Steem Bangladesh Contest - Book Review | চাঁদের পাহাড় - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় | Chander Pahar (Mountain of the Moon) by Bibhutibhushan Bandyopadhyay
Steem Bangladesh কমিউনিটির প্রিয় বন্ধুরা, এই পোস্টে আমি আমার প্রিয় বই "চাঁদের পাহাড়" এর পাঠ-প্রতিক্রিয়া লিখবো। 'চাঁদের পাহাড়' স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে আমায়, স্বপ্নের জন্য লড়তে শিখিয়েছে, স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে শিখিয়েছে।
বইয়ের নাম : চাঁদের পাহাড়।
লেখক : শ্রী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রথম প্রকাশ : ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ।
প্রকাশক : সিগনেট প্রেস।
প্রচ্ছদ শিল্পী : শ্রী সত্যজিৎ রায়।
সাধারণ বাঙালি ছেলে শঙ্কর। চাঁদের পাহাড় শঙ্করের গল্প। অজ পাড়া গাঁয়ের ছেলে শঙ্কর স্বপ্ন দেখে অ্যাডভেঞ্চারের, অচেনা কোনো দেশের অচেনা কোনো পাহাড় চূড়ো চড়ার। সে সুযোগ এলো গ্রামের এক পরিচিত দিদির স্বামী প্রসাদ দাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে। প্রসাদ বাবুর অনুমোদনে উগান্ডা রেলের এক কর্মচারী হিসেবে শংকরের সুযোগ এলো আফ্রিকা যাওয়ার। প্রথমে মোম্বাসা-কিসুমু-ভিক্টোরিয়া নির্মীয়মাণ রেললাইনের কনস্ট্রাকশন ক্যাম্পের স্টোরকিপার এবং পরে কিসুমুর প্রায় ত্রিশ মাইল দূরের ছোট্ট একটা স্টেশনের স্টেশন-মাস্টার। এখানেই সে প্রাণ বাঁচায় মুমূর্ষু প্রসপেক্টর ডিয়েগো আলভারেজের। এই আলভারেজের সঙ্গে আলাপ বদলে দেয় শঙ্করের জীবন। আলভারেজের সঙ্গী হয়ে শঙ্কর বেরিয়ে পড়ে হলদে হীরের খনির খোঁজে - রিখটারসভেল্ড পর্বতমালার গহন অরণ্যে অজানার হাতছানিতে। পথে হাজারো বিপদ, হাজারো প্রতিকূলতা, ঝড়, বৃষ্টি, অগ্ন্যুৎপাত তুচ্ছ করে, ক্ষুধা তৃষ্ণাকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যায়। কিন্তু অরন্যের হীরক খনির পাহারাদার রক্ষক বুনিপের আক্রমণে প্রাণ হারায় আলভারেজ। কম্পাস ভালোভাবে দেখতে না জানা শঙ্কর একা ২০০ মাইল কালাহারি পার হয়। মাঝে নেহাৎ ভাগ্যচক্রে খুঁজে পায় সেই অমূল্য হীরের খনি - কিন্তু চিনতে না পারায় মাত্র ছয়টি হিরেকে নুড়ি ভেবে সাথে রাখে।
চাঁদের পাহাড় বাঙালির কাছে একটি আবেগ, প্রায় প্রতিটি বঙ্গ সন্তানের শৈশব জুড়ে রয়েছে চাঁদের পাহাড়। চাঁদের পাহাড় উপন্যাসটি লেখক লিখেছিলেন ১৯১১ সালে। বইটির ভূমিকায় লেখক নিজে লিখেছেন "চাঁদের পাহাড় কোনও ইংরিজি উপন্যাসের অনুবাদ নয়, বা ঐ শ্রেণীর কোনও বিদেশী গল্পের ছায়াবলম্বনে লিখিত নয়।" সেই যুগে না ছিল ইন্টারনেট, না ছিল সহজলভ্য তথ্যের ভাণ্ডার। লেখক শুধুমাত্র কলমের জাদুতে সব বয়সী পাঠককে মানস ভ্রমণ করিয়েছেন আফ্রিকার দুর্গম অরণ্যানীর বুকে। এক লেখকের পক্ষে শুধুমাত্র কয়েকটি বই পড়ে সম্পুর্ণ অন্য এক অজানা মহাদেশের অরণ্যের অমন নিখুঁত বর্ণনা, অমন চিত্রকল্প সৃষ্টি সত্যিই অভাবনীয়।
বই পড়তে পড়তে কখন যে আমরা প্রত্যেকে একজন শঙ্কর হয়ে গেছি - বুঝতে পারিনি। শঙ্করের প্রতিটা পদক্ষেপ, কষ্ট, দুঃখ, আনন্দ পাঠকের নিজের হয়ে উঠেছে। শঙ্কর ব্ল্যাক মাম্বার সামনে পড়ায় পাঠক উৎকন্ঠিত হয়েছে, দিয়েগো আলভারেজের মৃত্যুতে শঙ্করের মতোই বাঁধভাঙা জল এসেছে চোখে, কালাহারি মরুভূমিতে চিমানিমানি পর্বতের বিভীষিকাময় রাতে পাঠক শঙ্কিত হয়েছে, আবার শঙ্করের সাফল্যে আনন্দাশ্রু বেরিয়ে এসেছে।
অজানা অচেনা পাহাড়ি জঙ্গলে হীরের খনির খোঁজে হারিয়ে যাওয়াটা আজও আমার নেশা। এই হীরে রত্নভান্ডারের হলদে হীরে নয় - এই হীরে ছড়িয়ে থাকে পাহাড় জঙ্গলের আকাশে বাতাসে। এই হীরে হল প্রকৃতির সৌন্দর্য। সেই সৌন্দর্য কে চেনার চোখ তৈরি হয়েছে এই বই পড়ে।
এই উপন্যাসের ১৬৬ পৃষ্ঠা বদলে দিয়েছে আমার জীবন, দৃষ্টিভঙ্গি, চাওয়া-পাওয়া সবটুকু। চিরতরে। কারণ, ওই যে বললাম, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ম্যাজিক জানেন। সত্যিকারের ম্যাজিক।
আশা করি এই পাঠ-প্রতিক্রিয়া আপনাদের ভালো লাগবে। সঙ্গের ছবি আমার নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।


কতো সব পড়াশোনা করো তুমি দাদো🥰😇