শর্ত বিহীন ভালোবাসা - unconditional love!

in Incredible Indialast year
1000045050.png

ভালোবাসা শব্দটির সাথে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই পরিচিত।
এই একটা বাঁধন যেটি সম্পর্কের পরিভাষা ব্যক্ত করে, কিন্তু সময়ের হাত ধরে সেই ভালবাসায় যুক্ত হয়ে যায় শর্ত।

এখন, এই শর্তে যে সবটাই খারাপ, এমনটা নয়!
কখনো কখনো মা বাবার ভালবাসায় আমি অনেক শর্ত দেখেছি।

  • এই যেমন, যতই খেলতে যাও, সন্ধ্যে নামার সাথে সাথে ঘরে ফিরতে হবে।

  • বড়দের সাথে দেখা হলেই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে হবে!

অনেকেই এগুলোকে শিক্ষার নাম দেবে, কিন্তু যে বয়সে এগুলো শেখানো হতো, তখন সেগুলো নিছক শর্তই মনে হতো!
একটা সময় পার করলে অনুভব করা যায় সেগুলোর পিছনে ছিল শিক্ষা।

স্বামী স্ত্রী উভয়ের সম্পর্কেও অনেক শর্ত আরোপিত থাকে।
এই শর্ত কখনও উভয়ের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনে আবার কখনও দমবন্ধ অনুভূতি! সবটাই ব্যাক্তি বিশেষে নির্ধারিত।

অনেকেই ভাবতে পারেন, আজ হঠাৎ ভালোবাসা এবং শর্ত নিয়ে কেনো কথা বলছি!
আবার কেউ কেউ ভাবতে পারেন, ভালোবাসা থাকলে এবং দাবি থাকলে কিছু শর্তকে আপন করে নিতেই হয়, যদি সেটা হয় উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

জীবনের পথে দায়িত্বের সাথে সম্পর্ক বইতে গেলে শর্তের প্রয়োজনীয়তা আছে বৈকি!
সেই অর্থে দেখতে গেলে সঠিক, আর এই মানসিকতার হাত ধরে মানবজাতি ভিন্ন ভাবে বড় হয়েছে, সাথে তৈরি করেছে নিজের নিজের শর্তের বেড়াজাল!

তবে, কখনও কি দেখেছেন এই উন্নত সমাজে আজও শর্ত বিহীন সম্পর্কের দেখা মেলে!
কি অবাক হচ্ছেন তো?

কথাটি আজকে মাথায় এসেছে যখন ঘরের কাজের শেষে পুজো দিয়ে ছাদে উঠেছিলাম।
উঠে দেখি, ভিতর থেকে ছাদের দরজা বন্ধ!

1000045044.jpg
অ্যানা(Anna)

দরজায় কড়া নাড়লাম, এবং খানিকক্ষণ বাদে আমার ফ্ল্যাটের নিচের তলার মাসিমা দেখি, তার নাতনি এবং পোষ্য কে নিয়ে গাছে জল দিতে উঠেছেন।

দরজা খোলা থাকলে বেরিয়ে যাবে বলে ভিতর থেকে ছাদের দরজা বন্ধ করে রেখেছিলেন।
আমি ছাদে ঢুকে আবার বন্ধ করে দিলাম দরজা।

নাম জিজ্ঞাসা করতে উনি জানালেন পোষ্যের নাম অ্যানা!
নতুন আমাকে দেখে কিন্তু কোনো রকম চিৎকার করতে দেখলাম না, বরং নাম ধরে ডাকলাম আর বললাম আমায় একটা সেলফি দিতে, কিন্তু সে খেলায় মত্ত।

IMG_20241228_202338.jpg
IMG_20241228_202329.jpg
নিঃশর্ত ভালোবাসার উদাহরণ! - Example of unconditional love!

আর এই খানেই সন্ধান পেলাম দুটি শর্ত বিহীন ভালোবাসার!
আমার সাথে ছাদের এপ্রান্ত ওপ্রান্ত ঘুরে বেড়ালো নির্দ্ধিধায়! এরপর কলে ওঠার বায়না!
কি অদ্ভুত লাগলো ভাষায় প্রকাশ করবার নয়, মাসিমা জানালেন, কেউ একটু ভালবাসা দেখলেই দুপা তুলে কোলে ওঠার বায়না জুড়ে দিলো! সামান্য সময়ের মধ্যেই অনুভব করলাম, কি ভীষণ রকমের শিক্ষা দেবার প্রয়াহ করছে অ্যানা!

