জীবনের লক্ষ্য কি ?

in #life7 years ago

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। জল-স্থলের সর্বত্র মানুষের কর্তৃত্ব। মহাশূন্যেও তার দৃপ্ত পদচারণা। পৃথিবী এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কার মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির ফসল। তাই মানুষকে এখন আর অসহায় প্রাণী বলে ভাববার কোন অবকাশ নেই। কিন্তু কি উদ্দেশ্যে মানুষের আগমন এই পৃথিবীতে? কি তার করণীয়? তার জীবনের স্বরূপ কি? এসব মৌলিক প্রশ্নের দিকে তাকাবার সুযোগ পায় খুব কম মানুষ। অথচ প্রতিটি মানুষের প্রাথমিক কর্তব্য ছিল এ প্রশ্নগুলোর সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করা। একটি উন্নত জীবনের অপরিহার্য দাবীসমূহের মধ্যে এই চিন্তাভাবনা অন্তর্ভুক্ত।
Screenshot_6.png
মানব জীবনের স্বরূপ

মানুষ নিজ জীবন সম্পর্কে প্রায়শই ভুল ধারণার বশবর্তী হয়। কখনো সে নিজেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বস্তু বলে সাব্যস্ত করে এবং অন্যদেরকে নিম্নস্তরের মনে করে তাদের আনুগত্য দাবী করে। আবার কখনো সে নিজেকে নিতান্ত অসহায় ভেবে যে কোন শক্তিধর বস্তুর নিকট আপন সত্তাকে বিলীন করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে এ দু’য়ের মাঝামাঝি মানুষের অবস্থান। মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। অত্যন্ত নিকৃষ্ট বস্তু দ্বারা তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে, তাই নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে অহংকার করা মানুষের জন্য সমীচীন নয়। কিন্তু মানুষকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে; আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে। তাই মানুষ একমাত্র তাঁরই সামনে মাথা নত করবে, অন্য কারো সামনে নয়। মানুষের মর্যাদা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সে স্রষ্টার অনুগত থেকেই পৃথিবীর সবকিছুর ওপর কর্তৃত্ব চালাবে। তাহলেই সে হবে সফলকাম। পক্ষান্তরে এর ব্যতিক্রম করলে তাকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।

Screenshot_5.png
লক্ষ্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা

লক্ষ্য হচ্ছে জীবনের গতি নির্ধারণ। হাল ছাড়া নৌকা যেমন গন্তব্যের পানে অগ্রসর হতে পারে না, লক্ষ্যহীন জীবনে তেমনি সাফল্যের আশা করা যায় না। বিশেষ মর্যাদা দান করে যে মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে তার জন্যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। কারণ, মানুষকে এখানে নিরর্থক পাঠানো হয়নি।

তোমরা কি (সত্যি সত্যিই) এটা ধরে নিয়েছ ,আমি তোমাদের এমনিই অনর্থক পয়দা করেছি এবং তোমাদের (কখোনই) আমার কাছে একত্রিত করা হবেনা

এক বিশেষ উদ্দেশ্য সামনে রেখে মানুষকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে। মানুষের উচিত আল্লাহর সে উদ্দেশ্য সফল করার জন্যে নিজ জীবন পরিচালনা করা।

ইমাম গাযযালী রহ. বলেন, মানুষ অনাদি নয়, তাই চিরস্থায়ী। অর্থাৎ মানব জীবনের শুরু আছে শেষ নেই। তাই মানুষের উচিত এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করা যা তার চিরস্থায়ী জীবনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী, তাই যদি কেউ পার্থিব জীবনের মধ্যে তার জীবনের লক্ষ্য সীমিত রাখে, তাহলে তা হবে বুদ্ধিমত্তার পরিপন্থী। এ প্রসঙ্গে ইমাম গাযযালী রহ. একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। এতে বলা হয়েছে, তুমি দুনিয়াতে যতদিন অবস্থান করবে ততদিনের জন্যে কাজ কর এবং পরকালে তোমাকে যে পরিমাণ সময় কাটাতে হবে, সে পরিমাণ সময়ের জন্যে কাজ করো। একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি তাই করে। কোথাও সফরে গিয়ে কেউ সেখানে স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলে না। আবার নিজ বাড়িতে কেউ তাঁবু টানিয়ে বাস করতে চায় না। সময়কালে তারতম্য অনুযায়ী প্রত্যেকে নিজ নিজ কর্মসূচী প্রণয়ন করে।

সম্পত্তি ও আহার্য লক্ষ্য নয়

আল্লাহ তাআলা মানুষসহ সকল প্রাণীর আহারের দায়িত্ব নিজের কাছেই রেখেছেন। ইরশাদ হচ্ছে,

‘পৃথিবীতে যে বিচরণশীলই রয়েছে, আল্লাহর দায়িত্বে তার জীবিকা।’ (হূদ ৬)

আল্লাহ তাআলার ওপর এরূপ গুরুদায়িত্ব চাপিয়ে দেয়ার মত কোন ব্যক্তি বা শক্তি নেই। বরং তিনি নিজেই অনুগ্রহ করে সে দায়িত্ব নিয়েছেন এবং মানুষকে তা জানিয়ে দিয়ে তাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওয়াদার কোন ব্যতিক্রম হতে পারে না। অসহায় শিশু, অচল জীবজন্তুকেও তিনি আহার দান করেন। তাই শুধুমাত্র জীবিকা সংগ্রহ বা অর্থ উপার্জনকে লক্ষ্য বানানো শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের জন্যে শোভনীয় নয়। কিন্তু মানুষ স্বভাবত ক্ষিপ্রতাবাদী। বর্তমান অবস্থাকেই সে সর্বস্ব মনে করে থাকে। অতীতের কথা স্মরণ রেখে ভবিষ্যতের জন্যে সঠিক কর্মসূচী গ্রহণ করতে সে প্রায়শ ব্যর্থ হয়। সাময়িক কষ্টের কারণে কখনো অতীতের সুখ-সচ্ছলতার কথা সে একেবারেই ভুলে যায় এবং আল্লাহর বিধি নিষেধের কোন তোয়াক্কা না করেই জীবিকার সন্ধান করতে শুরু করে। ওলামায়ে কেরাম বলেন, অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে কোন ব্যক্তি যা সংগ্রহ করে, সে যদি লোভের বশবর্তী হয়ে অবৈধ পন্থা অবলম্বন না করতো, তাহলে তার জন্যে নির্ধারিত রিযিক বৈধ পন্থায়ই তার নিকট পৌঁছে যেতো।

