( সিরিজ প্রেমের কাহিনী - ২ ) কলেজ দিনের গল্প ( ১০% লাজুক ভাইয়ের জন্য বরাদ্দ)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

image.png

image source

আগের পর্বের পর-

...তো যায় হোক কোন মতে ঈশানকে ফোণ করলাম , উলটো দিকে ঈশান ফোন ধরে না, আমি একটা রেড লাইটের সামনে দাঁড়িয়ে বার বার ফোন করছি পাগলের মত। কি মনে হতে ঘুরিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে ফোন করলাম। দুর্ভাগ্য বশত বাড়ীর ফোনটাও কেউ ধরলো না।
আমার পরিস্থিতি যাচ্ছেতাই একদম। রেড সিগ্ন্যাল সবুজ হতেই পাশ দিয়ে বেশ কিছু গাড়ি শুয়োরের বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছি কেন উড়ন্ত খিস্তি দিয়ে বেড়িয়ে গেল। কোন মতে গাড়িটা নিয়ে এগোচ্ছি এমন সময় ঈশান ফোন করলো। ফোনটা ধরতেই খুব সিরিয়াস গলাতে বলল সামনের ফুড জয়েন্টের সামনে পার্ক কর। আমি প্রায় হাওয়ার গতিতে পৌঁছে দেখি সবাই থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে আছে।

গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পোছালাম তাদের কাছে। পৌঁছাতেই কোথা থেকে কি হয়ে গেল বুঝলাম না, হঠাত ৪টে ছেলে ঝাঁপিয়ে উঠলো আমাকে নাকি বিয়ার খাওয়াতে হবে !! রাগে ফেটে পড়ছি প্রায়, এমন সময় ঈশান আর মোহিত খোলসা করলো, ওটা নাকি প্রাঙ্ক ছিল !!

ভাবুন আমার অবস্থা একবার। হাত পা কাঁপছিল, তখন যদিও প্রাঙ্ক শব্দটাই বাজারে আসেনি। ইয়েহ তেরা সাথ এক মাজাক হো গিয়া ভাই বলে দাঁত কেলাতে শুরু করলো। যায় হোক বাড়িতে ফোণ করলাম। মা ধরলো, আমার গলা শুনে মা জিজ্ঞেস করে কিছু হয়েছে কিনা। বললাম সব ঠিক আছে, বাবা কেমন আছে জিজ্ঞেস করতে বলল বাবা দিব্যি আছে, এইতো টিভির ঘরে বসে গল্প করছে কারো একটা সাথে। এতদুর শোনার পর ধড়ে প্রাণ এলো আমার। ছেলেগুলোকে উত্তাল খিস্তি মারলাম পাক্কা ১ ঘন্টা। যদিও তারা সেদিন আমার প্রায় সারা মাসের টাকা শেষ করে দিয়েছিল বিয়ার আর চিকেনের অর্ডার করে করে।

পরে শুনলাম পুরো প্ল্যানটা নাকি ছিল আমার রুমমেটের। সেই হতভাগায় বলেছিল এরকম করার জন্য। এদিকে নন্দিতা মাঝে মাঝেই ফোণ করছে, সেটা দেখে আরো রেগে উঠছি আমি। বস্তুত তাতে আরো বেশি ক্ষেপে উঠছি আমি। ওইদকে ঈশান আন্ড টিম চেপে ধরেছে ডেট
কেমন হল জানার জন্য। কোন মতে বললাম পোষায়নি আমার। তাই তোদের উদার করতে বলেছি। এভাবেই সেই রাত কাটলো। হোস্টেলে ফিরলাম মাঝরাতে।

এর পরের দিন থেকে শুরু হল নতুন নাটক। আমার প্রেম চটকে গেছে গতকাল সন্ধ্যে বেলাতেই কিন্তু ওদিকে মিস আখার প্রেম পুরো মাত্রায় জেগে উঠেছে, রাত দিন সকাল সন্ধ্যে ফোণ, মেসেজ, ফ্রেঞ্জোতে নক করেই চলেছেন তিনি। বেজায় আতান্ততে পড়েছি আমি। কি করবো বুঝতে পারছি না। সবথেকে বড় ভুলটা করেছিলাম আমার রুমমেটের নম্বরও তাকে দিয়েছিলাম। আমাকে না পেলে বা আমি না ধরলে সে সোজা রুমি কে ফোন করতো, করে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতো। আর যে মানুষটা দুদিন আগেই কলেজ্র ফাঁকে, ল্যাবের কোনাতে, সকাল বিকেল মেসেঞ্জারে নক করতো সেই যদি দুদিন পর অত্যন্ত ব্যাস্ততা দেখাই তাহলে উলটো দিকের মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই বিরক্তি প্রকাশ করতে। তার ক্ষেত্রেও তাইই হয়েছিল। যদিও সেসব তখন কিছুই বুঝতাম না, প্রাক যৌবন বয়েসে নারীসঙ্গ থাকা মানে বন্ধু মহলে আলাদা ইজ্জতের ব্যাপার।