একটা অদ্ভুত ভালোবাসা অনুভব করলাম, আর ভাবলাম এই ভালবাসায় কোন শর্ত নেই, অপরপক্ষ ভালোবাসুক আর নাই বাসুক, একটু ভালো আচরণ যথেষ্ট।

1000045041.jpg
1000045039.jpg
1000045040.jpg
প্রকৃতির সৃষ্টির আরেক নজিরবিহীন নিঃস্বার্থ এবং নিঃশর্ত ভালোবাসার উদাহরণ!

এরপর গেলাম ফুলগাছগুলোর কাছে, একটু যত্ন ব্যাস অমনি রং বেরঙের ফুল উপহার দিয়ে মন খুশি করে দেবার কি ভীষণ রকমের ক্ষমতা, সাথে বুঝিয়ে দেওয়া, ভালবাসায় আসলেই কোনো প্রত্যাশা এবং শর্ত থাকতে নেই!
আজকের এই মুহুর্তটি সত্যি;
পর মূহুর্তের ভাবনা ছেড়ে বুক ভরে আমার থেকে অক্সিজেন নিয়ে যা!

তোদের কালো ধোঁয়া আমি নিজের কাছে রেখে দিলাম, নইলে তোদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে যে!

ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পেল্লাই মহলের অভ্যন্তরে যে রঙিন কারুকাজ দেখে তোরা খুশি হয়ে যাস, কখনও ভেবেছিস সেই রঙের সূত্রপাত এই আমার ফল এবং ফুলেদের থেকেই মানবজাতি পেয়েছে!

সেই সময় মানুষ তো রঙের আবিষ্কার শেখেনি, এই আমাদের থেকেই ফুল ফল নিয়ে তবে গিয়ে তোদের ওই ঐতিহাসিক মহলগুলো তৈরি, সে খবর রাখিস?

IMG_20241228_203619.jpg
IMG_20241228_203640.jpg
নির্বাক হয়ে মানবজাতির উপকার করে চলেছে কোনো স্বার্থ এবং শর্ত ছাড়াই, মানুষের মতো ফলাও করে উপকারের গল্প এরা শোনায় না!

গাঁদা ফুলের ছবি তুলতে গিয়ে আনমনে অনুভব করলাম, এই গাছের শুধু ফুল নয়, পাতা পর্যন্ত ক্ষতস্থান পূরণ করতে কাজে আসে।

মানুষ বড় স্বার্থপর! কোনো কিছু কাজে না আসলে সোজা আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেয়, দুবার ভাবে না!একসময় যখন, সেই মানুষ কিংবা বস্তু কাজে লেগেছিল, তখন তাদের কদর ছিল!

এটা বোধহয় মানুষের লজ্জার কারণ উন্নতির আড়ালে, আমরা দেখে কিছুই শিখি না!
কেবলমাত্র ঠেকেই যদি একটু আধটু শিখতে পারে বোধহয় মানবকুল।

জানিনা, আমার বিশেষ জানা নেই, আর এখন যদি বলতে হয় বলবো জানতে চাই না!
বাঁধন মুক্ত আছি, এইভাবেই থাকি, শূন্যতা বয়ে বেড়াচ্ছি সেই ভালো।

অযথা শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ করে নিজের ডানাগুলোকে আর খাঁচায় আবদ্ধ করতে চাই না, তার চাইতে এরকম একটু আধটু সময় এই শর্ত বিহীন ভালোবাসার মাঝে কাটাতে পারলেই খুশি!