সম্মান লাভ লক্ষ্য নয়

সম্মানের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাআলা। তিনি যাকে যতটুকু ইচ্ছা তা দান করেন। সম্মান অর্জনের চেষ্টায় লিপ্ত হওয়া মানুষের উচিত নয়। বরং আল্লাহর হুকুম পালন করে যাওয়াই তার কর্তব্য। তাহলে আল্লাহ তাকে সম্মান দান করবেন। একজন মুমিনকে সবসময় মনে রাখতে হবে যে, সম্মান অর্জন করা জীবনের লক্ষ্য নয়। কেননা আল্লাহর নিকট মানুষের বিশেষণ হলো ‘আবদ বা দাস। দাসের কর্তব্য নিজ মনিবের আদেশ পালন করে যাওয়া। মনিবের সামনে মর্যাদা লাভের প্রচেষ্টা নেহায়েত গর্হিত কাজ। আল্লাহ প্রেমিকগণ সবসময় কামনা করেন আল্লাহর নিকট প্রকৃত ‘আবদ’ হবার মর্যাদা লাভ করার। সম্মান প্রাপ্তির আশা তাদের মতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্যে অন্তরায় স্বরূপ।

Screenshot_4.png

প্রকৃত সম্মান

জীবনের মূল লক্ষ্য না হলেও মানুষ সম্মান লাভের জন্যে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু প্রকৃত সম্মান কিভাবে অর্জিত হতে পারে সেদিকে লক্ষ্য করে খুব কমসংখ্যক ব্যক্তি। বস্তুত আল্লাহর নিকট যার সম্মান, সেই প্রকৃত সম্মানী। যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সম্মানের অধিকারী হয়, সমস্ত মাখলুক তাকে সম্মান করতে থাকে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন ব্যক্তি যখন আল্লাহর নিকট প্রিয়পাত্র হয়, আল্লাহ তখন জিবরাইল আ.কে ডেকে বলেন, আমি অমুক ব্যক্তিকে ভালবাসি, তুমিও তাকে ভালবাস। জিবরাইল আ. তখন আসমানের ফেরেশতাদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন অমুক ব্যক্তিকে আল্লাহ ভালবাসেন। আমিও ভালবাসি। আপনারাও তাকে ভালবাসুন। সকল আসমানের ফেরেশতাদের মধ্যে এটি ঘোষিত হবার পর পৃথিবীতেও এ ঘোষণা দেয়া হয়। তখন পৃথিবীর যাবতীয় বস্তু সামগ্রী তাকে ভালবাসতে থাকে।

এ হাদীস থেকে সম্মানের মূল উৎসের সন্ধান পাওয়া যায়। আল্লাহর নিকট প্রিয়পাত্র হতে পারলেই সৃষ্টিকুলের নিকটেও প্রিয়পাত্র হওয়া যায়। পক্ষান্তরে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কোথাও সম্মানের অনুসন্ধান করলে সাফল্য লাভের আশা করা যায় না। সম্মান লাভ করতে হলে আল্লাহর নিকটেই তার অনুসন্ধান করতে হবে।

সম্মানের মূলনীতি

আল্লাহর নিকট সম্মান প্রত্যাশা করতে হলে তা যথানিয়মে করতে হবে। আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে সম্মান লাভের মূল পন্থা জানিয়ে দিয়েছেন।

‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্যকার সবচেয়ে আল্লাহভীরু ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট সর্বাধিক সম্মানী।

তাকওয়া আল্লাহভীতি হচ্ছে সম্মানের মাপকাঠি। যার মধ্যে যতটুকু তাকওয়া থাকবে, আল্লাহর নিকট তার সম্মানের মাত্রাও থাকবে ততটুকু। তাই সম্মান লাভের জন্যে যা করতে হয় তা হলো তাকওয়া অর্জন। আল্লাহ তাআলা মানুষকে সম্মান লাভের এ মূলনীতি জানিয়ে দিয়ে অনুগ্রহ করেছেন।
Screenshot_3.png
আল্লাহর নির্ধারিত লক্ষ্য

মানবজীবনের মূল লক্ষ্য কি হওয়া উচিত, সে কথাও আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিয়েছেন। মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন,

‘আমি মানুষ ও জ্বিনকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্যেই সৃষ্টি করেছি।

অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদতই মানুষের জীবনের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য। এটিই মানুষের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। আল্লাহর উদ্দেশ্য যাতে পূর্ণ হয়, সে লক্ষ্যেই পরিচালিত হওয়া উচিত মানুষের জীবন। সৃষ্টজীব হিসেবে স্রষ্টার উদ্দেশ্য পূরণে ব্রতী হওয়া মানুষের একান্ত কর্তব্য। অতএব, আল্লাহর ইবাদতই মানুষের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

Sort:  

This user is on the @buildawhale blacklist for one or more of the following reasons:

  • Spam
  • Plagiarism
  • Scam or Fraud