ভারসাম্য! Balance!

ভারসাম্য এই শব্দটি একাধিক শব্দ কোষের মধ্যে একটি বটে,
তবে দৈনন্দিন জীবনে অনেকেই এই শব্দটিকে যথাযত প্রয়োগে অসমর্থ!
একটা দিন গতানুগতিক ধারায় আসে এবং গতানুগতিক কাজের মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত হয়ে যায়, এই ভাবে চলতে চলতে একটা সময় পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখা যায়, ভারসাম্যের পাল্লাটা কোনো এক দিকে সামান্য হলেও বেশি ঝুঁকে আছে!
দুদিক সমান ভাবে ভারসাম্য রক্ষা করতে কিয়দংশ মানুষ পারেন, এই ধারণাটি আমার মধ্যে পূর্বেও কাজ করতো, তবে যখন এই বছর কালী পুজোয় ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে দুটি ছোট্ট মেয়েদের দেখলাম, অর্থ উপার্জনের তাগিদে মায়ের সাথে রাস্তার ধারে খেলা দেখাচ্ছে, তখন এই সমাজের নাগরিক হিসেবে ভিতর থেকে একটা দায়িত্ববোধ পুনরায় নড়েচড়ে বসেছিল!
মা মাটিতে রাখা থালার অর্থে নজর রাখছেন, একটি মেয়ে বয়স হবে খুব জোর হলে সাত, আরেকজন হয়তো দশ কি এগারো!
ছোট মেয়েটি দর্শকের মনোরঞ্জনের জন্য নাচ করছে, আর তার উপরের বয়েসি মেয়েটি দুদিকের বাঁশের সাথে বাঁধা দড়ির উপরে একটি বাঁশ হাতে ব্যালেন্সের খেলা দেখাচ্ছে!
ঠিক সেই মুহূর্তে বেশ কিছু কথা মাথায় ভিড় জমিয়েছিল, তবে তারমধ্যে অন্যতম ছিল আজকের লেখার শীর্ষক!
জানিনা মহিলা সম্পর্কে মা ছিলেন কিনা! জানিনা দুটি শিশু বোন কিনা! শুধু ভাবছিলাম মেয়েটিকে দেখে এই বয়সে কি সাংঘাতিক ভারসাম্য রক্ষায় পারদর্শী একটি দড়ির উপরে!
অথচ, সেই ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে হয়তো জীবনের আরেকদিকে ভারসাম্য, অর্থাৎ শিক্ষা, সুস্থ্য জীবন সহ অনেক ইচ্ছাকে এই বয়সেই জলাঞ্জলী দিয়ে হয়েছে!



নইলে, এই বয়সে অর্থ উপার্জনের তাগিদ ছাড়া রাস্তায় নামার আর কোনো কারণ হতে পারে না!
যেকোনো দেশের আর্থিক ভারসাম্যের এই দোলুল্যমান পরিস্থিতির অন্যতম কারণ, ভিনদেশিদের ভিড়, আর এদের মধ্যে কিছুর আর্থিক ক্ষমতার জোরে চার আনা জিনিসের দাম আট আনা দিয়ে কিনে কিছু দালাল বৃদ্ধি করে সমাজকে কুলষিত করা;
পাশাপশি কিছু রোজগারে থাবা বসানো, এবং মাথা বৃদ্ধি পেলে খাদ্যেও টান পড়বে এটাই স্বাভাবিক।


অধিক মানুষ মনে করেন, আপনে বাঁচলে বাপের নাম! তবে বিষয়টা কিন্তু সফলতার সাথে শেষ পর্যন্ত রক্ষা মোটেও সহজ নয়, কারণ ভারসাম্য নষ্টের মুল মাথা হিসেবে বিবেচিত মানুষদের নিজেদের জীবনের অভ্যন্তরীন ভারসাম্য সদাই টলমল অবস্থায় থাকে।
পার্থক্য এক্ শ্রেণীর মানুষের এই টলমল পরিস্থিতি চোখে দেখা যায়, আরেক শ্রেণী মিথ্যে হাসির আড়ালে, রংচঙে জীবনের আড়ালে সেই পরিস্থিতি গোপন করে যায় প্রতিনিয়ত।


উভয়ক্ষেত্রেই ভারসাম্য রক্ষা করবার ক্ষেত্রে খামতি রয়ে যায়, তবে দরিদ্র হলেও তাদের রাতের ঘুম হয়তো শুকনো খাবার খেয়েও শান্তির হয়, কারণ সেখানে থাকে নির্ভেজাল পরিশ্রম, আর অন্যত্র বাঁশটা যদিও অন্যের জন্য তৈরি করতে রাত কাবার করে দেয় কিছু মানুষ;
তবে সেটা নিজের অজান্তেই কখন নিজের জন্য কাজে লাগিয়ে দেবেন সৃষ্টিকর্তা সেটা কেউ জানেন না!
মুল বক্তব্য হলো, এই সমাজে উপার্জন সকলেই করেন, পথ ভিন্ন হলেও
তবে সেই উপার্জনকে, সঠিক ভারসাম্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত কিনারায় পৌঁছতে সক্ষম মুষ্টিমেয় মানুষ।
একটি উদাহরণ দিলে হয়তো আমার লেখার খানিক যথার্থতা বুঝতে পারবেন, বিল গেটস যার নাম কোনো পরিচয়ের অবকাশ রাখে না, তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার উপার্জনের ৯৯ শতাংশ তিনি মৃত্যুর পূর্বে দান করে দিয়ে যাবেন।
এখানেই মানুষ আর মানুষরূপী অমানুষদের পার্থক্য।
আচ্ছা, জানিয়ে রাখি এখানে একলা বিল গেটস নয়, জেফ বেজস, মুকেশ আম্বানি সহ আরো অনেকেই রয়েছেন, যারা বিল গেটস নির্মিত এই সংস্থার সাথে জড়িত।
যেদিন মানুষ এই শব্দের আক্ষরিক তথা অভ্যন্তরীণ অর্থ বুঝতে পারবেন, সেদিন এই শিশুদের শৈশব হবে একেবারেই ভিন্ন!
তিনটি সামাজ সেবী প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত থেকে এটাই আমার উপলব্ধি।


Impressive!