কনটেস্ট -আমার এলাকার ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার, যে খাবার আমার এলাকাকে প্রসিদ্ধ করে তুলেছে
মঙ্গলবার,
তারিখ - 0১ আগস্ট ২০২৩
আসসালামু আলাইকুম,
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, সকলে কেমন আছেন। আশা করি আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানিতে আপনারা সবাই ভালোই আছেন। আমিও আল্লাহ তায়ালার রহমতে ভালোই আছি। স্টিম ফর ট্রাডিশন কমিউনিটি সুন্দর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন। আজ আমি আমার এলাকার জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী "সিদল ভর্তা" নিয়ে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করি সকলের ভালো লাগবে।
![]() |
|---|
উত্তরবঙ্গের একটি সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী খাবার হলো সিদল।সিদল শুধু উত্তরবঙ্গেই নয় দেশের প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের কাছে সিদল পরিচিত।সিদল বিভিন্নভাবে রান্না করা হয়। যেমন-টাকি মাছ দিয়ে সিদল,বেগুন দিয়ে সিদল ও সিদলের ভর্তা ইত্যাদি। আমি আজ সিদলের ভর্তা আপনাদের সাথে নিয়ে আলোচনা করছি। বিভিন্ন ভাবে সিদল রান্না করা হলেও সিদলের জনপ্রিয় আইটেম হলো সিদল ভর্তা। সিদল ভর্তা দুইভাবে করা যায় কড়াইয়ে ভেজে অথবা চুলার আগুনে পুড়ে। কড়াইয়ে ভাজা ভর্তার থেকে চুলায় পুড়ে সিদলের ভর্তায় থাকে এক অন্যরকম স্বাদ।
সিদল সাধারণত গ্রামেই তৈরি করতে বেশি দেখা যায়। একটা সময় ছিল যখন শীতকালে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই গৃহিণীরা সিদল বানানোর কাজে ব্যস্ত থাকতো। কিন্তু কর্মব্যস্ততার ফলে এখন সিদল বানাতে নারীকে আর তেমন দেখা যায় না। তবে আমাদের বাসায় এখনো আমার দাদি প্রতিবছর সিদল তৈরি করেন। আমরা তিন বোন দাদিকে সিদল বানানোর কাজে সাহায্য করে থাকি। সিদল তৈরির প্রধান উপকরণ হলো ছোট মাছের শুটকি ও কচু শাক।কচু শাক ভালোভাবে পরিষ্কার করে তিন-চার ঘন্টা রোদে শুকিয়ে পরিষ্কার প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে শক্ত মোটা লাঠি দিয়ে থেঁতলানো হয়।এরপর থেঁতলানো কচু গুলো বস্তা থেকে বের করে হামান দিস্তায় বা শিলপাটায় ভালো করে মিহি করা হয়। এরপর শুটকি মাছ, মসলা ও ধুনিয়া ভালোভাবে ভেজে হামানদিস্তায় গুড়ো করা হয় এবং রসন আলাদা করে বেটে নিতে হবে। এবারে সবগুলো উপকরণ মিহি করা কচুর সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে হাতের তালুতে চ্যাপ্টা ও গোল গোল করে সিদল বানানো হয়। এরপর বানানো সিদলের উপরে হলুদ ও সরষার তেল মাখিয়ে কুলায় করে রোদে শুকাতে হয়। এভাবে ৮-১০দিন কড়া রোদে ভালোভাবে শুকাতে হয়।
ভালোভাবে কড়া রোদে শুকিয়ে সিদল প্লাস্টিকের কিংবা কাঁচের পাএে মুখ বন্ধ করে সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। আমাদের গ্রামে মোহল দিয়ে সিদলের মধ্যেখানে ফুটো করে একসঙ্গে আট থেকে দশটি সিদল গেঁথে ঝুলিয়ে রেখে সংরক্ষণ করে। মাঝে মাঝে এগুলো তারা বের করে রোদে দেয়।কিন্তু এখন প্রায় সবার বাড়িতেই রেফ্রিজারেটর থাকায় অনেকই সিদল পলিথিন দিয়ে মুড়ে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করে রাখছে।
| সিদল | ১টি |
|---|---|
