা বলে জানলাম তিনি এসে গেছেন অনেকক্ষন এবং আমার অপেক্ষায় আছে সেক্টর ১৮তে কোণ একটা কর্নার জয়েন্টের সামনে। কাছাকাছি পৌঁছে বন্ধুদের নামিয়ে ওনাকে খুঁজে বের করলাম।
আগেই বলেছি আমরা ফ্লপ খেয়েছি এর আগে অনেকবার, তখন ভিডিও কল বা হোয়াটসাপের কোণ বালাই ছিল না। কাজেই ওনাকে দেখে আগের দেখা ছবি বা আমার ইমাজিনিয়ারি উনির সাথে কিছুতেই মেলাতে পারি না।
দেখুন পাঠক, কারোর বডি শেমিং করা অত্যন্ত অন্যায় কাজ আমি জানি, কিন্তু সেই সময় সেই বয়েসে এসবের বালাই ছিল না, খোঁড়াকে ল্যাংড়া বলাটাই ছিল দস্তুর। যায় হোক ওনাকে দেখে আমার সমস্ত উদ্দীপনা মুহূর্তে শেষ। বুঝলাম ফ্লপ খেয়েছি।
জীবনের কিছু সময় আসে যখন অত্যন্ত দজ্জাল বন্ধুও আপনাকে সাহায্য করে। আমারো হয়েছে এরকম। তো ঈশানকে মোবাইলে একটা মিস্কল দিয়েই শুরু করলাম কথা। এই মিসকলের কোড নেম ছিল আমাকে উদ্ধার কর। আর মিস্কল না দিয়ে সোজা ফোণ করলে অল ওকে ব্যাপার। যায় হোক মিস কল দেবার পর প্রায় ৩০ মিনিট হয়ে গেছে দেখি আমার কাছে কোন ফোণ আসছে না। আর নন্দিতাকে জাস্ট পোষাচ্ছে না, তিনি প্রানান্ত চেস্টা করছেন আমার দৃষ্টি আকর্ষণের কিন্তু আমার মেজাজ খারাপ এরা ফোন কেন করছে না ভেবে। এভাবেই প্রায় ৪৫ মিনিট পর ফোন এলো একটা। উলটো দিকে আমাদের বন্ধুদেরই কারো একটা নাম্বার, এখন যদিও মনে নেই কে ফোণ করেছিল। ফোণটা ধরেই যা শুনলাম আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়...

যে ফোন করেছিল সে বলল বেটা জলদি বাপসি চল, তেরা পাপ্পাকো হার্ট আট্যাক আগেয়া। আমার পা কেঁপে উঠলো শুনে, কোন মনে নন্দিতা কে বাই বলে গাড়িতে চেপে স্টিয়ারিং ঘোরায়। আমার ড্রাইভ করার মতও ক্ষমতা নেই সেদিন । হাত পা কাঁপছে পুরো। যায় হোক কোনমতে গাড়িটা মেইন রোডে এনে আবার ঈশানকে ঘুরিয়ে ফোণ করলাম।

14th june , 21:55 PM
Durgapur ( W.B )

( চলবে )

Coin Marketplace

STEEM 0.27
TRX 0.11
JST 0.031
BTC 67476.14
ETH 3776.09
USDT 1.00
SBD 3.52