রুমমেট কে বার বার বলেছিলাম আমি না ধরলে যদি তোকে ফোণ করে সোজা বলে দিবি ফোন রেখে বাইরে গেছে, বা মড়ে গেছে। ভালো লাগছিল না কথা বলতে, কিন্তু ঐ বলে না বন্ধু মানেই তারা বাঁশ দেবার জন্যই জন্মেছে। চান্স পেলেই " তেরা কল আয়া " বলে ফোণটা আমার হাতে ধরিয়ে দিত। সে এক অত্যন্ত বিচ্ছিরি পরিস্থিতি। কিছুতেই তাকে বোঝাতে পারছি না। এদিকে রাত হলেই সেই দিদি ফোঁস ফোঁস করে অভিযোগ শুরু করছেন, আবার কবে দেখা করা যায় সেই আবদার জুড়ছেন। আর আমি কাটানোর প্ল্যান করছি।

একদিন তো তিনি জাস্ট ফেটে পড়লেন, কি এমন হল যে আমি এভাবে ওনাকে কাটিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছি। কোনমতে এক্সাম চলছে বলে পার পাব তারও উপায় নেই, তিনি নিজেও জানেন দিল্লিতে এক্সাম হয় সামার আর উইন্টার শেশনে। বছরে মাঝে মাঝে যে ইন্টারন্যাল গুলো হয় সেগুলোর ব্যাপারে গোটা দুনিয়া জানে। অতএব তার অভি্যোগ বাড়তে লাগলো।

এর মাঝেই বাঁশ খেলাম উলটো দিকে, আমার রুমি ভদ্রমহিলার নম্বরটা দিয়ে দিলেন আমাদের ব্যাচের এক বান্ধবীকে। আমার অত্যন্ত ভালো বান্ধবী ( এখনো )। ফলত যা হবার তাই হোল। আর বলা হয় মেয়েরা হচ্ছে মায়ের জাত, তার ওপর বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমিকা বলে কথা, ফলত আমার ব্যাচের বান্ধবীটি কিছু না বুঝেই সেই মেয়েকে ফোন করে যাচ্ছেতাই করলো। আমি কোখন কোথায় কি করছি কার সাথে কথা বলছি সব রিমোট সিস্টেমের মত মিনিটে মিনিটে আপডেট। আর এদিকে আমি শালা কিছুই জানি না এসবের ব্যাপারে। প্রতি রাতে নিজেই নিজের কাছে চমকে উঠি, এইসব ব্যাপার নন্দিতা জানলো কোথা থেকে।

এভাবেই চলছিল। বাওয়াল লাগলো সেইদিন, যেদিন নন্দীতা সোজা বলে দিল কলেজের ফেস্টে সে আসবে। মানে নেমতন্ন না করলেও সে আসবে। আমি চমকে উঠলাম। কোন ভাবেই কাটানো গেলো না। ফেস্ট তিনদিন, জানা গেল তিনি আসবেন মাঝের দিন সকালে তারপর থার্ড দিন সকালে ফিরে যাবেন। আমি কোনমতে হ্যা বললাম। বেশ বুঝলাম আমার বুজিং এর বারোটা বেজে গেল। বন্ধুদের সাথে গুছিয়ে নেশা করার যে প্ল্যান করেছিলাম সব মায়ের ভোগে। নিম রাজী হয়ে তাকে নিয়ে এলাম ।

এসে তিনি যা যা করলেন সেসব এখানে বলা উপযুক্ত না, দলের নিয়ম বিরুদ্ধ ব্যাপার। বাওয়াল শুরু হলো সন্ধ্যে থেকে। চেঞ্জের জন্য আমার এক বান্ধবীর রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে ফিরে এলেন তিনি এবং সাথে ফুল লোড। জানা গেল বেশ গোটা তিনেক বিয়ার আর সাথে পাঞ্চ মেরে আরো উন্নততর কিছু নেশা দ্রব্য অলরেডি তার পেটে বা নার্ভে পৌঁছে গেছে। আমি প্রমাদ গুনলাম।

এরপর শুরু হল কেত্তন। মোটামুটি ভিড় জমে গেল আমার আশেপাশে। সবাই দেখি দুদলে ভাগ, মেয়েরা নন্দিতার দলে, ছেলেরা আমার দলে এবং দুটো দলই পারলে আমাকে ক্যালায়। অবশ্য ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ক্যালাকেলি না হলে কলেজের কৌলিন্য নস্ট হয়। সেটা হতে দেওয়া যায় না। যায় হোক প্রোগ্রাম শেষ হলো ভোর তিনটে নাগাদ। ভিড় হালকা হতে হতে সকাল। এবং নিয়ম মেনে ছেলে পুলে সারাদিন ঘুমোবে এবার। দুপুর থেকে লাস্ট দিন প্রোগ্রামের প্ল্যান এবং বাকি কিছু। আমি নিজের রুমে ফিরে ঘুমোতে যাব এমন সময় ফোণটা এলো। উলটো দিকে মৌসম ধিংড়া।

হাঁ জি ভাইয়া , বোলিয়ে...

16th june, 21:45 pm
Durgapur ( W.B )

( ক্রমশ )

Coin Marketplace

STEEM 0.27
TRX 0.11
JST 0.031
BTC 67476.14
ETH 3776.09
USDT 1.00
SBD 3.52