| পেঁয়াজ | ১টি |
| রসুন | ২টি |
| কাঁচা মরিচ | পরিমাণ মতো |
| লবন | পরিমান মতো |
| সরিষা | তেল পরিমাণ মতো |
- ধাপঃ ০১
সিদলের ভর্তা করার জন্য প্রথমে আমি একটি সিদল চুলায় পুড়ে নিয়ে একটি পাএে পানিতে ভিজিয়ে দিলাম।
- ধাপঃ ০২
এবারে আমি কুচি কুচি করে পেঁয়াজ কেটে নিলাম এবং পরিমাণ মতো রসুন ও কাঁচা মরিচ নিলাম।
- ধাপঃ ০৩
এই ধাপে আমি চুলায় একটি তাওয়া বসিয়ে দিয়ে ছিলে রাখা রসুন ও কাঁচা মরিচ গুলো হালকা আচেঁ ভেজে নিলাম।
- ধাপঃ ০৪
এরপর আমি ভিজে রাখা সিদলটি ভালো ভাবে পরিষ্কার করে হাত দিয়ে ছোট ছোট করে ছিড়ে একটি প্লেটে রাখলাম।
- ধাপঃ ০৫
এবারে আমি চুলায় একটি পরিষ্কার কড়াই বসিয়ে সিদলগুলো দিয়ে পরিমাণমতো পানি দিলাম সিদ্ধ হওয়ার জন্য।
- ধাপঃ ০৬
সিদলের পানি কমে এলে আমি নাড়তে থাকলাম।
- ধাপঃ ০৭
পানি একেবারে শুকিয়ে নিয়ে সিদলগুলো হালকা একটু ভেজে নিলাম যাতে একটুও পানি না থাকে।
- ধাপঃ ০৮
এবারে আমি সিদলগুলো একটি মাটির বাটনায় ঢেলে নিয়ে গরম থাকা অবস্থায় ভালোভাবে বেঁটে নিলাম।
- ধাপঃ ০৯
এরপর আমি আবার চুলায় একটি তাওয়া বসিয়ে দিয়ে কেটে রাখা পেঁয়াজ কুচি গুলো দিলাম।
- ধাপঃ ১০
এবারে পেঁয়াজ কুচি গুলোর মধ্যে আমি একটু সরিষার তেল দিলাম এবং হালকা আঁচে পেঁয়াজ গুলো ভাজতে থাকলাম।
- ধাপঃ ১১
একপর্যায়ে পেঁয়াজ কুচি গুলো বাদামী বর্নের হয়ে এলে আমি তাওয়া থেকে পেয়াজঁ গুলো একটি প্লেটে তুলে নিলাম।
- ধাপঃ ১২
এবারে আমি আগে ভেজে রাখা রসুন ও মরিচ গুলো একটি বাটনায় নিলাম এবং পরিমাণ মতো লবন দিয়ে সবগুলো উপকরণ বেঁটে মিহি করে নিলাম।এরপর বেঁটে রাখা সিদলগুলো এসব উপকরণের সাথে ভালো ভাবে বাটনা দিয়ে নেড়ে চেড়ে মিশিয়ে নিলাম।
![]() | ![]() |
|---|
পরিবেশনঃ
পরিশেষে, সিদল ভর্তা হয়ে গেলে তা পরিবেশনের জন্য একটি কাঁচের পাত্রে তুলে নিলাম । বাটিতে রাখা ভর্তার উপরে ভেজে রাখা পেঁয়াজ গুলো ছড়িয়ে দিলাম এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য দুটি শুকনো ভাজা মরিচ দিলাম।
সিদলের ভর্তা আমার অনেক পছন্দের একটি খাবার। আম্মু বছরে তিন থেকে চারবার বিশেষ করে শীতের সময় সিদলের ভর্তা করে থাকে।আমার ফুপিরা আমাদের বাসায় আসলে তো আম্মুকে বলে সিদলের ভর্তা করতে।গরম ভাতের সাথে সিদলের ভর্তা তার সাথে থাকে যদি বড়ইয়ের আচার তাহলে তো কোনো কথাই নেই।
আমার লেখা পোস্ট পড়ার জন্য সকলকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। সকলে সুস্থ ও ভালো থাকবেন।
| মোবাইল | Tecno 9t spark |
|---|---|
| ক্যামেরা | ৩৮ মেগাপিক্সেল |
| পোস্টের ধরণ | ঐতিহ্যবাহী সিদল ভর্তা। |
| লোকেশন | চিরিরবন্দর, গুড়িয়া পাড়া। |
- আমি আমার পক্ষ থেকে ৩ জন বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছিঃ
@arispranata5
@fatoni
@naylamunawwarah
![]() |
|---|
ধন্যবাদ,
@siza





















এই প্রতিযোগিতায় অনেকেই এই সিঁদল নিয়ে পোস্ট করেছেন। প্রত্যেকের পোস্ট দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটি একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার।সত্য কথা বলতে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করার পর সিঁদল নিয়ে কিছু পোস্ট দেখার পর এই ঐতিহ্যবাহী খাবারটা নিয়ে আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাকে ও ধন্যবাদ আপু।