1000010907.gif

1000010906.gif

Sort:  
Loading...
 last year (edited)

প্রথমে আপনাকে বলব দিদি অসাধারণ লিখেছেন। যা অতুলনীয়, যা লেখেও প্রকাশ করার মতো নয়। শর্তবিহীন ভালোবাসা শুধু
সৃষ্টিকর্তা,মা, বাবা, পশুপাখি, ও গাছপালার মধ্যে বিরাজমান দেখা যায়। পৃথিবীর মধ্যে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। এমনকি নিজের সন্তানের কাছ থেকেও, পিতা-মাতারা এখন আর পায় না।যা অনেক কষ্টের একটি বিষয়। আপনার পোস্টটি পড়ে জীবনের অনেক কিছু উপলব্ধি করা যায়। এত মূল্যবান একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার জন্য সব সময় শুভকামনা রইল।ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

 last year 

আপনাদের মন্তব্য আমার লেখার অনুপ্রেরণার স্রোত!
ভালো লাগছে দেখে অন্ততঃপক্ষে দুজন হলেও আমার লেখায় নিয়মিত মন্তব্য করছে, আশাকরি এইরকম ভাবেই কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবেন ভবিষ্যতেও। অন্যের লেখা পড়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি এই প্ল্যাটফর্মে, তখন এত discord ছিল না, কাজেই কিছু শিখতে হলে মন্তব্যের মাধ্যমে জানতে হতো। এটা অনেক দিক থেকে ভালো অভ্যেস বিশেষ করে এই প্ল্যাটফর্মে সুদীর্ঘ পথ চলার ক্ষেত্রে!

 last year 

আপনাকে ধন্যবাদ দিদি, এত সুন্দর একটি উত্তর দেওয়ার জন্য।

Commet Formate.png
Curated by: @bossj23

 last year 

Thank you @bossj23 sir

 last year 

দিদি আপনার লেখাটি এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছে, যা নিঃস্বার্থ এবং নিঃশর্ত ভালোবাসার প্রকৃত অর্থকে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে। অ্যানার সঙ্গে আপনার সেই মুহূর্তগুলো, গাছপালার প্রতি আপনার অনুভব এবং প্রকৃতির নির্লোভ ভালোবাসার প্রতি আপনার শ্রদ্ধা সত্যিই প্রশংসনীয়।

মানুষের জীবনেও যদি এই নিঃশর্ত ভালোবাসার শিক্ষা আমরা প্রয়োগ করতে পারতাম, তাহলে পৃথিবীটা আরও সুন্দর হতো। চমৎকার লেখার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দিদি।

 last year 

আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ আমার লেখা পড়বার সময় ব্যস্ততার মাঝেও বের করে পড়বার জন্য এবং পাশাপশি আপনার কাজের প্রতি ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য।

Loading...
 11 months ago 

আসলে একটা কুকুর মানুষের চাইতে অনেক বেশি ভালোবাসার মানুষ হয়ে ওঠে। কেননা তাদেরকে একটু ভালোবাসা দিলেই তারা আমাদেরকে অনেক বেশি আগলে রাখার চেষ্টা করে। অনেকের মুখেই শুনেছি মানুষকে বন্ধু না বানিয়ে কুকুরকে বন্ধু বানানো উচিত, কারণ সে নিজের মনিবের জন্য জীবনটা দিতেও প্রস্তুত থাকে।

আপনার মাসিমার কুকুরটা অনেকটাই সেইরকম। আপনার কাছ থেকে ভালোবাসা পেয়ে সে এখন আপনার কোলে ওঠার জন্য বায়না ধরেছে। হয়তোবা মুখে বলে প্রকাশ করতে পারেনা, তারা মানুষকে কতটা ভালোবাসে। কিন্তু তাদের অঙ্গী ভঙ্গি প্রকাশ করে, যে তারা মানুষের জন্য তাদের জীবনটা দিতেও প্রস্তুত থাকে।

বর্তমান সময়ের মানুষ বড়ই স্বার্থপর স্বার্থ ছাড়া কেউ কারো সাথে কথা বলে না, কারো উপকার করা তো দূরের কথা। কোন জিনিস প্রয়োজন না হলে সেটাকে ফেলে দিতে তিনবার চিন্তা করে না এটা বাস্তব, আর কেউ নিজের ইচ্ছায় কোন কিছু শিখতে চায় না। শুধুমাত্র যখন প্রয়োজন হয় তখনই কিন্তু শেখার আগ্রহ প্রকাশ করে। ধন্যবাদ বাস্তব জীবন নিয়ে এত সুন্দর একটা লেখা আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।