জিবে জ্বল চলে আসলো আপু 😋। সিদল আমার অনেক পছন্দের খাবার। আমার মা প্রতিবছর ৫০-৬০ টা করে সিদল করে। সিদল ভর্তা যেমন জনপ্রিয় তেমনি পাঙ্গাস দিয়ে সিদল রান্না আরো বেশি জনপ্রিয়। আমাদের এইদিকের মানুষও প্রচুর পরিমানে খেয়ে থাকে। অনেক সুন্দর পোস্ট শেয়ার করেছেন।
ধন্যবাদ ভাইয়া
https://twitter.com/siza37854890783/status/1686235640009289728?t=bJ0HLtiLprUpCox69Pl5BA&s=19
চমৎকার রেসিপি, সিদল কখনো খাওয়া হয়নি। তবে আপনার পোস্ট দেখে লোভ লেগে গেল। মনে হয় সিদল অনেক সুস্বাদু একটি খাবার। উত্তরাঞ্চলের বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার সিদল। আপু কবে সিদল খাওয়াবেন বলেন? শুভকামনা রইল এই প্রতিযোগিতার জন্য। খুব সুন্দর লাগলো আপনার পোস্টটি আমার কাছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু এতো সুন্দর একটি রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
সময় করে চলে আসেন ভাইয়া।
ওয়াও আপনি তো অনেক সুন্দর একটি বর্ণনা দিয়েছেন সিদল ভর্তা নিয়ে। কারণ আগের মানুষেরা এটা এতটাই জনপ্রিয় করে রেখেছিল যে প্রত্যেক জনের বাড়িতে এগুলো বেশিরভাগ বানানো হতো এবং অনেক যত্ন সহকারে এগুলো রাখা হতো। এখন আর এসবের বেশি প্রচলন দেখা যায় না তবে এটি অনেক মজাদার একটি খাবার ছিল
ধন্যবাদ ভাইয়া
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার হলো সিদল। সিদল খাওয়ার মজাই আলাদা বিশেষ করে যখন বৃষ্টি হয় তখন এই শিদলের চাহিদা বেড়ে যায়। কারণ তখন ছোট ছোট মাছ পাওয়া যায়। আর এই ছোট ছোট মাছ দিয়ে সিঁদল রান্না করা হয়। খুব সুন্দর একটি রেসিপি শেয়ার করেছেন আপু ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাকে ও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
গরম ভাতের সঙ্গে সিদল ভর্তার কথা শুনলেই লোভ লেগে যায়, সিদল হলো ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার যুগ যুগ ধরে গ্রামের মানুষজন সিদল তৈরি করে থাকেন, সিদল সম্পর্কে অনেক সুন্দর আলোচনা করেছেন আপু মনি, আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
ধন্যবাদ ভাইয়া
সিদল ভর্তা আমার অনেক পছন্দের একটি খাবার। আমার মা প্রায় প্রতিবছরই শীতল ভর্তা তৈরি করে থাকেন। এগুলো হঠাৎ করে খেলে অনেক ভালো লাগে। গরম ভাতের সাথে সিদল ভর্তা অনেক মজাদার। আপনি সিদল সম্পর্কে অনেক ডিটেলসে বর্ণনা করেছেন। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ আপু
সিদল উত্তরবঙ্গের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। আমাদের সকলের পরিচিত একটি খাবার হলো সিদল। সিদল গ্রামগঞ্জের মানুষের হাতে করা । প্রতিটি ধাপ আপনি বেশ সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন।
ধন্যবাদ ভাইয়া
সিদল আমার অনেক পছন্দের একটা খাবার।দিনাজপুর অঞ্চলের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে সিদল একটি।সিদল আমাদের এলাকার জনপ্রিয় একটি খাবার।আপনি সিদল নিয়ে সুন্দর আলোচনা করছেন এবং তার সাথে সুন্দর ভাবে সিদল রান্নার রেসিপির ধাপ গুলো উপস্থাপন করেছেন।আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
এটা সিদলের ভর্তা ভাইয়া।ধন্যবাদ